তাকবীর উলা ও ইসলামে চল্লিশ সংখ্যার গুরুত্ব।

তাকবীর উলার ফজীলত ও ইসলামে চল্লিশ সংখ্যার গুরুত্বঃ-
****************************************************
ইসলামে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা নামাজের ব্যাপারে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। ঈমানের পরেই যার স্থান। যা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ।
ইসলামি শরীয়ত সক্ষম পুরুষদেরকে জামাতের সাথে নামাজের নির্দেশ দিয়েছে। জামাত তরক করা থেকে হুঁশিয়ার করেছে। এমনকি অন্ধ ব্যক্তিকেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাত তরক করার অনুমতি দেন নি। শুধু তাই নয়, বরং যারা জামাতে নামাজ আদায় করে না তাদের ঘর জ্বলিয়ে দেয়ার ইচ্ছাও তিনি পোষণ করেছিলেন।
﴿ يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا ارۡكَعُوۡا وَاسۡجُدُوۡا وَاعۡبُدُوۡا رَبَّكُمۡ وَافۡعَلُوۡا الۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ‌ۚ۩‏﴾,,,
হে ঈমানদারগণ! রুকূ’ ও সিজদা করো, নিজের রবের বন্দেগী করো এবং নেক কাজ করো, হয়তো তোমাদের ভাগ্যে সফলতা আসবে। সূরা হজ্জ, আয়াত ৭৭।
জামাআতে নামাজ শুরু করার প্রথম তাকবিরের (তাকবীরে তাহরিমাহ) রয়েছে অত্যাধিক ফজিলত। যাকে তাকবিরে উলা বলা হয়। তাকবিরে উলার ফজিলত সম্পর্কে নবিজী এরশাদ করেছেন-
 عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ بَرَصَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ، يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى كُتِبَ لَهُ اءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ، وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ...
অর্থাৎ, আনাস বিন মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য তাকবিরে উলা পেয়ে চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ পড়বে, তার জন্য দুইটি মুক্তি অবধারিত।
১. জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি এবং
২. মুনাফিকি থেকে মুক্তি।
কিতাবের নাম: সুনানে তিরমিজি অধ্যায়: ...ابواب الصلاة অর্থাৎ, নামাজের অধ্যায় অনুচ্ছেদ: তাকবিরে উলার ফজিলত হাদিস নম্বর: ২৪১ .
ফায়দা : অর্থাৎ যে ব্যক্তি এখলাসের সঙ্গে ৪০ দিন ধরে এভাবে নামাজ পড়ে যে ইমামের সঙ্গে প্রথম তাকবির থেকেই নামাজে শরিক হয়, তবে সে ব্যক্তি জাহান্নামেও প্রবেশ করবে না এবং মুনাফিকদের তালিকায়ও তার নাম থাকবে না। মুনাফিক তাদের বলা হয়, যারা নিজেকে মুসলমান বলে জাহির করে অথচ অন্তরে কুফর রাখে।
এ কারণে সুফি দরবেশদের কাছে চিল্লার একটা বিশেষ তাৎপর্য ও রয়েছে। যাদের বছরের পর বছর ধরে তাকবিরে উলা ফওত হয় না, তারা কতই না ভাগ্যবান।
যে হাদিসে এমন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে সেই হাদিস সম্পর্কে
বিখ্যাত তাবেয়ি মুজাহিদ (রহ.) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন বদরি সাহাবিকে বলতে শুনেছি, তিনি তার ছেলেকে জিজ্ঞাস করেছেন, তুমি কি আমাদের সঙ্গে নামাজ পেয়েছে? ছেলে বললেন, জ্বি, আবার জিজ্ঞাস করলেন, তাকবিরে উলা তথা ইমামের সঙ্গেই তাকবির পেয়েছ? ছেলে বললেন, না। তিনি বললেন, তুমি ১০০ কালো চোখ বিশিষ্ট উটের চেয়ে অধিক কল্যাণ হারিয়েছ।
(মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস নং ২০২১)
আমাদের পূর্বসুরিরা তাকবিরে উলার প্রতি বেশ গুরুত্ব দিতেন। তাবেয়ি হজরত সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব (রহ.) একাধারে পঞ্চাশ বছর তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন।
(হিলইয়াতুল আওলিয়া ৪/২১৫)
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইমামের প্রথম তাকবির বলার সঙ্গে তাকবির বলে নামাজ শুরু করলে তাকবিরে উলা পাবে। সুতরাং ইমামের তাকবিরে তাহরিমার সঙ্গেই নামাজে শরিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ইমামের সঙ্গে তাকবির ধরার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া মুস্তাহাব। (রওজাতুত তালেবীন ১/৪৪৬)
প্রকাশ থাকে যে, সূরা ফাতেহা শেষ হওয়ার আগে জামাতে শরিক হতে পারলেও কোনো কোনো ফকিহ তাকবিরে উলার সওয়াব হাসিল হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন।
বিখ্যাত তাবেয়ি ওয়াকী (রহ.)কে তাকবিরে উলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ইমাম সূরা ফাতেহা শেষ করার আগ পর্যন্ত তাকবিরে উলা থাকে।
ওয়াকী (রহ.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে প্রথম রাকাতের আমীন পাবে সে তাকবিরে উলার ফজিলত পেয়ে যাবে।

