আলিফ-লাম পর্ব- (০১)
বুলাগা বা অলংকারশাস্ত্রবীদদের মতে আলিফ-লামের প্রকার ও ব্যবহার।
আলিফ লামের ভাগ ও এর ব্যবহারবিধি নিয়ে আরবি ব্যাকরণবীদ ও অলংকারবীদদের মধ্যে একটা মতানৈক্য রয়েছে। পুরো বিষয়টি দুই পর্বে প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। আজ দেওয়া হলো শুধু বুলাগা তথা অলংকারবীদদের মতবাদটি। কিছুটা বিস্তারিতভাবে। ধৈর্য নিয়ে মনোযোগের সাথে পড়লে আশা করি চমৎকার একটি অধ্যায় আপনার সামনে পরিস্কার হবে।
এক.
পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রত্যেকটি বস্তু ও বিষয়েরই জাতিগত একটি হাকিকত বা বাস্তবতা আছে। যেমন— মানুষ। মানুষ বলতে আমরা কী বুঝি তার হাত-পা-নাক-চোখ-মুখ ইত্যাদি নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। তার অনুভব ও চিন্তাশক্তি আছে। সে এই এই করতে পারে। মানুষ বললে তার এই সব মিলিয়ে আমাদের চেতনায় যে বোধ জাগ্রত হয়, এটাই হলো মানুষের হাকিকত বা বাস্তবতা।
এ বাস্তবতাটি কিন্তু দৃশ্যমান নয়; আছে আমাদের অনুভবে, আমাদের চিন্তায়। আমরা চারপাশে যে লোকজন দেখি তারা হলো সে বাস্তবতার একেকটি সদস্য। সেই বাস্তবতাটি আমাদের সামনে প্রকশিত হয় এর অধীনে থাকা এইসব অসংখ্য সদস্যের মাধ্যমে। এবং এই সকল সদস্যের বাহ্যিক অবয়ব, কাম-কাজ ও আচার-ব্যবহার থেকে আমরা মানুষ নামক এ বাস্তবতাটিকে আমাদের অনুভবে ধারণ করেছি।
অথবা ধরুন—জোহর। জোহরের একটি নির্দিষ্ট বাস্তবতা আছে— এটা একটা সময়াংশ। এর মেয়াদ হলো দিনের এ সময় থেকে এ সময় পর্যন্ত। এটা একটা বাস্তবতা। এটা আছে আমাদের চিন্তায় এবং অনুভবে। আর আমরা প্রতিদিন যে জোহরের মুখোমুখি হই, তা হলো সে বাস্তবতার একেকটি অংশ বা সদস্য। এরকম প্রতিটি জিনিস— এর একটি জাতিগত বাস্তবতা আছে- চিন্তায় এবং অনুভবে।
দুই.
এ দিকে প্রাত্যহিক জীবনের সাধারণ কথা-বার্তায় আমাদেরকে বিভিন্ন বস্তুর উল্লেখ করতে হয়। এ উল্লেখ করতে গিয়ে সবসময় আমাদের চাহিদা একরকম থাকে না। স্বাভাবিক প্রয়োজনেই আমরা বস্তটিকে বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যবহার করতে চাই।
যেমন,
কোন সময় সে বস্তুটির বাস্তবে যে সদস্যরা আছে তাদের কথা বিবেচনায় না নিয়ে, অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আমাদের চিন্তায়, আমাদের অনুভবে যে বাস্তবতাকে ধারণ করেছি শুধু সে বাস্তবতা বা হাকিকতটিইই বুঝাতে চাই।
আবার কোন সময় বুঝাতে চাই এ বাস্তবতাটির বাস্তব সদস্যগুলোর কোন একটি বা কয়েকটিকে—সুনির্দিষ্টভাবে হোক বা অনির্দিষ্টভাবে।
আবার অনুভবজাত হাকিকতটিও আমরা একভাবে বুঝাই না; একে বরং প্রকাশ করতে চাই নানা আঙ্গিকে।
১. কখনো চিন্তাগত একটি সদস্যের ভেতর দিয়ে একে কল্পনা করি।
২. আবার কখনো চিন্তাগতভাবে সমস্ত সদস্যের ভেতর দিয়ে একে কল্পনা করি।
এ সমস্তের ধারণা গড়ে উঠে কখনো ব্যাপকভাবে, অর্থাৎ এ জাতের অন্তর্ভুক্ত দুনিয়ার সমস্ত সদস্য উদ্দেশ্য হয়, আবার সমস্তের ধারণাটি গড়ে উঠে বিশেষ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। উদাহরণে বিষয়টি পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
৩. আবার কখনো চিন্তাগতভাবে কোন সদস্যের বিবেচনা থাকে না; চিন্তায় থাকা নিরেট বাস্তবতাটিকেই কেবল বুঝাই।
প্রথমটির উদাহরণ হলো—
تريد اللحم؟ فما تفعل؟ ايوه, ادخل السوق, واعط اللحام الفلوس فخذ اللحم.
