নবিজীর পবিত্র আহলে বাইত মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শনঃ-
************************************************

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কালজয়ী বিপ্লব ও আন্দোলন সংক্রান্ত আলোচনার পূর্বে তাঁর কতিপয় ফযিলত বা গুণ আলোচনা করা প্রয়োজন। কারণ, এর ফলে আমরা তাঁর সুমহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা লাভ করতে পারব। আর এটা তাঁর আন্দোলনের স্বরূপ ও প্রকৃতি এবং তাৎপর্য অনুধাবনে সহায়ক হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ وَمَنۡ يُّعَظِّمۡ شَعَآٮِٕرَ اللّٰهِ فَاِنَّهَا مِنۡ تَقۡوَى الۡقُلُوۡبِ﴾
‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নিদর্শনাদির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে তাহলে তা তো হবে তার হৃদয়ের তাকওয়া প্রভূত।’ (সূরা হজ্ব : ৩২)
অন্য জায়গায় আছে,
﴿اِنَّ الصَّفَا وَالۡمَرۡوَةَ مِنۡ شَعَآٮِٕرِ اللّٰهِۚ ﴾
‘নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম।’
(সূরা বাকারাহ্ : ১৫৮)
অন্য জায়গায় এসেছে,
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَالكُم مِنْ شَعَائِرِ اللهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ..
‘এবং কাবার জন্য উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে।’
(সূরা হজ্ব : ৩৬)
নিঃসন্দেহে মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তার প্রমাণ প্রাগুক্ত আয়াত সমূহ। যেখানে সাফা-মারওয়াহ্ পাহাড়দ্বয় এবং হজ্বের কুরবানির উটকে মহান আল্লাহর নিদর্শন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মহান আম্বিয়া ও আউলিয়ায়ে কেরাম বিশেষ করে নূরনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত, মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন (شَعَائِرَائِر)।
তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ইমাম হোসাইন (আ.) মহান আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনাদির অন্যতম। আর তাঁকে সম্মান করা পবিত্র কুরআনের ভাষায় অন্তরের তাক্ওয়া স্বরূপ। তাঁর শাহাদাতের মাসে তাঁকে স্মরণ করা, তাঁর মহান ত্যাগ ও কর্মকান্ড- আলোচনা করে তা থেকে শিক্ষা নেয়া, অনুপ্রাণিত হওয়া, কারবালার মরুপ্রান্তরে পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ, ইবনে যিয়াদের বাহিনীর হাতে তাঁর ও তাঁর সংগী-সাথীদের হৃদয় বিদারক শাহাদাতবরণ ও নির্যাতনের কথা স্মরণ, তাঁদের পুণ্য স্মৃতিকে চিরজাগরুক ও অম্লান রাখার জন্য শোকানুষ্ঠান পালন,কান্না-কাটি ও অশ্রুপাত করা, আসলে তাঁকে অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শনাদির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তা অন্তরের তাকওয়া প্রসূত।
আর তাঁর শোকে শোকাভিভূত না হয়ে হাসি-আনন্দ প্রকাশ করাই যে শয়তান, ইয়াযীদ ও ইয়াযীদীনের অনুসরণ এবং তাক্ওয়া বিরোধী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইমাম হোসাইন (আ.) মহানবীর আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য। অগণিত হাদীস বিশেষ করে প্রসিদ্ধ হাদীসে কিসার মাধ্যমে প্রমাণিত যে, স্বয়ং মহানবী (সা.), হযরত ফাতেমা, হযরত আলী, হযরত হাসান ও হযরত হোসাইনকে নিয়ে মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত বা নবী পরিবার- যাঁদেরকে মহান আল্লাহ সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে মাসূম বা সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র (নিষ্পাপ) বলে ঘোষণা করেছেন।
************************************************

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কালজয়ী বিপ্লব ও আন্দোলন সংক্রান্ত আলোচনার পূর্বে তাঁর কতিপয় ফযিলত বা গুণ আলোচনা করা প্রয়োজন। কারণ, এর ফলে আমরা তাঁর সুমহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা লাভ করতে পারব। আর এটা তাঁর আন্দোলনের স্বরূপ ও প্রকৃতি এবং তাৎপর্য অনুধাবনে সহায়ক হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ وَمَنۡ يُّعَظِّمۡ شَعَآٮِٕرَ اللّٰهِ فَاِنَّهَا مِنۡ تَقۡوَى الۡقُلُوۡبِ﴾
‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নিদর্শনাদির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে তাহলে তা তো হবে তার হৃদয়ের তাকওয়া প্রভূত।’ (সূরা হজ্ব : ৩২)
অন্য জায়গায় আছে,
﴿اِنَّ الصَّفَا وَالۡمَرۡوَةَ مِنۡ شَعَآٮِٕرِ اللّٰهِۚ ﴾
‘নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম।’
(সূরা বাকারাহ্ : ১৫৮)
অন্য জায়গায় এসেছে,
وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَالكُم مِنْ شَعَائِرِ اللهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ..
