হজ্জ এর কার্যক্রম শুরুর ইতিহাস ও ক্বাবার বৈশিষ্ট্যঃ-
****************************************************
হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ। প্রত্যেক সামর্থবান, সুস্থ ও বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মুসলমানের উপরে জীবনে একবার হজ্জ পালন করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ,,,
“আর তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর।” (সূরা আল-বাকারা-১৯৬)
ইসলামের এই মহান ইবাদত পবিত্র হজ্জ পালন কখন থেকে শুরু হলো এবং আল্লাহর ঘর ক্বাবা কখন কে নির্মাণ করেছিলো আলোচ্য প্রবন্ধে এ সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
ক্বাবা নির্মানের ইতিহাস:-
পৃথিবীর সূচনালগ্নে মহান আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে সর্ব প্রথম ফেরেশতা কর্তৃক ‘ক্বাবা’ নির্মান করা হয়েছিলো। এরপর হযরত আদম (আ.) নিজে ‘ক্বাবা’ পূন নির্মান করেন। হযরত নূহ (আ.) এর মহাপ্লাবনের সময় ক্বাবার সীমানা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো। এরপর হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সময় আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে ওহী প্রেরণ করে ক্বাবার স্থান দেখিয়ে দেন এবং ক্বাবা পূনঃনির্মানের নির্দেশ দেন। হযরত ইবরাহীম ও ইসমাইল (আ.) দু’জনে মিলে বর্তমান ক্বাবা পূনরায় ইবাদতের ঘর হিসেবে নির্মান করেন। এরপর জিবরাঈল (আ.) জান্নাত থেকে একটা পাথর এনে দেন, সেটাকে ক্বাবার দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দিতে বলেন সেটাই হচ্ছে ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর।
ক্বাবা ও হযরত ইবরাহীম (আ.) ঃ-
ক্বাবার ইতিহাসের সাথে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। কারন হযরত ইবরাহীম (আ.) ক্বাবা পূনঃনির্মান করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ,,,
অর্থ : আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিত্তিগুলো উঠাচ্ছিল (এবং বলছিল,) ‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সূরা আল-বাকারা- ১২৭)।
হযরত ইবরাহীম (আ.) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল। যার পিতা ছিলো একজন মুর্তিপুজক ও নির্মাতা। সে দেশের রাজা নমরুদও ছিলো একজন জালিম শাসক যিনি নিজেকে রব হিসেবে ঘোষণা দিত, নিজে মুর্তিপুজা করত এবং সকলকে সেটা করতে বাধ্য করত। এই সমাজেই একজন মুর্তিপুজকের ঘরে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর জন্ম হয়। ছোটবেলা থেকেই হযরত ইবরাহীম (আ.) এর প্রকৃত শ্রষ্টা কে তা জানার প্রবল ইচ্ছা ছিলো। এজন্য জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই তিনি ভাবতে শুরু করলেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা নিতান্ত গোলামের মতই উদয়-অস্তের নিয়ম অনুসরণ করছে কাজেই তাদেরকে শ্রষ্ঠা বলে মেনে নেওয়া যায়না। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَأَى كَوْكَبًا قَالَ هَذَا رَبِّي فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ,,
অর্থ: অতঃপর যখন রাত তার উপর আচ্ছন্ন হল, সে তারকা দেখল, বলল, ‘এ আমার রব’। অতঃপর যখন তা ডুবে গেল, তখন সে বলল, ‘যারা ডুবে যায় আমি তাদেরকে ভালবাসি না’। (সূরা আরআম- ৭৬)।
فَلَمَّا رَأَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هَذَا رَبِّي فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِنْ لَمْ يَهْدِنِي رَبِّي لَأَكُونَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّينَ,,,
অর্থ: অতঃপর যখন সে চাঁদ উজ্জ্বলরূপে উদীয়মান দেখল, বলল, ‘এ আমার রব’। পরে যখন তা ডুবে গেল, বলল, ‘যদি আমার রব আমাকে হিদায়াত না করেন, নিশ্চয় আমি পথহারা কওমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’। (সূরা আরআম- ৭৭)
فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَذَا رَبِّي هَذَا أَكْبَرُ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ,,,
অর্থ : অতঃপর যখন সে সূর্য উজ্জ্বলরূপে উদীয়মান দেখল, বলল, ‘এ আমার রব, এ সবচেয়ে বড়’। পরে যখন তা ডুবে গেল, তখন সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা যা শরীক কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত’। (সূরা আরআম- ৭৮)।
অনুরূপভাবে তিনি ভাবতে লাগলেন, মূর্তিগুলো তো পাথর দিয়ে মানুষের নিজের হাতে তৈরী, দেশের বাদশাহ আমাদের মত একজন সাধারণ মানুষ, তিনি কিভাবে রব হতে পারে? যেসব জিনিস নিজের ইচ্ছায় এতটুকুও নড়তে পারে না, নিজের সাহায্য করার ক্ষমতাও যেসব জিনিসের মধ্যে নেই। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَنْ يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ,,,
অর্থ: হে মানুষ, একটি উপমা পেশ করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা শোন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা এ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও যার কাছে অন্বেষণ করা হয় উভয়েই দুর্বল। (সূরা হাজ্জ- ৭৩)।
এসব কথা চিন্তা করে হযরত ইবরাহীম (আ.) জাতির উপাস্য মূর্তিগুলোর কাছে মাথা নত করলেন না বরং পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেন, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এরপর নিজের রবের দিকে নিজেকে সপে দিলেন এবং বললেন,
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ,,,
অর্থ: আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত-বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। (সূরা আন'আম- ৭৯)
হযরত ইবরাহীম (আ.) এর এ ঘোষণার ফলে নমরুদ তেলে-বেগুনে জলে উঠলো এবং তাকে রাজ দরবারে ডেকে নিয়ে নমরুদকে রব হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য করা হলো, তখন তিনি বাদশাহর প্রকাশ্য দরবারে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করলেন,
“তুমি আমার ‘রব’ নও, আমার ‘রব’ তিনিই যাঁর মুষ্ঠিতে তোমার আমার সকলেরই জীবন ও মৃত্যু নিহিত রয়েছে এবং যাঁর নিয়মের কঠিন বাঁধনে চন্দ্র, সূর্য সবই বন্দী হয়ে আছে।”
রাজ দরবার থেকে শেষ পর্যন্ত ফয়সালা হলো, ইবরাহীম (আ.)কে জীবন্ত জ্বালিয়ে ভষ্ম করা হবে। কিন্তু ইবরাহীম (আ.)মের ঈমান ছিল পর্বত অপেক্ষা অধিকতর মজবুত। একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ছিল তাঁর ভরসা। তাই এ ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতেও তিনি অকুন্ঠ চিত্তে প্রস্তুত হলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে হত্যা করার জন্য আগুনের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সে আগুনকে শান্তিদায়ক করে দিলেন। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ,,
অর্থ : আমি বললাম, হে আগুন, তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (সূরা আম্বিয়া-৬৯)
নবী-রাসূলদের দায়িত্বই ছিলো পৃথিবীর পথহারা মানুষদেরকে আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহবান করা, তাদেরকে ইসলামের আলোর দিকে নিয়ে আসা। আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ,,,
অর্থ : আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং পরিহার কর তাগূতকে। (সূরা আন-নাহল- ৩৬)
