সম্পদ- সম্পত্তি ও সন্তান- সন্ততি আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত বড়ই নিয়ামতঃ-

ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাঃ-
******************************************************
একজন মানুষের জন্য দীন পালন এবং আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে যে বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার মধ্যে অর্থলোভ এবং সন্তানদের প্রতি মায়া-মমতা-ভালোবাসা অন্যতম। এ দুটোকে কেন্দ্র করেই মানুষ যত ধরনের অপরাধ করে বসে। তাই আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে সতর্ক করে বলছেন, বান্দা! এসব বিষয় তো তোমার জন্য পরীক্ষার একেকটি বিষয় মাত্র। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নিয়ামত।
যার সন্তান হয় না তাকে জিজ্ঞেস করুন, অথবা সন্তানহারা মাকে জিজ্ঞেস করুন, সন্তান আল্লাহর কত বড় নেয়ামত। নিঃসন্তান মা সন্তানের জন্য কত ব্যাকুল। সন্তানহারা মা সন্তানের শোকে কতটা ব্যাথিত। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে এই নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যাতে বান্দা কৃতজ্ঞ হয়।
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ , أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ,,,
অর্থাৎ- আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন, অথবা দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা; তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (সূরা শুরা  : ৪৯-৫০)।
কিন্তু এ নেয়ামত হাতে পাওয়ার পর অনেক বান্দা ভুলে যায় যে, সন্তান আল্লাহর পক্ষ হতে তার হাতে সোপর্দকৃত এক আমানত। ফলে আল্লাহর বাতলানো পথ রেখে এ নেয়ামতের ব্যবহার করে নিজের খেয়াল-খুশি মত। আমি আমার সন্তানকে এই বানাবো সেই বানাবো, নিজের মত করে গড়ে তুলবো ইত্যাদি।
প্রতিটি মা-বাবাই নেক সন্তান চান। আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যবানে আমাদেরকে নেক সন্তান প্রার্থনার দুআ শিখিয়েছেন।
رب هب لى من الصالحين,,,
হে আল্লাহ, আমাকে নেক সন্তান দান কর।
আল কুরআনুল কারীমে আরেকটি দুআ এসেছে। সেটা হল, সন্তান, পরিবার পরিজন যেন হয় মুত্তাকী ও চক্ষুর শীতলতা-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا,,,
অর্থাৎ-  হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা হবে আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদেরকে করুন মুত্তাকীদের ইমাম (অনুসরণযোগ্য)। (সূরা ফুরকান (২৫) : ৭৪)।
আর সন্তানের মাঝে ঈমান ও ইসলামকে গ্রহণ করার এবং ভাল ও নেককার হওয়ার স্বভাবজাত যোগ্যতা দিয়েই আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠান। ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله 
عليه وسلم,
"كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، كَمَثَلِ الْبَهِيمَةِ تُنْتَجُ الْبَهِيمَةَ، هَلْ تَرَى فِيهَا جَدْعَاءَ ‏"‏‏.‏

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী  (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন: প্রত্যেক নবজাতক ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। অত:পর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহুদী বা নাসারা অথবা অগ্নি উপাসক করে, যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে (জন্মগত) কানকাটা দেখেছ?
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৩৮৫।
একজন শিশু কাদা মাটির খামিরার মতো। তাকে যে ছাঁচে ঢালা হবে সে তাই হবে। ইটের ছাঁচে ইট কলসি বানালে কলসি। কিন্তু কখনো এর ব্যাতিক্রমও হয়। সঠিক ছাঁচে দেওয়ার পরও কোনো কারণে নষ্ট হয়ে যায়। ইটওয়ালার দায়িত্ব হলো সঠিক ছাঁচে ঢেলে ইটটিকে পূর্ণতাদানে ত্রুটি বা অবহেলা না করা।

সন্তানের কল্যাণকামনাঃ-
এ ধরনের প্রতিটি বিষয়ে তোমাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ব্যপারে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য লাভ করতে হবে। তবেই তুমি আল্লাহর কাছে থাকা প্রতিদান ভাণ্ডার থেকে বেহিসাব নেয়ামত লাভ করতে পারবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوٰلُكُمْ وَلَآ أَوْلٰدُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذٰلِكَ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْخٰسِرُونَ...
