যুক্তি, কোরান-হাদিস,ও বাস্তবতার আলোকে ধূমপান হারাম।
***********************************************
আসুন জেনে নিই ﺍَﻟﺘَّﺪْﺧِﻴْﻦُ ধুমপান প্রসঙ্গেঃ-
আমরা সকলে জানি ধূমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। কথাটা অনেকে সেচ্ছায় বলেন অনেকে বলেন বাধ্য হয়ে। যাই হোক ধুমপানের ক্ষতির তুলনায় শ্লোগানটা খুবই হাল্কা। কারণ ধূমপান শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
বরং মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর,
আত্নার জন্য ক্ষতিকর,
স্বভাব-চরিত্রের জন্য ক্ষতিকর।
পরিবার-পরিজন প্রতিবেশী সমাজ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
কিন্তু আমার কাছে এর চেয়ে বড় ক্ষতির দিক হলো ধুমপানের মাধ্যমে ইসলামের নীতি আদর্শ লংঘন হচ্ছে। আমি অনেক ধর্মপ্রান লোকজনকে দেখেছি তারা ধূমপান করেন। এ সকল ধর্মপ্রান মানুষ ও ধর্মীয় নেতাদের যখন আপনি বলবেন ধূমপান জায়েজ নয় তখন তারা তা মানতে চান না। অনেক যুক্তির সাথে তারা এ টাও বলেন যে, মক্কা শরীফের মত পবিত্র স্থানেও ধূমপান করতে দেখেছি, যদি জায়েযই না হতো তা হলে কি?......
অনেকেই বলেন, আল-কোরানে তো বলা হয়নি 'তোমরা ধূমপান করো না।' হাদিসে রাসূলে কোথাও নেই যে, 'ধূমপান করা যাবে না', তা হলে ধূমপান ইসলামি শরীয়তে নিষিদ্ধ হলো কিভাবে?
এ প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তরই রয়েছে এ প্রবেন্ধ।
ধূমপানের কথা যদি বলতে হয়, অনেক বছর আগে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নত হয়নি বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ সে সময় বলতেন যে ধূমপান মাকরূহ। একটা হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলা যেটা আছে সহীহ বুখারীতে
وَعَن جَابِرٍ قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَنْ أَكَلَ ثُوماً أَوْ بَصَلاً فَلْيَعْتَزِلنَا أَو فَلْيَعْتَزِلْ مَسْجِدَنَا متفق عَلَيْهِ...
হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি (কাঁচা) রসুন অথবা পিঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের নিকট হতে দূরে অবস্থান করে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে।” (বুখারী ৮৫৫, মুসলিম ১২৮১নং)
নবীজী (ﷺ) বলেছেন, পেঁয়াজ বা রসুন খাওয়ার পরে মসজিদে এসো না কারণ বাজে গন্ধ বের হয়। আর ধূমপান করলে তো আরও বাজে গন্ধ বের হয়। পেঁয়াজ, রসুনের চেয়ে বেশি গন্ধ। এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে যেহেতু পেঁয়াজ বা রসুন খাওয়া মাকরূহ, তাই বিশেষজ্ঞগণ ফতোয়া দিলেন ধূমপান করা মাকরূহ।
কিন্তু এখন বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা এখন জানতে পেরেছি যে ধূমপান জিনিসটা আসলে এক ধরনের ধীর গতির বিষক্রিয়া। তামাক আপনি যেভাবে নেন না কেন ধূমপানের মাধ্যমে,সিগারেট অথবা বিড়ি বা হুক্কা খেলেন কিংবা তামাক চিবোলেন এই তামাকের মধ্যে রয়েছে বিষক্রিয়া। এখন আমরা জানি যে এটা ধীর গতির বিষক্রিয়া। আর এ কারণে বর্তমান পৃথিবীর বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ তারা বলেন ধূমপান করা হারাম। শুধু মুসলিম বিশেষজ্ঞ না অমুসলিমরাও বলেন। আর সেজন্যই সিগারেটের প্যাকেটে একটা সতর্কীকরণ দেয়া থাকে যে
“ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর”।
আর বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে বলছে প্রতি বছর ৪০ লাক্ষের ও বেশি মানুষ মারা যায় শুধু ধূমপানের কারণে। সব ধরনের তামাক সেবন করলে সংখ্যাটা আরো বেশি হবে।