ওহ্, তুমি গোশত কিনতে চাও? তোমাকে কী করতে হবে? তুমি বাজারে যাও, গোশতওয়ালাকে টাকা দাও, এরপর গোশত বুঝে নাও। ব্যস্।
বুঝাই যাচ্ছে—এ বাক্যে السوق শব্দটি দ্বারা নির্দিষ্ট কোন বাজার উদ্দেশ্য নয়, বাজার বলতে আমরা যা বুঝি সে হাকিকত উদ্দেশ্য। কিন্তু নিরেট হাকিকতও উদ্দেশ্য নয়। কারণ, এটি সম্পূর্ণই একটি অনুভবগত একক বিষয়। এর ভেতরে প্রবেশ করা যায় না। বরং এখানে এর বাস্তবতাটিকে কল্পিত সদস্যের ভেতর দিয়ে চিন্তা করা হয়েছে।
আবার সমস্ত সদস্যও উদ্দেশ্য নয়; কারণ, দুনিয়ার সমস্ত বাজারে প্রবেশ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে জীবনবাজী রেখে সম্ভব করতে চাইলেও এখানে আমি নিশ্চয়ই তা বুঝাইনি।
তো, বলতেই হচ্ছে— এখানে বাজারের হাকিকতকে চিন্তা করা হয়েছে চিন্তাগতভাবে একটি বাজারের ভেতর দিয়ে। এই আরকি।
দ্বিতীয়টির উদাহরণ হলো—
الحمد لله رب العلمين.
তো, এখানে প্রশংসা দ্বারা বাস্তবের সুনির্দিষ্ট কোন প্রশংসা উদ্দেশ্য নয়। কারণ এর দ্বারা প্রশংসার পরিমাণ কমে আসবে। উদ্দেশ্য হলো প্রশংসা বলতে যে বাস্তবতা আছে—তা। আবার নিরেট বাস্তবতাটিও উদ্দেশ্য নয়। কারণ এটি সম্পূর্ণই ধারণাগত একক একটি বিষয়।
বরং এখানে বাস্তবতাকে কল্পনা করা হয়েছে চিন্তাগত সদস্যের ভেতর দিয়ে। আবার কোন একটি সদস্যও নয়। কারণ এর দ্বারাও প্রশংসার পরিমাণ কমে আসবে। বরং বাস্তবতাটিকে কল্পনা করা হয়েছে— এর চিন্তাগত সমস্ত সদস্যের ভেতর দিয়ে। এবং তাহলেই কেবল আল্লাহ তাআলার উপযুক্ত প্রশংসা করা হবে।
এতো হলো— সমস্তের ধারণাটি যখন ব্যাপক হয়—এর উদাহরণ।
কিন্তু মাদরাসার প্রিন্সিপাল যদি বলেন—
اعلان هام! والطلاب خاضعون لهذا.
