হেদায়তের পূর্ণ ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালার হাতে।

হেদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ,ও পূর্ণ ক্ষমতা তারই হাতেঃ-



▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

হেদায়েতের পূর্ণ ক্ষমতা আল্লাহর হাতে।
বান্দার জন্য হেদায়েত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ করুণা। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ক্ষণস্থায়ী জীবনের পরিবর্তে চিরস্থায়ী জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতে বলেছেন, যাতে মানুষ অনন্তকালের ও চিওর শান্তির আবাস জান্নাত লাভ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। আর সেজন্য দিক নির্দেশনাসহ যুগে যুগে তিনি অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। ফলে যারা ঐশী দিক নির্দেশনা গ্রহণ করে আল্লাহও তাদেরকে সাহায্য করেন এবং তারা তাদের সতকর্মের কারণেই সত্য থেকে বিচ্যুত হয় না।
পার্থিব শান্তি সীমিত ও ক্ষণিকের কিন্তু পরকালের শান্তি অফুরন্ত ও চিরস্থায়ী। কাজেই চিরস্থায়ী শান্তি নিশ্চত করতে হলে ঐশী বিধানের দিকে ফিরে আসতে হবে, যাকে পবিত্র কুরআনে সিরাতুল মুস্তাকিম বা সরল পথ বলা হয়েছে। সরল পথের যাত্রীরা দুনিয়াতে যেমন আত্মিক প্রশান্তি পাবে, তেমনি পরকালেও তারা বেহশত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,
 وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلَامِ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ...
"আল্লাহ মানুষকে শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।"[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৫।
তাফসির : এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হয়েছে, আল্লাহ মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করেন। শান্তির পথে আসা মানেই হেদায়েতের পথে আসা। কিন্তু নিজ ক্ষমতা, শক্তি ও অর্থবলে হেদায়েত পাওয়া যায় না। হেদায়েত আল্লাহর বিশেষ দান। যারা হেদায়েতের পথে চলতে চায়, আল্লাহ তাদের জন্য হেদায়েতের পথে চলা সহজ করে দেন। আল্লাহর হেদায়েতের বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেন নবী-রাসুলদের মাধ্যমে। নবীগণ মানুষকে হেদায়েতের পথে ডাকেন, আর আল্লাহ মানুষকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করেন।
ইমাম রাগেব ইস্পাহানি (রহ.) তাঁর ‘মুফরদাতুল কোরআন’ গ্রন্থে হেদায়েত শব্দের খুব সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য মতে হেদায়েত হলো, ‘কাউকে গন্তব্যস্থানের দিকে অনুগ্রহের সঙ্গে পথ প্রদর্শন করা।’ তাই ‘হেদায়েত করা’ প্রকৃত অর্থে একমাত্র আল্লাহ তাআলারই কাজ।
তবে এটা সত্য যে হেদায়েতের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। হেদায়েতের একটি স্তর হচ্ছে সাধারণ ও ব্যাপক। গোটা সৃষ্টিজগৎ এর অন্তর্ভুক্ত। জড়পদার্থ, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ এর আওতাধীন। সেটি এই যে নিজ নিজ পরিমণ্ডলে প্রতিটি বস্তুর বুদ্ধি-বিবেচনা রয়েছে। এটাও এক ধরনের হেদায়েত; যদিও বুদ্ধি ও অনুভূতির তারতম্য রয়েছে। যেসব বস্তুতে তা অতি অল্পমাত্রায় বিদ্যমান, সেগুলোকে প্রাণহীন বা অনুভূতিহীন বলা যায়।
অনুভূতির ক্ষেত্রে এ তারতম্যের কারণেই গোটা সৃষ্টিজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষ ও জিন জাতির জন্য শরিয়তের বিধান পালন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কারণ সৃষ্টির এ দুই স্তরের মধ্যেই বুদ্ধি ও অনুভূতি পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হয়েছে। তাই বলে এ কথা বলা যাবে না যে একমাত্র মানুষ ও জিন জাতি ছাড়া সৃষ্টির অন্য কোনো কিছুর মধ্যে বুদ্ধি ও অনুভূতির অস্তিত্ব নেই।
হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তর সেসব বস্তুর সঙ্গে জড়িত, যাদের বিবেকবান ও বুদ্ধিসম্পন্ন বলা হয়। অর্থাৎ মানুষ ও জিন জাতি। এই হেদায়েত নবী-রাসুল ও আসমানি কিতাবের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে। কেউ হেদায়েত গ্রহণ করে মুমিন হয়েছে, আবার কেউ একে প্রত্যাখ্যান করে কাফির হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا﴾,,,
আমি তাকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি। এরপর হয় সে শোকরগোজার হবে নয়তো হবে কুফরের পথ অনুসরণকারী। (সূরা দাহর, আয়াত ৩।)
অর্থাৎ আমি তাকে শুধু জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই ছেড়ে দেইনি। বরং এগুলো দেয়ার সাথে সাথে তাকে পথও দেখিয়েছি যাতে সে জানতে পারে শোকরিয়ার পথ কোনটি এবং কুফরীর পথ কোনটি। এরপর যে পথই সে অবলম্বন করুক না কেন তার জন্য সে নিজেই দায়ী।
হেদায়েতের তৃতীয় স্তর আরো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তা শুধু মুমিন মুত্তাকী ও ধর্মভীরুদের জন্য। এই হেদায়েত আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে কোনো মাধ্যম ছাড়াই মানুষকে সরাসরি প্রদান করা হয়। এর নামই তাওফিক। অর্থাৎ এমন অবস্থা, পরিবেশ ও মনোভাব সৃষ্টি করে দেওয়া, যার ফলে ধর্মের নির্দেশনা মোতাবেক আমল করা সহজ হয়।
হেদায়েতের উল্লিখিত ব্যাখ্যার আলোকে এ সন্দেহের মীমাংসা হয়ে যায় যে কোরআনের বিভিন্ন স্থানে ইরশাদ হয়েছে,
‘আল্লাহ জালিম ও পাপাচারীদের হেদায়েত দান করেন না।’ অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি সবাইকে হেদায়েত দান করেন।’ এর জবাব হলো, হেদায়েতের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। ব্যাপক অর্থে দুনিয়ার সব কিছু হেদায়েতপ্রাপ্ত, আর বিশেষ অর্থে জালিম ও পাপীরা হেদায়েতপ্রাপ্ত নয়।
হেদায়েতের তিনটি স্তরের মধ্যে প্রথম ও তৃতীয় স্তর সরাসরি আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। নবী-রাসুলদের কাজ শুধু হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তরে সীমিত। কোরআনের যেখানে যেখানে পবিত্র কোরান এবং নবী-রাসুলদের হেদায়েতকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তরের ভিত্তিতেই বলা হয়েছে। (মা’আরেফুল কোরআন)।
হেদায়াতের মালিক আল্লাহ।
হেদায়েতের পূর্ণ ক্ষমতা আল্লাহর হাতে।
হেদায়েত আল্লাহর বিশেষ করুণা।
মোমিন জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে ঈমান। ঈমানের কারণেই একজন মানুষ চিরসুখময় আবাস জান্নাত লাভ করতে পারে। ঈমানের দৌলত আল্লাহ তায়ালা সবাইকে দেন না। যার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে কেবল সে-ই ঈমান গ্রহণের পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ ۖ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ ۚ كَذَٰلِكَ يَجْعَلُ اللَّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ,,,
‘আল্লাহ যাকে হেদায়েত করতে চান, ইসলামের জন্য তার অন্তঃকরণ উন্মুক্ত করে দেন, আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তিনি তার অন্তঃকরণ অত্যন্ত সংকীর্ণ করে দেন, যেন মনে হয় সে আকাশে আরোহণ করছে। এভাবেই যারা ঈমান আনয়ন করে না তাদেরকে আল্লাহ কলুষময় করে থাকেন।’ (সূরা আনআম : ১২৫)।
সূরা ইউনুসের ১০০ নং আয়াতের প্রথমাংশে আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تُؤْمِنَ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يَعْقِلُونَ,,,
আর কারো ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর। (সূরা ইউনুস : ১০০)।
‘আল্লাহর অনুমতি’র ব্যাখ্যায় মুফাসসিরকুল শিরোমণি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