‘এবং কাবার জন্য উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে।’
(সূরা হজ্ব : ৩৬)
নিঃসন্দেহে মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। তার প্রমাণ প্রাগুক্ত আয়াত সমূহ। যেখানে সাফা-মারওয়াহ্ পাহাড়দ্বয় এবং হজ্বের কুরবানির উটকে মহান আল্লাহর নিদর্শন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মহান আম্বিয়া ও আউলিয়ায়ে কেরাম বিশেষ করে নূরনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত, মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন (شَعَائِرَائِر)।
তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ইমাম হোসাইন (আ.) মহান আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনাদির অন্যতম। আর তাঁকে সম্মান করা পবিত্র কুরআনের ভাষায় অন্তরের তাক্ওয়া স্বরূপ। তাঁর শাহাদাতের মাসে তাঁকে স্মরণ করা, তাঁর মহান ত্যাগ ও কর্মকান্ড- আলোচনা করে তা থেকে শিক্ষা নেয়া, অনুপ্রাণিত হওয়া, কারবালার মরুপ্রান্তরে পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ, ইবনে যিয়াদের বাহিনীর হাতে তাঁর ও তাঁর সংগী-সাথীদের হৃদয় বিদারক শাহাদাতবরণ ও নির্যাতনের কথা স্মরণ, তাঁদের পুণ্য স্মৃতিকে চিরজাগরুক ও অম্লান রাখার জন্য শোকানুষ্ঠান পালন,কান্না-কাটি ও অশ্রুপাত করা, আসলে তাঁকে অর্থাৎ আল্লাহর নিদর্শনাদির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তা অন্তরের তাকওয়া প্রসূত।
আর তাঁর শোকে শোকাভিভূত না হয়ে হাসি-আনন্দ প্রকাশ করাই যে শয়তান, ইয়াযীদ ও ইয়াযীদীনের অনুসরণ এবং তাক্ওয়া বিরোধী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইমাম হোসাইন (আ.) মহানবীর আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য। অগণিত হাদীস বিশেষ করে প্রসিদ্ধ হাদীসে কিসার মাধ্যমে প্রমাণিত যে, স্বয়ং মহানবী (সা.), হযরত ফাতেমা, হযরত আলী, হযরত হাসান ও হযরত হোসাইনকে নিয়ে মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত বা নবী পরিবার- যাঁদেরকে মহান আল্লাহ সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে মাসূম বা সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র (নিষ্পাপ) বলে ঘোষণা করেছেন।
মহান আল্লাহ্ বলেন :
اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّزْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًأ...
‘হে (নবীর) আহলে বাইত! নিশ্চয় মহান আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে সকল অপবিত্রতা ও পাপ-পঙ্কিলতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’
(সূরা আহযাব : ৩৩)
অতএব, প্রমাণিত হয় যে, ইমাম হোসাইন (আ.) আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হওয়ার কারণে সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র (মাসূম)।
এ কারণেই মহানবী (সা.) ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন সম্পর্কে বলেছেন :
الحَسَنُ وَ الْحُسَيْنُ سَيْدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ...
‘হাসান ও হোসাইন উভয়েই বেহেশতের যুবকদের নেতা।’
(জামে আত্ তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৫০)
সহীহ্ তিরমিযীতে ইয়ালা ইবনে মুয়রা থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন :
حُسَيْنُ مِنِّي وَانَا مِنْ حُسَيْنِ اَحَبَّ اللهُ مَنْ اَحَبَّ حُسَيْنًا, حُسَيْنُ سِبْطٌ مِنَ الاَسْبَاطِ.....
‘হোসাইন আমার থেকে এবং আমি হোসাইন থেকে। যে ব্যক্তি হোসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ্ তাকে ভালোবাসেন। নাতিদের মধ্যে একজন হলো হোসাইন।’ (৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৫৪)
সালমান ফার্সী (রা.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত : মহানবী (সা.) বলেছেন :
اَلْحَسَنُ وَ الْحُسَيْنُ ابْنَايَ مَنْ اَحَبَّهُمَا اَحَبَّنِى وَمَنْ اَحَبّنِـى اَحَبَّـهُ اللهُ وَمَنْ أَحبَّـهُ اللهَ أَدْخَلَـهُ اللهُ الجَنَّـةَ ومَنْ أَبْغَضَهُمَا اَبغَضَنِى وَمَنْ أَبْغَضَنِى اَبْغَضَـهُ اللهُ وَ مَنْ اَبْغَضَـهُ اللهُ أَدْخَلَهُ النَّارَ عَلَى وَجْهِهِ.....
