রজব মাস সম্পর্কে শরীয়তের বিধান, গুরুত্ব ও ফজীলত।

রজব মাসের প্রচলিত ফজীলত ও বরকতের দোয়া:-
====================================
এখন চলছে আরবি সপ্তম মাস রজব। রজব শব্দের অর্থ সম্মানিত। আইয়ামে মজাহেলিয়াতের সময় আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করত, এজন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল- রজব। ইসলাম এসে বছরের বারো মাসের মধ্য থেকে রজবসহ চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস ঘোষণা করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
﴿ اِنَّ عِدَّةَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِىۡ كِتٰبِ اللّٰهِ يَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَةٌ حُرُمٌ‌ؕ ذٰلِكَ الدِّيۡنُ الۡقَيِّمُ ۙ‌ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِيۡهِنَّ اَنۡفُسَكُمۡ‌ؕ وَقَاتِلُوۡا الۡمُشۡرِكِيۡنَ كَآفَّةً كَمَا يُقَاتِلُوۡنَكُمۡ كَآفَّةً‌ؕ وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِيۡنَ﴾,,,
আসলে যখন আল্লাহ‌ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই আল্লাহর লিখন ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারো চলে আসছে। এর মধ্যে চারটি হারাম মাস। এটিই সঠিক বিধান। কাজেই এ চার মাসের নিজেদের ওপর জুলুম করো না। আর মুশরিকদের সাথে সবাই মিলে লড়াই করো যেমন তারা সবাই মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে। এবং জেনে রাখো আল্লাহ‌ মুত্তাকীদের সাথেই আছেন। সূরা তাওবাহ, আয়াত ৩৬।
যেসব উপযোগিতা ও কল্যাণকারিতার ভিত্তিতে এ মাসগুলোতে যুদ্ধ করা হারাম করা হয়েছে সেগুলোকে নষ্ট করো না এবং এ দিনগুলোতে শান্তি ভঙ্গ করে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে নিজেদের ওপর জুলুম করো না। চারটি হারাম মাস বলতে যিলকদ্দ, যিল হজ্জ ও মহররম মাসে হজ্জের জন্য এবং উমরাহের জন্য রজব মাস।
নবিজী এরশাদ করেন।
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ "‏الزَّمَانُ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ ‏"‏‏.
আবূ বাকরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ যে দিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সে দিন হতে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা’দাহ, যূল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে। আর একটি মাস হলো রজবুল মুরাজ্জাব, যা জুমাদা ও শা’বান মাসের মাঝে অবস্থিত। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১৯৭।
এ মাসগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও হজরত কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, এ মাসগুলোতে কোনো আমল করার দ্বারা অন্য মাসের তুলনায় অধিক সওয়াব লাভ হয় এবং এ মাসগুলোতে কোনো গোনাহের কাজ করলে অন্য মাসের তুলনায় অধিক গোনাহ হয়। -তাফসিরে তাবারি: ৬/১৪৯-১৫০।
রজব মাসের আগমনে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরকত লাভে দোয়া করতেন। রমজান পর্যন্ত হায়াত লাভের ধরণা দিতেন মহান প্রভুর দরবারে। সবাইকে বরকত লাভে দোয়া পড়ার পাশাপাশি রমজান পর্যন্ত নেক হায়াত লাভের নসিহত পেশ করতেন। পুরো রজব ও শাবান মাস জুড়ে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে এ দোয়া পড়া মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আমল। প্রিয়নবির শেখানো দোয়াটি হলো- নবিজী এরশাদ করেছেন, 
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ: «اللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ» قَالَ: وَكَانَ يَقُولُ: «لَيْلَةُ الْجُمُعَةِ لَيْلَةٌ أَغَرُّ وَيَوْمُ الْجُمُعَةِ يَوْمٌ أَزْهَرُ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي الدَّعَوَاتِ الْكَبِيرِ...