এছাড়া আরো একটা পরিসংখ্যান বলছে যে, ফুসফুসে ক্যান্সারে যারা মারা যায় তাদের ৯০ ভাগেরও বেশি মৃত্যুর কারণ ধূমপান; সিগারেট,বিড়ি বা এরকম কিছু। লংকায় যারা মারা যায় তাদের ৭০ থেকে ৭৫ ভাগের ক্ষেত্রে একমাত্র কারণ ধূমপান।
ধূমপান করা হারাম। অনুরূপভাবে হুক্কা টানাও হারাম। ধূমপান হারাম হওয়ার দলীল সমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
আল-কোরানের আলোকে ধুমপান অপরাধঃ-
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন,
وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ الۡخَبٰۤٮِٕثَ,,,,
"তিনি তোমাদের জন্য হালাল করে দেন ভাল ও উত্তম বস্তু আর হারাম করে দেন খারাপ ও ক্ষতিকর বস্তু।" (সুরা আল-আরাফ : ১৫৭)।
এ আয়াতের ভিত্তিতে এমন বহু জিনিস আছে যা হারাম হয়েছে অথচ তা কোরান- হাদিসে নাম ধরে বলা হয়নি। যেমন আমরা সাপ খাই না। কেন খাই না? কোরান- হাদিসে কোথাও কি নিষেধ আছে তোমরা সাপ খেয়ো না ? নেই ঠিকই, কিন্তু উক্ত আয়াতের ভিত্তিতে তা হারাম হয়ে গেছে। কেননা তা ক্ষতিকর ও খারাপ। ধূমপান ক্ষতিকর ও খারাপ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَاَنۡفِقُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَلَا تُلۡقُوۡا بِاَيۡدِيۡكُمۡ اِلَى التَّهۡلُكَةِۖ ۚۛ وَاَحۡسِنُوۡٓاۚۛ اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡنَ﴾
"আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর, আর তোমরা তোমাদের নিজেদের জীবনকে ধংসের সম্মুখীন করো না।" (সূরা আল-বাকারা : ১৯৫)
চিকিৎসাশাস্ত্র প্রমাণ করেছে যে, ধূমপান একটি ক্ষতিকর বস্তু। আর যে সকল বস্তু স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর, ইসলামী বিধান তাকে হারাম করেছে। যেমন-আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮْﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴْﻤًﺎ ( ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ২৯)
অর্থাঃ “তোমরা তোমাদের নাফসকে হত্যা করোনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু” (সূরা নিসাঃ ২৯)।
এ আয়াতের দাবীতেও ধূমপান নিষেধ। কেননা ধুমপানের কারনে অনেক জীবন বিধংসী রোগ ব্যধির দিকে আমরা নিজেদেরকে ঠেলে দেই। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
{ ﻭَﻻَ ﺗُﺆْﺗُﻮْﺍ ﺍﻟﺴُّﻔَﻬَﺎﺀَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻜُﻢْ ﻗِِﻴَﺎﻣًﺎ { ( ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ :৫)
অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের সম্পদ নির্বোধদেরকে প্রদান করোনা। যে সম্পদকে আল্লাহ্ পাক তোমাদের জীবন-যাত্রার অবলম্বন করেছেন”(সূরা নিসাঃ ৫)।
উপরোক্ত আয়াতে ধূমপায়ী নির্বোধদেরকে আমাদের সম্পদ থেকে প্রদান করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা তারা সম্পদের মর্ম বুঝেনা, অপচয় করবে।
আর ধূমপান নিশ্চয়ই খাবায়িস (ক্ষতিকর- নোংড়া)-এর অন্তর্ভুক্ত, তাই তা পান করা বৈধ (হালাল) নয়। আল্লাহ তাআলা মদ ও জুয়া হারাম করতে গিয়ে পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছেন,
﴿ يَسۡـَٔلُوۡنَكَ عَنِ الۡخَمۡرِ وَالۡمَيۡسِرِؕ قُلۡ فِيۡهِمَآ اِثۡمٌ کَبِيۡرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَاِثۡمُهُمَآ اَکۡبَرُ مِنۡ نَّفۡعِهِمَاؕ. ۙ﴾...
"তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর তার মধ্যে মানুষের জন্য উপকারিতাও আছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারের চেয়ে বড়।" (সূরা আল-বাকারা:২১৯)
আল্লাহ তাআলার এ বানী দ্বারা বুঝে আসে মদ জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্বেও তা হারাম করেছেন। তাহলে ধূমপান তো মদ জুয়ার চেয়েও জঘন্য। কারন তাতে কোন ধরনের উপকার নেই। বরং একশ ভাগই ক্ষতি। তো ধুমপান নিষিদ্ধ হবেনা কেন? আবার অনেকে বলেন মদ-জুয়া হারাম করা হয়েছে নেশার কারণে কিন্তু ধুমপান করলে তো কোনো নেশা হয়না। আমার ঐ ভাইদেরকে বলছি, ধুমপানের এতটা ক্ষতি উপলব্ধি করার পরও আপনি কেন এই ধুমপানকে ছাড়তে পারছেন না? কারণ, আপনার এটাই হচ্ছে বড় নেশা। আর নেশা মানেই আসক্তি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জাহান্নামিদের খাদ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
﴿ لَّا يُسۡمِنُ وَلَا يُغۡنِىۡ مِنۡ جُوۡعٍؕ﴾,,,,
"এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধা ও নিবারণ করবে না।" (সূরা আল-গাশিয়াহ : ৭)
ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে যে তা পানকারীর যোগান দেয় না, ক্ষুধাও নেভায় না। ধুমপানের তুলনা জাহান্নামি খাবারের সাথেই করা যায়। এখন আমি প্রশ্ন করতে চাই আমার কোন ভাই রাজি আছেন জাহান্নামি কোনো খাবার জেনে বুঝে গ্রহণ করার জন্য?
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন-
وَّكُلُوۡا وَاشۡرَبُوۡا وَلَا تُسۡرِفُوۡاۚ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الۡمُسۡرِفِيۡنَ﴾
আর খাও ও পান করো কিন্তু সীমা অতিক্রম করে যেয়ো না, আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
(সূরা-আরাফ,আয়াত-৩১)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
﴿ اِنَّ الۡمُبَذِّرِيۡنَ كَانُوۡۤا اِخۡوٰنَ الشَّيٰطِيۡنِؕ وَكَانَ الشَّيۡطٰنُ لِرَبِّهٖ كَفُوۡرًا﴾,,,
"তোমরা অপচয় করো না। অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।" (সুরা আল-ইসরা :২৭)
ধূমপান একটি অপচয়। অনেক এমন অপচয় আছে যাতে মানুষের লাভ-ক্ষতি কিছু নেই। এগুলো সকলের কাছে অন্যায় ও সর্বসম্মতভাবে তা অপচয় বলে গণ্য। কিন্তু ধূমপান এমন একটি অপচয় যাতে শুধুই মানুষের ক্ষতি। কোন লাভই নেই। এ ব্যাপারে দুনিয়ার সুস্থ বিবেক সম্পন্ন সকল মানুষ একমত। কোন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ও দ্বি-মত পোষণ করেননি। তারপরও যদি কেউ বলেন, ধূমপান শরিয়তের নিষিদ্ধ বস্তুর মধ্যে পড়ে না, তা হলে তাকে ঐ ডায়াবেটিস রোগীর সাথে তুলনা করা যায় যিনি ডাক্তারের নির্দেশ মত চিনি ত্যাগ করলেন ঠিকই কিন্তু রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ সবই খেলেন আর বললেন কই ডাক্তার তো এ গুলো নিষেধ করেননি!