‘হাসান ও হোসাইন আমার দুই পুত্র (নাতি)। যে তাদেরকে ভালোবাসে সে আমাকেই ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসে মহান আল্লাহ্ তাকে ভালোবাসেন। আর যাকে মহান আল্লাহ্ ভালোবাসেন তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّزْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًأ...
‘হে (নবীর) আহলে বাইত! নিশ্চয় মহান আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে সকল অপবিত্রতা ও পাপ-পঙ্কিলতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’
(সূরা আহযাব : ৩৩)
অতএব, প্রমাণিত হয় যে, ইমাম হোসাইন (আ.) আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হওয়ার কারণে সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র (মাসূম)।
এ কারণেই মহানবী (সা.) ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন সম্পর্কে বলেছেন :
الحَسَنُ وَ الْحُسَيْنُ سَيْدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ...
‘হাসান ও হোসাইন উভয়েই বেহেশতের যুবকদের নেতা।’
(জামে আত্ তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৫০)
সহীহ্ তিরমিযীতে ইয়ালা ইবনে মুয়রা থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন :
حُسَيْنُ مِنِّي وَانَا مِنْ حُسَيْنِ اَحَبَّ اللهُ مَنْ اَحَبَّ حُسَيْنًا, حُسَيْنُ سِبْطٌ مِنَ الاَسْبَاطِ.....
‘হোসাইন আমার থেকে এবং আমি হোসাইন থেকে। যে ব্যক্তি হোসাইনকে ভালোবাসে আল্লাহ্ তাকে ভালোবাসেন। নাতিদের মধ্যে একজন হলো হোসাইন।’ (৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৫৪)
সালমান ফার্সী (রা.)-এর নিকট থেকে বর্ণিত : মহানবী (সা.) বলেছেন :
اَلْحَسَنُ وَ الْحُسَيْنُ ابْنَايَ مَنْ اَحَبَّهُمَا اَحَبَّنِى وَمَنْ اَحَبّنِـى اَحَبَّـهُ اللهُ وَمَنْ أَحبَّـهُ اللهَ أَدْخَلَـهُ اللهُ الجَنَّـةَ ومَنْ أَبْغَضَهُمَا اَبغَضَنِى وَمَنْ أَبْغَضَنِى اَبْغَضَـهُ اللهُ وَ مَنْ اَبْغَضَـهُ اللهُ أَدْخَلَهُ النَّارَ عَلَى وَجْهِهِ.....
‘হাসান ও হোসাইন আমার দুই পুত্র (নাতি)। যে তাদেরকে ভালোবাসে সে আমাকেই ভালোবাসে, আর যে আমাকে ভালোবাসে মহান আল্লাহ্ তাকে ভালোবাসেন। আর যাকে মহান আল্লাহ্ ভালোবাসেন তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
পক্ষান্তরে আর যে তাদেরকে ঘৃণা করে সে আমাকেই ঘৃণা করে, আর যে আমাকে ঘৃণা করে মহান আল্লাহ্ তাকে ঘৃণা করেন। আর যাকে মহান আল্লাহ ঘৃণা করেন তাকে তিনি জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’
(আলামুল ওয়ারা, পৃ ২১৯)
৪র্থ হিজরীর ৩ শা’বান ইমাম হুসাইনের জন্মগ্রহণ করার সুসংবাদ মহানবীকে দেয়া হলে তিনি দ্রুত হযরত আলী ও হযরত ফাতেমার ঘরে চলে যান এবং আসমা বিনতে উমাইসকে বলেন :
‘হে আসমা! আমার সন্তানকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ আসমা বিনতে উমাইস সদ্য ভূমিষ্ঠ হোসাইনকে একটি সাদা কাপড়ে জড়িয়ে মহানবীর কাছে আনলেন। মহানবী (সা.) হোসাইনকে নিজের কাছে টেনে নিলেন, তাঁর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামাত দিলেন। তারপর তিনি হোসাইনকে কোলে নিয়ে কাঁদতে লাগলেন। তখন আসমা বিনতে উমাইস জিজ্ঞাসা করলেন: ‘আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি কোনো কাঁদছেন?’