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস আসলে এ দু‘আ পড়তেন, ‘‘হে আল্লাহ! রজব ও শা‘বান মাসের (‘ইবাদাতে) আমাদেরকে বারাকাত দান করো। আর আমাদেরকে রমাযান মাস পর্যন্ত পৌঁছাও।  
বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) আরো বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘‘জুমু‘আর রাত আলোকিত রাত। জুমু‘আর দিন আলোকিত দিন।’’ (বায়হাক্বী’র দা‘ওয়াতুল কাবীর)[১]
সিলসিলা সহিহা, হাদিস নং ১৩৬৯।
উম্মতকে এ দোয়া শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহ যেন রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত-বন্দেগির জন্য রজব ও শাবান মাসে অতিরিক্তি ইবাদত-বন্দেগি করে, রোজা রেখে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারে। আর আল্লাহ তাআলাও যেন বান্দার জন্য সব কাজে বরকত দান করেন।
আশহুরে হুরুমের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে ইমাম আবু বকর জাসসাস (রহ.) বলেন, এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয় এবং এ মাসগুলোতে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। -আহকামুল কোরআন: ৩/১৬৩।
তাই আশহুরে হুরুমের অন্তর্গত রজব মাসের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া উচিত। 
ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আদায়ের পাশাপাশি সামর্থ্য অনুযায়ী স্বাভাবিক নফল নামাজ, রোজা, জিকির, তেলাওয়াত ও দান-সদকা করা বাঞ্ছনীয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রজব মাসের পর শাবান মাস আর তার পরই পবিত্র রমজান। এই তিন মাসের পূর্ণ বরকত, রহমত ও ফজিলত যেন আমরা লাভ করতে পারি সেজন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে বিশেষভাবে দোয়া করা দরকার। 
রজব মাসের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
إن في رجب نهرا يقال له رجب، ماؤه أشد بياضاً من الثلج وأحلى من العسل، من صام يوما من رجب شرب منه.
অর্থ:রজবে রয়েছে একটি নহর, যার পানি বরফের তুলনায় সফেদ-শুভ্র, মধুর তুলনায় মিষ্ট, রজব মাসে যে একটি রোজা রাখবে, সে তা হতে পান করবে।হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
فضل شهر رجب على الشهور كفضل القرآن على سائر الكلام,,,
অর্থ : রজম মাসের ফজিলত অন্যসব মাসের তুলনায় তেমন, যেমন কুরআন শরীফের ফজিলত অন্যসব কালামের ওপর।নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ, হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদকরেন,
لا تغفلوا عن أول جمعة من رجب فإنها ليلة تسميها الملائكة الرغائب
 অর্থ : রজবের প্রথম জুমার ব্যাপারে তোমরা উদাসীন থেকো না, কারণ, তা এমন একটি রাত, ফেরেশতারা যার নামকরণ করেছে রাগায়েব হিসেবে। রজব মাসের ফযীলত সম্পর্কে  নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদকরেন,
رجب شهر الله وشعبان شهري ورمضان شهر أمتي
অর্থ: রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস আর রমজান আমার উম্মতের মাস।

রজব মাস নিয়ে দু’টি কথাঃ-
‘রসম রেওয়াজে’ আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। অথচ এখানেই অন্য ধর্মের সাথে আমাদের ইসলামের মূল পার্থক্য। ইসলাম হচ্ছে  একমাত্র আল্লাহ তাআলার হুকুমকে রাসুল (সা.) এর আদর্শে মানার নাম।
আমাদের এ ধর্মে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর স্পষ্ট নির্দেশ ছাড়া নিছক সময়, স্থান ও পাত্রকে কেন্দ্র করে কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা নির্ধারিত আমলের গ্রহণযোগ্যতা নেই। আল্লাহ তায়ালা এবং তার রাসুল (সা.) এর আদর্শই আমাদের কাছে মূখ্য।
