☞ইসলামের দৃষ্টিতে চুল রাখার বিধান।
*******************************
আজকাল অনেকেই বিভিন্ন স্টাইলে চুল কাটান। মাথার কিছু অংশের চুল মুন্ডিয়ে বা ছোট করে অবশিষ্ট কিছু অংশের চুল রেখে দেয়া হয়। এভাবে চুলের কাটিং করা সম্পূর্ণ নিষেধ। একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এভাবে চুল কাটাকে ‘কুযা’ শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন। ‘কুযা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ, আকাশের বিক্ষিপ্ত মেঘমালা। আকাশের কিছু স্থানে মেঘ থাকে আবার কিছু স্থানে মেঘ থাকে না। এভাবে মেঘ সদৃশ্য স্টাইলে মাথার কোথাও বা কোনো অংশে চুল রাখা এবং কোনো অংশের চুল ছাঁটা ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষেধ ও বর্জনীয়।
ইমাম বুখারি (রা.) তার বুখারি শরিফের পোশাক অধ্যায়ে এই নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত একটি পরিচ্ছেদ বিন্যস্ত করেছেন।
মুসলিম শরীফের এক হাদিসে আছে, প্রিয় নবী (সা.) একটি শিশুর চুল এভাবে দেখে এরূপ চুল কাটতে নিষেধ করে বলেন, হয়তো সব চুল মুন্ডিয়ে ফেল অথবা সব চুল রেখে দাও। (মেশকাত শরিফ ৩২৪)
ছেলেদের মাথার চুল রাখার সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি
পুরুষের মাথার চুল রাখার ক্ষেত্রে বিধান হল, বাবরি চুল রাখা রাসূল সাঃ এর সুন্নাত। আর মাথা কামিয়ে রাখা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে প্রমাণিত। এটিকেও সুন্নাহ বলা যাবে। তবে সাহাবীদের সুন্নাহ। রাসূল সাঃ থেকে সরাসরি প্রমাণিত সুন্নাহ নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুধু হজ্ব শেষে মাথার চুল কামিয়েছেন মর্মে হাদীস পাওয়া যায়। এছাড়া আর কখনো চুল কামিয়েছেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায় না।
যেহেতু সাহাবায়ে কেরাম রাঃ গণকেও অনুসরণীয় সাব্যস্ত করা হয়েছে।
আধুনিক স্টাইলে চুল রাখার ব্যাপারে যা বলছে ইসলাম।
ইদানিং আমাদের সমাজে দেখা যাচ্ছে অনেক তরুণ নিজেদের মাথার চুল আধুনিক স্টাইলে কাটছেন। এ বিষয়ে ইসলামের স্পষ্ট ব্যাখ্যা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগেই দিয়েছেন। আবু দাউদ শরীফের কয়েকটি হাদিসের মাধ্যমে জেনে নিন, ইসলামে মাথার চুল ঠিক কত বড় রাখার বিধান রয়েছে।
রাসূল সাঃ সর্বদাই বাবরী রেখেছেন। তাই বাবরী রাখা রাসূল সাঃ এর সুন্নত। বাবরী তিনি কিভাবে রাখতেন?