এজন্য হযরত ইবরাহীম (আ.) আগুন থেকে পরিত্রানের পর জন্মভুমি, জাতি, আত্মীয়-স্বজন সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধু নিজের স্ত্রী ও ভ্রাতুষ্পুত্র লুত (আ.)কে সাথে নিয়ে পথে পথে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। তিনি একমাত্র প্রকৃত রবের দাসত্ব কবুল করে সমগ্র দুনিয়াকে সেই দিকে আহ্বান জানাতে লাগলেন এবং এ অপরাধে তিনি কোথাও একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারলেন না। জন্মভূমি থেকে বের হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.) সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর এবং আরব দেশসমূহে ঘুরতে-ফিরতে লাগলেন। দীর্ঘ সময় এই ভ্রমণ পথে তাঁর উপর অসংখ্য বিপদ এসেছে, তিনি তা সবই সবরের সাথে মোকাবেলা করেছেন। এ সময় ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা তার সাথে কিছুই ছিল না। তিনি রুযি-রোযগার করার কোন চিন্তা-ভাবনা করেননি। বরং রাত-দিন তিনি কেবল একটি চিন্তাই করতেন, দুনিয়ার মানুষকে অসংখ্য রবের গোলামী থেকে কিভাবে মুক্ত করে একমাত্র আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা যায়। এই চিন্তা-চেতনা নিয়ে কখনও কেনানে, কখনও মিসরে এবং কখনও আরবের মরুভুমিতে বছরের পর বছর ধরে উদভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এভাবেই তাঁর গোটা যৌবনকাল অতিবাহিত হয়ে কালো চুল সাদা হয়ে গিয়েছিলো।
জীবনের শেষ ভাগে নব্বই বছর পূর্ণ হতে মাত্র চারটি বছর বাকী ছিল এবং সন্তান লাভের কোনো আশাই যখন ছিল না তখন তিনি আল্লাহর কাছে সন্তানের প্রার্থণা করলেন,
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ,,,
অর্থ : ‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন’। (সূরা সাফ্ফাত- ১০০)।
আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সন্তান দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘোষণা করলেন।
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ,,,
অর্থ: অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সস্তানের সুসংবাদ দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত- ১০১)।
হযরত ইবরাহীম (আ.) এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের পিতা হওয়ার পরেও আল্লাহর এই বান্দা এতটুকু চিন্তিত হয়ে পাড়েননি যে, নিজের জীবনটা তো আশ্রয়হীনভাবে কাটিয়ে দিলাম, এখন অন্তত সন্তানদেরকে একটু রুজী-রোযগারের যোগ্য করে তুলি। এসব চিন্তা তাঁর মনে উদয় হয়নি। বরং জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এই বৃদ্ধ পিতার মনে একটি মাত্র বাসনা, একটি মাত্র চিন্তাই জেগেছিল নিজের জীবন যে মিশন নিয়ে অতিবিহিত হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পর সেই কর্তব্য পালন করার এবং তাঁর দাওয়াত চারদিকে প্রচার করার মতো লোকের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্যই তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেছিলেন এবং আল্লাহ যখন তাঁকে সন্তান দান করলেন, তখন তিনি তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কাজ চালিয়ে যাবার জন্য নিজ সন্তানদেরকে মনোনিত করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন,
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ,,,
অর্থ : ‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (সূরা আল-বাকারা- ১২৯)
হযরত ইবরাহীম (আ.) এর জীবন ছিলো একজন সত্যিকার মুসলমানের আদর্শিক মানদ্ব-ে অংকিত। তিনি যৌবনের সূচনাতেই তাঁর রবকে চিনতে পারলেন তাই আল্লাহ যখন তাকে বলেছিলেন, أَسْلِمْ ‘ইসলাম গ্রহণ কর’ স্বেচ্ছায় আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর, আমার দাসত্ব স্বীকার করো। তিনি তখন উত্তরে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন,
أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
‘আমি ইসলাম কবুল করলাম।’ এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ,,,
অর্থ : যখন তার রব তাকে বললেন, ‘তুমি আত্মসমর্পণ কর’। সে বলল, ‘আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজকে সমর্পণ করলাম’। (সূরা আল-বাকারা- ১৩১)
হযরত ইবরাহীম (আ.) ঘোষণা করলেন, আমি সারা জাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, নিজেকে তাঁর কাছে সোপর্দ করলাম। জীবনের সকল ক্ষেত্রে এ ওয়াদাকে তিনি সবদিক দিয়ে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। তিনি রাব্বুল আ‘লামীনের জন্য শত শত বছরের পৈত্রিক ধর্ম এবং তার যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান ও আকীদা-বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছেন। পৌরহিত্যের গদিতে বসলে তিনি যেসব সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারতেন তা সবই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। নিজের বংশ-পরিবার, নিজের জাতি ও মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে আগুনের বুকে ঝাঁপ দিয়েছেন। দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, দেশের পর দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, নিজের জীবনের এক একটি মূহুর্তকে রাব্বুল আ‘লামীনের দাসত্ব-অনুগত্যের কাজে এবং তাঁর দ্বীন ইসলামের প্রচারে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তান লাভ হলো তখন তাঁর জন্যও এ জীবন ব্যবস্থা এবং এ কর্তব্যই নির্ধারিত করলেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন।
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ,,,
অর্থ : ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত কওম বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সূরা আল-বাকারা- ১২৮)
উপরে বর্ণিত এসব কঠিন পরীক্ষার পর আর একটি শেষ ও কঠিন পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল। যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত হযরত ইবরাহীম (আ.) সব কিছু অপেক্ষা আল্লাহ রাব্বুল আ‘লামীনকেই বেশী ভালবাসেন কিনা, তার ফয়সালা হতে পারতো না। সেই কঠিন পরীক্ষা সামনে এসে পড়লো। বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর যে সন্তান লাভ হয়েছিল, সেই সন্তানকে আল্লাহর নির্দেশে পবিত্র মক্কার ধূসর মরূভূমিতে মা হাজেরাসহ রেখে গেলেন। মা হাজেরাও ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন, তিনি হযরত ইবরাহীম (আ.) কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি নিজের সিদ্ধান্তে না আল্লাহর সিদ্ধান্তে রেখে যাচ্ছেন? হযরত ইবরাহীম (আ.) বললেন, আল্লাহর সিদ্ধান্তে। একথা শুনার পর মা হাজেরা আর কোন কথা বলেননি, তিনি আল্লাহর উপরে ভরসা করে এখানে অবস্থান করতে লাগলেন। হযরত ইবরাহীম (আ.) স্ত্রী ও শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ.) মক্কা নগরীতে রেখে ফিরে যাওয়ার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করে বললেন,
رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ,,,
অর্থ : হে পরাওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি, এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে। (সূরা ইবরাহীম- ৩৭)
হযরত ইবরাহীম (আ.) এর দোয়া আল্লাহ কবুল করলেন। এই ধূসর মরুভুমিতে যুরহাম গোত্রের একটা কাফেলার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেন। এভাবেই পবিত্র মক্কা নগরীতে নতুন করে জনবসতি তৈরী হলো।
এরপর শিশুপুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) যখন দৌড়া দৌড়ি করা শিখলো সেই একমাত্র সন্তানকেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে পারেন কিনা, তারই পরীক্ষা নেয়া হলো হযরত ইবরাহীম (আ.) এর কাছ থেকে। হযরত ইবরাহীম (আ.) এ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হলেন। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ,,,