সমস্ত ছাত্র এ আইন মানতে বাধ্য।
এখানে ছাত্র বলতে যে হাকিকত আছে তাকে চিন্তাগত সকল সদস্যের ভেতর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু এ সমস্তের ধারণাটি ব্যাপক নয়; এ মাদরাসা কেন্দ্রিক।
তৃতীয়টির উদাহরণ হলো—
الماء هو الحياة
পানির অপর নাম জীবন। তো, এ ধরণের কথা বললে আমরা বাস্তবের সুনির্দিষ্ট কোন পানি বুঝাই না। বুঝাই পানি বলতে যে হাকিকত আছে তা। এবং এ বাস্তবতাকে আমরা চিন্তাগত সদস্যদের ভেতর দিয়েও কল্পনা করি না। নিরেট বাস্তবতাটিই বুঝাই।
মজার বিষয় হলো— কোন হাকিকতকে এ তিনো আঙ্গিকে বুঝাতে পারি শুধু মাত্র সে জিনিসটির জাতিগত নামের শুরুতে ال ব্যবহার করার দ্বারা।
প্রথমটির ক্ষেত্রে আলিফ
লামটিকে বলা হয়— العهدي الذهني।
দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে বলা হয়—
الاستغراقي الحقيقي او العرفي।
তৃতীয়টির ক্ষেত্রে বলা হয়— الجنسي
মনে রাখতে হবে এ তিনো প্রকার লামকে বলা হয় لام الحقيقة—বস্তু বা বিষয়ের বাস্তবতা নির্দেশক লাম। কারণ, তিনোটাই তো বাস্তবতা বুঝায়। ব্যবধান শুধু আঙ্গিকের।
অপরদিকে,
আমরা যখন কোন বস্তুর হাকিকত না বুঝিয়ে সে হাকিকতের কোন একটি বা কয়েকটি সদস্যকে বুঝাই, তখন হয়তো তা হবে সুনির্দিষ্টভাবে, না হয় হবে অনির্দিষ্টভাবে।
যদি অনির্দিষ্টভাবে বুঝাই তাহলে বাঙলায় ‘একটি’ বা ‘কয়েকটি’—ইত্যাদি শব্দযোগে সে জিনিসটির জাতিগত নামটি উল্লেখ করি। আরবিতে এ ক্ষেত্রে জিনিসটির শুরুতে ال না লাগিয়ে বা নির্দিষ্ট করণের অন্য কোন পন্থা গ্রহণ না শুধু জাতিগত নামটি উল্লেখ করলেই হয়ে যায়।
যেমন : رأيت رجلا আমি একটি লোককে দেখেছি।
কিন্তু,
সুনির্দিষ্টভাবে বুঝাতে গেলে নির্দিষ্ট করণের অন্য যে কোন পন্থা গ্রহণ করলে তো করলামই।
না করলে সামনের তিনটি পন্থার যে কোন একটি গ্রহণ করি। যখন যে পন্থাটি দরকারী ও উপযুক্ত মনে হয়।
১. হয়তো সে বস্তুটির ব্যাক্তিগত নামটি উল্লেখ করি। যেমন :جاء زيد أو جاء زيد وكريم وبكر যায়েদ এসেছে বা যায়েদ, করীম, বকর এসেছে।
২. না হয় সর্বনাম ব্যবহার করি।هو جاء أو هؤلاء جاءوا সে এসেছে বা তারা এসেছে।
৩. কিন্তু কখনো জানা না থাকার কারণে, বা শ্রোতা চিনবে না এই ভয়ে বা অন্য যে সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা ব্যাক্তিগত নামটি বা সর্বনামটি ব্যবহার করতে পারি না বা করি না। সে সকল জায়গায় বাঙলায় টি টা গুলো ইত্যাদিযোগে তার জাতিগত নামটি উল্লেখ করে নির্দিষ্ট করি।
যেমন : লোকটি এসেছে। মানুষটি এসেছে। লোকগুলো এসেছে। মানুষগুলো এসেছে। আরবি ভাষায় ঠিক এ জায়গাটিতে এক বচন, দ্বি-বচন বা বহুবচনীয় জাতিগত শব্দটির শুরুতে আলিফ লাম ব্যবহার করলেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যায়।
লাম তথা আলিফ লামের মাধ্যমে এ সুবিধাটি পেতে হলে শর্ত হলো-
১. আপনার বক্তব্যে এ বস্তুটি উল্লেখ পেছনে একবার থাকতে হবে।
যেমন— বললেন :
رأيت رجلا يمشي في الطريق. فظننت انه يفر من الحي. فيا للعجب! أري بعد قليل أن الرجل راجع.
একটা লোককে দেখলাম রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে। আমি তো ভাবলাম সে বুঝি এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওমা, একটু পর দেখি লোকটা আবার ফিরে আসছে!!