মহানবী (সা.) বললেন : ‘আমি আমার এ পুত্রকে দেখে কাঁদছি।’
আসমা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এতো এই মাত্র ভূমিষ্ঠ হয়েছে।’
মহানবী (সা.) তখন আসমাকে বললেন:
‘হে আসমা! আমার পর একদল খোদাদ্রোহী তাকে হত্যা করবে। আমি তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর কাছে শাফায়াত করব না।’ এরপর তিনি বললেন: ‘হে আসমা! তুমি ফাতেমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলো না। কারণ, সে সবেমাত্র সন্তান প্রসব করেছে।’
তারপর আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে তাঁর নাতির নাম রাখার জন্য নির্দেশ দিলে তিনি আলীর দিকে তাকিয়ে বললেন: ‘এর নাম রাখ হোসাইন।’ (আল্লামা তাবারসী প্রণীত আলামুল ওয়ারা বি আ’লামিল হুদা, পৃ. ২১৭)।
নিম্নের হদীছ শরীফ গুলো আরোও গুরত্ত্ব বহন করে-
ﻗﺎﻝ ﻭﺃﻧﺎ ﺗﺎﺭﻙ ﻓﻴﻜﻢ ﺛﻘﻠﻴﻦ، ﺃﻭﻟﻬﻤﺎ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﻬﺪﻯ ﻭﺍﻟﻨﻮﺭ، ﻓﺨﺬﻭﺍ ﺑﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﺳﺘﻤﺴﻜﻮﺍ ﺑﻪ ” ﻓﺤَﺚَّ ﻋﻠﻰ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﻏَّﺐَ ﻓﻴﻪ، ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ”: ﻭﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ، ﺃﺫﻛِّﺮَﻛُﻢُ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ، ﺃﺫﻛِّﺮَﻛُﻢُ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ، ﺃﺫﻛِّﺮَﻛُﻢُ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ...
অনুবাদ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান-আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারী ও সর্বোত্তম জিনিস রেখে যাচ্ছি ।
এক. আল্লাহ তা’আলার কিতাব যার মধ্যে হেদায়াত এবং নূর রয়েছে। একে ভালভাবে ধারণ কর।
কিতাবুল্লাহর উপর মানুষদিগকে উৎসাহ দিয়েছেন।
দুই. দ্বিতীয় হচ্ছে, আমার আহলে বাইত। আমি তোমাদেরকে আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহর ভীতি প্রদর্শন করছি। তোমরা আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। [মুসলিম শরীফ]
হযরত আবু বকর (রাঃ) ও সে কথাটি বলেছেন যে, “মহানবী (সাঃ)-এর সন্তুষ্টি তাঁর আহলে বাইতের ভালবাসার মধ্যে নিহিত।”
সূত্রঃ- সহীহ্ বোখারী, খঃ-৬, হাঃ-৩৪৪৭, ৩৪৭৯, (ই. ফাঃ);
তাফসীরে ইবনে কাসির, খঃ-১৬, পৃঃ-৫২৬;।
আহলে বাইতে রাসুলের দঃ মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ-
عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَىُّ أَهْلِ بَيْتِكَ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ " الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ " . وَكَانَ يَقُولُ لِفَاطِمَةَ " ادْعِي لِي ابْنَىَّ " . فَيَشُمُّهُمَا وَيَضُمُّهُمَا إِلَيْهِ . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ مِنْ حَدِيثِ أَنَسٍ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হল, আপনার আহলে বাইত–এর সদস্যগণের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন। তিনি ফাতেমা (রাঃ)-কে বলতেনঃ আমার দুই সন্তানকে আমার কাছে ডাক। তিনি তাদের ঘ্রাণ নিতেন এবং নিজের বুকের সাথে লাগাতেন।
যঈফ, মিশকাত (৬১৫৮)।
আহলে বাইত সম্পর্কে নবিজীর ভবিষ্যৎবাণী-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ إِذْ أَقْبَلَ فِتْيَةٌ مِنْ بَنِي هَاشِمٍ فَلَمَّا رَآهُمُ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ اغْرَوْرَقَتْ عَيْنَاهُ وَتَغَيَّرَ لَوْنُهُ قَالَ فَقُلْتُ مَا نَزَالُ نَرَى فِي وَجْهِكَ شَيْئًا نَكْرَهُهُ . فَقَالَ " إِنَّا أَهْلُ بَيْتٍ اخْتَارَ اللَّهُ لَنَا الآخِرَةَ عَلَى الدُّنْيَا وَإِنَّ أَهْلَ بَيْتِي سَيَلْقَوْنَ بَعْدِي بَلاَءً وَتَشْرِيدًا وَتَطْرِيدًا حَتَّى يَأْتِيَ قَوْمٌ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَعَهُمْ رَايَاتٌ سُودٌ فَيَسْأَلُونَ الْخَيْرَ فَلاَ يُعْطَوْنَهُ فَيُقَاتِلُونَ فَيُنْصَرُونَ فَيُعْطَوْنَ مَا سَأَلُوا فَلاَ يَقْبَلُونَهُ حَتَّى يَدْفَعُوهَا إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي فَيَمْلَؤُهَا قِسْطًا كَمَا مَلَؤُوهَا جَوْرًا فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلْيَأْتِهِمْ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ " .
আবদুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে বসা ছিলাম, তখন হাশিম বংশীয় কতক যুবক তাঁর নিকট উপস্থিত হলো। তাদের দেখতে পেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হলো এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। রাবী বলেন, আমি বললাম, আমরা সবসময় আপনার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করি। তিনি বলেনঃ আমাদের আহলে বাইতের জন্য আল্লাহ তা’আলা পার্থিব জীবনের পরিবর্তে আখিরাতের জীবনকে পছন্দ করেছেন। আমার আহলে বাইত আমার পরে অচিরেই কঠিন বিপদে লিপ্ত হবে, কষ্ট-কাঠিন্যের শিকার হবে এবং দেশান্তরিত হবে। প্রাচ্যদেশ থেকে কালো পতাকাধারী কতক লোক তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবে। তারা কল্যাণ(গুপ্তধন) কামনা করবে, কিন্তু তা তাদের দেওয়া হবে না। তারা লড়াই করবে এবং বিজয়ী হবে। শেষে তাদেরকে তা দেয়া হবে, যা তারা চেয়েছিল। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করবে না। অবশেষে আমার আহলে বাইতের একজন লোকের নিকট তা সোপর্দ করা হবে। সে পৃ্থিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবে, যেমনিভাবে লোকেরা একে যুলুমে পূর্ণ করেছিল। তোমাদের মধ্যে যারা সে যুগ পাবে, তারা যেন বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাদের নিকট চলে যায়।
ইবনে মাজাহ [৩৪১৪]
হাদীসে সাকালাইনঃ-
যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা মজবুতভাবে ধারণ (অনুসরণ) করলে আমার পর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অপরটির চাইতে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ : আল্লাহর কিতাব যা আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত প্রসারিত এবং আমার ইতরাৎ (বংশধর ও সন্তান) আমার আহলে বাইত। এ দু’টি কখনও বিছিন্ন হবে না হাউযে কাওসারে আমার কাছে উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত।
অতএব, তোমরা লক্ষ্য কর আমার পরে এতদুভয়ের সাথে তোমরা কীরূপ আচরণ কর।’ (জামে আত্-তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৬০, হাদীস নং ৩৭২৬)
যেহেতু ইমাম হোসাইন (আ.) মহানবীর ইতরাৎ অর্থাৎ সন্তান এবং আহলে বাইত তাই তাঁর সাথে পবিত্র কুরআনের সম্পর্ক যে অবিচ্ছেদ্য তা এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়।
সমগ্র মুসলিম উম্মাহ মহানবীর যুগ থেকে নামাযে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর বংশধরদের ওপরই কেবল দরূদ পড়ে আসছে; আর এরই অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। এ দুর্লভ মর্যাদা ও সম্মান আর কেউ পাননি। দরূদটি নিম্নরূপ :
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلىَ مَحَمَّدٍ وَ عَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَاهِيمَ وَ عَلى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدُ اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَاهِيْمَ وَ عَلَى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدُ
আয়াতুল মাওয়াদ্দাহ্:-
قُلْ لاَ أَسْألُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبَى...
‘বলুন, আমি আমার রিসালাতের দায়িত্ব পালন ও দাওয়াতের জন্য তোমাদের কাছে একমাত্র আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য (মাওয়াদ্দাহ্) ব্যতীত আর কোনো পারিশ্রমিক চাই না।’ (সূরা-শূরা : ২৩)
অগণিত রেওয়ায়েত অনুসারে এবং অনেক মুফাস্সিরের মতে উপরিউক্ত আয়াতটি আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনের শানে অবতীর্ণ হয়েছে।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ‘ফাযায়েলুস সাহাবা’ গ্রন্থে আমেরের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, ‘উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে সাহাবাগণ মহানবী (সা.)-কে বললেন : ‘আপনার নিকটাত্মীয় কারা যাঁদের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে?’ মহানবী (সা.) তাঁদেরকে বললেন : ‘আলী, ফাতেমা এবং তাদের দু’পুত্র। এ কথা তিনি তিনবার বললেন।
ইমাম শাফেয়ী যথার্থ বলেছেন :
ياَ اَلِ بَيْتِ رَسُـولِ اللهِ حُـبُّكُمْ * فَرْضٌ مِنْ اللهِ فِي الْقُرْاَنِ اَنْزَلَهُ
كَفَاكم مِنْ عَظِيـمِ الْفَخْرِ اَنَّكُمْ * مَنْ لَمْ يُصَلِّ عَلَيْكُمْ لاَ صلاَةَ لَهُ
‘হে রাসূলুল্লাহ্র আহলে বাইত! তোমাদের ভালোবাসা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয এবং তা তিনি পবিত্র কুরআনে অবতীর্ণ করেছেন তোমাদের গর্বের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি তোমাদের ওপর দরূদ পড়বে না তার নামাযই হবে না।’
(আলামুল ওয়ারা, পৃ ২১৯)
৪র্থ হিজরীর ৩ শা’বান ইমাম হুসাইনের জন্মগ্রহণ করার সুসংবাদ মহানবীকে দেয়া হলে তিনি দ্রুত হযরত আলী ও হযরত ফাতেমার ঘরে চলে যান এবং আসমা বিনতে উমাইসকে বলেন :
‘হে আসমা! আমার সন্তানকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ আসমা বিনতে উমাইস সদ্য ভূমিষ্ঠ হোসাইনকে একটি সাদা কাপড়ে জড়িয়ে মহানবীর কাছে আনলেন। মহানবী (সা.) হোসাইনকে নিজের কাছে টেনে নিলেন, তাঁর ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামাত দিলেন। তারপর তিনি হোসাইনকে কোলে নিয়ে কাঁদতে লাগলেন। তখন আসমা বিনতে উমাইস জিজ্ঞাসা করলেন: ‘আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আপনি কোনো কাঁদছেন?’