অর্থ : অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছলো, তখন সে বললো, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বললো, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’। (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ (১০৩) وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ (১০৪) قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ,,,
“অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে ইসমাইল (আ.)কে কাত করে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম, ‘হে ইবরাহীম, ‘তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছো। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। ”(সূরা সাফ্ফাত ১০৩-১০৫)
এভাবে সকল পরীক্ষায় যখন তিনি উত্তীর্ণ হলেন তখন তাকে বলা হলো এখন তুমি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার দাবীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছো। তাই এখন তোমাকে সারা দুনিয়ার ইমাম বা নেতা বানিয়ে দেয়া যেতে পারে। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ,,,
অর্থ : এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় সঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম? আল্লাহ তায়ালা বললেন, যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়। (সূরা আল-বাকারা- ১২৪)
এভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.)কে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হলো এবং তাঁকে বিশ্বব্যাপী ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনের ‘নেতা’ নিযুক্ত করা হলো। এখন এ আদর্শিক আন্দোলনকে অধিকতর সম্প্রসারিত করার জন্য এবং বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি ৩জনকে মনোনিত করলেন।
(১) একজন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত লূত (আ.) :
তাকে ‘সাদুম’ (ট্রান্স জর্দান) এলাকায় দায়িত্ব দিলেন। এখানে সেকালের সর্বাপেক্ষা ইতর-লম্পট জাতি বাস করতো। যারা পুরুষে পুরুষে ব্যভিচার করতো। সেখানে একদিকে সেই জাতির নৈতিকতার সংস্কার সাধন এবং সেই সাথে দূরবর্তী এলাকাসমূহেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল তাঁর কাজ। ইরান, ইরাক এবং মিসরের ব্যবসায়ী দল এ এলাকা দিয়েই যাতায়াত করতো। কাজেই এখানে বসে উভয় দিকেই ইসলাম প্রচারের মহান কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা তাঁর জন্য সহজ হয়েছিলো।
(২) দ্বিতীয় হচ্ছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক (আ.) :
হযরত ইসহাক (আ.)কে তিনি কেনান বা ফিলিস্তিন এলাকায় রাখলেন। এটা সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থান, এটা ছিলো সমূদ্র-উপকূলবর্তী এলাকা এজন্য এখান থেকেই অন্যান্য দেশ পর্যন্ত ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজটা সহজ ছিল। এ স্থান থেকেই হযরত ইসহাক (আ.) এর পুত্র হযরত ইয়াকুব (আ.) এবং পৌত্র হযরত ইউসুফ (আ.) মারফতে ইসলামের আদর্শিক সৌন্দর্য মিসর পর্যন্ত পোঁছেছিল।
(৩) তৃতীয় হচ্ছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) :
জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)কে হিজাযের মক্কা নগরীতে বসালেন এবং দীর্ঘকাল যাবত নিজেই তাঁর সাথে থেকে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করেছিলেন। তারপর এখানেই পিতা-পুত্র দু’জনে মিলে ইসলামের আদর্শিক আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র ‘খানায়ে কা’বা’ প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছিলেন, নিজেই এটা গড়ে তোলার স্থান ঠিক করেছিলেন। ‘খানায়ে কা’বা’ সাধারণ মসজিদের ন্যায় নিছক ইবাদাতের স্থান নয়, প্রথম দিন থেকেই এটা দ্বীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল। এ কা’বা ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ থেকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সংঘবদ্ধভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে, আবার এখান থেকেই ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। এবং ‘খানায়ে কা’বা থেকে প্রাপ্ত হেদায়েত সে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিবে এভাবে কা’বা হয়ে উঠবে বিশ^ মুসলিমের হেদায়েতের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হলো ‘হজ্জ’।
হজ্জ শুরু হওয়ার ইতিহাস :
এ ইবাদাত কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা কি করে হলো, আর ‘হজ্জ’ কিভাবে শুরু হলো তার বিস্তারিত বিবরণ আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ - فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا,,,
অর্থ : মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর তাতে সন্দেহ নেই। এটা অত্যন্ত পবিত্র, বরকতপূর্ণ এবং সারা দুনিয়ার জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বর্তমান রয়েছে, ‘মাকামে ইবরাহীম’ রয়েছে এবং যে-ই এখানে প্রবেশ করবে সেই নিরাপদে থাকবে। (সূরা আলে-ইমরান- ৯৬-৯৭)
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ,,,
অর্থ : আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো। (সূরা আনকাবুত- ৬৭)
অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুট-তরাজ, মার-পিট এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এ হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমানার মধ্যে তার পিতৃহন্তাকারীকে দেখতে পেত, তবুও এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না। আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آَمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ,,,
অর্থ : এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয় স্থল বানিয়েছিলাম এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থানকে ‘মুসাল্লা’ (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম আর তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইবরাহীম দোয়া করলো, হে পালনকর্তা আপনি এ শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন। (সূরা আল-বাকারা- ১২৫-১২৬)
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ,,,
অর্থ : এবং স্মরণ কর, ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দোয়া করছিল, পরওয়ারদিগার! আমাদের এ চেষ্টা কুবল কর, তুমি সবকিছু জান ও শুনতে পাও। পরওয়ারদিগার! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম- অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে, তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদাত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দেবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞ। (সূরা আল বাকারা- ১২৭-১২৯)
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آَمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ - رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ,,,
অর্থ : এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম দোয়া করেছিল, হে আল্লাহ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তিপূজার শির্ক থেকে বাচাও। হে আল্লাহ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরাওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি, এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে। (সূরা ইবরাহীম- ৩৫-৩৭)