২. অথবা আপনার বক্তব্যের শুরুতে এর দিকে ইঙ্গিত থাকতে হবে। যেমন, আপনি বললেন—
صرت عطشان من المشي. فاضطررت الي ظل شجرة وانا انتظر أري هل من سبيل؟ ويا للفرح هذا الساقي.
হাঁটতে হাঁটতে আমার খুব পিপাসা পেল। বাধ্য হয়ে আমি একটা ছায়ায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। দেখি কোন উপায় হয় কি না। আর কী আনন্দ, একটু পরই দেখলাম পানিওয়ালাটি হাজির।
৩. অথবা পারিপার্শিক অবস্থা থেকে শ্রোতার মাথায় এর বিষয়টি আগে থেকে স্থির থাকতে হবে। যেমন মাদারাসার প্রিন্সিপাল কোন শিক্ষার্থীকে ডাক দিয়ে বললেন,
يا هذا الولد! ادع لي الحاجب.
এই মিয়া দারোয়ানটিকে আসতে বলো।
ছাত্রটি কিন্তু সাথে সাথে বুঝে ফেলবে দারোয়ান বলতে যে কোন জায়গার দারোয়ান উদ্দেশ্য নয়; মাদরাসার দারোয়ান।
যদি এরকম না হয় তাহলে আপনি খালি মাঠে হঠাৎ করে বললেন : লোকটি এসেছে, বা ছাত্রগুলো এসেছে, তো এতে শ্রোতা কী বুঝবে! আচ্ছা, আপনিই বলুন— কী বুঝবে? আজীব!!
এ আলিফ লামটিকে বলা হয়— العهد الخارجي.
একটা প্রশ্ন থেকে যায়— সবগুলোতেই তো জাতিগত নামটির শুরুতে আলিফ লাম ব্যবহার করা হয়, তো বুঝবো কী করে কখন কোনটি দ্বারা কী উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে?
এর উত্তর হলো— আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আগ-পিছের বক্তব্য, পারিপার্শিক অবস্থা ইত্যাদিই বলে দিবে কখন কোনটি উদ্দেশ্য। উদাহরণগুলোতে আপনি চিন্তা করুন। ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে আসবে।
বুলাগা বা অলংকারশাস্ত্রবীদদের মতে আলিফ-লামের প্রকার ও ব্যবহার।
আলিফ লামের ভাগ ও এর ব্যবহারবিধি নিয়ে আরবি ব্যাকরণবীদ ও অলংকারবীদদের মধ্যে একটা মতানৈক্য রয়েছে। পুরো বিষয়টি দুই পর্বে প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ। আজ দেওয়া হলো শুধু বুলাগা তথা অলংকারবীদদের মতবাদটি। কিছুটা বিস্তারিতভাবে। ধৈর্য নিয়ে মনোযোগের সাথে পড়লে আশা করি চমৎকার একটি অধ্যায় আপনার সামনে পরিস্কার হবে।
এক.
পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রত্যেকটি বস্তু ও বিষয়েরই জাতিগত একটি হাকিকত বা বাস্তবতা আছে। যেমন— মানুষ। মানুষ বলতে আমরা কী বুঝি তার হাত-পা-নাক-চোখ-মুখ ইত্যাদি নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। তার অনুভব ও চিন্তাশক্তি আছে। সে এই এই করতে পারে। মানুষ বললে তার এই সব মিলিয়ে আমাদের চেতনায় যে বোধ জাগ্রত হয়, এটাই হলো মানুষের হাকিকত বা বাস্তবতা।
এ বাস্তবতাটি কিন্তু দৃশ্যমান নয়; আছে আমাদের অনুভবে, আমাদের চিন্তায়। আমরা চারপাশে যে লোকজন দেখি তারা হলো সে বাস্তবতার একেকটি সদস্য। সেই বাস্তবতাটি আমাদের সামনে প্রকশিত হয় এর অধীনে থাকা এইসব অসংখ্য সদস্যের মাধ্যমে। এবং এই সকল সদস্যের বাহ্যিক অবয়ব, কাম-কাজ ও আচার-ব্যবহার থেকে আমরা মানুষ নামক এ বাস্তবতাটিকে আমাদের অনুভবে ধারণ করেছি।
অথবা ধরুন—জোহর। জোহরের একটি নির্দিষ্ট বাস্তবতা আছে— এটা একটা সময়াংশ। এর মেয়াদ হলো দিনের এ সময় থেকে এ সময় পর্যন্ত। এটা একটা বাস্তবতা। এটা আছে আমাদের চিন্তায় এবং অনুভবে। আর আমরা প্রতিদিন যে জোহরের মুখোমুখি হই, তা হলো সে বাস্তবতার একেকটি অংশ বা সদস্য। এরকম প্রতিটি জিনিস— এর একটি জাতিগত বাস্তবতা আছে- চিন্তায় এবং অনুভবে।
দুই.
