প্রত্যেক প্রাণীই মরণশীলঃ-
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
প্রত্যেক মানুষই মৃত্যুর মিছিলের নীরব যাত্রী। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সবাইকে সেই শুভযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। কেউ জানে না কার, কোথায়, কিভাবে মৃত্যু হবে। মানুষের মৃত্যুর স্থান ও সময় জানেন শুধু রাব্বুল আলামিন। মৃত্যুকে নিয়ে মানুষ অনেক ভেবেছে; কিন্তু কেউই এ থেকে রেহাই পায়নি। মৃত্যুকে ঠেকানো পৃথিবীর কারো ক্ষমতা নেই মহান আল্লাহ ব্যতীত। দুনিয়ার সব দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন মানুষ মরণশীল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسٍ ذَآٮِٕقَةُ الۡمَوۡتِؕ وَاِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَكُمۡ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدۡخِلَ الۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَؕ وَمَا الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ﴾
অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে। একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর এ দুনিয়াটা তো নিছক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা ইমরান : ১৮৫)।
ব্যর্থতা ও সফলতার ভাবনাঃ-
মানব জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কোনটি? বড় অপরাধটাই বা কি? জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্যই বা কোন পথে? এগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো ক'জনের জীবনে গুরুত্ব পায়? তা নিয়ে ভাবনাই বা ক'জনের? জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি সম্পদলাভ, সন্তানলাভ, ক্ষমতালাভ বা পেশাদারি সাফল্য? বড় ব্যর্থতাটি কি অর্থহীন, সন্তানহীন, গৃহহীন বা চাকরিহীন হওয়ায়? ইতিহাসে মানুষের জ্ঞান-গরিমা এবং সফলতার ইতিহাস যেমন অনেক, তেমনি ব্যর্থতা এবং অজ্ঞতাও অনেক। তবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি হলো কোন পথে বিজয় আর কিসে ব্যর্থতা, কোনটি ধর্ম আর কোনটি অধর্ম, কোনটি ন্যায় আর কোনটি অন্যায় -সেটির অনুধাবনে। অতীতের ন্যায় আজও মানুষের অজ্ঞতা এক্ষেত্রে প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে সামান্যই উন্নত। এজন্যই উন্নত মানুষ গড়ার চেয়ে তাজমহল বা পিরামিড গড়া ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ কর্ম মনে হয়। সে কাজে বিপুল অর্থসম্পদ ও জনশক্তির বিনিয়োগও হয়। সে অজ্ঞতায় অনন্ত অসীম আখেরাতের জীবনের চেয়ে সামান্য কয়েক বছরের পার্থিব জীবন অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। অতি গৌরবের মনে হয় নোবেল বিজয় বা অলিম্পিকে সোনার মেডেল জয়। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এগুলো কি কানাকড়ির মূল্যও রাখে? একটি নয়, হাজারটি তাজমহল, পিরামিড বা সোনার মেডেল দিয়ে কি জান্নাতের এক বর্গহাত জমিও কেনা যাবে? মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সফলতা, ব্যর্থতা ও নেক কর্মের মানদন্ডই ভিন্ন।সেখানে হিসাব হয় মানবিক গুণে বেড়ে উঠায়। হিসাব হয় ঈমান ও নেক আমলের। হিসাব হয় আল্লাহর নির্দেশিত পথে কে কতটা নির্ভুলভাবে চললো এবং সে পথে মেধা, শ্রম, অর্থ ও রক্তের কতটা বিনিয়োগ করলো সেটির।
অর্থাৎ এ দুনিয়ার জীবনে বিভিন্ন কাজের যে ফলাফল দেখা যায় তাকেই যদি কোন ব্যক্তি আসল ও চূড়ান্ত ফলাফল বলে মনে করে এবং তারই ভিত্তিতে সত্য-মিথ্যা ও কল্যাণ-অকল্যাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে, তাহলে সে আসলে মারাত্মক প্রতারণার শিকার হবে। এখানে কারো ওপর অনুগ্রহ ও নিয়ামত বর্ষিত হতে থাকলে তা থেকে একথা প্রমাণ হয় না যে, সে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে এবং আল্লাহর দরবারে তার কার্যকলাপ গৃহীত হয়েছে। অনুরূপভাবে এখানে কোন ব্যক্তির ওপর বিপদ নেমে এলে এবং সে মহা সংকটের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হলে তা থেকে অনিবার্যভাবে ধারণা করা যাবে না যে, সে মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং আল্লাহর দরবারে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফলগুলো চিরন্তন জীবনের পর্যায়ের চূড়ান্ত ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর হয়। আর এ শেষ ফলাফলই নির্ভরযোগ্য।
আসলে দুনিয়া হচ্ছে মুসাফিরখানা। আমরা সবাই মুসাফিরখানার যাত্রী। সবাই অস্থায়ী বাসস্থান থেকে চিরবিদায় নিয়ে পরকালের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। কবির ভাষায়,
‘জন্মিলে মরিতে হবে, চিরদিন কে কোথায় রবে?’