মহানবী (সা.) বললেন : ‘আমি আমার এ পুত্রকে দেখে কাঁদছি।’
আসমা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এতো এই মাত্র ভূমিষ্ঠ হয়েছে।’
মহানবী (সা.) তখন আসমাকে বললেন:
‘হে আসমা! আমার পর একদল খোদাদ্রোহী তাকে হত্যা করবে। আমি তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর কাছে শাফায়াত করব না।’ এরপর তিনি বললেন: ‘হে আসমা! তুমি ফাতেমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলো না। কারণ, সে সবেমাত্র সন্তান প্রসব করেছে।’
তারপর আল্লাহ মহানবী (সা.)-কে তাঁর নাতির নাম রাখার জন্য নির্দেশ দিলে তিনি আলীর দিকে তাকিয়ে বললেন: ‘এর নাম রাখ হোসাইন।’ (আল্লামা তাবারসী প্রণীত আলামুল ওয়ারা বি আ’লামিল হুদা, পৃ. ২১৭)।
নিম্নের হদীছ শরীফ গুলো আরোও গুরত্ত্ব বহন করে-
ﻗﺎﻝ ﻭﺃﻧﺎ ﺗﺎﺭﻙ ﻓﻴﻜﻢ ﺛﻘﻠﻴﻦ، ﺃﻭﻟﻬﻤﺎ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﻬﺪﻯ ﻭﺍﻟﻨﻮﺭ، ﻓﺨﺬﻭﺍ ﺑﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﺳﺘﻤﺴﻜﻮﺍ ﺑﻪ ” ﻓﺤَﺚَّ ﻋﻠﻰ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﻏَّﺐَ ﻓﻴﻪ، ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ”: ﻭﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ، ﺃﺫﻛِّﺮَﻛُﻢُ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ، ﺃﺫﻛِّﺮَﻛُﻢُ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ، ﺃﺫﻛِّﺮَﻛُﻢُ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ...
অনুবাদ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান-আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারী ও সর্বোত্তম জিনিস রেখে যাচ্ছি ।
এক. আল্লাহ তা’আলার কিতাব যার মধ্যে হেদায়াত এবং নূর রয়েছে। একে ভালভাবে ধারণ কর।
কিতাবুল্লাহর উপর মানুষদিগকে উৎসাহ দিয়েছেন।
দুই. দ্বিতীয় হচ্ছে, আমার আহলে বাইত। আমি তোমাদেরকে আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহর ভীতি প্রদর্শন করছি। তোমরা আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। [মুসলিম শরীফ]
হযরত আবু বকর (রাঃ) ও সে কথাটি বলেছেন যে, “মহানবী (সাঃ)-এর সন্তুষ্টি তাঁর আহলে বাইতের ভালবাসার মধ্যে নিহিত।”
সূত্রঃ- সহীহ্ বোখারী, খঃ-৬, হাঃ-৩৪৪৭, ৩৪৭৯, (ই. ফাঃ);
তাফসীরে ইবনে কাসির, খঃ-১৬, পৃঃ-৫২৬;।
আহলে বাইতে রাসুলের দঃ মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ-
عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَىُّ أَهْلِ بَيْتِكَ أَحَبُّ إِلَيْكَ قَالَ " الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ " . وَكَانَ يَقُولُ لِفَاطِمَةَ " ادْعِي لِي ابْنَىَّ " . فَيَشُمُّهُمَا وَيَضُمُّهُمَا إِلَيْهِ . قَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ مِنْ حَدِيثِ أَنَسٍ
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হল, আপনার আহলে বাইত–এর সদস্যগণের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন। তিনি ফাতেমা (রাঃ)-কে বলতেনঃ আমার দুই সন্তানকে আমার কাছে ডাক। তিনি তাদের ঘ্রাণ নিতেন এবং নিজের বুকের সাথে লাগাতেন।
যঈফ, মিশকাত (৬১৫৮)।
আহলে বাইত সম্পর্কে নবিজীর ভবিষ্যৎবাণী-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ إِذْ أَقْبَلَ فِتْيَةٌ مِنْ بَنِي هَاشِمٍ فَلَمَّا رَآهُمُ النَّبِيُّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ اغْرَوْرَقَتْ عَيْنَاهُ وَتَغَيَّرَ لَوْنُهُ قَالَ فَقُلْتُ مَا نَزَالُ نَرَى فِي وَجْهِكَ شَيْئًا نَكْرَهُهُ . فَقَالَ " إِنَّا أَهْلُ بَيْتٍ اخْتَارَ اللَّهُ لَنَا الآخِرَةَ عَلَى الدُّنْيَا وَإِنَّ أَهْلَ بَيْتِي سَيَلْقَوْنَ بَعْدِي بَلاَءً وَتَشْرِيدًا وَتَطْرِيدًا