চল্লিশ সংখ্যার বিশেষ গুরুত্ব ও ব্যবহারঃ-
যেমন- হাদিস শরিফে মায়ের উদরে মানব সন্তান জন্মের ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মানুষ চল্লিশ দিন ধরে বীর্যরূপে অবস্থান করে। এরপর চল্লিশ দিনে মাংসপিণ্ডে রূপ ধারণ করে। তারপর প্রতি ৪০ দিনে একেক অবস্থায় রূপান্তরিত হতে থাকে।
﴿وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ سُلٰلَةٍ مِّنۡ طِيۡنٍ‌ۚ‏﴾,,
আমি মানুষকে তৈরী করেছি মাটির উপাদান থেকে,
﴿ ثُمَّ جَعَلۡنٰهُ نُطۡفَةً فِىۡ قَرَارٍ مَّكِيۡنٍ‏﴾,,,
তারপর তাকে একটি সংরক্ষিত স্থানে টপ্‌কে পড়া ফোঁটায় পরিবর্তন করেছি।
﴿ ثُمَّ خَلَقۡنَا النُّطۡفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَةَ مُضۡغَةً فَخَلَقۡنَا الۡمُضۡغَةَ عِظٰمًا فَكَسَوۡنَا الۡعِظٰمَ لَحۡمًا ثُمَّ اَنۡشَاۡنٰهُ خَلۡقًا اٰخَرَ‌ؕ فَتَبٰرَكَ اللّٰهُ اَحۡسَنُ الۡخٰلِقِيۡنَؕ‏﴾,,,
এরপর সেই ফোঁটাকে জমাট রক্তপিন্ডে পরিণত করেছি, তারপর সেই রক্তপিন্ডকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর মাংসপিন্ডে অস্থি-পঞ্জর স্থাপন করেছি, তারপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিয়েছি গোশত দিয়ে, তারপর তাকে দাঁড় করেছি স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি রূপে।কাজেই আল্লাহ বড়ই বরকত সম্পন্ন, সকল কারিগরের চাইতে উত্তম কারিগর তিনি।
(সূরা মু'মিনুন, আয়াত ১২,১৩,১৪)।

#নবী হজরত ইউনুস (আ) ৪০ দিন যাবত মাছের পেটে ছিলেন, এটা প্রায় সবাই জানেন।

#তুর পাহাড়ে ৪০ দিন অবস্থানকালে হযরত মূসা (আ.)’র কাছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত গ্রন্থ নাজেল হয়। পাথরের ফলকে এ ঐশী প্রত্যাদেশ নাজেল হয়েছিল।