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَنْ لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ - لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ,,,
অর্থ : এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম একথা বলে যে, এখানে কোনো প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও-তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন-দুনিয়ার কল্যানের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে। (সূরা আল-হজ্জ- ২৬-২৮)
৬ হাজার বছর আগে ক্বাবা পুনঃনির্মান হচ্ছিল, নির্মানকারী হযরত ইবরাহীম ও ইসমাইল (আ.)।
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ,,,
অর্থ: আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিত্গুলো উঠাচ্ছিল (এবং বলছিল,) ‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সূরা আল-বাকারা ১২৭)
এই ক্বাবা নির্মান করা শেষ হওয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা হযরত ইবরাহীম (আ.) কে পৃথিবীর সকল মানুষকে হজ্জের জন্য ডাক দিতে বললেন। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ,,,
অর্থ: আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে। (সূরা হাজ্জ- ২৭)
হযরত ইবরাহীম (আ.) বললেন, হে আমার প্রতিপালক এই মরু প্রান্তরের ডাক কে শুনবে? আল্লাহ বললেন, তুমি ডাক দাও আর এটা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। সে দিন ইবরাহীম (আ.) এর ডাকে যারা সাড়া দিয়েছিল অর্থাৎ (লাব্বাইক) বলেছিল, তারা আল্লাহর ক্বা’বায় একদিন উপস্থিত হবে। যারা উপস্থিত হবে তারা মুখে উচ্চারণ করবে,
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَك,,,
অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাজির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, আর সকল স¤্রাজ্যও তোমার, তোমার কোন শরীক নেই। (সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম)
‘হজ্জ’ শুরু হওয়ার এটাই গোড়ার ইতিহাস। এটাকে ইসলামের পঞ্চম রোকন (স্তম্ভ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যেমন আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ,,,
অর্থ : ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি ১. এই কথার স্বাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, ২. নামায কায়েম করা, ৩. যাকাত প্রদান করা, ৪. হজ্জ পালন করা এবং ৫. রমজান মাসে রোযা রাখা। (সহীহ আল-বুখারী)
ক্বাবার বৈশিষ্ট্য সমূহ :
১. পৃথিবীর প্রথম ঘর ক্বাবা ও হেদায়েতের কেন্দ্র :
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ,,,
অর্থ: নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। আলে-ইমরান-৯৬)
ক্বা’বা নিরাপত্তার ঘর :
সকল প্রাণীর জন্য ক্বা’বা নিরাপত্তার স্থান। যে ব্যক্তিই এখানে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা পাবে, চরম শত্রুও যদি ক্বা’বার মধ্যে অবস্থান করে তাকে স্পর্শ করার সাহস পাবে না। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ,,,
অর্থ: আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো। (সূরা আনকাবুত- ৬৭)
২. মাকামে ইবরাহীম :
ক্বা’বার আর একটি ব্যশিষ্ট্য এখানে রায়েছে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর স্মৃতি বিজড়িত নিজের পায়ের ছাপ বিশিষ্ট পাথর। এছাদা হজ্জের সকল কাজের মধ্যে রয়েছে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর স্মৃতি। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ,,,
অর্থ: তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে-ইমরান- ৯৭)
রাসূল (সা.) সাহাবীদের নিয়ে তাওয়াফ করছিলেন এমন সময় হযরত ওমর (রা.) বলছেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এটা কি মাকামে ইবরাহীম না? রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমরা কি এখানে নামায পড়ব না ? রাসূল (সা.) চুপ থাকলেন, তাওয়াফ শেষ করার পর আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করলেন,
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى,,,
অর্থ: আর স্মরণ কর, যখন আমি ক্ব’াবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) ‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। (সূরা আল-বাকারা- ১২৫)
রাসূল (সা.) বলেন, আমি হযরত ইবরাহীম (আ.) এর দোয়ার ফসল। কারণ হযরত ইবরাহীম (আ.) ক্বা’বা নির্মাণ শেষ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন,
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ,,,
অর্থ: হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আল-বাকারা-১২৯) হযরত ইবরাহীম (আ.) এই দোয়া করছেন আর ইসমাইল (আ.) বলছেন আমীন।
৩. হাজরে আসওয়াদ :
এটা বেহেশতী পাথর রাসূল (সা.) এই পাথরে চুমু খেয়েছেন। বায়তুল্লাহর ত্বওয়াফ হবে সাতটি চক্করের মাধ্যমে। প্রত্যেকটি চক্কর হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু হয়ে সেখানেই আবার শেষ হবে। উল্লেখ্য যে, ক্বা‘বার দরজার পাশের কোণটিতে হাজারে আসওয়াদ রয়েছে। ত্বওয়াফকারী পবিত্র হয়ে ক্বা‘বাকে বাম পাশে রেখে ত্বওয়াফ করবে। ত্বওয়াফের সময় ‘হাতীম’ নামক স্থানটির বাইরে দিয়ে ত্বওয়াফ করবে; ভেতর দিয়ে নয়। কেননা এই স্থানটিও ক্বা‘বার অন্তর্ভুক্ত।
ত্বওয়াফকারী যখন হাজারে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছবে, তখন সহজ হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করবে। সম্ভব না হলে হাত অথবা অন্য কোন কিছু দিয়ে তা স্পর্শ করবে এবং যা দিয়ে স্পর্শ করেছে, তা চুম্বন করবে। সেটিও সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করবে। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত উমর (রা.) বলেন,
إِنِّى أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّى رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم - يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ,,,
অর্থ : নিশ্চয়ই আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি যেমন কোন ক্ষতি করতে পারো না, তেমনি কোন
****************************************************
হজ্জ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি স্তম্ভ। প্রত্যেক সামর্থবান, সুস্থ ও বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মুসলমানের উপরে জীবনে একবার হজ্জ পালন করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّهِ,,,
“আর তোমরা আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর।” (সূরা আল-বাকারা-১৯৬)
ইসলামের এই মহান ইবাদত পবিত্র হজ্জ পালন কখন থেকে শুরু হলো এবং আল্লাহর ঘর ক্বাবা কখন কে নির্মাণ করেছিলো আলোচ্য প্রবন্ধে এ সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
ক্বাবা নির্মানের ইতিহাস:-
পৃথিবীর সূচনালগ্নে মহান আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে সর্ব প্রথম ফেরেশতা কর্তৃক ‘ক্বাবা’ নির্মান করা হয়েছিলো। এরপর হযরত আদম (আ.) নিজে ‘ক্বাবা’ পূন নির্মান করেন। হযরত নূহ (আ.) এর মহাপ্লাবনের সময় ক্বাবার সীমানা প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো। এরপর হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সময় আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে ওহী প্রেরণ করে ক্বাবার স্থান দেখিয়ে দেন এবং ক্বাবা পূনঃনির্মানের নির্দেশ দেন। হযরত ইবরাহীম ও ইসমাইল (আ.) দু’জনে মিলে বর্তমান ক্বাবা পূনরায় ইবাদতের ঘর হিসেবে নির্মান করেন। এরপর জিবরাঈল (আ.) জান্নাত থেকে একটা পাথর এনে দেন, সেটাকে ক্বাবার দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দিতে বলেন সেটাই হচ্ছে ‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথর।