মানুষ মরিবে সবে, নহে সে অমর ভবে’।
মৃত্যু নামক পেয়ালা সবাইকে পান করতে হবে, কবর নামক অন্ধকার গৃহে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। মৃত্যুর ডাক কার কখন চলে আসবে কেউই সঠিকভাবে বলতে পারে না। মানুষ যেখানেই থাকে না কেন, যার মৃত্যু যেখানে হওয়ার কথা সেখানেই হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ﺃَﻳْﻨَﻤَﺎ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍْ ﻳُﺪْﺭِﻛﻜُّﻢُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﻭَﻟَﻮْ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺑُﺮُﻭﺝٍ ﻣُّﺸَﻴَّﺪَﺓٍ
‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের সেখানে এসেই পাকড়াও করবে। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো তবুও’
(সূরা নিসা : ৭৮)।
আজ সকালে যে মুখ থেকে সোনালি রোদের মত হাসি ফুটছিল বিকেলে সেই মুখ থেকেই ফেনা উঠতে দেখেছি। সকালে যে ছেলেটি বলেছিল আবার ফিরে আসব, বিকেলে সেই ছেলেটিই ফিরে এসেছিল ঠিকই কিন্তু জীবিত হয়ে ফিরে আসতে পারে নি।
জীবনের চরম বাস্তবতার শেষ মূহুর্তে জানি না তার কতটুকু অনুশোচনা হয়েছিল। তার শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ভেবেছিলাম একদিন তার মত আমাকে ঘিরেও লোকগুলো কান্না করবে। আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে ওপারের দুনিয়ায়। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
﴿ قُلۡ اِنَّ الۡمَوۡتَ الَّذِىۡ تَفِرُّوۡنَ مِنۡهُ فَاِنَّهٗ مُلٰقِيۡكُمۡ ثُمَّ تُرَدُّوۡنَ اِلٰى عٰلِمِ الۡغَيۡبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ﴾
তাদের বলো, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাচ্ছো তা তোমাদের কাছে আসবেই তারপর তোমাদেরকে সেই সত্তার সামনে পেশ করা হবে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানেন। তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করছিলে।) (সূরা জুমআ : ৮)।
মৃত্যু আছে বলেই জীবনটাকে আমাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। যদি কেউ অমরত্ব লাভ করত তাহলে জীবনটা তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ত একটা সময়।
*মৃত্যু* আমাদের চারপাশে সবসময় ঘুরঘুর করছে। যেকোনো মুহূর্তে, যেকোনো ভাবে মৃত্যু আপনার আমার সামনে চলে আসবে। আর সেটা জানি বলেই সবাই জীবনটাকে উপভোগ করতে চেষ্টা করছি সারাক্ষণ! আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
(সূরা আরাফ:- ৩৪)।
এ পৃথিবীতে আমরা সকলে আছি, হয়তো আরও কিছুদিন থাকবো । আমাদের পূর্বেও অনেকেই এসেছিলেন; কিন্তু আজ তাঁরা আর নেই । এ রকম আমরাও থাকবনা । থাকবে শুধু স্মৃতি । আমাদের পরেও পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অনেক মানুষই এ ধরাধামে আসবেন এবং তাঁরাও এই পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করে প্রভূর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাবেন । যাবার প্রকালে কেও কিছু সঙ্গে নিতে পারেন নি , পারেনা এবং ভবিষ্যতেও পারবেনা । তবে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক সাথে চলে যায় পাপ ও পুণ্যি । স্রষ্টার বাণীমতে পুণ্যবানরা পরকালে স্বর্গসুখে সুখী হবেন, আর পাপাত্মারা ভোগ করবেন অসহ্য নরক যন্ত্রণা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন,
مِنۡهَا خَلَقۡنٰكُمۡ وَفِي ۡهَا نُعِيۡدُكُمۡ وَمِنۡهَا نُخۡرِجُكُمۡ تَارَةً اُخۡرٰى
এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরই মধ্যে আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো এবং এ থেকেই আবার তোমাদেরকে বের করবো।
(সূরা ত্বাহা : ৫৫)।