হাদিসের আলোকে ধুমপান অপরাধ:-
সিগারেট ও হুক্কা টানা এবং পানের তামাক, জর্দা ও গুল খাওয়া ও ব্যবহার করা ইসলামী শরী‘য়াতে সবই হারাম। কেননা জনাব রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) বলেছেন"
ﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِﺮٍٍ ﺧَﻤْﺮٌ ﻭَ ﻛُﻞُّ ﻣُﺴْﻜِِﺮٍ ﺣَﺮَﺍﻡٌ " ( ﻣﺴﻠﻢ )
অর্থঃ‘‘প্রত্যেক নিশাদার বস্তুই হলো মদ, আর প্রত্যেক নিশাদার বস্তুই হলো হারাম”(মুসলিম)।
ﻣَﺎ ﺃَﺳْﻜَﺮَ ﻛَﺜِﻴْﺮُﻩُ ﻓَﻘَﻠِﻴْﻠُﻪُ ﺣَﺮﺍﻡٌ " ( ﺃﺣْﻤَﺪُ )
তিনি আরো বলেছেন, ‘‘যে বস্তুর বেশী পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে তার কম পরিমাণও হারাম” (আহমাদ)।
এছাড়াও রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) সম্পদ বিনষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। ধূমপানে সম্পদের অপচয় ও অপব্যয় হয়। আর এ অপব্যয়ই হচ্ছে সম্পদ বিনষ্ট করা। রাসূলুল্লা-হ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি অ-সাল্লাম) বলেছেন,
" ﻻَﺿَﺮَﺭَ ﻭَﻻَﺿِِﺮَﺍﺭَ "
অর্থা “তোমরা নিজেদের ক্ষতিসাধন করোনা এবং অপরের ক্ষতি সাধনও করোনা”। ধূমপান এমনই এক বিষয় যা গ্রহণের কারণে নিজের ক্ষতির সাথে সাথেই পার্শ্ববর্তী মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া ধূমপায়ী ধূমপানের মাধ্যমে সম্পদ হারিয়ে নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় এবং নিঃস্ব অবস্থায় দুনিয়াতে বসবাস করে।
অতএব যে নিজেকে ধূমপানে অভ্যস্ত করলো, সে ধনবান থেকে নিঃস্বে পরিণত হলো। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,,,,
عَنْ وَرَّادٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ ثَلاَثًا وَنَهَى عَنْ ثَلاَثٍ حَرَّمَ عُقُوقَ الْوَالِدِ وَوَأْدَ الْبَنَاتِ وَلاَ وَهَاتِ . وَنَهَى عَنْ ثَلاَثٍ قِيلٍ وَقَالٍ وَكَثْرَةِ السُّؤَالِ وَإِضَاعَةِ الْمَالِ ",,,
ওয়ার্রাদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা তিনটি বিষয় হারাম করেছেন এবং তিনটি কাজ নিষিদ্ধ করেছেন।
তিনি হারাম করেছেন,
১. পিতা-মাতার নাফরমানী,
২. জীবন্ত কন্যা সন্তানকে মাটিতে পুঁতে রাখা এবং
৩. পাওনাদারের হক আদায় না করা।
আর তিনি তিনটি কাজ নিষিদ্ধ করেছেন, তা হলোঃ
১. অনর্থক কথাবার্তা বলা,
২. অতিরিক্ত প্রশ্ন করা এবং
৩. ধন-সম্পদ বিনষ্ট করা। (ই. ফা. ৪৩৩৭, ই. সে. ৪৩৩৮)।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৩৭৮।
এ ব্যাপারে কারো দ্বি-মত নেই যে, ধুমপান নিষিদ্ধই নিষিদ্ধ। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِي جَارَه,,
"যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।" (বুখারি-৫১৮৫)
ধূমপানকারী তার ধুমপানের দ্বারা স্ত্রী-পরিজন, সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও আশে-পার্শের লোকজনকে কষ্ট দিয়ে থাকে। অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে ধূমপান কারীকে অভিশাপ দেন। আবার দু একজন প্রতিবাদ করে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। আমি বাসে ও ট্রেনে বসে অনেক ধূমপানকারীকে আদবের সাথে বলেছি ভাই সিগারেটটা শেষ করুন। আমাদের কষ্ট হচ্ছে। এতে তিনি আমার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে বকাবকি করেছেন, আমাকে একটা গাড়ী বা ট্রেন কিনে তাতে আলাদা ভাবে চলাফেরা করার হুকুম দিয়েছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় ও প্রমানিত ধূমপানকারীর প্রতিবেশী শারিরিকভাবে অনুরূপ ক্ষতিগ্রস্থ হন যেরূপ ধূমপানকারী নিজে হয়ে থাকেন। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ، وَإِنَّ بَيْنَ ذَلِكَ أُمُورًا مُشْتَبِهَاتٍ - وَرُبَّمَا قَالَ: وَإِنَّ بَيْنَ ذَلِكَ أُمُورًا مُشْتَبِهَةً - وَسَأَضْرِبُ فِي ذَلِكَ مَثَلًا: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَمَى حِمًى، وَإِنَّ حِمَى اللَّهِ مَا حَرَّمَ، وَإِنَّهُ مَنْ يَرْعَ حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يُخَالِطَ الْحِمَى - وَرُبَّمَا قَالَ: يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ - وَإِنَّ مَنْ خَالَطَ الرِّيبَةَ يُوشِكُ أَنْ يَجْسُرَ ",,,,,
নু‘মান ইব্ন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট আর এ দুয়ের মধ্যে রয়েছে বহু সন্দেহযুক্ত বস্তু– আমি তা একটি উদাহরণ দ্বারা বুঝাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা একটি নিষিদ্ধ স্থান প্রস্তুত করেছেন, আর আল্লাহ্র নিষিদ্ধ এলাকা হল তিনি যা হারাম করেছেন তাই। যে ব্যক্তি স্বীয় পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার আশে-পাশে চরায়, সে যে কোন সময় এতে ঢুকে পড়তে পারে। অনুরূপ যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত কাজে লিপ্ত হয়, সে হারামে লিপ্ত হওয়ারও দুঃসাহস করতে পারে।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৭১০।
তাই যারা ইসলামের দৃষ্টিতে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ার কোন প্রমাণাদি পাচ্ছেন না তাদের কমপক্ষে এ হাদিসটির প্রতি দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানাচ্ছি। কারণ ধুমপান হালাল না হারাম এই বিষয়টি স্পষ্ট নয়। সুতরাং এই হাদিসের আলোকেও ধুমপান পরিত্যাক্ত। রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم" مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ ",,
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা।
[৩৩০৮] তিরমিযী ২৩১৭। রাওদুন নাদীর ২৯৩, ৩২১।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৭৬।
"যে সকল কথা ও কাজ মানূষের কোন উপকারে আসে না, তা পরিহার করা তার ইসলামের সৌন্দর্য।" (মুসলিম)। আমরা সকলেই স্বীকার করি যে ধূমপান কোন উপকারে আসে না। বরং ক্ষতিই করে।
অপকারিতা:-
গবেষণায় দেখা গেছে সিগারেটের ধূমপানে নিকোটিনসহ ৫৬টি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিরাজমান। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের ১৯২টি দেশে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিজে ধূমপান না করলেও অন্যের ধূমপানের (পরোক্ষ ধূমপান) প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৬,০০,০০০ মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে ১,৬৫,০০০-ই হলো শিশু। শিশুরা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নিউমোনিয়া ও
অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে। এছাড়া পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার সহ শ্বাস- প্রশ্বাসজনিত রোগও দেখা দেয়। গবেষণায় এও বেরিয়ে এসেছে যে, পরোক্ষ ধূমপান পুরুষের তুলনায় নারীর উপর বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮১,০০০ নারী মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে পরিচালিত এজাতীয় আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিলো যে, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ৪০% শিশু, ৩৩% অধূমপায়ী পুরুষ এবং ৩৫% অধূমপায়ী নারী রয়েছেন। তাতে এও ফুটে ওঠে যে, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন ইউরোপ ও এশিয়ার মানুষ।
