জুমার আলোচনার প্রয়োজনীয়তা ও প্রতিবন্ধকতা।

শুক্রবারে জুমার খুতবা যেমন হওয়া উচিতঃ-
*******************
*****************
শুক্রবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে ছোট-বড় সবাই জুমার সালাতে উপস্থিত হতে চেষ্টা করে। যে ব্যক্তি প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে না বা মাঝে মাঝে সালাত আদায় করে, সেও জুমার সালাত আদায় করতে মসজিদে যায়। বিশেষ করে প্রথম আজানের পরপরই মুসল্লিরা খতিবের আলোচনা শোনার জন্যই উপস্থিত হয়।
তবে কেউ কেউ ব্যতিক্রমও আছে। ইমাম বা খতিব কি আলোচনা করল সেটা নিয়ে তাদের আগ্রহ তেমন দেখা যায় না। তবে অধিকাংশ লোকের অভ্যাস হলো যে মসজিদে আলোচনা ভালো হয়, সে মসজিদে সালাত আদায় করে থাকে। সেটা যত দূরেই হোক, সেটা তার কাছে মুখ্য নয়। তাদের কাছে শুক্রবারের আলোচনাটাই মৌলিক বিষয়ের একটি। বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত ধর্মীয় আলোচনা শুনতে ভালোবাসে। বর্তমান সময়ে বিষয়ভিত্তিক কুরআন-হাদিসের শিক্ষণীয় মাহফিল তেমন একটা লক্ষ্য করা যায় না। যার ফলে শুক্রবারের আলোচনা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সে জন্য ইমাম ও খতিবদের উচিত কুরআন-হাদিসের আলোকে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্বপূর্ণ বিশ্লেষণধর্মী ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে একজন মুসলিমের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ের আলোকে জুমার খুতবা পেশ করা। গতানুগতিকভাবে দেখে দেখে খুতবা তেলাওয়াত না করে তথ্যভিত্তিক ভাষণের মতো করে উপস্থাপন করা জরুরি। তাহলে মুসল্লিদের জ্ঞানের খোরাক অর্জিত হবে। মসজিদে নামাজির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু কিছু কিছু মসজিদের মোতওয়াল্লি ও কমিটির স্বেচ্ছাচারিতার কারণে যোগ্য ইমাম ও খতিব নিয়োগ দেয়া হয় না। ইমাম ও খতিব নিয়োগের ক্ষেত্রেও চলে আত্মীয়করণ, দলীয়করণ। যার ফলে যোগ্যতাসম্পন্ন ইমাম ও খতিবরা তাদের কাছে অযোগ্যই থেকে যায়।
আবার এমনটিও ঘটে, সঠিকভাবে কুরআন-হাদিসের আলোচনা তুলে ধরলে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থে আঘাত লাগে, কখনও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিপক্ষে চলে যায়। তাই বারবার ইমাম ও খতিবদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কখনও কখনও নির্যাতন করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেয়া হয়। এটি এক ধরনের জুলুম। আর যারা জুলুম করে তাদের জালিম বা অত্যাচারী বলা হয়। সূরা আরাফের ৪৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
‘সাবধান! অত্যাচারীদের ওপর আল্লাহর লানত বা অভিশাপ।’
বুখারি শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে মহানবী সা. বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَخُونُهُ وَلاَ يَكْذِبُهُ وَلاَ يَخْذُلُهُ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ عِرْضُهُ وَمَالُهُ وَدَمُهُ التَّقْوَى هَا هُنَا بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْتَقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ ‏"‏ ‏.‏
হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। সে তার সাথে কোনরকম বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তার প্রসঙ্গে মিথ্যা বলবে না, তাকে অপমান করবে না। প্রত্যেক মুসলমানের মান-সম্মান, ধন-সম্পদ ও রক্তের (জীবনের) উপর হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলমানের উপর হারাম। তাক্বওয়া এখানে (অন্তরে)। কেউ মন্দ বলে প্রমাণিত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার অপর মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে।

সহীহ, ইরওয়া (৮/৯৯-১০০), মুসলিম।’
যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী, সে যেন আজই তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয় সেই দিন আসার আগে, যেদিন তার কোনো অর্থ-সম্পদ থাকবে না। সেদিন তার কোনো নেক আমল থাকলে তা থেকে জুলুমের দায় পরিমাণ কেটে নেয়া হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে তাহলে যার ওপর জুলুম করেছে, তার বদ আমল থেকে নিয়ে তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে।
আবার কতিপয় মসজিদ কমিটির সদস্য এমন বাড়াবাড়ি করে যে, ইমাম ও খতিবরা জুমার খুতবায় কী আলোচনা করবেন সেটা আলোচনা আগেই মসজিদের সভাপতি থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এ ধরনের নির্দেশনা দেয়া অনুচিত, যা অনধিকার চর্চার শামিল। আবার কিছু কিছু মসজিদের ইমাম ও খতিবদের এমনভাবে শাসানো হয়, যাতে তারা প্রভাবশালীদের মনরক্ষা করে আলোচনা করেন। তাই কুরআন-হাদিসে পারদর্শী ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে তথ্যভিত্তিক আলোচনা করতে পারেন এমন আমলদার ইমাম ও খতিবদের মাসজিদে নিয়োগ দিলে আশা করা যায় সাধারণ মানুষরা কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারবেন।

Comments