থার্টি ফাস্ট নাইট’ চরিত্র বিধ্বংসী একটি উৎসবঃ-

বেহায়াপনা গান বাজনা আর যৌন উল্লাস দিয়ে নয়, 
নতুন বছর শুরু হোক আজ দুরাকাত নামাজ দিয়েঃ-


******************************************



থার্টি ইংরেজী শব্দ।এর অর্থ হলো ত্রিশ। আর ফাস্ট অর্থ প্রথম। নাইট অর্থ রাত।পুরো শব্দের অর্থ একত্রিশ এর রাত। ইংরেজী নববর্ষের আগমনকে কেন্দ্র করে এই  দিবস পালন করা হয়। যার নাম রাখা হয় থার্টি ফাস্ট নাইট। ১লা জানুয়ারী ইংরেজী নববর্ষ পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়।এটা উদযাপন করা মুসলমানদের কাজ নয়।এটা পালন মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ন হারাম।

ইতিহাসের পাতা থেকেঃ
"""""""""""""""""""""""""""""""""
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্যে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়।পারস্য হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ। এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১লা জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন। গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন মোটামুটি ভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর।
মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করতো, এদিন দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। ১লা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
ইংরেজি সাল গণনার বিষয়টা ইংরেজদের আবিষ্কার নয়। তাই এটি ইংরেজি নববর্ষ নয়। এটি খৃষ্টীয় বা গ্রেগরিয়ান নববর্ষ। ইংরেজরা ১৭৫২ সালে ১জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসাবে গ্রহণ করে। তার ২৩০ বছর আগে অর্থাৎ ১৫২২ সালে ভেনিসে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্পেন ও পর্তুগাল ইংরেজ তথা বৃটিশদের ১৯৬ বছর আগেই ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। সেই বিবেচনায় কোন মতেই ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ হতে পারে না। বরং আজকের ১লা জানুয়ারি খৃস্টানদের গ্রেগরিয়ান নববর্ষ।

ইসলাম কি বলেঃ
""""""""""""""""""""""""
থার্টি ফাস্ট নাইট/ইংরেজী নববর্ষ উৎযাপন করা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। ইসলামি আইনবিদগণ একে হারাম বলে আখ্যায়িত করেন। কেননা,এটা অমুসলিম ইহুদি খ্রিষ্টানদের কৃষ্টি কালচার বা তাদের ধর্মীয় নগ্ন উৎসব।
অমুসলিম ইহুদী,খ্রিস্টান ও ফাসিক-ফুজ্জার দ্বীনবিমুখদের কৃষ্টিকালচার,রীতি,নীতি বেশভূষা গ্রহন করা নিষেধ এসম্পর্কে নবীয়ে রহমত রাসূলে আকরাম (সাঃ) মূলনীতি বর্ণনা করেন—
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهما قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন--“যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৪০৩১)। হাদিস বিশারদদের দৃষ্টিতে এ হাদিসটি হাসান,সহীহ।
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন--
وَهَذَا الْحَدِيثُ أَقَلُّ أَحْوَالِهِ أَنْ يَقْتَضِيَ تَحْرِيمَ التَّشَبُّهِ بِهِمْ
“এ হাদীসে যা বুঝানো হয়েছে, তাতে কমপক্ষে এতটুকু বুঝা যায় যে, এ হাদীস বিধর্মী অথবা দ্বীনবিমুখদের সাথে সামঞ্জস্যতাকে হারাম গণ্য করছে।”(আওনুল মা‘বূদ শরহে আবু দাউদঃ ১৪/ ৬০)।
নবী (সঃ) তাদের বিরোধিতা করার নির্দেশদিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,রাসূলুল্লাহ (সঃ)  বলেছেন “তোমরা....
ইহুদিদের সাথে মিল রেখনা।”(তিরমিজি, হাঃ১৬৭১)

তারা করছে তাই আমরা করছি। ভালো-মন্দ, বৈধ-অবৈধ ও কুফর-শিরক ভেবে দেখার ফুরসত নেই। তারা দীন থেকে দূরে সরে গেছে, ভুলে গেছে ইসলামী আদর্শ। উম্মতের উপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) যার আশঙ্কা করেছেন এবং যার থেকে তিনি উম্মতকে বারবার সতর্ক করেছেন। রাসূল (সাঃ)-এর ইরশাদ—