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতিপত্তি, ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না রাখে। যদি তোমরা গাফেল বা উদাসীন হও তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকুন : ৯)।
অর্থ-সম্পদের লোভ এবং সন্তান-পরিজনের মায়া-ভালোবাসা যেন মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল করে না দেয় সে বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَاعْلَمُوٓا أَنَّمَآ أَمْوٰلُكُمْ وَأَوْلٰدُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِندَهُۥٓ أَجْرٌ عَظِيمٌ...
‘জেনে রাখ! তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষার বিষয় মাত্র। আল্লাহর কাছে এর চেয়েও মহান প্রতিদান আছে।’ (সূরা আনফাল: ২৮)।
হাদীসে এসেছে, বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দিচ্ছিলেন, ইত্যবসরে হাসান ও হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) সেখানে উপস্থিত হলেন, তাদের গায়ে দুটি লাল রংয়ের কাপড় ছিল। তারা হাঁটছিলেন আর হোঁচট খেয়ে পড়ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এ অবস্থা দেখে মিম্বর থেকে নেমে এসে তাদেরকে তার সামনে বসালেন তারপর বললেন, আল্লাহ্‌ সত্য বলেছেন যে,
إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَاللَّهُ عِنْدَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ ﴿١٥
১৫. তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা বিশেষ; আর আল্লাহ, তাঁরই কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার। (সূরা তাগাবুন, আয়াত ১৫)।
এ বাচ্চা দু'টিকে হাঁটার সময় হোঁচট খেতে দেখে আমি স্থির থাকতে পারলাম না। ফলে আমি আমার কথা বন্ধ করে তাদেরকে উঠিয়ে নিলাম।”
[তিরমিযী: ৩৭৭৪, ইবনে মাজাহ, ৩৬০০]।
আল্লামা ইবনে কাসির রহ. বলেন, সন্তান-সন্ততি আমাদের জন্য পরীক্ষার বিষয়। আল্লাহ পাক মানুষকে সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করেন সে কি আমার শোকরিয়া আদায় করে নাকি সন্তান পেয়ে আমার নাফরমানি করে। সন্তানকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করতে পারলেই বান্দা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হিসেবে পরিগণিত হবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।
আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহ. বলেন, সন্তান ও অর্থ-সম্পদ মানুষকে আখিরাতের কর্ম থেকে বিরত রাখে। তাই আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিচ্ছেন দুনিয়ার এ অর্থ-সম্পদ ও সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে আল্লাহকে ভুলে যেয়ো না। আখিরাতে অনন্ত পথের যাত্রাকে অমঙ্গল কর না।
(তাফসিরে জালালাইন)।
অর্থ-সম্পদ যদি দীন পালনে সহায়ক হয় তবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত। কিন্তু তারা যদি আল্লাহর পথে চলতে বাধা প্রদান করে তবে বুঝতে হবে তারা আপনবেশি শত্রু। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ ﴿١٤
অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের স্ত্রী-স্বামী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু; অতএব তাদের সম্পর্কে তোমরা সতর্ক থেকো। আর যদি তোমরা তাদেরকে মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর এবং তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সূরা তাগাবুন, আয়াত ১৪)।
এই আয়াত সেই মুসলিমদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা হিজরতের পর মক্কায় ইসলাম গ্ৰহণ করে মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে হিজরত করে চলে যেতে মনস্থ করে, কিন্তু তাদের পরিবার পরিজনরা তাদেরকে হিজরত করতে বাধা দেয়। পরবর্তীতে তারা যখন হিজরত করে মদীনায় আসে তখন দেখতে পায় যে, লোকেরা তাদের আগেই দ্বীনের ফিকহ শিক্ষায় অগ্রণী হয়ে গেছে। তখন তাদের খুব আফসোস হয়। [তিরমিযী: ৩৩১৭]
