তাজিমী সেজদা শিরক নয় বরং মোবাহ। (নাউজুবিল্লাহ)ঃ-
প্রচারে:- শাহজাদা ইরফান আহমদ নজুভাণ্ডারী।
নজুভাণ্ডার দরবার শরীফ। (সংগৃহীত)
-----------------------------------------------------------------------------
---
সেজদা কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি?
গভীর জ্ঞানের বিষয় না বুঝে তর্ক করা থেকে বিরত থাকুন।
ইহা সুন্নী অনেক আলেমের মতে জায়েজ। অনেকের মতে হারাম। শিরিক নয়।
সিজদাতুন শব্দের অর্থ মাথা জমিনে রাখা, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে কপালকে ইবাদতের নিয়তে আল্লাহর উদ্দেশ্যে জমিনের উপর রাখা (তাফসীরে কবির, তাফসীরে জালালাইন শরীফ ও ফিকাহে আকবর দ্রষ্টব্য)।
ইসলামী পরিভাষায় জমিনে মাথা ঠেকানোকে সেজদা বলে। কারণ ইসলাম ধর্মে নামাজ বা ইবাদতে এটাই সেজদার রূপ।
সেজদা প্রধানত ২ প্রকারঃ
১।সেজদায়ে তাবুদী বা ইবাদতের সিজদা,
২।সেজদায়ে তাহিয়্যাহ বা তাজিমি সেজদা,
ইবাদতের সেজদার কিছু শর্তাবলী আছে,
১। সেজদার নিয়ত থাকতে হবে।
২। সেজদায় তছবীহ জপতে হবে।
৩। ওযু থাকতে হবে।
৪। কিবলামুখী হতে হবে ইত্যাদি।
১নং, ৩নং, ৪নং শর্ত পূরণ হলেই সেজদা পরিপূর্ণতা পাবে। সেই সেজদার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর তাজিমি সেজদা শুধুমাত্র আল্লাহর খাছ বান্দা তথা নবী, পয়গাম্বর, আউলিয়া কেরামের জন্য। এটি তাঁদের সম্মানার্থে প্রদান করা হয় যা দোষণীয় নয়।
(নাউজুবিল্লাহ)।
কোরানে পাকে সুরা ইউছুফের ১০০ নং আয়াতে উল্লেখ আছে,
﴿وَرَفَعَ اَبَوَيۡهِ عَلَى الۡعَرۡشِ وَخَرُّوۡا لَهٗ سُجَّدًاۚ وَّقَالَ يٰۤاَبَتِ هٰذَا تَاۡوِيۡلُ رُءۡيَاىَ مِنۡ قَبۡلُ قَدۡ جَعَلَهَا رَبِّىۡ حَقًّاؕ..
(শহরে প্রবেশ করার পর) সে নিজের বাপ-মাকে উঠিয়ে নিজের পাশে সিংহাসনে বসালো এবং সবাই তার সামনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিজদায় ঝুঁকে পড়লো। ইউসুফ (আঃ) বললো, “আব্বাজান! আমি ইতিপূর্বে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম এ হচ্ছে তার তা’বীর। আমার রব তাকে সত্য পরিণত করেছেন।
হযরত এয়াকুব আঃ ও তাঁর অন্যান্য পুত্ররা হযরত ইউছুফ আঃ কে সেজদা দিয়েছেন। উল্লেখ্য এই সেজদাই হচ্ছে তাজিমি সেজদা। হাদিসে শরীফের আশ্রয় -
১। মেশকাত শরীফের ৩৯৬ পৃঃ ৮ম হিঃ সালে বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়, হযরত আবু খোজায়মা রঃ রাসুলে খোদা দঃ কে তাজিমী সেজদা করেছেন।