এ দিকে প্রাত্যহিক জীবনের সাধারণ কথা-বার্তায় আমাদেরকে বিভিন্ন বস্তুর উল্লেখ করতে হয়। এ উল্লেখ করতে গিয়ে সবসময় আমাদের চাহিদা একরকম থাকে না। স্বাভাবিক প্রয়োজনেই আমরা বস্তটিকে বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যবহার করতে চাই।
যেমন,
কোন সময় সে বস্তুটির বাস্তবে যে সদস্যরা আছে তাদের কথা বিবেচনায় না নিয়ে, অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আমাদের চিন্তায়, আমাদের অনুভবে যে বাস্তবতাকে ধারণ করেছি শুধু সে বাস্তবতা বা হাকিকতটিইই বুঝাতে চাই।
আবার কোন সময় বুঝাতে চাই এ বাস্তবতাটির বাস্তব সদস্যগুলোর কোন একটি বা কয়েকটিকে—সুনির্দিষ্টভাবে হোক বা অনির্দিষ্টভাবে।
আবার অনুভবজাত হাকিকতটিও আমরা একভাবে বুঝাই না; একে বরং প্রকাশ করতে চাই নানা আঙ্গিকে।
১. কখনো চিন্তাগত একটি সদস্যের ভেতর দিয়ে একে কল্পনা করি।
২. আবার কখনো চিন্তাগতভাবে সমস্ত সদস্যের ভেতর দিয়ে একে কল্পনা করি।
এ সমস্তের ধারণা গড়ে উঠে কখনো ব্যাপকভাবে, অর্থাৎ এ জাতের অন্তর্ভুক্ত দুনিয়ার সমস্ত সদস্য উদ্দেশ্য হয়, আবার সমস্তের ধারণাটি গড়ে উঠে বিশেষ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। উদাহরণে বিষয়টি পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
৩. আবার কখনো চিন্তাগতভাবে কোন সদস্যের বিবেচনা থাকে না; চিন্তায় থাকা নিরেট বাস্তবতাটিকেই কেবল বুঝাই।
প্রথমটির উদাহরণ হলো—
تريد اللحم؟ فما تفعل؟ ايوه, ادخل السوق, واعط اللحام الفلوس فخذ اللحم.
ওহ্, তুমি গোশত কিনতে চাও? তোমাকে কী করতে হবে? তুমি বাজারে যাও, গোশতওয়ালাকে টাকা দাও, এরপর গোশত বুঝে নাও। ব্যস্।
বুঝাই যাচ্ছে—এ বাক্যে السوق শব্দটি দ্বারা নির্দিষ্ট কোন বাজার উদ্দেশ্য নয়, বাজার বলতে আমরা যা বুঝি সে হাকিকত উদ্দেশ্য। কিন্তু নিরেট হাকিকতও উদ্দেশ্য নয়। কারণ, এটি সম্পূর্ণই একটি অনুভবগত একক বিষয়। এর ভেতরে প্রবেশ করা যায় না। বরং এখানে এর বাস্তবতাটিকে কল্পিত সদস্যের ভেতর দিয়ে চিন্তা করা হয়েছে।
আবার সমস্ত সদস্যও উদ্দেশ্য নয়; কারণ, দুনিয়ার সমস্ত বাজারে প্রবেশ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে জীবনবাজী রেখে সম্ভব করতে চাইলেও এখানে আমি নিশ্চয়ই তা বুঝাইনি।
তো, বলতেই হচ্ছে— এখানে বাজারের হাকিকতকে চিন্তা করা হয়েছে চিন্তাগতভাবে একটি বাজারের ভেতর দিয়ে। এই আরকি।
দ্বিতীয়টির উদাহরণ হলো—
الحمد لله رب العلمين.