ক্বাবা ও হযরত ইবরাহীম (আ.) ঃ-
ক্বাবার ইতিহাসের সাথে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। কারন হযরত ইবরাহীম (আ.) ক্বাবা পূনঃনির্মান করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ,,,
অর্থ : আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিত্তিগুলো উঠাচ্ছিল (এবং বলছিল,) ‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সূরা আল-বাকারা- ১২৭)।
হযরত ইবরাহীম (আ.) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূল। যার পিতা ছিলো একজন মুর্তিপুজক ও নির্মাতা। সে দেশের রাজা নমরুদও ছিলো একজন জালিম শাসক যিনি নিজেকে রব হিসেবে ঘোষণা দিত, নিজে মুর্তিপুজা করত এবং সকলকে সেটা করতে বাধ্য করত। এই সমাজেই একজন মুর্তিপুজকের ঘরে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর জন্ম হয়। ছোটবেলা থেকেই হযরত ইবরাহীম (আ.) এর প্রকৃত শ্রষ্টা কে তা জানার প্রবল ইচ্ছা ছিলো। এজন্য জ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই তিনি ভাবতে শুরু করলেন চন্দ্র, সূর্য, তারকা নিতান্ত গোলামের মতই উদয়-অস্তের নিয়ম অনুসরণ করছে কাজেই তাদেরকে শ্রষ্ঠা বলে মেনে নেওয়া যায়না। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَأَى كَوْكَبًا قَالَ هَذَا رَبِّي فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ,,
অর্থ: অতঃপর যখন রাত তার উপর আচ্ছন্ন হল, সে তারকা দেখল, বলল, ‘এ আমার রব’। অতঃপর যখন তা ডুবে গেল, তখন সে বলল, ‘যারা ডুবে যায় আমি তাদেরকে ভালবাসি না’। (সূরা আরআম- ৭৬)।
فَلَمَّا رَأَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هَذَا رَبِّي فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِنْ لَمْ يَهْدِنِي رَبِّي لَأَكُونَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّينَ,,,
অর্থ: অতঃপর যখন সে চাঁদ উজ্জ্বলরূপে উদীয়মান দেখল, বলল, ‘এ আমার রব’। পরে যখন তা ডুবে গেল, বলল, ‘যদি আমার রব আমাকে হিদায়াত না করেন, নিশ্চয় আমি পথহারা কওমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’। (সূরা আরআম- ৭৭)
فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَذَا رَبِّي هَذَا أَكْبَرُ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِمَّا تُشْرِكُونَ,,,
অর্থ : অতঃপর যখন সে সূর্য উজ্জ্বলরূপে উদীয়মান দেখল, বলল, ‘এ আমার রব, এ সবচেয়ে বড়’। পরে যখন তা ডুবে গেল, তখন সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা যা শরীক কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত’। (সূরা আরআম- ৭৮)।
অনুরূপভাবে তিনি ভাবতে লাগলেন, মূর্তিগুলো তো পাথর দিয়ে মানুষের নিজের হাতে তৈরী, দেশের বাদশাহ আমাদের মত একজন সাধারণ মানুষ, তিনি কিভাবে রব হতে পারে? যেসব জিনিস নিজের ইচ্ছায় এতটুকুও নড়তে পারে না, নিজের সাহায্য করার ক্ষমতাও যেসব জিনিসের মধ্যে নেই। এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَنْ يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ,,,
অর্থ: হে মানুষ, একটি উপমা পেশ করা হল, মনোযোগ দিয়ে তা শোন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। যদিও তারা এ উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নেয়, তারা তার কাছ থেকে তাও উদ্ধার করতে পারবে না। অন্বেষণকারী ও যার কাছে অন্বেষণ করা হয় উভয়েই দুর্বল। (সূরা হাজ্জ- ৭৩)।
এসব কথা চিন্তা করে হযরত ইবরাহীম (আ.) জাতির উপাস্য মূর্তিগুলোর কাছে মাথা নত করলেন না বরং পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করলেন, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক বলে মনে কর তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এরপর নিজের রবের দিকে নিজেকে সপে দিলেন এবং বললেন,
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ,,,
অর্থ: আমি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিশেষভাবে কেবল সেই মহান সত্ত্বাকেই ইবাদাত-বন্দেগীর জন্য নির্দিষ্ট করলাম যিনি সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। (সূরা আন'আম- ৭৯)
হযরত ইবরাহীম (আ.) এর এ ঘোষণার ফলে নমরুদ তেলে-বেগুনে জলে উঠলো এবং তাকে রাজ দরবারে ডেকে নিয়ে নমরুদকে রব হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য করা হলো, তখন তিনি বাদশাহর প্রকাশ্য দরবারে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করলেন,
“তুমি আমার ‘রব’ নও, আমার ‘রব’ তিনিই যাঁর মুষ্ঠিতে তোমার আমার সকলেরই জীবন ও মৃত্যু নিহিত রয়েছে এবং যাঁর নিয়মের কঠিন বাঁধনে চন্দ্র, সূর্য সবই বন্দী হয়ে আছে।”
রাজ দরবার থেকে শেষ পর্যন্ত ফয়সালা হলো, ইবরাহীম (আ.)কে জীবন্ত জ্বালিয়ে ভষ্ম করা হবে। কিন্তু ইবরাহীম (আ.)মের ঈমান ছিল পর্বত অপেক্ষা অধিকতর মজবুত। একমাত্র আল্লাহর ওপরেই ছিল তাঁর ভরসা। তাই এ ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতেও তিনি অকুন্ঠ চিত্তে প্রস্তুত হলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে হত্যা করার জন্য আগুনের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সে আগুনকে শান্তিদায়ক করে দিলেন। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ,,
অর্থ : আমি বললাম, হে আগুন, তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। (সূরা আম্বিয়া-৬৯)
নবী-রাসূলদের দায়িত্বই ছিলো পৃথিবীর পথহারা মানুষদেরকে আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহবান করা, তাদেরকে ইসলামের আলোর দিকে নিয়ে আসা। আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ,,,
অর্থ : আর আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতিতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং পরিহার কর তাগূতকে। (সূরা আন-নাহল- ৩৬)
এজন্য হযরত ইবরাহীম (আ.) আগুন থেকে পরিত্রানের পর জন্মভুমি, জাতি, আত্মীয়-স্বজন সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধু নিজের স্ত্রী ও ভ্রাতুষ্পুত্র লুত (আ.)কে সাথে নিয়ে পথে পথে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। তিনি একমাত্র প্রকৃত রবের দাসত্ব কবুল করে সমগ্র দুনিয়াকে সেই দিকে আহ্বান জানাতে লাগলেন এবং এ অপরাধে তিনি কোথাও একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারলেন না। জন্মভূমি থেকে বের হয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.) সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর এবং আরব দেশসমূহে ঘুরতে-ফিরতে লাগলেন। দীর্ঘ সময় এই ভ্রমণ পথে তাঁর উপর অসংখ্য বিপদ এসেছে, তিনি তা সবই সবরের সাথে মোকাবেলা করেছেন। এ সময় ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা তার সাথে কিছুই ছিল না। তিনি রুযি-রোযগার করার কোন চিন্তা-ভাবনা করেননি। বরং রাত-দিন তিনি কেবল একটি চিন্তাই করতেন, দুনিয়ার মানুষকে অসংখ্য রবের গোলামী থেকে কিভাবে মুক্ত করে একমাত্র আল্লাহর বান্দায় পরিণত করা যায়। এই চিন্তা-চেতনা নিয়ে কখনও কেনানে, কখনও মিসরে এবং কখনও আরবের মরুভুমিতে বছরের পর বছর ধরে উদভ্রান্ত পথিকের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এভাবেই তাঁর গোটা যৌবনকাল অতিবাহিত হয়ে কালো চুল সাদা হয়ে গিয়েছিলো।
