গাইরুল্লাহকে সিজদাহ করা হারাম।

গাইরুল্লাহকে তাজীমী সিজদাহ করার হুকুম ও পরিণাম কী?

**************************************************
তাজিমী সিজদাহ প্রশ্ন নং- (১)ঃ-
হুজুর, আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুকে সিজদা করা জায়েজ আছে কিনা?
এক ভাই যুক্তি দেয়, আমরা যদি মসজিদে নামাজ পড়ি সামনে দেওয়াল থাকে। এর মানে এই নয় যে আমরা দেওয়ালকে সিজদা করি। অনেক সময় সুন্নত নামাজ পড়ার সময় সামনে মানুষ বসে থাকে, এর মানে মানুষ কে সিজদা করছিনা। ঠিক তেমনি মাজারে আমরা আল্লাহকে সিজদা করি, পীরকে না। অন্য আরেক জন বলে সিজদা দুই প্রকার!  সিজদা মানে সম্মান দেখানো!

উত্তরঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

ভাল যুক্তি। এরকম যুক্তি দিয়েতো তাহলে মুর্তির সামনে সেজদা দেয়াও জায়েজ হয়ে যাবে। তখন বলবে, তারা মুর্তিকে সেজদা করছে না, বরং আল্লাহকে সেজদা করছে।
এটি আসলে একটি খোড়া যুক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহকে সেজদা করার জন্য কবরকে সামনে নিতে হবে কেন? যদি সত্যিই আল্লাহকে সেজদা করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে সরাসরি আল্লাহকেই সেজদা করে না কেন?
আর সুন্নত পড়ার যে উদাহরণ দেয়া হল এটি কেবলি একটি খোড়া যুক্তি, বাস্তবতা ও দ্বীনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। সেখানে উজরবশতঃ এটি জায়েজ হয়ে থাকে। সেখানে কবরের সামনে সেজদা দেয়ার মাঝে এর কোন ওজরই বাকি নেই। তাই এ যুক্তি এখানে কিছুতেই প্রয়োগ করা যাবে না।
সেজদা মানে সম্মান দেখানো হলেতো সালাম বাদ দিয়ে সাহাবায়ে কেরাম সবাই রাসূল সাঃ কে সালাম দেয়ার বদলে সেজদাই করতেন তাই না?
রাসূল সাঃ এর স্ত্রীগণ রাসূল সাঃ কে সম্মান করে সেজদা করতেন। কিন্তু এমনটি কোন হাদীসে এসেছে কি? বরং রসুল (স) আরো বলেন,
"আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা জায়েজ হলে আমি স্ত্রীদেরকে বলতাম তোমরা তোমাদের স্বামিদের সেজদা করো।" (তীরমিযি ১০৭৯)
নাকি এসব লোকেরা তাদের প্রভুকে যতটা সম্মান করেন সাহাবাগণ রাঃ রাসূল সাঃ এর চেয়ে কম সম্মান করতেন? তাহলে সাহাবায়ে কেরামগণ রাঃ কেন নবীজী সাঃ কে সেজদা করে সম্মান করার পদ্ধতিটি শিখিয়ে গেলেন না?
আসলে এটি একটি শিরকী কর্ম। এ কাজ থেকে সবার বিরত থাকা আবশ্যক। নতুবা ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা সকল গোনাহই মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু শিরকের গোনাহ মাফ করবেন না। তাই সকলেরই সাবধান থাকা উচিত।
আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য সেজদা করার নিষিদ্ধতা সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস দেখা যেতে পারে-
হযরত মুআজ বিন জাবাল রাঃ থেতে বর্ণিত। তিনি সিরিয়া গেলে সেখানকার খৃষ্টান অধিবাসী কর্তৃক পোপ ও পাদ্রীদেরকে সেজদা করতে দেখলেন। হযরত মুআজ রাঃ বলেন, আমি তাদেরকে বললামঃ তোমরা কেন এমন কর? তারা উত্তরে বলল, এটাতো আমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অভিবাদন [ভক্তি ও সম্মান প্রকাশের মাধ্যম] ছিল। আমি [মুআজ] বললাম, তাহলে আমরা স্বীয় নবীকে এর প্রকারের ভক্তি প্রকাশের অধিক অধিকার রাখি। [সিরিয়া হতে প্রত্যাবর্তনের পর হযরত মুআজ রাঃ রাসূল সাঃ এর নিকট তাঁকে সেজদা করার অনুমতি চাইলে] তিনি ইরশাদ করেন, এরা [খৃষ্টানরা] স্বীয় নবীদের উপর মিথ্যারোপ করছে [যে তাদের অভিবাদন সেজদা ছিল।]। যেমন ওরা নিজেদের আসমানী কিতাবে বিকৃতি সাধন করেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের মনগড়া অভিবাদনের চাইতে অতি উত্তম অভিবাদন সালাম আমাদের দান করেছেন। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৪০৪,
আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৭২৯৪,
মুস্তাদরাক আলাস সাহিহাইন, হাদীস নং-৭৩২৫}
دَّثَنِي جُنْدَبٌ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ أَنْ يَمُوتَ بِخَمْسٍ، وَهُوَ يَقُولُ: ……أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ، أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ، إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ,,,
হযরত জুনদুব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ মৃত্যুর পূর্বে পাচটি বিষয় বলেছিলেন, [এর মাঝে]…… বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী কত উম্মত স্বীয় নবী ও বুজুর্গদের কবরকে সেজদার স্থান বানিয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরকে সেজদার স্থান বানিও না। আমি তোমাদের তা হতে বারণ করছি। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৩২}।
عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ؛ أَنَّ [ص:241] رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُعْبَدُ. اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ,,,
হযরত আতা বিন ইয়াসার রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে প্রতিমার ন্যায় ইবাদতের বস্তু বানিও না। আল্লাহর গজব সেসব লোকের উপর কঠোর আকার ধারণ করেছে, যারা তাদের নবীদের কবরকে সেজদার স্থল বানিয়েছে।
{মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৫৭০,
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭৩৫৮}
এসব হাদীসসহ আরো অনেক হাদীস প্রমাণ করে আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে বা কারো কবরের সামনে সেজদা দেয়া সুষ্পষ্ট কুফরী ও শিরকী কাজ। তাই এসব থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক।