‘আল্লাহর আদেশ ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারে না।’ (তানবিরুল মিকবাস)।
প্রখ্যাত তাবেঈ সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তোষ ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারে না।’ (কুরতুবি।)
অপর তাবেঈ আতা (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ ঈমান আনতে পারে না।’ (বাগাভী)।
আর দ্বিতীয় অংশে অপবিত্রতার ব্যাখ্যায় হাসান বসরি (রহ.) সহ অন্যান্য মুফাসসিরা বলেন, ‘আল্লাহ তাদের ওপর কুফর চাপিয়ে দেন।’ (বাহরুল মুহীত)।
ইমাদুদ্দিন ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘গোমরাহি চাপিয়ে দেন’। (ইবনে কাসির)।
ইমাম শাওকানী (রহ.) বলেন, ‘কুফর, গোমরাহি, এবং আজাব- শাস্তি চাপিয়ে দেন। কারণ কাফেররা আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে না।’ (ফাতহুল কাদির।)।
পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَنۡ يُّرِدِ اللّٰهُ فِتۡنَتَهٗ فَلَنۡ تَمۡلِكَ لَهٗ مِنَ اللّٰهِ شَيۡـًٔا‌ؕ اُولٰٓٮِٕكَ الَّذِيۡنَ لَمۡ يُرِدِ اللّٰهُ اَنۡ يُّطَهِّرَ قُلُوۡبَهُمۡ‌ؕ لَهُمۡ فِىۡ الدُّنۡيَا خِزۡىٌ ۚ‌ۖ وَّلَهُمۡ فِىۡ الۡاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيۡمٌ
“যাকে আল্লাহ নিজেই ‘ফিতনার’ মধ্যে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন, তাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচানোর জন্য তোমরা কিছুই করতে পারবে না। এসব লোকের অন্তরকে আল্লাহ‌ পবিত্র করতে চাননি।এদের জন্য দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে কঠিন শাস্তি।” (মায়েদা : ৪১।)।
আল্লাহ তা‘আলাই বান্দাকে স্বীয় অনুগ্রহে প্রকৃতপক্ষেই হেদায়াত দান করেন এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতেই কাউকে গোমরাহ করেন। এ বিষয়ে অনেক দলীল রয়েছে।
আমাদের সমাজে অনেকেই মনে করেন, আল্লাহ পথভ্রষ্ট করার কারণেই সে সৎ পথে চলতে পারছে না। আল্লাহ চাইছে না বিধায় সে ভালো কাজ, নামাজ, রোজা, দান-সদকা করতে পারছে না। যারা এমনটি মনে করেন, নিঃসন্দেহে তারা স্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে আছেন। মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট নিদর্শানাবলি উপলব্ধি করার পরও যে ব্যক্তি কুফর ও পাপাচারের পথে অবিচল থাকে, আল্লাহ তায়ালা কেবল তাকেই গোমরাহ করে দেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيراً مِّنَ الْجِنِّ وَالإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لاَّ يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لاَّ يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لاَّ يَسْمَعُونَ بِهَا أُوْلَـئِكَ كَالأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَـئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ,,,
‘এ কথা সত্য যে, এমন অনেক জিন ও মানুষ আছে যাদের আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। কারণ তাদের দিল-অন্তর আছে, এ দ্বারা তারা আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তারা দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তারা শোনে না। তারা পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। এরাই ওইসব লোক যারা গাফিলতির মধ্যে পড়ে আছে।’ (আরাফ, আয়াত ১৭৯।)
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন অন্তর, চোখ, কান দিয়ে আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে যদি চিন্তাভাবনা এবং উপলব্ধি না করে বান্দা নিজেই গোমরাহির উপযুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে আল্লাহ তাকে পথভ্রষ্ট করে দেন।
আল্লাহ তায়ালাকে কি দোষা রুপ  করা যাবে?