এ বিষয়ে তিন ধরণের বর্ণনা এসেছে। যথা-
১. ওয়াফরা- তথা কানের লতি পর্যন্ত চুল।
২. লিম্মা- তথা গর্দান ও কানের লতির মাঝামাঝি বরাবর বড় রাখা।
৩. জুম্মা- তথা ঘাড় পর্যন্ত আলম্বিত চুল।
ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺷَﻌْﺮُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﻟَﻰ ﺷَﺤْﻤَﺔِ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ » ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ -)
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ এর চুল তাঁর দুই কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৫}।
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻛَﺎﻥَ ﺷَﻌْﺮُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻮْﻕَ ﺍﻟْﻮَﻓْﺮَﺓِ، ﻭَﺩُﻭﻧَﺎﻟْﺠُﻤَّﺔِ » ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ -
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ এর চুল ঘাড়ের উপর এবং কানের নীচ পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৭}।
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ، ﻗَﺎﻝَ, ﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻣِﻦْ ﺫِﻱ ﻟِﻤَّﺔٍ ﺃَﺣْﺴَﻦَ ﻓِﻲ ﺣُﻠَّﺔٍ ﺣَﻤْﺮَﺍﺀَ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ » ﺯَﺍﺩَ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ
ﺑْﻦُ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ : « ﻟَﻪُ ﺷَﻌْﺮٌ ﻳَﻀْﺮِﺏُ ﻣَﻨْﻜِﺒَﻴْﻪِ » ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ-)
হযরত বারা বিন আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কোন ব্যক্তিকে কান পর্যন্ত বাবরীধারী, লাল ইয়ামেনী চাদরের আবরণে রাসূল সাঃ থেকে অধিক সুন্দর দেখিনি। রাবী মুহাম্মদ রহঃ অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন যে, তাঁর চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা ছিল। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৮৩}
হজ্ব শেষে চুল কামানো, আর অন্য সময় উপরোক্ত তিন পদ্ধতির বাবরি রাখাই রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত। আর কোন পদ্ধতির চুল রাখার কোন বর্ণনা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়। তাই বাবরি রাখাই রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত সুন্নত। অন্য কোন পদ্ধতি রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত সুন্নত বলা যাবে না।
হ্যাঁ, হযরত আলী রাঃ সহ আরো কিছু সাহাবী থেকে চুল কামিয়ে ফেলা প্রমাণিত। যা চুল কামানোকে জায়েজ প্রমাণিত করে। কিন্তু এটি রাসূল সাঃ এর সুন্নত বলা যাবে না। সাহাবায়ে কেরামের সুন্নত বলা যাবে।
চুল রাখার ক্ষেত্রে একটি নিষিদ্ধ পদ্ধতি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল, মাথার এক পাশের চুল কামিয়ে ফেলা, আরেকদিকের চুলকে রেখে দেয়া। এ পদ্ধতি নিষিদ্ধ তথা হারাম। তাই এ পদ্ধতিতে চুল রাখা জায়েজ নয়।
আর কোন পদ্ধতির জায়েজ বা নাজায়েজের কোন কথা পরিস্কার ভাষায় হাদীসে বর্ণিত হয়নি। বা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নয়। তাই উপরোক্ত নিষিদ্ধ পদ্ধতি বাদ দিয়ে যেকোন পদ্ধতিতে চুল রাখা জায়েজ। যেমন সমস্ত মাথার চুল সমান করে কাটা। বা সামনে খানিক বড় পিছনে ছোট। বা একদিকে বড় আরেক দিকে ছোট ইত্যাদি পদ্ধতি যতক্ষণ না কোন বিধর্মীর অনুসরণে করা না হবে ততক্ষণ তা নাজায়েজ বলার কোন সুযোগ নেই।
তবে এক্ষেত্রে অন্য সকল বিষয়ের মত চুল রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হল, চুলের কাটিং যেন কোন ফাসিক বা কাফির তথা বিধর্মী কোন ব্যক্তি বা দলের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ না হয়। যদি কোন কাফের বা ফাসিকের সাথে সাদৃশ্য রেখে চুল রাখা হয় তাহলে তা জায়েজ হবে না।
যেমন কোন বিধর্মী খেলোয়ারের হেয়ার স্টাইল নকল করে তার মত চুলে স্টাইল করা ইত্যাদি।
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻗَﺎﻝَ, ﻧَﻬَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻘَﺰَﻉِ » ، ﻭَﺍﻟْﻘَﺰَﻉُ : ﺃَﻥْ ﻳُﺤْﻠَﻖَ ﺭَﺃْﺱُ ﺍﻟﺼَّﺒِﻲِّ ﻓَﻴُﺘْﺮَﻙَ ﺑَﻌْﺾُ ﺷَﻌْﺮِﻩِ ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ৪১৯৩ )
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ কুযা করতে নিষেধ করেছেন। “কুযা” বলা হয়, বাচ্চার মাথার একাংশ কামিয়ে ফেলা, আরেকাংশের চুল না কামানো। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৯৩}।
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}।
ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟِﻲ ﺫُﺅَﺍﺑَﺔٌ، ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻟِﻲ ﺃُﻣِّﻲ : ﻟَﺎ ﺃَﺟُﺰُّﻫَﺎ، ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻤُﺪُّﻫَﺎ، ﻭَﻳَﺄْﺧُﺬُ ﺑِﻬَﺎ » ( ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ -)
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাথায় চুলের খোঁপা ছিল। আমার মা বলেন, আমি তা কাটবো না। কেননা, রাসূল সাঃ তা ধরে লম্বা করতেন এবং কাছে টেনে নিতেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৯৭}
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সুন্নাত অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন।
Comments
Post a Comment