(সূত্র- উইকিপিডিয়া।)।
ধূমপানের অপকারিতা সম্পর্কে আমরা আরও যা জানি
১- ধূমপান একটি অপবিত্র, দুর্গন্ধময় ও ক্ষতিকারক বস্তু।
ধূমপান একটি নেশাদার বস্তু যা পরিষ্কার হারাম।
২- ধূমপান ক্যান্সার, যক্ষ্মার মত ধ্বংসাত্মক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৩- ধূমপায়ী স্বয়ং নিজের নাফসকে ধ্বংস করে দেয়।
৪- ধূমপান নিজের ক্ষতির সাথে-সাথে পার্শ্ববর্তী লোকেরও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৫- ধূমপান করার অর্থই হচ্ছে নেশাদার বা হারাম জিনিষ খেয়ে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করা, ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের নাফসকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে সহযোগিতা করা আর অর্থের অপচয় করা। এ সমস্ত কাজের প্রত্যেকটাই শয়তানী কাজের অন্তর্ভুক্ত।
৬- ধূমপানকারী নিজে প্রকাশ্যভাবে গোনাহ করে থাকে আর সে এ গুনাহের কাজের বিস্তার ঘটিয়ে থাকে। সেহেতু ধূমপানের গোনাহ বড় ধরনের গোনাহ। অতএব ধূমপানকারীকে অতিশীঘ্রই তাওবা করা উচিত।
৭- ধূমপানকারী সম্পদ ধ্বংসকারী , যাকে আল্লাহ্ মোটেই পছন্দ করেন না।
৮- ধূমপান মানুষের হৃদযন্ত্রকে অকেজো করে ফেলে। আর শরীরের শক্তিকে দুর্বল করে দেয়।
৯- এর দ্বারা দাঁতগুলো হলুদ হয়ে যায়, ঠোঁট দুটি কালো হয়ে যায়, চেহারার লাবন্য নষ্ট হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায় আর স্নায়ু দুর্বলতা দেখা দেয় ইত্যাদি।
১০-এর দ্বারা কফ, কাশি এবং বক্ষব্যাধির সৃষ্টি হয়।
১১-খাবারে রুচি নষ্ট করে ফেলে আর হজমে ব্যাঘাত ঘটায়।
১২-এর দ্বারা রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় আর হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যাবলীতে গোলযোগ দেখা দেয়।
১৩-ধূমপান একটা দুর্গন্ধময় বস্তু। যারা সিগারেট খায়না তারা এর দ্বারা খুবই কষ্ট পায়, অপরদিকে সম্মানিত ফেরেশতাকুলও খুবই কষ্ট পান।
অতএব ধূমপানকারীর সংগ বর্জন করুন আর মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করুন।
১৪-একজন ধূমপায়ী’ তার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন এবং সুশীল সমাজের নিকট-সর্বোপরি মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট অর্থ অপচয়কারী, বদ অভ্যাসের দাস ও হারাম খোর হিসাবে পরিচিত।
১৫-বাস্তবতার আলোকে আমরা যেটা দেখতে পাই সেটা হলোঃ ক্ষেতে খামারে, মাঠে-ময়দানে বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফসলাদি যা গরু-ছাগল, ভেড়া-মহিষ, হাস-মুর্গী নষ্ট করে, বা খেয়ে ফেলে- যার ফলে চাষী ভাইয়েরা ঐ সমস্ত জানোয়ারের ক্ষয় ক্ষতির হাত থেকে তাদের ফসলাদিকে রক্ষা করার জন্য মাঠের ক্ষেত এবং বাড়িতে খামারে রাখা ফসলাদি ঘিরে রাখার ব্যবস্থা করে থাকে।
এখানে লক্ষণীয় যে, পান ও বিড়ি-সিগারেটের তামাক এমনই অপবিত্র ও ক্ষতিকারক বস্তু- যার ফলে কোন জীব জানোয়ার ও পশু-পাখী পর্যন্ত তা খায় না। ফলে বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুরে মাঠের হাজার হাজার বিঘা তামাকের ক্ষেত ও বাড়ির খামারে রক্ষিত তামাক ঘিরে রাখার কোন প্রয়োজন হয়না। অপরদিকে সৃষ্টির সেরা মানুষ ঐ হারাম ও অপবিত্র জিনিস খেয়ে নিজে অর্থনৈতিক ও, শারীরিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর সর্বোপরি ধর্মীয় অনুভূতিকে ধংস করছে। এর পরেও ওহে ধূমপায়ী ভাই! আপনি কি বিষয়টা একটু ভেবে দেখবেন না?