জুকারবার্গ যেরকম মানুষকে ফেসবুকের মতো একটা বিশেষ এপ বানিয়ে দিয়েছেন, সেরকম সৃষ্টিকর্তাও মানুষকে অনুগ্রহ করে হাত পা চোখ নাক কান মুখ মস্তিষ্ক এসব দিয়ে দিয়েছেন। সাথে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি। এখন এসব ব্যবহার করে সে যদি কোনো ভালো কাজ করে তবে তার ক্রেডিট আল্লাহ তায়ালা পাবেন। ঠিক যেরকম বিশেষ এপ বানিয়ে জাকারবার্গ ক্রেডিট পাচ্ছেন। আবার সে মানুষ যদি এগুলো অপব্যবহার করে কোন খারাপ কাজ করে গর্হিত কাজ করে তাহলে এর দায়ভার স্রষ্টা নেবেন না। যেরকম একজন ফেসবুকের আবিষ্কারক হিসেবে জাকারবার্গের ওপর ও বর্তায় না। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ اَلَمۡ نَجۡعَل لَّهٗ عَيۡنَيۡنِۙ‏, وَلِسَانًا وَّشَفَتَيۡنِۙ, ,,,
আমি কি তাকে দু’টি চোখ, একটি জিহ্বা ও দু’টি ঠোঁট দেইনি?
এর অর্থ হচ্ছে, আমি কি তাকে জ্ঞান ও বুদ্ধির উপকরণগুলো দেইনি? দু’টি চোখ মানে গরু ছাগলের চোখ নয়, মানুষের চোখ। যে চোখ মেলে তাকালে চারদিকে এমন সব নিশানী নজরে পড়বে, যা মানুষকে প্রকৃত সত্যের সন্ধান দেবে এবং তাকে ভুল ও নির্ভুল এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বুঝিয়ে দেবে।
জিহবা ও ঠোঁট মানে নিছক কথা বলার যন্ত্র নয় বরং যে ব্যক্তি কথা বলে এবং ঐ যন্ত্রগুলোর পেছনে বসে যে ব্যক্তি চিন্তা যোগায় তারপর মনের কথা প্রকাশ করার জন্য তার সাহায্য গ্রহণ করে।
وَهَدَيۡنٰهُ النَّجۡدَيۡنِ‌ۚ‏﴾,,,
আমি কি তাকে দু’টি সুস্পষ্ট পথ দেখাইনি? সূরা বালাদ আয়াত ৮,৯,১০।
অর্থাৎ শুধুমাত্র বুদ্ধি ও চিন্তার শক্তিদান করে তাকে নিজের পথ নিজে খুঁজে নেবার জন্য ছেড়ে দেইনি। বরং তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। তার সামনে ভালো ও মন্দ করে তার মধ্য থেকে নিজ দায়িত্বে যে পথটি ইচ্ছা সে গ্রহণ করতে পারে। সূরা দাহরেও এই একই কথা বলা হয়েছে।
﴿إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا﴾
২.) আমি মানুষকে এক সংমিশ্রত বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি। যাতে তার পরীক্ষা নিতে পারি।৩ এ উদ্দেশ্যে আমি তাকে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তির অধিকারী করেছি।৪
৩)মানুষ নিছক গাছপালা বা জীব-জন্তুর মত নয় যে, তার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য এখানেই পূরণ হয়ে যাবে এবং প্রকৃতির নিয়মানুসারে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার নিজের অংশের করণীয় কাজ সম্পাদন করার পর এখানেই মৃত্যুবরণ করবে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
তাছাড়া এ দুনিয়া তার জন্য আযাব বা শাস্তির স্থান নয়।
যেমনটা খৃস্টান পাদ্রীরা মনে করে, প্রতিদানের ক্ষেত্রেও নয়। যেমনটা জন্মান্তরবাদীরা মনে করে, চারণ ক্ষেত্র বা বিনোদন কেন্দ্র নয়।
যেমনটা বস্তুবাদীরা মনে করে আবার দ্বন্দ্ব ও সংগ্রাম ক্ষেত্রও নয় যেমনটা ডারউইন ও মার্কসের অনুসারীরা মনে করে থাকে।
বরং দুনিয়া মূলত তার জন্য একটা পরীক্ষাগার। যে জিনিসকে সে বয়স বা আয়ুস্কাল বলে মনে করে আসলে তা পরীক্ষার সময় যা তাকে এ দুনিয়ায় দেয়া হয়েছে।
দুনিয়ায় যে ক্ষমতা ও যোগ্যতা তাকে দেয়া হয়েছে,
যেসব বস্তুকে কাজে লাগানোর সুযোগ তাকে দেয়া হয়েছে,
যে মর্যাদা নিয়ে বা অবস্থানে থেকে সে এখানে কাজ করছে এবং তার ও অন্যান্য মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তার সবই মূলত অসংখ্য পরীক্ষা পত্র।
জীবনের সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরীক্ষা চলবে। এ পরীক্ষার ফলাফল দুনিয়ায় প্রকাশ পাবে না। বরং আখেরাতে তার সমস্ত পরীক্ষা পত্র যাঁচাই বাছাই করে ফায়সালা দেয়া হবে।
হেদায়েত তথা ঈমান সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ বলেন,
مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا,,,