حَتَّى يَأْتِيَ قَوْمٌ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَعَهُمْ رَايَاتٌ سُودٌ فَيَسْأَلُونَ الْخَيْرَ فَلاَ يُعْطَوْنَهُ فَيُقَاتِلُونَ فَيُنْصَرُونَ فَيُعْطَوْنَ مَا سَأَلُوا فَلاَ يَقْبَلُونَهُ حَتَّى يَدْفَعُوهَا إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي فَيَمْلَؤُهَا قِسْطًا كَمَا مَلَؤُوهَا جَوْرًا فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلْيَأْتِهِمْ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ " .
আবদুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে বসা ছিলাম, তখন হাশিম বংশীয় কতক যুবক তাঁর নিকট উপস্থিত হলো। তাদের দেখতে পেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হলো এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। রাবী বলেন, আমি বললাম, আমরা সবসময় আপনার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করি। তিনি বলেনঃ আমাদের আহলে বাইতের জন্য আল্লাহ তা’আলা পার্থিব জীবনের পরিবর্তে আখিরাতের জীবনকে পছন্দ করেছেন। আমার আহলে বাইত আমার পরে অচিরেই কঠিন বিপদে লিপ্ত হবে, কষ্ট-কাঠিন্যের শিকার হবে এবং দেশান্তরিত হবে। প্রাচ্যদেশ থেকে কালো পতাকাধারী কতক লোক তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবে। তারা কল্যাণ(গুপ্তধন) কামনা করবে, কিন্তু তা তাদের দেওয়া হবে না। তারা লড়াই করবে এবং বিজয়ী হবে। শেষে তাদেরকে তা দেয়া হবে, যা তারা চেয়েছিল। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করবে না। অবশেষে আমার আহলে বাইতের একজন লোকের নিকট তা সোপর্দ করা হবে। সে পৃ্থিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবে, যেমনিভাবে লোকেরা একে যুলুমে পূর্ণ করেছিল। তোমাদের মধ্যে যারা সে যুগ পাবে, তারা যেন বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাদের নিকট চলে যায়।
ইবনে মাজাহ [৩৪১৪]
হাদীসে সাকালাইনঃ-
যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা মজবুতভাবে ধারণ (অনুসরণ) করলে আমার পর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অপরটির চাইতে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ : আল্লাহর কিতাব যা আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত প্রসারিত এবং আমার ইতরাৎ (বংশধর ও সন্তান) আমার আহলে বাইত। এ দু’টি কখনও বিছিন্ন হবে না হাউযে কাওসারে আমার কাছে উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত।
অতএব, তোমরা লক্ষ্য কর আমার পরে এতদুভয়ের সাথে তোমরা কীরূপ আচরণ কর।’ (জামে আত্-তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৬০, হাদীস নং ৩৭২৬)
যেহেতু ইমাম হোসাইন (আ.) মহানবীর ইতরাৎ অর্থাৎ সন্তান এবং আহলে বাইত তাই তাঁর সাথে পবিত্র কুরআনের সম্পর্ক যে অবিচ্ছেদ্য তা এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়।
সমগ্র মুসলিম উম্মাহ মহানবীর যুগ থেকে নামাযে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর বংশধরদের ওপরই কেবল দরূদ পড়ে আসছে; আর এরই অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন। এ দুর্লভ মর্যাদা ও সম্মান আর কেউ পাননি। দরূদটি নিম্নরূপ :
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلىَ مَحَمَّدٍ وَ عَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَاهِيمَ وَ عَلى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدُ اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَاهِيْمَ وَ عَلَى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدُ
আয়াতুল মাওয়াদ্দাহ্:-
قُلْ لاَ أَسْألُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبَى...