عَنْ أَبِي ذَرٍّ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ‏.‏ أَىُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ أَوَّلُ قَالَ ‏"‏ الْمَسْجِدُ الْحَرَامُ ‏"‏‏.‏ قُلْتُ ثُمَّ أَىٌّ قَالَ ‏"‏ ثُمَّ الْمَسْجِدُ الأَقْصَى ‏"‏‏.‏ قُلْتُ كَمْ كَانَ بَيْنَهُمَا قَالَ ‏"‏ أَرْبَعُونَ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ قَالَ ‏"‏ حَيْثُمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلاَةُ فَصَلِّ، وَالأَرْضُ لَكَ مَسْجِدٌ ‏"‏‏.‏
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সর্বপ্রথম কোন্‌ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আক্‌সা। আমি বললাম, এ দু'য়ের নির্মাণের মাঝখানে কত তফাৎ? তিনি বললেন, চল্লিশ (বছরের) [১] (অতঃপর তিনি বললেন), যেখানেই তোমার সালাতের সময় হবে, সেখানেই তুমি সালাত আদায় করে নিবে। কারণ পৃথিবীটাই তোমার জন্য মসজিদ।
ফুটনোটঃ
[১] এ দু মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন আদম (‘আঃ)। দু মসজিদের ভিত্তি স্থাপনে ব্যবধান ছিল ৪০ বছর।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪২৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
# ৪০ দিন জামায়াতের সাথে ফজরের নামাজ পড়,
বাই সাইকেল উপহার নাও!
তরুণ প্রজন্মকে মসজিদমুখী করার দারুণ এক উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্ক সরকার। ১৫ বছরের কম বয়সি কোন শিশু যদি একটানা ৪০ দিন জামায়াতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করে তবে তার জন্য একটি বাই সাইকেল উপহারের গোষণা দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রপধান রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান।
প্রকৃত মুসলমান কেমন হওয়া উচিত, তারা কেমন হবে। তুরস্ক সরকার তার দেশের শিশুদের এমন একটি শিক্ষা দিতে হাতে নিয়েছে ব্যাতিক্রমধমী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। এই উদ্যোগে তুরস্কে ব্যপক সাড়া পরেছে। তরুণ প্রজন্মকে মসজিদমুখী করে তাদের নৈতিকভাবে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। এরদোগানের এই কর্মসূচিতে তুরস্কের অবিভাবকগণও অত্যন্ত খুশী।

#৪০ দিন নামাজ পড়ে সাইকেল উপহার পেলো চাঁদপুরের ১৭ বালকঃ-
এবার তুরস্কের মত ব্যাতিক্রমি একটি ঘটনা দেখা গেল চাঁদপুর অঞ্চলে। টানা ৪০ দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করে ১৭ জন বালক পেয়েছে ১৭টি বাইসাইকেল। জানা যায় খান ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠন ব্যাতিক্রমি এই উদ্যোগ নিয়েছে। এরকম উদ্যোগ নেয়ায় এলাকায় সবাই স্বাগত জানাচ্ছে উদ্যাগতাদের।

عَنْ أَبِي جُهَيْمِ بْنِ الْحَارِثِ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَيِ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ» مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ، وَاللَّفْظُ لِلْبُخَارِيِّ
وَوَقَعَ فِي «الْبَزَّارِ» مِنْ وَجْهٍ آخَرَ: «أَرْبَعِينَ خَرِيفًا»

আবূ জুহাইম বিন্‌ হারিস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত আদায় কারী ব্যক্তির সন্মুখে দিয়ে অতিক্রম করার পাপ সম্বন্ধে যদি অতিক্রমকারী জানতো তবে সে তার সন্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে ৪০ (বছর) দাঁড়িয়ে থাকাকেই তার জন্য শ্রেয় মনে করতো। শব্দ বিন্যাস বুখারীর। [২৬২] বায্‌যারে ভিন্ন সানাদে ‘চল্লিশ বছর’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। [২৬]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، أَنَّهُ سَمِعَهُ , يَقُولُ : " كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَيْسَ بِالطَّوِيلِ الْبَائِنِ ، وَلا بِالْقَصِيرِ ، وَلا بِالأَبْيَضِ الأَمْهَقِ ، وَلا بِالآدَمِ ، وَلا بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ ، وَلا بِالسَّبْطِ ، بَعَثَهُ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى رَأْسِ أَرْبَعِينَ سَنَةً ، فَأَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِينَ ، وَبِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ ، وَتَوَفَّاهُ اللَّهُ عَلَى رَأْسِ سِتِّينَ سَنَةً , وَلَيْسَ فِي رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ عِشْرُونَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ " .

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না দীর্ঘ অবয়ব বিশিষ্ট ছিলেন, না খর্বাকৃতির ছিলেন। না সাদা বর্ণের ছিলেন, না ছিলেন ধূসর বর্ণের। তাঁর চুল না খুব বক্র ছিল, না ছিল সোজা: বরং ঈষৎ কোঁকড়ানো ছিল। ৪০ বছরের মাথায় তাকে নবুওয়াত দান করা হয়। এরপর তিনি মক্কায় ১০ বছর, মদিনায় ১০ বছর কাটান এবং ৬০ বছরের মাথায় ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর দাড়ি বা মাথার ২০টি চুলও সাদা হয়নি।[১]
ফুটনোটঃ
[১] মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৯; সহীহ বুখারী, হা/৫৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৪৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৩৫ সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৩৮৭।শামায়েলে তিরমিযি, হাদিস নং ২৯৪।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رِوَايَةً ‏ "‏ الْفِطْرَةُ خَمْسٌ ـ أَوْ خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ ـ الْخِتَانُ، وَالاِسْتِحْدَادُ، وَنَتْفُ الإِبْطِ، وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ، وَقَصُّ الشَّارِبِ ‏"‏‏.‏
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেছেনঃ ফিতরাত (অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব) পাঁচটিঃ খাত্‌না করা, ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভীর নিম্নে), বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ খাটো করা। [৭] [৫৮৯১, ২৬৯৭; মুসলিম ২/১৬, হাঃ ২৫৭, আহমাদ ৭১৪২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৫৭।
ফুটনোটঃ
[৭] গোঁফ ছোট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে এগুলো মুখের ভিতর এসে না পড়ে। গোঁফ বেশী দীর্ঘ হলে নাকের এবং বাইরের ময়লা মিশে মুখের ভিতরে ঢোকে। পানি পান করার সময় এবং আহারের সময় গোঁফে আটকানো নাকের ও বাইরের রোগজীবানু ও ময়লাগুলো মুখের ভিতরে প্রবেশ করে নানাবিধ রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই ইসলামে গোঁফ লম্বা করে রাখা নিষিদ্ধ। কেননা এটা স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বিরোধীও বটে। যথাসময়ে গোঁফ কাটা, গুপ্তস্থানের ক্ষৌরকার্য্য করা, বগলের চুল ছেঁড়া ও নখ কাটা উচিত। ৪০ রাত বা দিন যেন অতিক্রম না করে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়াও উচিত। কারণ রসূল এগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেছেনঃ ৪০ রাত বা দিন যেন অতিক্রান্ত না হয় (মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ্‌ ও আহমাদ)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৮৮৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।

হায়িয, নিফাস ও ইস্তিহাযা পরিচিতিঃ
হায়িযঃ হায়িযের আভিধানিক অর্থঃ কোন তরল পদার্থ প্রবাহিত হওয়া। শারী'আতের পরিভাষায় হায়িয হচ্ছেঃ কোন প্রকার আঘাত, রোগ এবং প্রসবজনিত কোন কারণ ছাড়া মহিলাদের নির্দিষ্ট সময়ে স্বাভাবিক রক্তস্রাব হওয়া।
নিফাস (প্রসবোত্তর রক্তস্রাব): এটা ঐ রক্তস্রাব, যা প্রসবজনিত কারণে প্রসবকালে বা পরে নির্গত হয়ে থাকে। এর সর্বোচ্চ সময়সীমা ৪০ দিন।
ইস্তিহাযা (অনিয়মিত রক্তস্রাব): এটা হচ্ছে মহিলাদের বিরতিহীনভাবে রক্তস্রাব অথবা সামান্য সময় বিরতি দিয়ে রক্তস্রাব। কোন মহিলার স্বীয় হায়িয ও নিফাসের গণণাকৃত নির্দিষ্ট দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যে রক্তস্রাব হয়, তাই ইস্তিহাযা বা রক্তপ্রদর রোগ।