১৬-ধূমপায়ী ভাইদের মধ্য হতে অনেকেরই ধারণা যে, টয়লেটে বসে সিগারেট টানলে তাতে পায়খানা ভাল ক্লিয়ার হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা তথা বদ অভ্যাস মাত্র। আর এটা নিঃসন্দেহে শয়তানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। বাস্তবতার আলোকে দেখা যায় যে, একজন ধূমপায়ী সিগারেট জ্বালিয়ে টয়লেটে ঢুকার পর কমপক্ষে ১০মিনিট যাবৎ টয়লেটের কাজ ও সিগারেট টানার কাজ শেষ করে যখন বের হয়ে আসল- তখন ঘটনা ক্রমে অন্য একজন অধূমপায়ী ব্যক্তি প্রয়োজন মিটাতে ঐ টয়লেটে ঢুকেই বিকট দুর্গন্ধের মোকাবিলা করে টয়লেটের কাজ সমাধা করতে হিমসিম খেয়ে যায়। কেননা চার দেয়াল বেষ্টিত ছোট্ট টয়লেটে তখন একদিকে সিগারেটের বিষাক্ত ধুয়া অপরদিকে টয়লেটের দুর্গন্ধ একত্রিত হয়ে বিকট দুর্গন্ধময় গ্যাসে ভরে রয়েছে। ফলে টয়লেটের দুর্গন্ধ চাপা পড়ে গিয়ে এখন শুধু সিগারেটের বিষাক্ত গ্যাসই ঐ অধূমপায়ী ব্যক্তির কাছে অনুভূত হচ্ছে। যার ফলে টয়লেটের কাজ সমাধা করতে সে এখন বড় বিপদে পড়েছে। এক্ষণে বিশেষ করে ধূমপায়ী সূধী মহলের নিকট প্রশ্ন যে, ঐ টয়লেটে আপনার ধূমপান করার কারণে ঐ দূর্গন্ধময় বিষাক্ত গ্যাসের ভিতর কমপক্ষে ১০মিনিট সময় আপনি কেমন করে বসে থাকেন? শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ঐ বিষাক্ত গ্যাস অবশ্যই আপনার শরীরের ভিতর প্রবেশ করে- যা আপনার শরীরের জন্য কতটুকু কল্যাণকর একটু ভেবে দেখবেন কি?
১৭-ক্ষেতে-খামারে, মাঠে-ময়দানে, অফিসে-আদালতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, মিল-কল কারখানায় - তথা সকল প্রকার কর্মস্থলে কর্মরত ভাইদের মধ্যহতে অনেকেই ধারণা করেন যে, ক্লান্তি -শ্রান্তি ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার জন্য ধূমপান বড় উপকারী। মাঝে মাঝে একটু ধূমপান করে নিলে ক্লান্তি-শ্রান্তি ও দুঃশ্চিন্তা দূর হয়, ফলে কর্মের তৎপরতা বা গতি বৃদ্ধি পায়। ধূমপায়ীদের এই যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। কেননা বাস্তবতার আলোকে ধূমপানের মাধ্যমে যদিও সাময়িক কিছুটা উপকার অনুভূত হয় ধরে নেওয়া যায়- তবে বিচক্ষণতার দ্বারা যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে যে, এই ধূমপানের দ্বারা উপকার বা লাভের পরিমাণ কতটুকু আর ক্ষতির পরিমাণ বা কতটুকু? বলা যেতে পারে যে, ধূমপানের দ্বারা যদি ১ আনা পরিমাণ উপকার বা লাভ হয়- তাহলে বাকী ১৫ আনাই ক্ষতি সাধিত হয়। তাহলে এখন আপনি আপনার সুস্থ বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন যে, আপনি কি ১ আনা লাভ করতে যেয়ে ১৫ আনাই ক্ষতি স্বীকার করবেন। আর এজন্যেই মদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, ‘‘মদের ভিতর মানুষের জন্য সামান্য পরিমাণ উপকার আছে- তবে ক্ষতির পরিমাণ অনেকগুণ বেশী’’। আর এজন্যেই আল্লাহ তা‘আলা মদ পান করা মানুষের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।
এখন কথা হলো- কর্মের মাঝে ক্লান্তি-শ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য ইসলামী বিধান মুতাবিক ‘মিসওয়াক’ করা, ‘উয’ করা বা ‘উযূ করে দু‘রাক‘আত নামায পড়া’, গরম দুধ ও চা পান করা বা কিছু নাশতা করা- ইত্যাদি মাধ্যমগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে। তাই বলে তো ক্লান্তি-শ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা দুর করার অজুহাতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল প্রদর্শিত হালাল পদ্ধতিগুলি বাদ দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিষেধকৃত হারাম বস্তুগুলি