তো, এখানে প্রশংসা দ্বারা বাস্তবের সুনির্দিষ্ট কোন প্রশংসা উদ্দেশ্য নয়। কারণ এর দ্বারা প্রশংসার পরিমাণ কমে আসবে। উদ্দেশ্য হলো প্রশংসা বলতে যে বাস্তবতা আছে—তা। আবার নিরেট বাস্তবতাটিও উদ্দেশ্য নয়। কারণ এটি সম্পূর্ণই ধারণাগত একক একটি বিষয়।
বরং এখানে বাস্তবতাকে কল্পনা করা হয়েছে চিন্তাগত সদস্যের ভেতর দিয়ে। আবার কোন একটি সদস্যও নয়। কারণ এর দ্বারাও প্রশংসার পরিমাণ কমে আসবে। বরং বাস্তবতাটিকে কল্পনা করা হয়েছে— এর চিন্তাগত সমস্ত সদস্যের ভেতর দিয়ে। এবং তাহলেই কেবল আল্লাহ তাআলার উপযুক্ত প্রশংসা করা হবে।
এতো হলো— সমস্তের ধারণাটি যখন ব্যাপক হয়—এর উদাহরণ।
কিন্তু মাদরাসার প্রিন্সিপাল যদি বলেন—
اعلان هام! والطلاب خاضعون لهذا.
সমস্ত ছাত্র এ আইন মানতে বাধ্য।
এখানে ছাত্র বলতে যে হাকিকত আছে তাকে চিন্তাগত সকল সদস্যের ভেতর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু এ সমস্তের ধারণাটি ব্যাপক নয়; এ মাদরাসা কেন্দ্রিক।
তৃতীয়টির উদাহরণ হলো—
الماء هو الحياة
পানির অপর নাম জীবন। তো, এ ধরণের কথা বললে আমরা বাস্তবের সুনির্দিষ্ট কোন পানি বুঝাই না। বুঝাই পানি বলতে যে হাকিকত আছে তা। এবং এ বাস্তবতাকে আমরা চিন্তাগত সদস্যদের ভেতর দিয়েও কল্পনা করি না। নিরেট বাস্তবতাটিই বুঝাই।
মজার বিষয় হলো— কোন হাকিকতকে এ তিনো আঙ্গিকে বুঝাতে পারি শুধু মাত্র সে জিনিসটির জাতিগত নামের শুরুতে ال ব্যবহার করার দ্বারা।
প্রথমটির ক্ষেত্রে আলিফ
লামটিকে বলা হয়— العهدي الذهني।
দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে বলা হয়—
الاستغراقي الحقيقي او العرفي।
তৃতীয়টির ক্ষেত্রে বলা হয়— الجنسي
মনে রাখতে হবে এ তিনো প্রকার লামকে বলা হয় لام الحقيقة—বস্তু বা বিষয়ের বাস্তবতা নির্দেশক লাম। কারণ, তিনোটাই তো বাস্তবতা বুঝায়। ব্যবধান শুধু আঙ্গিকের।
অপরদিকে,
আমরা যখন কোন বস্তুর হাকিকত না বুঝিয়ে সে হাকিকতের কোন একটি বা কয়েকটি সদস্যকে বুঝাই, তখন হয়তো তা হবে সুনির্দিষ্টভাবে, না হয় হবে অনির্দিষ্টভাবে।
যদি অনির্দিষ্টভাবে বুঝাই তাহলে বাঙলায় ‘একটি’ বা ‘কয়েকটি’—ইত্যাদি শব্দযোগে সে জিনিসটির জাতিগত নামটি উল্লেখ করি। আরবিতে এ ক্ষেত্রে জিনিসটির শুরুতে ال না লাগিয়ে বা নির্দিষ্ট করণের অন্য কোন পন্থা গ্রহণ না শুধু জাতিগত নামটি উল্লেখ করলেই হয়ে যায়।
যেমন : رأيت رجلا আমি একটি লোককে দেখেছি।
কিন্তু,
সুনির্দিষ্টভাবে বুঝাতে গেলে নির্দিষ্ট করণের অন্য যে কোন পন্থা গ্রহণ করলে তো করলামই।
না করলে সামনের তিনটি পন্থার যে কোন একটি গ্রহণ করি। যখন যে পন্থাটি দরকারী ও উপযুক্ত মনে হয়।
১. হয়তো সে বস্তুটির ব্যাক্তিগত নামটি উল্লেখ করি। যেমন :جاء زيد أو جاء زيد وكريم وبكر যায়েদ এসেছে বা যায়েদ, করীম, বকর এসেছে।