عن أبي سعيد رضي الله عنه : أن النبي صلى الله عليه و سلم قال لتتبعن سنن من قبلكم شبرا بشبر وذراعا بذراع حتى لو سلكوا جحر ضب لسلكتموه . قلنا يا رسول الله اليهود والنصارى ؟ قال فمن,,
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ)বলেছেন—“তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের রাস্তা অনুসরণ করবে বিঘতে বিঘতে ও হাতে হাতে। তারা যদি গুঁইসাপের গর্তে ঢুকে তোমরা অবশ্যই তাদের অনুসরণ করবে; আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, ইহুদি ও খৃস্টান? তিনি বললেনঃ তবে কে?”(বুখারি,হাঃ৩২২১; মুসলিম,হাঃ৪৮২৮)
:
ইমাম নববি (রহ.) বলেন- “বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে ও গুঁইসাপের গর্তের উদাহরণ পেশ করার অর্থ কঠিনভাবে তাদের অনুসরণ করা।এ অনুসরণ অর্থ কুফরি নয়, বরং পাপাচার ও ইসলামের বিরোধিতায় তাদের অনুকরণ করা উদ্দেশ্য। এটা নবী(সঃ)স্পষ্ট মুজিজা, তিনি যার সংবাদ দিয়েছেন আমরা তা চাক্ষুষ দেখছি”(ইমাম নববি কর্তৃক ‘সহি মুসলিমের ব্যাখ্যা’ গ্রন্থ:১৬/১৮৯)]। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
ﻭَﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻣُﺼَﺪِّﻗًﺎ ﻟِﻤَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ
ﻭَﻣُﻬَﻴْﻤِﻨًﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ۖ ﻓَﺎﺣْﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺘَّﺒِﻊْ ﺃَﻫْﻮَﺍﺀَﻫُﻢْ
ﻋَﻤَّﺎ ﺟَﺎﺀَﻙَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻖِّ ۚ ﻟِﻜُﻞٍّ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﺷِﺮْﻋَﺔً ﻭَﻣِﻨْﻬَﺎﺟًﺎ ۚ ﻭَﻟَﻮْ ﺷَﺎﺀَ
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺠَﻌَﻠَﻜُﻢْ ﺃُﻣَّﺔً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻭَﻟَٰﻜِﻦْ ﻟِﻴَﺒْﻠُﻮَﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﻣَﺎ ﺁﺗَﺎﻛُﻢْ ۖ ﻓَﺎﺳْﺘَﺒِﻘُﻮﺍ
ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَﺍﺕِ ۚ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺮْﺟِﻌُﻜُﻢْ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻓَﻴُﻨَﺒِّﺌُﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻓِﻴَﻥﻮُﻔِﻠَﺘْﺨَﺗ
আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন,তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি শরীআত ও স্পষ্ট পন্থা এবং আল্লাহ যদি চাইতেন,তবে
তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।
(সূরা আল-মায়িদাহ,আয়াতঃ ৪৮)।
রাসূলে আকরাম(সঃ) বলেছেন— “তোমরা অন্ধকার রাতের ঘনঘটার ন্যায় ফেৎনার পূর্বে দ্রুত আমল কর, যখন ব্যক্তি ভোর করবে মুমিন অবস্থায়, সন্ধ্যা করবে কাফির অবস্থায়; অথবা সন্ধ্যা করবে মুমিন অবস্থায়, ভোর করবে কাফির অবস্থায়। মানুষ তার দীনকে বিক্রি করে দিবে দুনিয়ার সামান্য বিনিময়ে”।(মুসলিম, হাঃ১৭৩)।
আমরা বর্তমান ফেতনার অন্ধকারের বেড়াঝালে বাস করছি, আমাদের চারপাশে ঘোর অন্ধকার। মূর্খতার অন্ধকার, কুসংস্কারের অন্ধকার, বিদআতের অন্ধকার, শিরকের অন্ধকার, সঠিক পথ খুজে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে ইহুদি-খৃস্টান ও কাফেরদের নগ্ন সংস্কৃতি আমাদের ঘ্রাস করে রেখেছে। ইলেকট্রিক প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে ঘরে ঘরে নিমিষে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের নোংরা আচার-অনুষ্ঠান। তাদের উৎসব, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করে, তাতে যোগ দেয় ও আনন্দ করে। কি নববর্ষ, কি মৃত্যু বার্ষিকী, কি জন্ম বার্ষিকী, কি বিবাহ বার্ষিকী, কি বাবা দিবস, কি মা দিবস, কি হাত দোয়া দিবস, কি ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, কোন কিছুতেই কুণ্ঠাবোধ নেই।
তাই, একজন মুসলিম খৃস্টান পাদ্রী পোপ গ্রেগরিয়ান- এর নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার, সেই ক্যালেন্ডারের পরবর্তী চলন ইংরেজি ১লা জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে তা উদযাপন এবং তাদের অন্যান্য নগ্ন কালচার অনুসরন করলে তার ঈমান কখনও থাকতে পারে না।