‘আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন সে-ই সঠিক পথ লাভ করে। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তার জন্য তুমি কোনো অলি (পৃষ্ঠপোষক-অভিভাবক) কিংবা মুরশিদ (পথপ্রদর্শক) পাবে না।’
 (কাহফ : ১৭, ইসরা : ৯৭, আরাফ : ১৭৮)।
ধারণা করা হয় যে, পীর হেদায়েতদাতা। পীর ধরলে সে হেদায়েত পেয়ে যাবে। এ কথা কি ঠিক? সুন্নত ও শরীয়তের অনুসারী হক্কানী পীর হেদায়েতের পথ প্রদর্শক। কোনো পীর হেদায়েতদাতা নয়। এমনকি কোনো নবীও হেদায়েতের মালিক ছিলেন না। হেদায়েতদাতা একমাত্র আল্লাহ তাআলা। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে পরিষ্কার বলা হয়েছে,
إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ,,,
‘‘তুমি যাকে পছন্দ করো, তাকে হেদায়াত করতে পারবে না তবে আল্লাহ্ তা‘আলাই যাকে ইচ্ছা হেদায়াতের পথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই অধিক অবগত আছেন’’। (সূরা কাসাস: ৫৬)।
রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে হেদায়াতের মালিক নয় বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তা হচ্ছে হেদায়াতের তাওফীক দেয়া। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ এ প্রকার হেদায়াতের মালিক নয়। সুতরাং হেদায়াত অর্থ যদি শুধু রাস্তা বলে দেয়া হতো, তাহলে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হেদায়াতকে নাকোচ করা সঠিক হতো না। কেননা তিনি তার শত্রু-বন্ধু সকলের জন্যই পরিস্কারভাবে রাস্তা বলে দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
﴿ اِنۡ تَحۡرِصۡ عَلٰى هُدٰٮهُمۡ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا يَهۡدِىۡ مَنۡ يُّضِلُّ‌ وَمَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِيۡنَ﴾
হে মুহাম্মাদ! তুমি এদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেবার জন্য যতই আগ্রহী হও না কেন, আল্লাহ‌ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে আর সঠিক পথে পরিচালিত করেন না আর এ ধরনের লোকদের সাহায্য কেউ করতে পারে না। (নাহল, আয়াত ৩৭।)
অতএব কাউকে হেদায়েত দান করার ক্ষমতা কোনো মাখলুকের নেই। মাখলুক শুধু পথ দেখাতে পারে। হেদায়েত দেওয়ার মলিক একমাত্র আল্লাহ। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদের সূরা মায়েদা আয়াত ৪১), সূরা জিন আয়াত ২১-২৩) ও উল্লেখ আছে।
হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কোনো এক খোতবায়- ভাষণে  বলেছেন,
‘আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করে তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হলো আল্লাহর বাণী। আর সর্বশ্রেষ্ঠ হেদায়েত হলো মুহাম্মদ (সা.) প্রদর্শিত হেদায়েত।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪৫৬৬)।

যেভাবে বুঝবেন আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট কি নাঃ-
আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ের একান্ত চাওয়া। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনি আল্লাহ তায়ালা আপনার ওপর সন্তুষ্ট কি না? আল্লাহ যখন কোনো বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, তখন তিনি তাকে সৎকর্মগুলো সম্পাদন ও অসৎকর্মগুলো থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْواهُمْ,,
‘যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করে দেন এবং তাদের তাকওয়া দান করেন।’(সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ১৭)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ,,,
‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে, আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা আনকাবুত : ৬৯)।