২। আনিসুল আরওয়াহ কিতাবে বিভিন্ন হাদিস সূত্রে পাওয়া যায় হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত বেলাল রাঃ রাসুলে খোদা দঃ কে তাজিমি সেজদা করেছেন। তাজিমি সেজদা যদি হারাম হত হযরত ইউছুফ আঃ, রাসুলে খোদার দঃ তাজিমি সেজদা গ্রহণ করতেন না বরং বাঁধা প্রদান করতেন, কিন্তু তাঁরা তা গ্রহণ করেছেন। অতএব, এতেই প্রতীয়মান হয় তাজিমি সেজদার প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তবে হ্যাঁ এটা সম্পূর্ণ যার যার মনোগত ব্যাপার। যার মন চায় সে করতে পারবে, যার মন চায়বে না সে করবে না। এটা করা ফরজ, ওয়াজীব, বা নাজায়েজ নয় বরং মুবাহ।
-মাইজভান্ডারী তরিকার ভাইয়েরা এ বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্নের সম্মোখিন হন.যেহেতু মাইজভান্ডারী তরিকায় তাজিমী সেজদার ব্যাপারে নিষেধ নেই। এটা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এবং এটা নিয়ে সমাজে ফিৎনা ও দেখা দেয়। এই বিষয়ে আজকের লেখা-
সেজদা কি? মূলত মাথা ও কপাল উপুড় হয়ে জমিনে
ঠেকানোর নামই সেজদা।
প্রকারভেদ:- সেজদা মূলত ২ প্রকার।
১. ইবাদতের সেজদা।
২. তাজিমী সেজদাহ। ইবাদতের সেজদা শুধুমাত্র আল্লাহপাকের জন্য নির্ধারিত।
আর তাজিমী সেজদা পাঁচ প্রকার লোককে করা জায়েজ আছে।
১. উম্মতগন নবীর জন্য।
২. মুরিদগন পীরের জন্য।
৩. প্রজাগন ন্যায়পরায়ন বাদশার জন্য।
৪. সন্তান পিতামাতার জন্য।
৫. গোলাম তার মুনিবের জন্য।
আর ও দুপ্রকারের সেজদা আছে তা হলো-
১. তেলোয়াতের সেজদা।
২. শোকরের সেজদা।
পক্ষ বিপক্ষ:-
তাজিমী সেজদা জায়েজ নাজায়েজের ব্যপারে ইসলামিক চিন্তাবিদ গবেষকগন দুই ধারাই বিভক্ত। আলা হযরত শাহ আহমদ রেজা খান বেরেলভী সহ কিছু সংখ্যাক তাফসীর কারকগন এর বিরোধী। উনি উনার "হুরমায়ে তাজিম সেজদা" নামক গ্রন্থে তাজিমী সেজদা হারামের পক্ষে মত দিয়েছেন।
অপর পক্ষে মাওলানা রুমি হতে শুরু করে হযরত গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী (ক:)ও শেরে বাংলা হুজুর সহ বিশিষ্ট তাফসীর কারক মুফতিয়ে আজম আমিনুল হক ফরহাদাবাদী তাজিমী সেজদা জায়েজের পক্ষে মত দিয়েছেন। মাওলানা ফরহাদাবাদী
তার "তোহফাতুল আখইয়ার" গ্রন্থে তাজিমী সেজদা জায়েজের পক্ষে যে সব প্রমানাদি পেশ করেছেন তা অন্য কোন কিতাবকে খন্ডন করার জন্য যথেষ্ট। তাজিমী সেজদা জায়েজের পক্ষে দলিল: পবিত্র কোরানের বাণী-
﴿ وَاِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓٮِٕكَةِ اسۡجُدُوۡا لِاَدَمَ فَسَجَدُوۡٓا اِلَّآ اِبۡلِيۡسَۙ اَبٰى وَاسۡتَكۡبَرَ وَكَانَ مِنَ الۡكٰفِرِيۡنَ﴾..
তারপর যখন ফেরেশতাদের হুকুম দিলাম, আদমের সামনে নত হও, তখন সবাই অবনত হলো, কিন্তু ইবলিস অস্বীকার করলো। সে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মেতে উঠলো এবং নাফরমানদের অন্তর্ভুক্ত হলো।
(সূরা বাক্বারাহ, আয়াত নং-৩৪)
অপর এক আয়াত-
وَرَفَعَ اَبَوَيۡهِ عَلَى الۡعَرۡشِ وَخَرُّوۡا لَهٗ سُجَّدًاۚ ...
