সুপারিশকারী একমাত্র আল্লাহ।


আল্লাহর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই:-
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
কোরআন সুন্নাহর আলোকে শাফায়াত নিয়ে বির্তকের মুলোৎপাটন। কোরআন-সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলাই হচ্ছেন দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বময় কর্তৃত্ব, রাজত্বের অধিকারী । সব কিছুর মালিকানা তাঁরই। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
يُدَبِّرُ الۡاَمۡرَ‌ؕ مَا مِنۡ شَفِيۡعٍ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اِذۡنِهٖ‌ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمۡ فَاعۡبُدُوۡهُ‌ؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوۡنَ‏﴾
তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি না নিয়ে সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। সুতরাং তাঁর ইবাদত করো। তবু কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? [সুরা ইউনুস, আয়াত: ৩ (শেষাংশ)]
তাফসির : এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হয়েছিল যে আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনিই এই বিশ্ব চরাচর পরিচালনা করেন। এর মাধ্যমে মূলত সৃষ্টিতে আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্ব তুলে ধরা হয়েছে। কেননা বিচিত্রময় এ বিশ্ব সৃষ্টি ও পরিচালনায় তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আয়াতের এই অংশে বলা হয়েছে, যেভাবে সৃষ্টিতে তাঁর কোনো অংশীদার নেই, অনুরূপ ইবাদতেও তাঁর কোনো অংশীদার থাকতে পারে না। এমনকি তাঁর সামনে কারো কথা বলার সাহস নেই। তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে কারো সুপারিশ করার অধিকার নেই। সুতরাং মানুষের উচিত একান্ত আল্লাহর জন্য ইবাদত করা। তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। পরকালে সুপারিশের জন্য আল্লাহর অনুমতি নিতে হবে আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতি না নিয়ে (পরকালে) সুপারিশ করার কেউ নেই।’ অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেয়ামতের দিন কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। কারো জন্য সুপারিশ করতে পারবে না। এতে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে পরকালে শাফায়াত বা সুপারিশ করা যাবে। ইসলাম ধর্ম মতে, পরকালে আল্লাহর দরবারে পাপীদের জন্য নেককাররা সুপারিশ করবেন। মানুষের আমল তার জন্য সাক্ষ্য দেবে। রোজা ও কোরআন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে। নবী-রাসুল, হাফেজ-আলেম ও শহীদরা পাপাচারী ইমানদারদের জন্য সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তাদের সুপারিশ কবুল করে পাপীদের ক্ষমা করে দেবেন। তবে এই শাফায়াত নিঃশর্ত নয়। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ তাঁর কাছে সুপারিশ করতে পারবে না। আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا لِمَنۡ اَذِنَ لَهؕ..
‘যাকে অনুমতি দেওয়া হয়, সে ছাড়া আল্লাহর কাছে কারো সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৩)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ يَوۡمَٮِٕذٍ لَّا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَهُ الرَّحۡمٰنُ وَرَضِىَ لَهٗ قَوۡلاً‏﴾
‘দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ছাড়া সেদিন (কেয়ামতের দিন) কারো সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা ত্ব-হা, আয়াত : ১০৯)।
কেয়ামতের দিন সবার আগে মহানবী (সা.)-কে শাফায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন,
“কেয়ামতের দিন মানুষ একে অন্যের কাছে দৌড়াতে থাকবে। তারা আদম (আ.)-এর কাছে এসে বলবে, ‘আপনার প্রভুর কাছে (আমাদের জন্য) সুপারিশ করুন।’ তিনি বলবেন, ‘আমি এর যোগ্য নই। তোমরা ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর বন্ধু।’ লোকেরা ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, ‘আমি এর যোগ্য নই। তোমরা ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর প্রত্যক্ষ আদেশে আত্মা লাভ করেছেন ও আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন।’ ফলে তারা ঈসা (আ.)-এর কাছে আসবে। ঈসা (আ.) বলবেন, ‘আমি এর যোগ্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও।’ অতঃপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলব, ‘আমি সুপারিশ করতে পারব (তবে আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে)। তারপর আমি আমার প্রতিপালকের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করব। তাঁর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করে সিজদাবনত হব।’ তিনি বলবেন,
ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻳَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺍﺭْﻓَﻊْ ﺭَﺃْﺳَﻚَ ﺳَﻞْ ﺗُﻌْﻄَﻪْ ﺍﺷْﻔَﻊْ ﺗُﺸَﻔَّﻊْ ﻓَﺄَﺭْﻓَﻊُ ﺭَﺃْﺳِﻰ ﻓَﺄَﻗُﻮﻝُ ﻳَﺎ ﺭَﺏِّ ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻰ.
‘হে মুহাম্মদ! মাথা উত্তোলন করো। (যা বলার আছে) বলো, তোমার কথা শোনা হবে। (যা চাওয়ার আছে) চাও, তোমাকে দান করা হবে। সুপারিশ করো, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ তখন আমি বলব, ‘ইয়া উম্মাতি, ইয়া উম্মাতি।
হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।’।
(মুসলিম হা. ১৯৩; বুখারি হা. ২১৩৩)
সুপারিশের অনুমোদন পাবেন যারা:-
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
হাশরের ভয়াবহ মাঠে সুপারিশ করার অধিকার থাকবে অল্প সংখ্যক মানুষের। মহান আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে একে অপরের জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। হাদিসের এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তবে এ সুপারিশের ক্ষমতা পাওয়ার জন্য কিছু শর্তের বাস্তবায়ন লাগবে। যেমন-
১.আল্লাহর অনুমতি:-
সুপারিশের জন্য প্রথমত আল্লাহর অনুমতি লাগবে। তার অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
مَنۡ ذَا الَّذِىۡ يَشۡفَعُ عِنۡدَهٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِهٖ‌ؕ..
"কে সেই ব্যক্তি যে, আল্লাহ তায়ালার অনুমতি ব্যতিত তার কাছে সুপারিশ করবে"? [সুরা বাকারা : আয়াত ২৫৫]
২.আল্লাহর সন্তুষটি:-
সুপারিশের দ্বিতীয় শর্ত হলো সুপারিশকারী ও যার জন্য সুপারিশ করা হবে, তাদের উভয়ের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,
وَلَا يَشۡفَعُوۡنَۙ اِلَّا لِمَنِ ارۡتَضٰى وَهُمۡ مِّنۡ خَشۡيَتِهٖ مُشۡفِقُوۡنَ﴾..
‘শুধু তাদের জন্য সুপারিশ, যাদের উপর আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট।’ [সুরা আম্বিয়া : আয়াত ২৮]

৩.ঈমানদার হওয়া:-
সুপারিশের তৃতীয় শর্ত হলো ঈমানদার হওয়া। কাফেরদের জন্য সুপারিশ নেই। সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে, কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। কেউ তাদের জন্য সুপারিশ করলে তা গ্রহণীয় হবে না। আল্লাহ বলেন,
﴿ فَمَا تَنۡفَعُهُمۡ شَفَاعَةُ الشّٰفِعِيۡنَ﴾..
‘আর সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকারে আসবে না।’ [সুরা মুদ্দাসসির : আয়াত ৪৮]
উল্লেখিত তিন শর্ত পাওয়া যাওয়ার ভিত্তিতে নবী, ওলী, শহিদ, সৎ আলেম ও হাফেজগণ সুপারিশ করার অনুমোদন পেয়ে থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ঈমানদার হিসেবে কবুল করে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনসহ হাশরের মাঠে শাফায়াতের অনুমতি লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

By:- H.M Saiful Islam bd24.com

Comments