২. না হয় সর্বনাম ব্যবহার করি।هو جاء أو هؤلاء جاءوا সে এসেছে বা তারা এসেছে।
৩. কিন্তু কখনো জানা না থাকার কারণে, বা শ্রোতা চিনবে না এই ভয়ে বা অন্য যে সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা ব্যাক্তিগত নামটি বা সর্বনামটি ব্যবহার করতে পারি না বা করি না। সে সকল জায়গায় বাঙলায় টি টা গুলো ইত্যাদিযোগে তার জাতিগত নামটি উল্লেখ করে নির্দিষ্ট করি।
যেমন : লোকটি এসেছে। মানুষটি এসেছে। লোকগুলো এসেছে। মানুষগুলো এসেছে। আরবি ভাষায় ঠিক এ জায়গাটিতে এক বচন, দ্বি-বচন বা বহুবচনীয় জাতিগত শব্দটির শুরুতে আলিফ লাম ব্যবহার করলেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যায়।
লাম তথা আলিফ লামের মাধ্যমে এ সুবিধাটি পেতে হলে শর্ত হলো-
১. আপনার বক্তব্যে এ বস্তুটি উল্লেখ পেছনে একবার থাকতে হবে।
যেমন— বললেন :
رأيت رجلا يمشي في الطريق. فظننت انه يفر من الحي. فيا للعجب! أري بعد قليل أن الرجل راجع.
একটা লোককে দেখলাম রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে। আমি তো ভাবলাম সে বুঝি এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওমা, একটু পর দেখি লোকটা আবার ফিরে আসছে!!
২. অথবা আপনার বক্তব্যের শুরুতে এর দিকে ইঙ্গিত থাকতে হবে। যেমন, আপনি বললেন—
صرت عطشان من المشي. فاضطررت الي ظل شجرة وانا انتظر أري هل من سبيل؟ ويا للفرح هذا الساقي.
হাঁটতে হাঁটতে আমার খুব পিপাসা পেল। বাধ্য হয়ে আমি একটা ছায়ায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। দেখি কোন উপায় হয় কি না। আর কী আনন্দ, একটু পরই দেখলাম পানিওয়ালাটি হাজির।
৩. অথবা পারিপার্শিক অবস্থা থেকে শ্রোতার মাথায় এর বিষয়টি আগে থেকে স্থির থাকতে হবে। যেমন মাদারাসার প্রিন্সিপাল কোন শিক্ষার্থীকে ডাক দিয়ে বললেন,
يا هذا الولد! ادع لي الحاجب.
এই মিয়া দারোয়ানটিকে আসতে বলো।
ছাত্রটি কিন্তু সাথে সাথে বুঝে ফেলবে দারোয়ান বলতে যে কোন জায়গার দারোয়ান উদ্দেশ্য নয়; মাদরাসার দারোয়ান।
যদি এরকম না হয় তাহলে আপনি খালি মাঠে হঠাৎ করে বললেন : লোকটি এসেছে, বা ছাত্রগুলো এসেছে, তো এতে শ্রোতা কী বুঝবে! আচ্ছা, আপনিই বলুন— কী বুঝবে? আজীব!!
এ আলিফ লামটিকে বলা হয়— العهد الخارجي.
একটা প্রশ্ন থেকে যায়— সবগুলোতেই তো জাতিগত নামটির শুরুতে আলিফ লাম ব্যবহার করা হয়, তো বুঝবো কী করে কখন কোনটি দ্বারা কী উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে?
এর উত্তর হলো— আপনাকে কিছুই করতে হবে না। আগ-পিছের বক্তব্য, পারিপার্শিক অবস্থা ইত্যাদিই বলে দিবে কখন কোনটি উদ্দেশ্য। উদাহরণগুলোতে আপনি চিন্তা করুন। ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে আসবে।
Comments
Post a Comment