# এক যুবক ও বাদশাহর মেয়ের গল্প:-
চুরি করার জন্য এক যুবক বাদশাহর বাড়ি গেল। ঘরের বাইরে থাকা অবস্থায় সে শুনলো বাদশাহ তার স্ত্রীর সাথে আলাপ করছেন। বাদশা বলছেন-যে ব্যক্তি তাকবীরে উলার সাথে ৪০ দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহর খুশির জন্য মনোযোগ দিয়ে পড়বে, তার সাথে আমি আমার একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেবো।
চোর একথা শুনে চুরি বাদ দিয়ে ফজর থেকে বাদশাহর মসজিদে নামাজ শুরু করে দিল। এভাবে চলতে থাকে দিন। ৩৯ দিন পর বাদশা খবর নিয়ে জানতে পারলেন এক যুবক একটানা ৩৯ দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ সময়মত তাকবিরে উলার সাথে আদায় করছে। বাদশা খুশি হয়ে এই যুবককে খবর দিলেন।
কিন্তু যুবক বাদশার সংবাদে আসে না। এভাবে ৪০ থেকে ৪২ দিন হয়ে যায়। তবু যুবকটি এলো না।
বাদশাহ আবার খবর দিলেন। তখন যুবক বাদশার দরবারে যেতে বাধ্য হল। বাদশাহ যুবককে ভালো করে দেখে বললেন-শুনো হে যুবক। আমি ওয়াদা করেছি তোমার মতো নেককার কারো সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো। আমার মেয়েকে বিয়ে করতে তোমাকে বল প্রয়োগ করছি না। আমি শুধু জানতে চাই, কেন খবর পাওয়ার পরেও তুমি বাদশার আদেশকে অমান্য করে আসলে না?
যুবক বললো-বাদশাহ জাহাপনা, আপনি জানেন না আমি কেমন লোক। আমি মোটেও ভালো মানুষ ছিলাম না, বরং মহাপাপী এক চোর ছিলাম। আপনার ঘর চুরি করতে গিয়ে আপনার মুখের প্রতিজ্ঞা শুনে নেককার মানুষ হওয়ার অভিনয় করতেই মসজিদে ঢুকেছিলাম। প্রতারণামূলক আপনার মেয়েকে বিয়ে করাই আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এখন আমার সেই ইচ্ছা আর নেই।
বাদশা বলেন-তার পরও তোমার কাছেই আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই। বাদশা দেখলেন তার কথা শুনে যুবকের চোখ থেকে টপ টপ করে পানি ঝরছে।
এবার যুবক আসল ঘটনা বাদশাহকে খুলে বলল-বাদশা জাহাপনা, মসজিদে নামাজের ভেতর ৪০ দিনের দিনও আমি রাজকুমারি আর রাজ্য হাসিল করার স্বপ্ন দেখতে ছিলাম। কিন্তু ৪০তম দিনের শেষ নামাজের শেষ রাকাতের শেষ সেজদায় আমি এমন এক প্রশান্তি অনুভব করলাম যা জান্নাতের প্রশান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমার হৃদয় প্রশান্তিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে! আমি পার্থিব জীবনের সব আনন্দ বেদনা সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম। আমার দয়াময় আল্লাহ যেন আমার অন্তরে তাঁরই ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন। আমার হৃদয় এখন পাল্টে গেছে। আজ আমি ধন-সম্পদ চাই না, নারী-রাজ্য, প্রাচুর্য, সুখ-আনন্দ কিছুই চাই না। আজ চাই শুধু নামাজের সেজদার ভেতর পাওয়া সেই জান্নাতি প্রশান্তি। যুবকের কথা শুনে বাদশা আশ্চর্যের সাথে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেন
(সুবহানাল্লাহ!)হে আল্লাহ! আপনি মুসলিম উম্মাহকে তাকবিরে উলার সহিত জামাআতে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। জাহান্নামের আগুন থেকে হিফাজত করুন। মুনাফিকির কাজগুলো থেকে হিফাজত করুন। আমিন।

Comments