জীবনের শেষ ভাগে নব্বই বছর পূর্ণ হতে মাত্র চারটি বছর বাকী ছিল এবং সন্তান লাভের কোনো আশাই যখন ছিল না তখন তিনি আল্লাহর কাছে সন্তানের প্রার্থণা করলেন,
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ,,,
অর্থ : ‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন’। (সূরা সাফ্ফাত- ১০০)।
আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সন্তান দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘোষণা করলেন।
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ,,,
অর্থ: অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সস্তানের সুসংবাদ দিলাম। (সূরা সাফ্ফাত- ১০১)।
হযরত ইবরাহীম (আ.) এই বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের পিতা হওয়ার পরেও আল্লাহর এই বান্দা এতটুকু চিন্তিত হয়ে পাড়েননি যে, নিজের জীবনটা তো আশ্রয়হীনভাবে কাটিয়ে দিলাম, এখন অন্তত সন্তানদেরকে একটু রুজী-রোযগারের যোগ্য করে তুলি। এসব চিন্তা তাঁর মনে উদয় হয়নি। বরং জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এই বৃদ্ধ পিতার মনে একটি মাত্র বাসনা, একটি মাত্র চিন্তাই জেগেছিল নিজের জীবন যে মিশন নিয়ে অতিবিহিত হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পর সেই কর্তব্য পালন করার এবং তাঁর দাওয়াত চারদিকে প্রচার করার মতো লোকের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্যই তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেছিলেন এবং আল্লাহ যখন তাঁকে সন্তান দান করলেন, তখন তিনি তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কাজ চালিয়ে যাবার জন্য নিজ সন্তানদেরকে মনোনিত করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন,
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ,,,
অর্থ : ‘হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (সূরা আল-বাকারা- ১২৯)
হযরত ইবরাহীম (আ.) এর জীবন ছিলো একজন সত্যিকার মুসলমানের আদর্শিক মানদ্ব-ে অংকিত। তিনি যৌবনের সূচনাতেই তাঁর রবকে চিনতে পারলেন তাই আল্লাহ যখন তাকে বলেছিলেন, أَسْلِمْ ‘ইসলাম গ্রহণ কর’ স্বেচ্ছায় আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর, আমার দাসত্ব স্বীকার করো। তিনি তখন উত্তরে পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন,
أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
‘আমি ইসলাম কবুল করলাম।’ এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ,,,
অর্থ : যখন তার রব তাকে বললেন, ‘তুমি আত্মসমর্পণ কর’। সে বলল, ‘আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজকে সমর্পণ করলাম’। (সূরা আল-বাকারা- ১৩১)
হযরত ইবরাহীম (আ.) ঘোষণা করলেন, আমি সারা জাহানের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করলাম, নিজেকে তাঁর কাছে সোপর্দ করলাম। জীবনের সকল ক্ষেত্রে এ ওয়াদাকে তিনি সবদিক দিয়ে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। তিনি রাব্বুল আ‘লামীনের জন্য শত শত বছরের পৈত্রিক ধর্ম এবং তার যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান ও আকীদা-বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছেন। পৌরহিত্যের গদিতে বসলে তিনি যেসব সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারতেন তা সবই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। নিজের বংশ-পরিবার, নিজের জাতি ও মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন। নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে আগুনের বুকে ঝাঁপ দিয়েছেন। দেশত্যাগ ও নির্বাসনের দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, দেশের পর দেশ পরিভ্রমণ করেছেন, নিজের জীবনের এক একটি মূহুর্তকে রাব্বুল আ‘লামীনের দাসত্ব-অনুগত্যের কাজে এবং তাঁর দ্বীন ইসলামের প্রচারে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তান লাভ হলো তখন তাঁর জন্যও এ জীবন ব্যবস্থা এবং এ কর্তব্যই নির্ধারিত করলেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন।
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ,,,
অর্থ : ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধরের মধ্য থেকে আপনার অনুগত কওম বানান। আর আমাদেরকে আমাদের ইবাদাতের বিধি-বিধান দেখিয়ে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। (সূরা আল-বাকারা- ১২৮)
উপরে বর্ণিত এসব কঠিন পরীক্ষার পর আর একটি শেষ ও কঠিন পরীক্ষা অবশিষ্ট রয়ে গিয়েছিল। যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত হযরত ইবরাহীম (আ.) সব কিছু অপেক্ষা আল্লাহ রাব্বুল আ‘লামীনকেই বেশী ভালবাসেন কিনা, তার ফয়সালা হতে পারতো না। সেই কঠিন পরীক্ষা সামনে এসে পড়লো। বৃদ্ধ বয়সে একেবারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তাঁর যে সন্তান লাভ হয়েছিল, সেই সন্তানকে আল্লাহর নির্দেশে পবিত্র মক্কার ধূসর মরূভূমিতে মা হাজেরাসহ রেখে গেলেন। মা হাজেরাও ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন, তিনি হযরত ইবরাহীম (আ.) কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি নিজের সিদ্ধান্তে না আল্লাহর সিদ্ধান্তে রেখে যাচ্ছেন? হযরত ইবরাহীম (আ.) বললেন, আল্লাহর সিদ্ধান্তে। একথা শুনার পর মা হাজেরা আর কোন কথা বলেননি, তিনি আল্লাহর উপরে ভরসা করে এখানে অবস্থান করতে লাগলেন। হযরত ইবরাহীম (আ.) স্ত্রী ও শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ.) মক্কা নগরীতে রেখে ফিরে যাওয়ার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করে বললেন,
رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ,,,
অর্থ : হে পরাওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি, এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে। (সূরা ইবরাহীম- ৩৭)
হযরত ইবরাহীম (আ.) এর দোয়া আল্লাহ কবুল করলেন। এই ধূসর মরুভুমিতে যুরহাম গোত্রের একটা কাফেলার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের খাবার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেন। এভাবেই পবিত্র মক্কা নগরীতে নতুন করে জনবসতি তৈরী হলো।
এরপর শিশুপুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) যখন দৌড়া দৌড়ি করা শিখলো সেই একমাত্র সন্তানকেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে পারেন কিনা, তারই পরীক্ষা নেয়া হলো হযরত ইবরাহীম (আ.) এর কাছ থেকে। হযরত ইবরাহীম (আ.) এ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হলেন। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانْظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ,,,
অর্থ : অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছলো, তখন সে বললো, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বললো, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’। (সূরা সাফ্ফাত- ১০২)
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ (১০৩) وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ (১০৪) قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ,,,
“অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে ইসমাইল (আ.)কে কাত করে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম, ‘হে ইবরাহীম, ‘তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছো। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। ”(সূরা সাফ্ফাত ১০৩-১০৫)