থার্টি ফাস্ট নাইট’ চরিত্র বিধ্বংসী উৎসবঃ-
আমরা অতি শীঘ্র ২০২০-এ পদার্পণ করতে যাচ্ছি। আমাদের জীবন থেকে বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। নতুন বছরকে নতুন চেতনায় গ্রহণ করতে হবে আমাদের। করতে হবে মুহাসাবা ও আত্মসমালোচনা। এক বছরে কি পেলাম, কি অর্জন করলাম আর কি হারালাম! অথচ এই সময়টাতে আমাদের মধ্যে আত্মসমালোচনা দেখাই যায় না। দেখা যায় আত্মবিস্মৃতির প্রকট দৃষ্টান্ত।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে দেশের শহর-নগরগুলোতে জমে উঠেছে উদ্দাম নাচ-গানের আসর। উন্মাদনায় মেতেছে একশ্রেণির মানুষ। এই উন্মাদনা এতটাই বাঁধভাঙ্গা যে, তা কোনভাবেই ঠেকানো যায় না। থার্টি ফার্স্ট নাইট-এর সঙ্গে যুক্ত হয় ইহুদিদের বড় দিন-সহ আরও বেশ কিছু কালচার। এসব প্রত্যেকটা কালচারই জাতির জন্য এক মাহাঘাত এবং চরিত্র বিধ্বংসী। আবার একদল মানুষ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে মুসলিম সন্তানদের এগুলোতে ঢুকিয়ে দেয়। তাদের উপস্থাপনে মনে হয় এই উন্মাদনা অপরিহার্য একটি বিষয়।
এই উচ্ছৃঙ্খল পশ্চিমা কালচার বিগত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে চর্চিত হচ্ছে। দেশের ঈমানদার নাগরিকদের জন্য এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে? এটা শুধু লজ্জারই না বরং পরিতাপের বিষয়ও। আমরা কি কখনও তরুণদের এ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেছি। ভেবেছি তাদের ব্যাপারে। তাদের না বুঝিয়ে নিজের গুঁটিয়ে রেখেছি। এ কারণেই পরিস্থিতি আজ ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে।
আফসোস এবং খুব কষ্টের বিষয়, মুসিলম সন্তানরা মুহাসাবা ও আত্মসমালোচনা দূরে রেখে এ রাতে আল্লাহর নাফরমানীর সয়লাবে ভেসে যায়। ছেলেমেয়ের অবাধ মেলামেশা প্রকট রূপ ধারণ করে। যৌন উল্লাস করে বেড়ায়। তরুণ-তরুণীরা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়, রেস্তোরাঁ, পার্ক-উদ্যান, নাইট ক্লাব ইত্যাদিতে। থার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে প্রতি বছর ঘটে প্রচুর অপ্রীতিকর ঘটনাও।
নাইট ক্লাব ও ‘অভিজাত’ হোটেলগুলোতে বসে মদের আসর। তরুণ-তরুণীদের প্রলুব্ধ করার জন্য থাকে নানা রকম অশুভ আয়োজন। নারী ও মদে পঙ্কিল হয়ে ওঠে বছরের প্রথম দিনরাত্রিগুলো। এসব নারী, মদ আর নষ্টামিতে নিজেদের ভাসিয়ে না দিয়ে মুসলিম সমাজে বছরের নতুন দিন শুরু হওয়ার কথা ছিল দু রাকাত নামাজ দিয়ে। কিন্তু সেটা বাদ দিয়ে আমরা নাফারমানি ও পাপাচারের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সূচনা করি। যে বছরের শুরু হয় নারী মদ দিয়ে তা জাতির জীবনে কতটুকু সুফলতা বয়ে আনবে?
এই নোংরা কালচারটি আমদানী করেছেন আমাদের দেশেরই কিছু বুদ্ধিজীবী। এরা একটি শালীন সমাজের বুনিয়াদ গড়ার পরিবর্তে দেশটাকে অশ্লীলতার ভাগাড়ে পরিনত করতেই উৎসাহী। এরা একদিকে পহেলা বৈশাখের মাহাত্ম্য প্রচার করে বেড়ান আর অন্যদিকে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপনের উস্কানী দিয়ে দেন। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এক দিকে মদ জোয়ার আসর খুলে দিয়ে যুবশ্রেণীকে তারাই বিভিন্ন রকম সুন্দর সুন্দর স্লোগান দিতে শিখিয়ে দেন, উপদেশ দেন ‘মাদক, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনকে না বলুন’।