সারা বছর বসে বসে পানি পান করলেও ‘যমযম’ পানি পান করা হয় দাঁড়িয়ে, সবসময় টুপি মাথায় দিয়ে নামাজ পড়লেও হজের সময় কাবার সামনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ি খালি মাথায়- কেন এ তারতম্য? এর একমাত্র উত্তর : আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ।
তাই মনে রাখবেন, আল্লাহর সাথে বেআদবির নাম যেমন ‘কুফুরি’, রাসুল (সা.) এর সাথে বেআদবির নাম তেমনি ‘বিদআত’ কুফুরী।
চলমান ‘রজব’ মাসকে কেন্দ্র করে এমনই কিছু ধারণা ও আমল এবং কিছু ফযিলত আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে, যা মূলত বিদআত। দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা সাধারণ দুনিয়াবি বিষয়ে পড়াশোনায় সামনে এগিয়ে গেলেও ইসলামের ব্যাপারে জানা ও অনুসন্ধানের দিক থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে।
ইসলাম সম্পর্কে নিত্যনতুন সঠিক বিশ্লেষণ আমাদের সামনে সহজলভ্য হলেও আজও অনেকে ‘মকসুদুল মোমিনীন’ কিংবা ‘নেয়ামুল কোরআন’ এবং ‘বার চান্দের ফযিলত ও আমল’ এর বাইরে আর কিছু পড়িনা। ফলে এ বইগুলোর সব হাদীস সঠিক কিনা তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকছে না।
আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, 
فَسۡـَٔلُوۡۤا اَهۡلَ الذِّكۡرِ اِنۡ كُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَۙ‏,,,
‘তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করো যদি তোমরা না জানো।’সূরা নাহল, আয়াত ৪৩।
অথচ আমরা নিজেরাও পড়ি না, অভিজ্ঞদেরকেও জিজ্ঞেস করি না। অলসতা ও মূর্খতার কি উদ্ভট সমন্বয়!
‘রজব’ মাস নিয়ে একটি হাদীস খুব প্রচলিত।
رجب شهر الله وشعبان شهري ورمضان شهر أمتي,,,
‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস, রমজান আমার উম্মতের মাস’। এ হাদীসটিকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম মওদু ও বানানো বলেছেন। কারণ এর কোনো সঠিক সূত্র নেই।
বুখারী শরীফের ভাষ্যকার ইমাম ইবনে হাজার লিখেছেন, রজব মাসের ফযিলত কিংবা এ মাসের রোযা অথবা এ মাসের কোনো নির্ধারিত রাতে বিশেষ ইবাদত নিয়ে কোনো সহীহ হাদিস উল্লেখ নেই। রজব সম্পর্কিত সবগুলো হাদিস হয়তো একেবারে দূর্বল নয়তো বানানো মিথ্যা।
রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার রোজা এবং সন্ধ্যার পর বিশেষ পদ্ধতির নামাজ ‘সালাতুর রাগায়েব’ নিয়ে আনাস (রা.) এর নামে বর্ণিত একটি হাদীসও প্রচলিত রয়েছে। এমন আরও কিছু দান সদকা ও রোযার কথা বিভিন্ন বই-পুস্তকে পাওয়া যায়।
কিন্তু মুসলিম শরীফের ভাষ্যকার ইমাম নববী বলেছেন, এসব স্পষ্ট বিদআত। এ কাজগুলো বর্জনীয় এবং যে এমন করবে সে অবশ্যই নিন্দনীয়।’ (ফাতাওয়া ইমাম নববী, পৃষ্ঠা-৫৭)
এ হাদীসটি ‘বানানো মিথ্যা’ হওয়ার ব্যাপারে সব মুহাদ্দিস একমত বলে বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে নুহাস। (তাম্বীহুল গাফেলীন)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম জাওযীসহ আরও অনেক প্রসিদ্ধ ফকীহ এসবকে ‘ভ্রান্ত ও পরিত্যাজ্য’ বলেছেন।
রাসুল (সা.) এর জীবনের উল্লেখযোগ্য মুজেযা হল ‘মিরাজ’। আমরা বিশ্বাস করি, রাসুল (সা.) এ রাতে আল্লাহর দরবারে গিয়েছিলেন। আল্লাহ নিজের সাক্ষাত দিয়ে তাঁকে ধন্য এবং ‘নামাজ’ এর হুকুম দিয়ে এ উম্মতকে সম্মানিত করেছেন।
কিন্তু মিরাজের মূল উপহার ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে’র প্রতি নিয়মিত যত্নবান না হয়ে আমরা ছুটছি ‘মিরাজ রজনী’ পালনের উৎসবে।
রাতভর মিরাজের আলোচনা শুনে ‘ক্লান্ত শ্রোতা’র কাতর ঘুমে ছুটে যায় আল্লাহর ফরয হুকুম ‘ফজর নামাজ’। মূল ইবাদত ছেড়ে খোলস নিয়েই আমাদের অর্থহীন কাড়াকাড়ি।
উৎসবপ্রিয় আমাদের এদেশে এসবের প্রচলন অনেক পুরনো। কিন্তু তাই বলে তো আর তা শরীয়তের অংশ হতে পারে না। রজব মাসের ২৭ তারিখে আমরা ‘শবে মিরাজ’ পালন করি। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এ রজনীপালন?