এভাবে সকল পরীক্ষায় যখন তিনি উত্তীর্ণ হলেন তখন তাকে বলা হলো এখন তুমি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার দাবীকে সত্য বলে প্রমাণ করেছো। তাই এখন তোমাকে সারা দুনিয়ার ইমাম বা নেতা বানিয়ে দেয়া যেতে পারে। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ,,,
অর্থ : এবং যখন ইবরাহীমকে তার ‘রব’ কয়েকটি ব্যাপারে পরীক্ষা করলেন এবং সে সেই পরীক্ষায় সঠিকভাবে উত্তীর্ণ হলো তখন তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, আমি তোমাকে সমগ্র মানুষের ইমাম (অগ্রবর্তী নেতা) নিযুক্ত করেছি। তিনি বললেন, আমার বংশধরদের প্রতিও কি এ হুকুম? আল্লাহ তায়ালা বললেন, যালেমদের জন্য আমার ওয়াদা প্রযোজ্য নয়। (সূরা আল-বাকারা- ১২৪)
এভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.)কে দুনিয়ার নেতৃত্ব দান করা হলো এবং তাঁকে বিশ্বব্যাপী ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলনের ‘নেতা’ নিযুক্ত করা হলো। এখন এ আদর্শিক আন্দোলনকে অধিকতর সম্প্রসারিত করার জন্য এবং বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি ৩জনকে মনোনিত করলেন।
(১) একজন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত লূত (আ.) :
তাকে ‘সাদুম’ (ট্রান্স জর্দান) এলাকায় দায়িত্ব দিলেন। এখানে সেকালের সর্বাপেক্ষা ইতর-লম্পট জাতি বাস করতো। যারা পুরুষে পুরুষে ব্যভিচার করতো। সেখানে একদিকে সেই জাতির নৈতিকতার সংস্কার সাধন এবং সেই সাথে দূরবর্তী এলাকাসমূহেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোই ছিল তাঁর কাজ। ইরান, ইরাক এবং মিসরের ব্যবসায়ী দল এ এলাকা দিয়েই যাতায়াত করতো। কাজেই এখানে বসে উভয় দিকেই ইসলাম প্রচারের মহান কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা তাঁর জন্য সহজ হয়েছিলো।
(২) দ্বিতীয় হচ্ছেন তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক (আ.) :
হযরত ইসহাক (আ.)কে তিনি কেনান বা ফিলিস্তিন এলাকায় রাখলেন। এটা সিরিয়া ও মিসরের মধ্যবর্তী স্থান, এটা ছিলো সমূদ্র-উপকূলবর্তী এলাকা এজন্য এখান থেকেই অন্যান্য দেশ পর্যন্ত ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর কাজটা সহজ ছিল। এ স্থান থেকেই হযরত ইসহাক (আ.) এর পুত্র হযরত ইয়াকুব (আ.) এবং পৌত্র হযরত ইউসুফ (আ.) মারফতে ইসলামের আদর্শিক সৌন্দর্য মিসর পর্যন্ত পোঁছেছিল।
(৩) তৃতীয় হচ্ছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) :
জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)কে হিজাযের মক্কা নগরীতে বসালেন এবং দীর্ঘকাল যাবত নিজেই তাঁর সাথে থেকে আরবের কোণে কোণে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করেছিলেন। তারপর এখানেই পিতা-পুত্র দু’জনে মিলে ইসলামের আদর্শিক আন্দোলনের বিশ্ববিখ্যাত কেন্দ্র ‘খানায়ে কা’বা’ প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তায়ালা নিজেই এ কেন্দ্র নির্দিষ্ট করেছিলেন, নিজেই এটা গড়ে তোলার স্থান ঠিক করেছিলেন। ‘খানায়ে কা’বা’ সাধারণ মসজিদের ন্যায় নিছক ইবাদাতের স্থান নয়, প্রথম দিন থেকেই এটা দ্বীন ইসলামের বিশ্বব্যাপী প্রচার কেন্দ্ররূপে নির্ধারিত হয়েছিল। এ কা’বা ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল এই যে, পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ থেকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী সকল মানুষ এখানে এসে মিলিত হবে এবং সংঘবদ্ধভাবে এক আল্লাহর ইবাদাত করবে, আবার এখান থেকেই ইসলামের বিপ্লবী পয়গাম নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবে। এবং ‘খানায়ে কা’বা থেকে প্রাপ্ত হেদায়েত সে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিবে এভাবে কা’বা হয়ে উঠবে বিশ^ মুসলিমের হেদায়েতের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্ব মুসলিমের এ সম্মেলনেরই নাম হলো ‘হজ্জ’।
হজ্জ শুরু হওয়ার ইতিহাস :
এ ইবাদাত কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা কি করে হলো, আর ‘হজ্জ’ কিভাবে শুরু হলো তার বিস্তারিত বিবরণ আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ - فِيهِ آَيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آَمِنًا,,,
অর্থ : মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর তাতে সন্দেহ নেই। এটা অত্যন্ত পবিত্র, বরকতপূর্ণ এবং সারা দুনিয়ার জন্য হেদায়াতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বর্তমান রয়েছে, ‘মাকামে ইবরাহীম’ রয়েছে এবং যে-ই এখানে প্রবেশ করবে সেই নিরাপদে থাকবে। (সূরা আলে-ইমরান- ৯৬-৯৭)
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ,,,
অর্থ : আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো। (সূরা আনকাবুত- ৬৭)
অর্থাৎ আরবের চারদিকে যখন লুট-তরাজ, মার-পিট এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তির সয়লাব বয়ে যেত তখনও এ হেরেমে সর্বদা শান্তি বিরাজ করতো। এমন কি দুধর্ষ মরু বেদুঈন যদি এর সীমানার মধ্যে তার পিতৃহন্তাকারীকে দেখতে পেত, তবুও এর মধ্যে বসে তাকে স্পর্শমাত্র করতে সাহস পেত না। আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا بَلَدًا آَمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ,,,
অর্থ : এবং স্মরণ কর, যখন আমরা এ ঘরকে লোকদের কেন্দ্র ও নিরাপদ আশ্রয় স্থল বানিয়েছিলাম এবং ইবরাহীমের ইবাদাতের স্থানকে ‘মুসাল্লা’ (জায়নামায) বানাবার নির্দেশ দিয়েছিলাম আর তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী এবং নামাযীদের জন্য আমার ঘরকে পাক ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরে যখন ইবরাহীম দোয়া করলো, হে পালনকর্তা আপনি এ শহরকে শান্তিপূর্ণ জনপদে পরিণত করুন এবং এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদের জন্য ফল-মূল দ্বারা জীবিকার সংস্থান করে দিন। (সূরা আল-বাকারা- ১২৫-১২৬)
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ,,,
অর্থ : এবং স্মরণ কর, ইবরাহীম ও ইসমাঈল যখন এ ঘরের ভিত্তি স্থাপনকালে দোয়া করছিল, পরওয়ারদিগার! আমাদের এ চেষ্টা কুবল কর, তুমি সবকিছু জান ও শুনতে পাও। পরওয়ারদিগার! তুমি আমাদের দু’জনকেই মুসলিম- অর্থাৎ তোমার অনুগত কর এবং আমাদের বংশাবলী থেকে এমন একটি জাতি তৈরী কর যারা একান্তভাবে, তোমারই অনুগত হবে। আমাদেরকে তোমার ইবাদাত করার পন্থা বলে দাও, আমাদের প্রতি ক্ষমার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর, তুমি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরওয়ারদিগার! তুমি সে জাতির প্রতি তাদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল পাঠাও যিনি তাদেরকে তোমার বাণী পড়ে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দেবে এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করবে। নিশ্চয় তুমি সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বিজ্ঞ। (সূরা আল বাকারা- ১২৭-১২৯)
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آَمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ فَمَنْ تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَحِيمٌ - رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ,,,