খাওয়া, এটা কেমন ধরণের ঘৃণিত ও পাপের কাজ? একবার ভেবে দেখুনতো। প্রকাশ থাকে যে, পানের সাথে যে সমত জর্দা, বা কাঁচা তামাক খাওয়া হয়, এমনিভাবে যে সমস্ত গুল ব্যবহার করা হয়, মোটকথা যার দ্বারা নেশা হয় এ ধরণের সমস্ত জিনিস খাওয়া বা ব্যবহার করা হারাম। কেননা বাস্তবে দেখা গেছে যে, একজন পানে তামাক খাওয়ায় অভ্যস্ত- কিন্তু ঘটনা ক্রমে যদি সে তামাকের পরিমাণ একটু বেশী মুখে দিয়ে ফেলে তাহলে অবশ্যই সে মাথাঘুরে পড়ে যাবে। অপরদিকে একজন অনভ্যস্ত ব্যক্তি সে তো পানের তামাক কিছুটা মুখে দিয়ে চিবাতেই সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে পড়ে যেয়ে কঠিন বিপদের সম্মুখীন হবে।
অতএব এগুলির সবই খাওয়া ও ব্যবহার করা হারাম। এখন বলা যেতে পারে যে, বিড়ি সিগারেটের তামাক যেটা বিশেষ প্রক্রিয়ায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে তার বিষাক্ত ধূয়া টানা হয়, আর পানের তামাক যা শুকনা তামাক, যাকে কাঁচা পানের সাথে চিবিয়ে তার বিষাক্ত স্বাদ গ্রহণ করা হয়, এদু‘টি পদ্ধতির মাঝে কোনই পার্থক্য নেই, এ যেন একই টাকার এপিঠ ওপিঠ।
বাস্তবতার আলোকে ধুমপান অপরাধঃ-
কোন পাক ঘরে যদি জানালায় কাচ থাকে অথবা বাল্ব থাকে তাহলে দেখা যায় ধোঁয়ার কারনে তাতে ধীরে ধীরে কালো আবরন পড়ে। এমনি ভাবে ধূমপানকারীর দাতে, মুখে ও ফুসফুসে কালো আবরন তৈরী হয়। কাচের আবরন পরিস্কার করা গেলেও ফুসফুসের কালিমা পরিস্কার করা সম্ভব হয় না। ফলে তাকে অনেক রোগ ব্যধির শিকার হতে হয়। একজন অধুমপায়ী ব্যক্তির চেয়ে একজন ধুমপায়ী অধিকতর উগ্র মেজাজের হয়ে থাকেন। সমাজে যারা বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়ায় তাদের ৯৮% ভাগ ধূমপান করে থাকে। যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে তাদের ৯৫% ভাগ প্রথমে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়েছে তারপর মাদক সেবন শুরু করেছে। এমনকি ধুমপায়ী মায়ের সন্তান উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকে। ( সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব তারিখ ১৫-১২-২০০০ ইং)।
সম্প্রতি উইনকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭৫০ জন লোকের উপর এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে অধুমপায়ীদের চেয়ে ধুমপায়ীদের শ্রবন শক্তি কমার সম্ভাবনা শতকরা ৭০ ভাগ বেশী থাকে। গবেষকরা আরো দেখেছেন যে, একজন ধুমপায়ীর ধূমপানকালীন সময়ে কোন অধুমপায়ী উপস্থিত থাকলে তারও একই সমস্যা দেখা দেবে।(সুত্র : সাপ্তাহিক আরাফাত বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ১, ১৮ই আগস্ট ২০০৩)।
পরিশেষে ধূমপানকারী ভাইদের নিকট আকুল আবেদন এই যে, আপনি একজন মুসলমান, যে কোন মুহূর্তে আপনার মৃত্যুঘন্টা বেজে উঠতে পারে, আর মৃত্যুর পরে আপনার সারাটি জীবনের সকল প্রকার কর্মকাণ্ডের হিসাব মহান আল্লাহর দরবারে দিতে হবে। আর আপনি যেহেতু পরিষ্কারভাবে জানতে পারলেন যে, ধূমপান ক্ষতিকর এবং হারাম, তাই আপনার কর্তব্য হলোঃ
১. আল্লাহর উদ্দেশ্যে ধূমপানকে ঘৃণা করা।
২.এটি বর্জনের দৃঢ় সংকল্প করা।
৩. সিগারেটের পরিবর্তে দাঁতন-মিসওয়াক অথবা অন্য কোন হালাল ও পবিত্র দ্রব্য ব্যবহার করা।
৪. ধূমপায়ীদের সমাবেশে না যাওয়া।
অতএব আপনি চিরতরে ধূমপান বর্জন করার জন্যে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর নিকট সাহায্য চান, আর প্রার্থনা করুন- হে আল্লাহ্! ধূমপানের প্রতি আমাদের অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি করে দিন এবং এ থেকে বাঁচার তাওফিক দিন- আমীন।
Comments
Post a Comment