যেসব কারণে ইসলাম বারণ করেঃ-
অশ্লীলতাঃ-
এ প্রসঙ্গে নবী সা. বলেন, ‘ঐসব নারী যারা হবে পোশাক পরিহীতা কিন্তু নগ্ন। যারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উচুঁ কাঁধ বিশিষ্ট উটের মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।’ সহীহ মুসলিম:২১২৮

গান বাজনাঃ-
এ রাতে আয়োজিত হয় বিভিন্ন কনসার্ট। যেখানে নারী পুরুষের একসঙ্গে গান বাজনা, নগ্ন নৃত্য আবশ্যকীয় বিষয় হয়ে দাড়িঁয়েছে। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ও রাসূল সা. এসব নিন্দনীয় কাজকে সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। আর যারা এসব কাজে লিপ্ত তাদের জন্য করেছেন কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ সূরা লুকমান :৬

আতশবাজী ও পটকাবাজীঃ-
এ রাতে আনন্দ উল্লাস উপভোগ করার জন্য মধ্যরাত থেকে শুরু হয় আতশবাজীও পটকাবাজী। যা জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করে। এর দ্বারা অগ্নিসংযোগেরও আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে জনসাধারণকে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়। অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ সূরা আহযাব : ৫৮

অর্থ অপচয়ঃ-
এ রাতকে কেন্দ্র করে অনেক অর্থ অনৈসলামিক ও হারাম কাজে ব্যয় করা হয়। যা একদিকে যেমন মারাত্মক গুনাহের কাজ অপর দিকে অপচয়। আর ইসলাম অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের বড়ই অকৃতজ্ঞ। সূরা বনি ইসরাঈল :২৭।

যুবক–যুবতীর অবাধ মেলামেশাঃ-
 এ রাত্রিতে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, সমুদ্র সৈকত, নাইট ক্লাবে যুবক-যুবতীরা অবাধে মেলামেশা ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। যা ইসলামের পরিভাষায় ব্যভিচার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখন কেউ যদি বলে আমরা খারাপ কিছু করব না, শুধু উৎসব উদযাপন করব তাহলে বুঝতে হবে এরাই ধোঁকাবাজ। এরা হয়তো সমাজকে ধোকা দিচ্ছে, নয়তো তারা নিজেরাই ধোকায় পড়ে আছে। কেন না রাসূল সা. বলেছেন, ‘কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।’ মিশকাত শরীফ :১৩১৮।
একজন সাধারণ রুচিশীল মানুষ কখনোই থার্টি ফার্স্ট নাইটের এই নোংরামি সমর্থন করতে পারেন না। তরুণদের ঠেলে দিতে পারেন না ধ্বংসের দিকে। এই ধরনের পাপাচার বন্ধ ও পতিহত করতে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের অবশ্যকর্তব্য। একটি মুসলিম দেশের অভিভাবক হিসেবে দেশের সরকারের কর্তব্য এই ধরনের চরিত্রবিধ্বংসী বিজাতীয় উৎসব কঠোরহস্তে দমন করা। অশুভ নোংরা কাজ নয়, আমাদের নতুন বছর শুরু হোক দু’রাকাত নামাজ দিয়ে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিজাতীয় মহামারি থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। আমীন।

Comments