অর্থ : এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম দোয়া করেছিল, হে আল্লাহ! এ শহরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দাও, আমাকে এবং আমার সন্তানকে মূর্তিপূজার শির্ক থেকে বাচাও। হে আল্লাহ! এ মূর্তিগুলো অসংখ্য লোককে গোমরাহ করেছে। অতএব, যে আমার পন্থা অনুসরণ করবে সে আমার, আর যে আমার পন্থার বিপরীত চলবে তখন তুমি নিশ্চয়ই বড় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। পরাওয়ারদিগার! আমি আমার বংশধরদের একটি অংশ তোমার এ মহান ঘরের নিকট, এ ধূসর মরূভূমিতে এনে পুনর্বাসিত করেছি, এ উদ্দেশ্যে যে, তারা নামাযের ব্যবস্থা কায়েম করবে। অতএব, হে আল্লাহ! তুমি লোকদের মনে এতদূর উৎসাহ দাও যেন তারা এদের জীবিকার ব্যবস্থা করে। হয়ত এরা তোমার কৃতজ্ঞ বান্দা হবে। (সূরা ইবরাহীম- ৩৫-৩৭)
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَنْ لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ - وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ - لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ,,,
অর্থ : এবং স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের স্থান ঠিক করেছিলাম একথা বলে যে, এখানে কোনো প্রকার শিরক করো না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও নামাযীদের জন্য পাক-সাফ করে রাখ। আর লোকদেরকে হজ্জ করার জন্য প্রকাশ্যভাবে আহবান জানাও-তারা যেন তোমার কাছে আসে, পায়ে হেঁটে আসুক কিংবা দূরবর্তী স্থান থেকে কৃশ উটের পিঠে চড়ে আসুক। এখানে এসে তারা যেন দেখতে পায় তাদের জন্য দ্বীন-দুনিয়ার কল্যানের কত সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর দেয়া জন্তুগুলোকে আল্লাহর নামে কুরবানী করবে, তা থেকে নিজেরাও খাবে এবং দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত লোকদেরও খেতে দেবে। (সূরা আল-হজ্জ- ২৬-২৮)
৬ হাজার বছর আগে ক্বাবা পুনঃনির্মান হচ্ছিল, নির্মানকারী হযরত ইবরাহীম ও ইসমাইল (আ.)।
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ,,,
অর্থ: আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবার ভিত্গুলো উঠাচ্ছিল (এবং বলছিল,) ‘হে আমাদের রব, আমাদের পক্ষ থেকে কবূল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সূরা আল-বাকারা ১২৭)
এই ক্বাবা নির্মান করা শেষ হওয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা হযরত ইবরাহীম (আ.) কে পৃথিবীর সকল মানুষকে হজ্জের জন্য ডাক দিতে বললেন। আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ,,,
অর্থ: আর মানুষের নিকট হজ্জের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে। (সূরা হাজ্জ- ২৭)
হযরত ইবরাহীম (আ.) বললেন, হে আমার প্রতিপালক এই মরু প্রান্তরের ডাক কে শুনবে? আল্লাহ বললেন, তুমি ডাক দাও আর এটা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। সে দিন ইবরাহীম (আ.) এর ডাকে যারা সাড়া দিয়েছিল অর্থাৎ (লাব্বাইক) বলেছিল, তারা আল্লাহর ক্বা’বায় একদিন উপস্থিত হবে। যারা উপস্থিত হবে তারা মুখে উচ্চারণ করবে,
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَك,,,
অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাজির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, আর সকল স¤্রাজ্যও তোমার, তোমার কোন শরীক নেই। (সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম)
‘হজ্জ’ শুরু হওয়ার এটাই গোড়ার ইতিহাস। এটাকে ইসলামের পঞ্চম রোকন (স্তম্ভ) হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যেমন আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ,,,
অর্থ : ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি ১. এই কথার স্বাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, ২. নামায কায়েম করা, ৩. যাকাত প্রদান করা, ৪. হজ্জ পালন করা এবং ৫. রমজান মাসে রোযা রাখা। (সহীহ আল-বুখারী)
ক্বাবার বৈশিষ্ট্য সমূহ :
১. পৃথিবীর প্রথম ঘর ক্বাবা ও হেদায়েতের কেন্দ্র :
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِلْعَالَمِينَ,,,
অর্থ: নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। আলে-ইমরান-৯৬)
ক্বা’বা নিরাপত্তার ঘর :
সকল প্রাণীর জন্য ক্বা’বা নিরাপত্তার স্থান। যে ব্যক্তিই এখানে প্রবেশ করবে সে নিরাপত্তা পাবে, চরম শত্রুও যদি ক্বা’বার মধ্যে অবস্থান করে তাকে স্পর্শ করার সাহস পাবে না। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آَمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ,,,
অর্থ: আমরা মানুষের জন্য কিরূপে বিপদশূন্য ও শান্তিপূর্ণ হেরেম তৈরী করেছি তা কি তারা দেখতে পায়নি? অথচ তার চারপাশে লোক লুন্ঠিত ও ছিনতাই হয়ে যেতো। (সূরা আনকাবুত- ৬৭)
২. মাকামে ইবরাহীম :
ক্বা’বার আর একটি ব্যশিষ্ট্য এখানে রায়েছে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর স্মৃতি বিজড়িত নিজের পায়ের ছাপ বিশিষ্ট পাথর। এছাদা হজ্জের সকল কাজের মধ্যে রয়েছে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর স্মৃতি। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَقَامُ إِبْرَاهِيمَ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ,,,
অর্থ: তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সূরা আলে-ইমরান- ৯৭)
রাসূল (সা.) সাহাবীদের নিয়ে তাওয়াফ করছিলেন এমন সময় হযরত ওমর (রা.) বলছেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এটা কি মাকামে ইবরাহীম না? রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমরা কি এখানে নামায পড়ব না ? রাসূল (সা.) চুপ থাকলেন, তাওয়াফ শেষ করার পর আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করলেন,
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى,,,
অর্থ: আর স্মরণ কর, যখন আমি ক্ব’াবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) ‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর। (সূরা আল-বাকারা- ১২৫)
রাসূল (সা.) বলেন, আমি হযরত ইবরাহীম (আ.) এর দোয়ার ফসল। কারণ হযরত ইবরাহীম (আ.) ক্বা’বা নির্মাণ শেষ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন,
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ,,,
অর্থ: হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আল-বাকারা-১২৯) হযরত ইবরাহীম (আ.) এই দোয়া করছেন আর ইসমাইল (আ.) বলছেন আমীন।
৩. হাজরে আসওয়াদ :
এটা বেহেশতী পাথর রাসূল (সা.) এই পাথরে চুমু খেয়েছেন। বায়তুল্লাহর ত্বওয়াফ হবে সাতটি চক্করের মাধ্যমে। প্রত্যেকটি চক্কর হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু হয়ে সেখানেই আবার শেষ হবে। উল্লেখ্য যে, ক্বা‘বার দরজার পাশের কোণটিতে হাজারে আসওয়াদ রয়েছে। ত্বওয়াফকারী পবিত্র হয়ে ক্বা‘বাকে বাম পাশে রেখে ত্বওয়াফ করবে। ত্বওয়াফের সময় ‘হাতীম’ নামক স্থানটির বাইরে দিয়ে ত্বওয়াফ করবে; ভেতর দিয়ে নয়। কেননা এই স্থানটিও ক্বা‘বার অন্তর্ভুক্ত।
ত্বওয়াফকারী যখন হাজারে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছবে, তখন সহজ হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করবে। সম্ভব না হলে হাত অথবা অন্য কোন কিছু দিয়ে তা স্পর্শ করবে এবং যা দিয়ে স্পর্শ করেছে, তা চুম্বন করবে। সেটিও সম্ভব না হলে হাত দিয়ে ইশারা করবে। আল-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত উমর (রা.) বলেন,
إِنِّى أَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ لاَ تَضُرُّ وَلاَ تَنْفَعُ، وَلَوْلاَ أَنِّى رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم - يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ,,,
অর্থ : নিশ্চয়ই আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি যেমন কোন ক্ষতি করতে পারো না, তেমনি কোন
Comments
Post a Comment