"ইউসুফ (আ:) তার মাতাপিতাকে উচ্ছাসনে বসালেন এবং তারা সবাই তার সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন"।
এই আয়াত দুটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়। উপরোক্ত সেজদাগুলি ছিল সম্মানসূচক সেজদা। কোরানের আয়াত দ্বারা তাজিমী সিজদা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়। কেননা আল্লাহ পাক কোরানের প্রতিটি আয়াত তার বান্দাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য নাজিল করেছেন। আল্লাহ পাক নিশ্চই তার বান্দাদের শিরকের নির্দেশ দিবেন না। বিরোধিতাকারিরা বলে থাকেন ঘঠনাগুলি আমাদের শরিয়তের নই।
ইয়াকুব(আ:) এর সময়ের শরিয়ত আমাদের কাছে রহিত হয়ে গেছে। তখন সেজদা জায়েজ ছিল এখন হারাম বা শিরক। এখন প্রশ্ন তখন যদি শরিয়তে তাজিমী সেজদা জায়েজ থাকে এখন কিভাবে রহিত হবে। কেননা এক শরিয়তে জায়েজ আরেক শরিয়তে হারাম কখনো হতে পারেনা। বরং ফরজিয়ত বা মোস্তাহাব রদ হলেও বর্তমান যুগে তা মোবাহ বা জায়েজ। কেননা যে সমস্ত কোরানের আয়াত রদ করা হয়েছে তা তফসিরে আহমদীতে বর্ণনা করা হয়েছে কিন্তু তাজিমী সেজদার আয়াত গুলো উখানে নেই।মানে রদ করা হইয়নি। ইমাম আবু হানিফার কিতাবেও সেজদা তাজিমীর আয়াতগুলো রদ হয়নি। খবর মুলক আয়াত রদ করা যায় না সুতরাং উক্ত আয়াতগুলো তাজিমী সেজদার দলিল হিসাবে অত্যন্ত মজবুতকর। বিরোধিতাকারীরা যুক্তি হিসাবে এই হাদিসটি সবসময় পেশ করে থাকেন।
রাসুলুল্লাহ (স:)বলেন আমি যদি কাউকে সেজদার করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীলোককে বলতাম তার স্বামীদেরকে সিজদা করার জন্য।
এই হাদিসটি খবরে ওয়াহেদ হাদিস অর্থাৎ প্রত্তেক যুগে এই হাদিসের বর্ননাকারী একজন। এটি দুর্বল হাদিস। এবং এটি দ্বারা কোরানের আয়াত রদ করা যাবেনা। কোরানের আয়াত রদ করার জন্য হাদিসে মতওয়াতিরের প্রয়োজন। আর উক্ত হাদিসটি মূলত স্বামী স্ত্রীর তাবেদারীর বিষয়ে বলা হয়েছে। সেজদা মূল বিষয় নই।সুতরাং এই হাদিসটি তাজিমী সেজদার বিরুদ্ধে দলিল হিসাবে গ্রহনযোগ্য নই।
আর আমাদের শরিয়তে তাজিমী সেজদা রদের জন্য আর তেমন আর কোন দলিল নেই। হাদিস শরীফে আছে একদা এক লোক রাসুলুল্লাহ(সা:) এর নিকট এসে বললো। হে খোদার রাসুল আমি আপনাকে সেজদা করিতে স্বপ্নে দেখিয়াছি। রাসুলুল্লাহ (সা:)বলিলেন তোমার স্বপ্ন সত্য। তখন লোকটি নবী করিম সা: কে সেজদা করিল। রাসুলুল্লাহ (সা:)কোন বাধা প্রদান করলেননা। সুতরাং কোরআন হাদিস দ্বারা তাজিমী সেজদা জায়েজ বলেই প্রমানিত হয়। আর এর বিরুদ্ধে কোরআন হাদিসের কোথাও সরাসরি হারাম বলে ঘোষণা করা হয়নি। অবশ্য কাউকে আল্লাহ জ্ঞান করে সেজদা করলে অবশ্যই শিরক হবে। আর তাজিমী সেজদা হলো মূলত এক প্রকার সালাম। এবং এটা শুধুমাত্র সম্মানের জন্য করা হয়। আর তাজিমী সেজদার দ্বারা পীর মুরশিদকে সম্মান জানানো জায়েজ বলেই প্রমাণিত। তবে এটা যার রুচি বিষয়। এই বিষয়ে কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। মাইজভান্ডারী তরিকায় এটা মোবাহ। তাজিমী সেজদা জায়েজের পক্ষে যে সমস্ত কিতাবে দলিল পাওয়া যায় তা হলো.
মনাকেবুল মাহবুবিন.
ফওয়ায়েদুল ফুয়াদ.
তোহফায়ে বরজকিয়া.
গন্জরাজ.
ফতুয়ায়ে আজিজিয়া.
তফসির আহমদী.
ফতুয়ায়ে কাজিখান.
রদ্দুল মোহতার.
তফসির কলালি.
তফসির কবির.
ফতুয়ায়ে আলমগীরি
মইন উদ্দিন ওয়ায়েজ এর লিখিত তফসির।
আল্লামা আবু সউদের লিখিত তফসির। সহ আরো বিভিন্ন কিতাব।
সুতরাং বলা যায় সমাজে অহেতুক ফিৎনা সৃষ্টি না করে মূল বিষয়টি সম্পর্কে সকলকে ভালভাবে জেনে নেওয়া সবার কর্তব্য। আমার জ্ঞানের ভিতর যতটুক সম্ভব উপস্থাপন করেছি। এ বিষয়ে পেইজের পর পেইজ লিখলেও লেখা শেষ হবেনা। আল্লাহ পাক সবাইকে বুঝার তৌফিক
দিক। আমিন।
Comments
Post a Comment