তাজিমী সিজদাহ্ প্রশ্ন নং- (২);-
সেজদা মানুষকেও করা যাবে, আদম (আ) কে ইবলিশ কি সেজদা করেনি?
এখন যারা মানুষকে সেজদা করতে চায়না তাদের সাথে ইবলিশের পার্থক্য কোথায়?

২নং জবাবঃ-
আমাদের দেশে প্রচলিত সবাই না কিছু সুফিবাদ/পীরতন্ত্রে বিশ্বাসী ব্যক্তিরা দাবি করেন- মানুষকেও সেজদা করা যাবে।
এক্ষেত্রে তাদের দলিল হলো- আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতারা আদম (আ) কে সেজদা করেছিলো, একমাত্র ইবলিশ সেজদা করেনি যার কারণে সে ইবলিশ শয়তানে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এখান থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় মানুষকে সেজদা করা যাবে।।

উপরিউক্ত দলিল দেখে যে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারে এবং এটাই স্বাভাবিক, ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা কোরআন হাদিস সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেনা যার কারণে তারা খুব সহজেই আবেগ দ্বারা পরিচালিত এবং পথভ্রষ্ট হয়।
যাই হোক, উপরিউক্ত ঘটনাটি রয়েছে সুরা বাকারা ৩৪ নং আয়াতে- আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلٰٓئِكَةِ اسْجُدُوا لِءَادَمَ فَسَجَدُوٓا إِلَّآ إِبْلِيسَ أَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكٰفِرِينَ...
আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত। (বাকারা ৩৪)
(১) এই আয়াতে কোথাও মানুষকে দিয়ে মানুষকে সেজদা দেয়ার কথা বলা হয়নি, কিন্তু পীরপন্থিরা, মানুষকে দিয়ে মানুষকে সেজদা দেয়ার দলিল এই আয়াতে কোথায় পেলো?
(২) এই ঘটনা দুনিয়ার কোনো হুকুম ছিলোনা, এটি ছিলো জান্নাতের ঘটনা, জান্নাতের এই সেজদার ঘটনা শুধুমাত্র সেসময়কার ফেরেশতা ও জীনদের জন্যই খাস (নির্দিষ্ট) ছিলো তাও একবারের জন্যই, পীরপন্থিরা এই ঘটনা থেকে দুনিয়াতে সেজদা তাও আবার অগণিত সেজদা দেয়ার দলিল কোথায় পেলো?
(৩) উক্ত আয়াত থেকে যদি মানুষকে সেজদা দেয়াই বুঝাতো তাহলে, হাওয়া (আ) কেনো আদম (আ) কে সেজদা করলেননা?
 আদম সন্তান হাবিল, কাবিল কেনো পিতা আদম (আ) কে সেজদা করলেননা, তারা সেজদা না করে কি ইবলিশ হয়ে গিয়েছিলেন?? নাউজুবিল্লাহ
(৪) আদম (আ) এর সময় ভাই-বোনদের পরস্পর বিয়ে দেয়া হতো, পীরপন্থিরা তাহলে এখান থেকে দলিল নিয়ে নিজেদের ভাই-বোনরা পরস্পর বিয়ে করেনা কেনো??
এই প্রশ্ন গুলোর জবাব কোনো সুফি/পীরপন্থিরা দিতে পারবেনা, তাদের উপরিউক্ত ৪টি প্রশ্ন করলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাবে নয়তো আপনাকে অজ্ঞ-মূরখ বলে এড়িয়ে যাবে, বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করেই দেখুন।