‘বলুন, আমি আমার রিসালাতের দায়িত্ব পালন ও দাওয়াতের জন্য তোমাদের কাছে একমাত্র আমার নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য (মাওয়াদ্দাহ্) ব্যতীত আর কোনো পারিশ্রমিক চাই না।’ (সূরা-শূরা : ২৩)
অগণিত রেওয়ায়েত অনুসারে এবং অনেক মুফাস্সিরের মতে উপরিউক্ত আয়াতটি আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনের শানে অবতীর্ণ হয়েছে।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ‘ফাযায়েলুস সাহাবা’ গ্রন্থে আমেরের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, ‘উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলে সাহাবাগণ মহানবী (সা.)-কে বললেন : ‘আপনার নিকটাত্মীয় কারা যাঁদের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা আমাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে?’ মহানবী (সা.) তাঁদেরকে বললেন : ‘আলী, ফাতেমা এবং তাদের দু’পুত্র। এ কথা তিনি তিনবার বললেন।
ইমাম শাফেয়ী যথার্থ বলেছেন :
ياَ اَلِ بَيْتِ رَسُـولِ اللهِ حُـبُّكُمْ * فَرْضٌ مِنْ اللهِ فِي الْقُرْاَنِ اَنْزَلَهُ
كَفَاكم مِنْ عَظِيـمِ الْفَخْرِ اَنَّكُمْ * مَنْ لَمْ يُصَلِّ عَلَيْكُمْ لاَ صلاَةَ لَهُ
‘হে রাসূলুল্লাহ্র আহলে বাইত! তোমাদের ভালোবাসা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয এবং তা তিনি পবিত্র কুরআনে অবতীর্ণ করেছেন তোমাদের গর্বের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যে ব্যক্তি তোমাদের ওপর দরূদ পড়বে না তার নামাযই হবে না।’
- ওপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন পূত-পবিত্র চরিত্র ও বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক অসাধারণ মহাপুরুষ যিনি মহানবীর আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য, মহানবীর নবুওয়াতের সাক্ষ্যদাতা, বেহেশতের যুবকদের নেতা। মহান আল্লাহ তাঁকে এ সুমহান মর্যাদার অধিকারী করেছেন। তাঁর রয়েছে পবিত্র কুরআনের সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তিনি সত্যের মূর্ত প্রতীক। তিনি মহানবী থেকে এবং মহানবীও তাঁর থেকে। কুরআনের নির্দেশে তাঁকে ভালোবাসা মুসলিম উম্মাহ্ ওপর ফরয। ইমাম হোসাইন (আ.) সংক্রান্ত এ সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদেরকে তাঁর সুমহান আন্দোলন, চরম আত্মত্যাগ এবং তাঁর শাহাদাতের সঠিক মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে।
ইমাম হোসাইনের আন্দোলন ছিল একটি ঐশী আধ্যাত্মিক আন্দোলন- ইসলাম ধর্মকে বিকৃতির হাত থেকে মুসলিম উম্মাহকে ও পথভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা করা এবং মযলূমকে যালিমের হাত থেকে উদ্ধার করার আন্দোলন। ইমাম হোসাইনের আন্দোলন ছিল সত্যের প্রতিষ্ঠা ও মিথ্যার মূলোৎপাটনের আন্দোলন।
মোটকথা এটি একটি পূর্ণ আন্দোলন। একটি সফল আদর্শ আন্দোলনের সমুদয় দিক- নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের আধ্যাত্মিক ও তাত্ত্বিক দিকও এ আন্দোলনে রয়েছে। মানবীয় সুকুমার চরিত্রের পূর্ণমাত্রার বিকাশও পরিলক্ষিত হয় এ আন্দোলনে। আর তা হতেই হবে। কারণ, এ আন্দোলনের রূপকার মহান আল্লাহর রাসূল নিজে এবং এর নেতৃত্বে ছিলেন বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হোসাইন। মহানবী (সা.) বিভিন্ন সময় তাঁর উম্মতকে এ আন্দোলন সম্পর্কে-কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সম্পর্কে বহুবার অবহিত করেছেন। সাবধান করেছেন যাতে তারা সত্য পক্ষ অবলম্বন করতে পারে- প্রহেলিকাময় প্রচার-প্রপাগান্ডার ধূম্রজালে আবদ্ধ হয়ে সত্য চিনতে ভুল না করে। তারা যেন সে সময় তাঁর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের সাথে থেকে বিচ্যুতির হাত থেকে রেহাই পায়। [আল্লামাহ্ ইবনে হাজার আসাকালানী প্রণীত তাহ্যীবুত্ তাহযীব : আল হোসাইন ইবন আলী ইবন আবি তালিব সংক্রান্ত বিবরণ (পৃ. ৩৪৫-৩৪৯)]
Comments
Post a Comment