তাছাড়া সন্তান-সন্তুতির কারণে মানুষ অনেক মহৎ কাজ থেকেও বিরত হতে বাধ্য হয়। যারা তোমাদেরকে হারাম উপার্জন করতে প্ররোচিত করে এবং আল্লাহর অধিকার আদায় করতে বাধা দেয়। আর এই পরীক্ষায় তোমরা তখনই সফল হতে পারবে, যখন আল্লাহর অবাধ্যাচরণে তাদের আনুগত্য করবে না। অর্থাৎ, মাল-ধন ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর নিয়ামতও বটে এবং তা মানুষের পরীক্ষার মাধ্যমও বটে। আল্লাহ দেখতে চান যে, তাঁর অনুগত কে এবং অবাধ্য কে? অর্থাৎ, সেই ব্যক্তির জন্য, যে মাল-ধন ও সন্তান-সন্ততির ভালবাসার মোকাবেলায় আল্লাহর আনুগত্যকে প্রাধান্য দেয় এবং তাঁর অবাধ্যাচরণ থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنْفِقُوا خَيْرًا لِأَنْفُسِكُمْ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُ
১৬. সুতরাং তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, শ্রবণ কর, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণের জন্য; আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য হতে রক্ষা করা হয়; তারাই তো সফলকাম। (সূরা তাগাবুন, আয়াত ১৬।)
একজন মুমিনের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হবে আল্লাহ এবং নবী (সা.)। হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, যে ব্যক্তি এমন গুণের অধিকারী হতে পারবে সে ব্যক্তি ইমানের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পারবে। তাকে যখন তার প্রিয়জন এবং অর্থ-সম্পদ আল্লাহর নাফরমানি করতে বলবে তখন সে তা করবে না। এতে তার যত ক্ষতিই হোক আর প্রিয়জনরা যত অসন্তোষই হোক না কেন। এসবের পরওয়া সে করবে না। সে দেখবে এ কাজে আমার আল্লাহ খুশি আছেন কিনা?
ব্যস! এ একটি প্রশ্নই তার কোনো কাজ করা না করার জন্য মৌলিক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আর এমন বান্দার জন্যই আল্লাহ রেখেছেন আজরুন আজিম বা মহাপুরস্কার।
দুনিয়ার পরিণামের অনেক নযীর আমাদের চোখের সামনে। আর আখেরাতের পরিণাম....? 
এ ব্যাপারে তো কোন সন্দেহ নেই, সন্তানকে যদি আল্লাহর পথ না দেখাই তাহলে প্রিয়তম সন্তানই কাল কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে, আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিবে।
সেদিন পথভ্রষ্টরা পথভ্রষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে মামলা দায়ের করে বলবে,
﴿ وَقَالَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا رَبَّنَاۤ اَرِنَا الَّذَيۡنِ اَضَلَّانَا مِنَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ نَجۡعَلۡهُمَا تَحۡتَ اَقۡدَامِنَا لِيَكُوۡنَا مِنَ الۡاَسۡفَلِيۡنَ‏﴾,,,
হে আমাদের প্রতিপালক! যেসব জিন ও মানব আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদেরকে দেখিয়ে দিন, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা লাঞ্ছিত হয়।(সূরা হা-মীম আস্সাজদা ২৯)।
আমার কারণে যদি কেউ পথভ্রষ্ট হয় (আমি বাবা-মা হই আর সমাজপতি হই) তাহলে রোজ হাশরের আদালতে আমাকেও এই অভিযোগের  সম্মুখীন হতে হবে। আমরা আল্লাহর নিকট পানাহ্ চাই। প্রতিটি মা-বাবাই সন্তানের কল্যাণ কামনা করেন। প্রত্যেকেই আপন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সন্তানের কল্যাণকামনা করেন। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি  সঠিক না হওয়ার কারণে অনেক সময় দেখা যায় সন্তান দুনিয়ার কল্যাণ তো লাভ করে কিন্তু আখেরাতের কল্যাণের বিষয়ে হয় হতবঞ্চিত। সন্তানের কল্যাণকামনা হতে হবে দুনিয়া ও আখেরাতের। যেমনটি আল্লাহ আল কুরআনুল কারীমে একটি দুআর মাধ্যমে শিখিয়েছেন-
رَبَّنَا آَتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ,,,