সারাটা জীবন একাধিক ইলাহ কে গ্রহণ করে, সারাটা জীবন একাধিক রবকে গ্রহণ করে আপনি যদি ভাবেন আপনি মৃত্যুর সময় "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ "( আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই) পড়তে পারবেন তাহলে আপনি এক অবাস্তব চিন্তার মধ্যে ডুবে আছেন।
রাসুল সা: যখন সাহাবীদের বলছিলেন, "ইহুদী নাসারা রা তাদের ধর্মযাজকদের ইলাহ হিসেবে গ্রহন করেছিল " তখন আদি বিন হাতেম রা: (সদ্য মুসলিম) বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ আমরা তো আমাদের ধর্মযাজকের ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেনি ". জবাবে রাসুল সা: বললেন তারা যা হারাম করত এবং তারা যা হালাল করত তোমরা কি তা মেনে নাওনি যদিও তা তোমাদের শরীয়ত বিরোধী হত। জবাবে আদি বিন হাতেম রা: বললেন তা আমরা মেনে নিতাম। জবাবে রাসুল সা: বললেন এটাই তো তাদেরকে ইলাহ মেনে নেওয়া। এটাই তো তাদের ইবাদত করা। (তিরমীযি :৩০৯৫)। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন,
اكثرو من ذكر هاذم اللذات.اي الموت.
‘তোমরা পার্থিব সুখ-সম্পদ ও স্বাদ ধ্বংসকারী মৃত্যুকে খুব বেশি করে স্মরণ করো’। (তিরমিজি শরিফ)।
নবীজী আরো ইরশাদ করেন, ‘ওই ব্যক্তি সবচেয়ে বুদ্ধিমান, যে মৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণ করে এবং সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে’ (ইবনে মাজাহ)।
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
প্রত্যেক মানুষই মৃত্যুর মিছিলের নীরব যাত্রী। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সবাইকে সেই শুভযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে। কেউ জানে না কার, কোথায়, কিভাবে মৃত্যু হবে। মানুষের মৃত্যুর স্থান ও সময় জানেন শুধু রাব্বুল আলামিন। মৃত্যুকে নিয়ে মানুষ অনেক ভেবেছে; কিন্তু কেউই এ থেকে রেহাই পায়নি। মৃত্যুকে ঠেকানো পৃথিবীর কারো ক্ষমতা নেই মহান আল্লাহ ব্যতীত। দুনিয়ার সব দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন মানুষ মরণশীল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسٍ ذَآٮِٕقَةُ الۡمَوۡتِؕ وَاِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَكُمۡ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدۡخِلَ الۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَؕ وَمَا الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ﴾
অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে। একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর এ দুনিয়াটা তো নিছক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা ইমরান : ১৮৫)।
ব্যর্থতা ও সফলতার ভাবনাঃ-
মানব জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কোনটি? বড় অপরাধটাই বা কি? জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্যই বা কোন পথে? এগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো ক'জনের জীবনে গুরুত্ব পায়? তা নিয়ে ভাবনাই বা ক'জনের? জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি সম্পদলাভ, সন্তানলাভ, ক্ষমতালাভ বা পেশাদারি সাফল্য? বড় ব্যর্থতাটি কি অর্থহীন, সন্তানহীন, গৃহহীন বা চাকরিহীন হওয়ায়? ইতিহাসে মানুষের জ্ঞান-গরিমা এবং সফলতার ইতিহাস যেমন অনেক, তেমনি ব্যর্থতা এবং অজ্ঞতাও অনেক। তবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি হলো কোন পথে বিজয় আর কিসে ব্যর্থতা, কোনটি ধর্ম আর কোনটি অধর্ম, কোনটি ন্যায় আর কোনটি অন্যায় -সেটির অনুধাবনে। অতীতের ন্যায় আজও মানুষের অজ্ঞতা এক্ষেত্রে প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে সামান্যই উন্নত। এজন্যই উন্নত মানুষ গড়ার চেয়ে তাজমহল বা পিরামিড গড়া ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ কর্ম মনে হয়। সে কাজে বিপুল অর্থসম্পদ ও জনশক্তির বিনিয়োগও হয়। সে অজ্ঞতায় অনন্ত অসীম আখেরাতের জীবনের চেয়ে সামান্য কয়েক বছরের পার্থিব জীবন অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। অতি গৌরবের মনে হয় নোবেল বিজয় বা অলিম্পিকে সোনার মেডেল জয়। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এগুলো কি কানাকড়ির মূল্যও রাখে? একটি নয়, হাজারটি তাজমহল, পিরামিড বা সোনার মেডেল দিয়ে কি জান্নাতের এক বর্গহাত জমিও কেনা যাবে? মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সফলতা, ব্যর্থতা ও নেক কর্মের মানদন্ডই ভিন্ন।সেখানে হিসাব হয় মানবিক গুণে বেড়ে উঠায়। হিসাব হয় ঈমান ও নেক আমলের। হিসাব হয় আল্লাহর নির্দেশিত পথে কে কতটা নির্ভুলভাবে চললো এবং সে পথে মেধা, শ্রম, অর্থ ও রক্তের কতটা বিনিয়োগ করলো সেটির।
অর্থাৎ এ দুনিয়ার জীবনে বিভিন্ন কাজের যে ফলাফল দেখা যায় তাকেই যদি কোন ব্যক্তি আসল ও চূড়ান্ত ফলাফল বলে মনে করে এবং তারই ভিত্তিতে সত্য-মিথ্যা ও কল্যাণ-অকল্যাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে, তাহলে সে আসলে মারাত্মক প্রতারণার শিকার হবে। এখানে কারো ওপর অনুগ্রহ ও নিয়ামত বর্ষিত হতে থাকলে তা থেকে একথা প্রমাণ হয় না যে, সে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে এবং আল্লাহর দরবারে তার কার্যকলাপ গৃহীত হয়েছে। অনুরূপভাবে এখানে কোন ব্যক্তির ওপর বিপদ নেমে এলে এবং সে মহা সংকটের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হলে তা থেকে অনিবার্যভাবে ধারণা করা যাবে না যে, সে মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং আল্লাহর দরবারে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফলগুলো চিরন্তন জীবনের পর্যায়ের চূড়ান্ত ফলাফল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর হয়। আর এ শেষ ফলাফলই নির্ভরযোগ্য।
আসলে দুনিয়া হচ্ছে মুসাফিরখানা। আমরা সবাই মুসাফিরখানার যাত্রী। সবাই অস্থায়ী বাসস্থান থেকে চিরবিদায় নিয়ে পরকালের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। কবির ভাষায়,
‘জন্মিলে মরিতে হবে, চিরদিন কে কোথায় রবে?’
মানুষ মরিবে সবে, নহে সে অমর ভবে’।
মৃত্যু নামক পেয়ালা সবাইকে পান করতে হবে, কবর নামক অন্ধকার গৃহে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। মৃত্যুর ডাক কার কখন চলে আসবে কেউই সঠিকভাবে বলতে পারে না। মানুষ যেখানেই থাকে না কেন, যার মৃত্যু যেখানে হওয়ার কথা সেখানেই হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ﺃَﻳْﻨَﻤَﺎ ﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍْ ﻳُﺪْﺭِﻛﻜُّﻢُ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕُ ﻭَﻟَﻮْ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺑُﺮُﻭﺝٍ ﻣُّﺸَﻴَّﺪَﺓٍ
‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের সেখানে এসেই পাকড়াও করবে। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো তবুও’
(সূরা নিসা : ৭৮)।
আজ সকালে যে মুখ থেকে সোনালি রোদের মত হাসি ফুটছিল বিকেলে সেই মুখ থেকেই ফেনা উঠতে দেখেছি। সকালে যে ছেলেটি বলেছিল আবার ফিরে আসব, বিকেলে সেই ছেলেটিই ফিরে এসেছিল ঠিকই কিন্তু জীবিত হয়ে ফিরে আসতে পারে নি।
জীবনের চরম বাস্তবতার শেষ মূহুর্তে জানি না তার কতটুকু অনুশোচনা হয়েছিল। তার শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ভেবেছিলাম একদিন তার মত আমাকে ঘিরেও লোকগুলো কান্না করবে। আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে ওপারের দুনিয়ায়। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