বান্দার সৎকাজে অনীহা প্রকাশ ও অসৎকাজে জড়িয়ে পড়া আল্লাহর অসন্তুষ্টির লক্ষণ। সুতরাং আল্লাহ যাকে পছন্দ করেন তার বক্ষকে সত্যদর্শনের জন্য প্রশস্ত করে দেন। পক্ষান্তরে যাকে অপছন্দ করেন তার বক্ষকে সিরাতে মুস্তাকিমের জন্য সংকীর্ণ করে দেন।
আর আল্লাহর সন্তুষ্টির আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে তিনি যখন কাউকে ভালোবাসেন, তখন অন্য বান্দাদের কাছেও তাকে প্রিয় করে দেন। রাসুল (সা.) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَقَالَ إِنِّي أُحِبُّ فُلاَنًا فَأَحِبَّهُ - قَالَ - فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِي فِي السَّمَاءِ فَيَقُولُ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلاَنًا فَأَحِبُّوهُ ‏.‏ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ - قَالَ - ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِي الأَرْضِ ‏.‏ وَإِذَا أَبْغَضَ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَيَقُولُ إِنِّي أُبْغِضُ فُلاَنًا فَأَبْغِضْهُ - قَالَ - فَيُبْغِضُهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ فُلاَنًا فَأَبْغِضُوهُ - قَالَ - فَيُبْغِضُونَهُ ثُمَّ تُوضَعُ لَهُ الْبَغْضَاءُ فِي الأَرْضِ"‏,,,
হযরত আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা যদি কোন বান্দাকে পছন্দ করেন তখন জিব্রীল (‘আঃ)-কে ডাক দেন এবং বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুক লোককে পছন্দ করি, তুমিও তাকে পছন্দ কর। তিনি বলেন, তখন জিব্রীল (‘আঃ) তাকে পছন্দ করেন। অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীতে ঘোষণা দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক লোককে পছন্দ করেন, সুতরাং আপনারাও তাকে পছন্দ করুন। তখন আকাশবাসীরা তাকে পছন্দ করে। তিনি বলেন, এরপর দুনিয়াতে তাকে নন্দিত, সমাদৃত করা হয়।
আর আল্লাহ যদি কোন লোকের উপর রাগ করেন তখন জিব্রীল (‘আঃ)-কে ডাক দেন এবং বলেন, আমি অমুক বান্দার উপর রাগ করেছি, তুমিও তার প্রতি নারাজ হও। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তখন জিব্রীল (‘আঃ) তার উপর রাগান্বিত হন। তারপর তিনি আকাশবাসীদেরকে ডাক দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা অমুকের উপর রাগান্বিত। কাজেই আপনারাও তার উপর ক্রোধান্বিত হোন। তিনি বলেন, তখন লোকেরা তার উপর দুশমনি পোষণ করে। তারপর তার জন্য পৃথিবীতে শত্রু বানিয়ে দেয়া হয়। (ই.ফা. ৬৪৬০৫, ই.সে. ৬৫১৭)।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৫৯৮।
ইমাম নববি রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মানুষের অন্তরে তার জন্য ভালোবাসার উদয় করে দেওয়া হয়, ফলে সবাই তার দিকে ঝুঁকে পড়ে।’
অতএব আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে প্রয়াসী হওয়া। আল্লাহ অনুগ্রহ করে যাকে ইচ্ছা, তাকে হেদায়াত, আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন, অপমানিত করেন ও বিপদগ্রস্ত করেন।
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,,,
يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَيَعْصِمُ وَيُعَافِي فَضْلًا,,
وَيُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَخْذُلُ وَيَبْتَلِي عَدْلًا,,,
আল্লাহ অনুগ্রহ করে যাকে ইচ্ছা, তাকে হেদায়াত, আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন, অপমানিত করেন ও বিপদগ্রস্ত করেন।
ব্যাখ্যা: এখানে মুতাযেলাদের ঐ কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে, যেখানে তারা বলেছে যে, বান্দার জন্য যা কিছু কল্যাণকর ও উপকারী আল্লাহ তা‘আলার উপর তার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। এ মাস‘আলাটি বান্দাকে সঠিক পথ দেখানো এবং বিপথগামী করার মাস‘আলার সাথে সম্পৃক্ত।