 (তরজমা) হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখেরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর। (সূরা বাকারা (২): ২০১)।
এ আয়াতের দুআ আমাদের জন্য উত্তম শিক্ষা। দুনিয়াকে পূর্ণ বর্জন করে আখেরাত নয় আবার দুনিয়ার মোহে পড়ে আখেরাত বরবাদ নয়। বরং কল্যাণময় দুনিয়া কল্যাণময় আখেরাত। আর এটিই সন্তানের কল্যাণকামনা ও আল্লাহর আমানত রক্ষার মানদন্ড। এখন দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জাহানের কল্যাণ সামনে রেখে সন্তানকে গড়ে তুলতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে প্রাধান্য পাবে আখেরাত। উভয় দিকের লাভ ক্ষতি যখন সামনে আসবে প্রাধান্য দিতে হবে আখেরাতের লাভ ক্ষতিকে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা প্রাধান্য দিই দুনিয়াকে। আল্লাহ সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ بَلۡ تُؤۡثِرُوۡنَ الۡحَيٰوةَ الدُّنۡيَا‌ۖ,, وَالۡاٰخِرَةُ خَيۡرٌ وَّاَبۡقٰى﴾
(তরজমা) কিন্তু তোমরা তো দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দাও। অথচ আখেরাতই উৎকৃষ্টতর এবং স্থায়ী। (সূরা আ‘লা- ১৬-১৭)।
উপরে আলোচিত যে আয়াতে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টির কল্যাণের দুআর কথা এসেছে তার আগের আয়াতের ভাষ্য হল, যে  শুধু দুনিয়া চাইবে সে কেবল দুনিয়াই পাবে আখেরাতে তার কোনো হিস্সা নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ فَمِنَ النَّاسِ مَنۡ يَّقُوۡلُ رَبَّنَآ اٰتِنَا فِىۡ الدُّنۡيَا وَمَا لَهٗ فِىۡ الۡاٰخِرَةِ مِنۡ خَلَاقٍ‏﴾,,,
কিছু মানুষ আছে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতেই দাও, বস্ত্তত আখেরাতে তাদের জন্য কোন অংশ নাই। (সূরা বাকারা- ২০০)
সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া দরকার। নইলে আখেরাতের আদালতে প্রিয়তম সন্তান আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে; আমার মা-বাবা আমার বিষয়ে ইনসাফ করেনি। আমার দুনিয়ার লাভ ক্ষতিকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়েছে বা আমার বাবা মা আমাকে শুধু দুনিয়া শিখিয়েছে আখেরাতের বিষয়ে আমাকে কোনো প্রকার নির্দেশনা দেয়নি।
সন্তান যেহেতু আমার হাতে আল্লাহর আমানত সুতরাং আমাকে ভাবতে হবে, আমি কি এ আমানতের সন্তান যেহেতু আমার হাতে আল্লাহর আমানত সুতরাং আমাকে ভাবতে হবে, আমি কি এ আমানতের যথেচ্ছ ব্যবহারের অধিকার রাখি?
বিশেষত এই আমানতকে কি আল্লাহর নাফারমানীর পথে এগিয়ে দিতে পারি? যদি এমনটি করি তা হবে এ আমানতের খেয়ানত, এ নেয়ামতের না-শুকরি। আর নেয়ামতের না-শুকরির পরিণাম বড় ভয়াবহ।
আখেরাতের ওই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা না হয় না-ই বললাম। দুনিয়াতেই তো সন্তান তার উন্নত থেকে উন্নততর সফলতা না পাওয়ার উপর মা-বাবাকে দায়ী করে; আপনারা যদি আমাকে ওখানে ভর্তি করতেন বা অমুক কোর্সের ব্যবস্থা করতেন কিংবা অমুক বিষয়ে পড়াতেন তাহলে  আজ আমার এই বেহাল দশা হত না, আমার ক্যারিয়ার আরো সুন্দর হত ইত্যাদি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে দুনিয়াবী ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন। 
অনেক বাবা-মা দেখা যায় ফজরের সময় সন্তানকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলছেন স্কুলে যাওয়ার জন্য, ফজরের নামাজের জন্য নয়। সামনে পরীক্ষা তাই সন্তানের ইচ্ছা সত্ত্বেও রোজা রাখতে দিচ্ছেন না ইত্যাদি। সন্তানের কল্যাণকামনায় এই প্রান্তিকতা তার চিরস্থায়ী অকল্যাণ বয়ে আনে। সুতরাং আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনাই হবে সন্তানের প্রকৃত কল্যাণ কামনা।
এ দৃষ্টিকোণ থেকেই সন্তানের শিক্ষা, সংস্কৃতি, জীবন-জিবিকা, পোশাক-পরিচ্ছদ, পরিবেশ-পারিপার্শিকতা নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।




Comments