উপরিউক্ত দলিল ছাড়াও সুফিরা অন্যান্য নবীগনের শরীয়তের ঘটনা উল্লেখ করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের দলিল পেশ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
নিম্নে এসম্পর্কিত দলিলের পোস্টমর্টেম করলামঃ-
এক এক নবীর শরীয়ত ছিলো ভিন্ন, পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসুলগণ তারা এসেছিলেন নির্দিষ্ট সমাজ-দেশের জন্য তাও আবার নির্দিষ্ট কিছু বিধান নিয়ে কিন্তু সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (স) এসেছেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। (আম্বিয়া ১০৭)
আর তাইতো মুহাম্মদি উম্মত বা আমাদের জন্য অনুসরণীয় হচ্ছেন মুহাম্মদ (স),  যার অনুসরণের অগণিত আয়াত কোরআনে আছে- (ইমরান ৩১, হাশর ৭, নিসা ৮০, বাকারা ১৫১ ইত্যাদি)
আল্লাহ তায়ালা,  আমাদেরকে রসূল (স) এর অনুসরণ ব্যতীত অন্য কোনো নবী-রাসূলের অনুসরণ করতে বলেননি।
আল্লাহ বলেন,
"যারা রসূল (স) এর কথাকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করেনা তারা বেঈমান" (নিসা ৬৫)
এবার আসুন দেখি রসূল (স) কি বলেছেন-
রসুল (স) বলেন, "মানুষের সম্মানার্থে অন্য কোনো মানুষের মাথানত করা জায়েজ নয়" (মুসনাদে আহমাদ ১২৫৫১)
রসুল (স) আরো বলেন,
"আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা জায়েজ হলে আমি স্ত্রীদেরকে বলতাম তোমরা তোমাদের স্বামিদের সেজদা করো।" (তীরমিযি ১০৭৯)
আল্লাহ বলেন,
فَاسْجُدُوا لِلَّهِ وَاعْبُدُوا...
"সুতরাং তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর এবং ইবাদাত কর।" (নাজম ৬২)
উপরিক্ত কোরান হাদিস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়- " সেজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা হারাম।
ইবলিশের শয়তানে পরিণত হওয়ার মুল কারণ ছিলো আল্লাহর হুকুম অমান্য করা, বর্তমানে যারা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে মানুষকে সেজদা করতে চায় তারাইতো আল্লাহর হুকুমকে অমান্য করে ইবলিশের অনুসরণ করছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ وَمَا يَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ فَيَقُوۡلُ ءَاَنۡتُمۡ اَضۡلَلۡتُمۡ عِبَادِىۡ هٰٓؤُلَآءِ اَمۡ هُمۡ ضَلُّوۡا السَّبِيۡلَؕ‏﴾,,,
আর সেদিনই (তোমার রব) তাদেরও ঘিরে আনবেন এবং তাদের উপাস্যদেরও২৪ আল্লাহকে বাদ দিয়ে আজ তারা যাদের পূজা করছে। তারপর তিনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা কি আমার এ বান্দাদের গোমরাহ করেছিলে? অথবা এরা নিজেরাই সহজ সরল সত্য পথ থেকে বিচ্যূত হয়ে পড়েছিল?”২৫
(সুরা ফোরকান, আয়াত নং ১৭)।
সামনের দিকের আলোচনা স্বতই প্রকাশ করছে যে, এখানে উপাস্য বলতে মূর্তি নয় বরং ফেরেশতা, নবী, রসূল, শহীদ ও সৎলোকদেরকে বুঝানো হয়েছে। বিভিন্ন জাতির মুশরিক সম্প্রদায় তাদেরকে উপাস্যে পরিণত করে রেখেছে। আপতদৃষ্টিতে এক ব্যক্তি وما يعبدون শব্দাবলী পড়ে এর অর্থ মূর্তি বলে মনে করে। কেননা, আরবী ভাষায় সাধারণত ما শব্দটি নিষ্প্রাণ ও নির্বোধ জীবের জন্য এবং مَنْ শব্দটি বুদ্ধিমান জীবের জন্য বলা হয়ে থাকে। আমরা যেমন অনেক সময় কোন মানুষ সম্পর্কে তাচ্ছিল্যভরে বলি “সে কি” এবং এ থেকে এ অর্থ গ্রহণ করি যে, তার কোন সামান্যতমও মর্যাদা নেই, সে কোন বিরাট বড় ব্যক্তিত্ব নয়। ঠিক আরবী ভাষাতেও তেমনি বলা হয়ে থাকে। যেহেতু আল্লাহর মোকাবিলায় তাঁর সৃষ্টিকে উপাস্যে পরিণত করার ব্যাপার এখানে বক্তব্য আসছে তাই ফেরেশতাদের ও বড় বড় মনীষীদের মর্যাদা যতই উচ্চতর হোক না কেন আল্লাহর মোকাবিলায় তা যেন কিছুই নয়। এজন্যই পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এখানে من এর পরিবর্তে ما শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
 কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়বস্তুটি এসেছে। যেমন সূরা সাবার ৪০-৪১ আয়াতে বলা হয়েছেঃ

وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلَائِكَةِ أَهَؤُلَاءِ إِيَّاكُمْ كَانُوا يَعْبُدُونَ O قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُونِهِمْ بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُؤْمِنُونَ..০
“যেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্র করবেন তারপর ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করবেন, এরা কি তোমাদেরই বন্দেগী করতো? তারা বলবেঃ পাক-পবিত্র আপনার সত্তা, আমাদের সম্পর্ক তো আপনার সাথে, এদের সাথে নয়। এরা তো জিনদের (অর্থাৎ শয়তান) ইবাদাত করতো। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতিই ঈমান এনেছিল।”

অনুরূপভাবে সূরা মায়েদার শেষ রুকূ’তে বলা হয়েছে-
وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَق. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ..
“আর যখন আল্লাহ‌ জিজ্ঞেস করবেন, হে মারয়ামের ছেলে ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে উপাস্যে পরিণত করো? সে বলবে, পাক-পবিত্র আপনার সত্তা, যে কথা বলার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য কবে শোভন ছিল? ........ আমি তো এদেরকে এমন সব কথা বলেছিলাম যা বলার হুকুম আপনি আমাকে দিয়েছিলেন, তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহর বন্দেগী করো, যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব।” (দেখুন-সূরা আল মায়েদা, ১১৬ ও ১১৭)।
রসূল (স) এর উম্মত হয়ে অন্য কারো অনুসরণ এমনকি অন্য কোনো নবীর বিধান নেয়াও জায়েজ নেই।
রসূল (স) বলেছেন-
"আল্লাহর কসম! আজ যদি মুসা (আ) থাকতেন এবং তোমরা যদি আমার অনুসরণ বাদ দিয়ে তার অনুসরণ করতে তাহলে তোমরা সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত ও পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে! আজ যদি মুসা (আ) জিবীত থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ করতেন।" (মিশকাত ১৯৪, দারেমি ৪৩৫)
যেখানে রসূল (স) ব্যতীত অন্য কোনো নবী-রাসূলের অনুসরণের উপায় নেই সেখানে কিসের পীর কিসের সুফি?
আপনার চিন্তাজগতকে আরো জাগ্রত করার জন্য একটি আয়াত দিয়ে শেষ করলাম-
আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِئَايٰتِ رَبِّهِۦ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِىَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ ۚ إِنَّا جَعَلْنَا عَلٰى قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِىٓ ءَاذَانِهِمْ وَقْرًا ۖ وَإِن تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدٰى فَلَن يَهْتَدُوٓا إِذًا أَبَدًا,,,
আর তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তা থেকে বিমুখ হয়েছে এবং সে ভুলে গেছে যা তার দু-হাত পেশ করেছে? নিশ্চয় আমি তাদের অন্তরসমূহের উপর পর্দা দিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা তা (কুরআন) বুঝতে না পারে। আর তাদের কর্ণসমূহে রয়েছে বধিরতা এবং তুমি তাদেরকে হিদায়াতের প্রতি আহবান করলেও তারা কখনো হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে না। (কাহফ ৫৭)

والله اعلم بالصواب..

Comments