মুতাযেলারা বলেছে, আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দাকে হেদায়াত করার অর্থ হলো, বান্দার জন্য সঠিক পথ বর্ণনা করে দেয়া। এর বাইরে তাকে হেদায়াত গ্রহণের তাওফীক দেয়া কিংবা সাহায্য করা তার কাজ নয়। আর তাকে গোমরাহ করার অর্থ হলো বান্দাকে কেবল গোমরাহ হিসাবে নামকরণ করা এবং বান্দা যখন নিজের জন্য গোমরাহী সৃষ্টি করে তখন তাকে গোমরাহ হিসাবে নাম দেয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়।
আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে গোমরাহ করেন কিংবা বান্দার জন্য গোমরাহী সৃষ্টি করেন, এমনটি নয়। তারা তাদের বাতিল মূলনীতির উপরই এ কথার ভিত্তি রচনা করেছে। তাদের অন্যতম মূলনীতি হলো, বান্দারাই তাদের কাজ-কর্ম সৃষ্টি করে।
 আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَلَوْ شِئْنَا لَآتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا,,,
‘‘আমি যদি  ইচ্ছা করতাম তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সৎপথে আনয়ন করতাম’’। (সূরা সাজদাহ: ১৩)।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,,,,
يُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ,,,
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হেদায়াত দান করেন’’। (সূরা মুদ্দাছ্ছির: ৩১)
আল্লাহর পক্ষ হতে হেদায়াতের অর্থ যদি কেবল রাস্তা বর্ণনা করাই হতো, তাহলে ইচ্ছার সাথে শর্তযুক্ত করা হতো না। কেননা তিনি সকল সৃষ্টির জন্যই সঠিক পথ বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,,,,
وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّي لَكُنتُ مِنَ الْمُحْضَرِينَ,,,
‘‘আমার রবের মেহেরবাণী না হলে আমিও আটক ব্যক্তিদের মধ্যে শামিল হতাম’’। (সূরা সাফফাত: ৫৭)
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আন‘আমের ৩৯ নং আয়াতে বলেন,,,,
مَن يَشَإِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَن يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ,,,
‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন আবার যাকে চান সত্য সরল পথে পরিচালিত করেন’’।
সুতরাং বুঝা গেল, আল্লাহ তা‘আলা যে বান্দাদের শুধু হেদায়াতের পথ বর্ণনা করেন, তাই নয়; বরং তিনি হেদায়াতের তাওফীকও দান করেন।
নূহ (আ.) তার পুত্রকে হেদায়াত করতে পারেননি, স্ত্রীকেও সৎ পথে আনতে পারেননি।
ইবরাহীম খলীল (আ.) তার পিতাকে দ্বীনের পথে আনয়ন করার চেষ্টা করেও সফল হননি।
হজরত লুত (আ.)এর ক্ষেত্রেও একই কথা। তার স্ত্রীকে সুপথে আনতে পারেননি।
আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম ও ইসহাক (আ.)এর ব্যাপারে বলেন,
وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلَى إِسْحَاقَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَظَالِمٌ لِنَفْسِهِ مُبِينٌ,,,
‘‘তাকে (ইবরাহীমকে) এবং ইসহাককে আমি বরকত দান করেছি। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মী এবং কতক নিজেদের উপর স্পষ্ট যুলুমকারী। (সূরা সাফফাত: ১১৩)
আর নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে প্রকার হেদায়াত করতে সক্ষম বলে কুরআন সাক্ষ্য দিয়েছে, তা হচ্ছে হেদায়াতের পথ দেখানো। তিনি এবং সকল নাবী-রসূলই মানুষকে হেদায়াতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা সূরা শুরার ৫২ নং আয়াতে বলেন,
 وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ,,,
‘‘নিশ্চয় আপনি সরল পথপ্রদর্শন করেন’’।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তার আদেশ নিষেধ মান্যকরে এবং নবীজীকে পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করে হেদায়তের উপর অটল থাকার জন্য সুযোগ করে দিন। আমীন।

Comments