﴿ قُلۡ اِنَّ الۡمَوۡتَ الَّذِىۡ تَفِرُّوۡنَ مِنۡهُ فَاِنَّهٗ مُلٰقِيۡكُمۡ ثُمَّ تُرَدُّوۡنَ اِلٰى عٰلِمِ الۡغَيۡبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ﴾
তাদের বলো, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাচ্ছো তা তোমাদের কাছে আসবেই তারপর তোমাদেরকে সেই সত্তার সামনে পেশ করা হবে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানেন। তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করছিলে।) (সূরা জুমআ : ৮)।
মৃত্যু আছে বলেই জীবনটাকে আমাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। যদি কেউ অমরত্ব লাভ করত তাহলে জীবনটা তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ত একটা সময়।
*মৃত্যু* আমাদের চারপাশে সবসময় ঘুরঘুর করছে। যেকোনো মুহূর্তে, যেকোনো ভাবে মৃত্যু আপনার আমার সামনে চলে আসবে। আর সেটা জানি বলেই সবাই জীবনটাকে উপভোগ করতে চেষ্টা করছি সারাক্ষণ! আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀ ﺃَﺟَﻠُﻬُﻢْ ﻻَ ﻳَﺴْﺘَﺄْﺧِﺮُﻭﻥَ ﺳَﺎﻋَﺔً ﻭَﻻَ ﻳَﺴْﺘَﻘْﺪِﻣُﻮﻥَ
“তারপর কোন কাওমের মেয়াদ পুরা হয়ে গেলে এক মুহূর্তও দেরি হতে পারে না এবং এক মুহূর্ত আগেও হতে পারে না।”(সূরা আরাফ:- ৩৪)।
এ পৃথিবীতে আমরা সকলে আছি, হয়তো আরও কিছুদিন থাকবো । আমাদের পূর্বেও অনেকেই এসেছিলেন; কিন্তু আজ তাঁরা আর নেই । এ রকম আমরাও থাকবনা । থাকবে শুধু স্মৃতি । আমাদের পরেও পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত অনেক মানুষই এ ধরাধামে আসবেন এবং তাঁরাও এই পৃথিবীর মায়াজাল ছিন্ন করে প্রভূর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যাবেন । যাবার প্রকালে কেও কিছু সঙ্গে নিতে পারেন নি , পারেনা এবং ভবিষ্যতেও পারবেনা । তবে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক সাথে চলে যায় পাপ ও পুণ্যি । স্রষ্টার বাণীমতে পুণ্যবানরা পরকালে স্বর্গসুখে সুখী হবেন, আর পাপাত্মারা ভোগ করবেন অসহ্য নরক যন্ত্রণা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন,
مِنۡهَا خَلَقۡنٰكُمۡ وَفِي ۡهَا نُعِيۡدُكُمۡ وَمِنۡهَا نُخۡرِجُكُمۡ تَارَةً اُخۡرٰى
এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরই মধ্যে আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো এবং এ থেকেই আবার তোমাদেরকে বের করবো।
(সূরা ত্বাহা : ৫৫)।
সারাটা জীবন একাধিক ইলাহ কে গ্রহণ করে, সারাটা জীবন একাধিক রবকে গ্রহণ করে আপনি যদি ভাবেন আপনি মৃত্যুর সময় "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ "( আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই) পড়তে পারবেন তাহলে আপনি এক অবাস্তব চিন্তার মধ্যে ডুবে আছেন।
রাসুল সা: যখন সাহাবীদের বলছিলেন, "ইহুদী নাসারা রা তাদের ধর্মযাজকদের ইলাহ হিসেবে গ্রহন করেছিল " তখন আদি বিন হাতেম রা: (সদ্য মুসলিম) বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ আমরা তো আমাদের ধর্মযাজকের ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেনি ". জবাবে রাসুল সা: বললেন তারা যা হারাম করত এবং তারা যা হালাল করত তোমরা কি তা মেনে নাওনি যদিও তা তোমাদের শরীয়ত বিরোধী হত। জবাবে আদি বিন হাতেম রা: বললেন তা আমরা মেনে নিতাম। জবাবে রাসুল সা: বললেন এটাই তো তাদেরকে ইলাহ মেনে নেওয়া। এটাই তো তাদের ইবাদত করা। (তিরমীযি :৩০৯৫)। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন,
اكثرو من ذكر هاذم اللذات.اي الموت.
‘তোমরা পার্থিব সুখ-সম্পদ ও স্বাদ ধ্বংসকারী মৃত্যুকে খুব বেশি করে স্মরণ করো’। (তিরমিজি শরিফ)।
নবীজী আরো ইরশাদ করেন, ‘ওই ব্যক্তি সবচেয়ে বুদ্ধিমান, যে মৃত্যুকে সর্বাধিক স্মরণ করে এবং সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে’ (ইবনে মাজাহ)।
Comments
Post a Comment