ইমাম ইবনে হাজার, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম ইবনে রজব, ইব্রাহীম আল হারবী সবাই রজব মাসের ২৭ তারিখেই যে মিরাজ ঘটেছিল, এ নিয়ে একটিও সমর্থিত সূত্র নেই বলে উল্লেখ করেছেন। (বিস্তারিত জানতে যাদুল মাআদ, লাতয়েফুল মাআরেফ, আল মানারুল মুনিফ, তাবঈনুল আজব দেখুন)।
উনাদের জীবনের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস ছিল হাদীসের সংরক্ষণ এবং ইসলামের বিশ্লেষণ ও প্রচারে নিবেদিত, তাদের বদৌলতে আমরা পেয়েছি ‘কুরআন ও হাদীসে’র বিশুদ্ধ ভাব তারা জীবনভর কুরআন ও হাদীসে যা খুঁজে পাননি, তা আমরা খুব সহজেই পেয়ে যাই ফুটপাতের দোকানে বিক্রি হওয়া  ‘রঙিন মলাটের পুস্তিকায়’!!
তর্কের খাতিরে যদি ‘২৭ শে রজব’ আমরা মেনেও নিই, তবুও তো এ রাতকে কেন্দ্র করে কোনো ফযিলতের হাদীস কিংবা বিশেষ কোনো আমল বাজারের কিছু সূত্র ছাড়া পুস্তিকা ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আজ পর্যন্ত কেউ কি পেরেছে নবী (সা.) কিংবা সাহাবী অথবা তাবেয়ীদের জীবন থেকে এর সপক্ষে সামান্য প্রমাণ দেখাতে?
প্রিয় পাঠক, মনে রাখবেন, রজব আল্লাহর তরফ থেকে ঘোষিত সম্মানিত চারটি মাসের একটি। বাকি তিনটি মাস হল, যিলকদ, যিলহজ ও মুহাররম। এর বাইরে এ মাসের অন্য কোনো ফযিলত কিংবা বৈশিষ্ট্য নেই, নেই কোনো বিশেষ আমল বা ইবাদতের কথা।

বরং হাদীসের কিতাবসমূহ থেকে জানা যায়, যেহেতু এ চারটি মাসকে আল্লাহ সম্মানিত ঘোষণা করেছেন, তাই কেউ এ মাসে অন্যের ওপর জুলম করলে তার পরিণাম অন্য সময়ের তুলনায় বেশি ক্ষতিকর হবে।
তেমনিভাবে কেউ যদি এ মাসগুলোতে ভাল কাজ করে তাকেও বেশি প্রতিদান দেওয়া হবে।
আর রজব মাসকে জড়িয়ে বিশেষ কিছু দিন রোযা রাখার যে ফযিলত বলা হয়, সেটি আবু দাঊদ শরীফের হাদীস (নং ২৪২৮)। কিন্তু ওই হাদীসে রজব মাসের নাম নেই, বরং সম্মানিত চার মাসের সবগুলোর কথাই বলা হয়েছে। সুতরাং শুধু রজবকে নিয়ে বাড়াবাড়ি অর্থহীন। (ফিকহুস সুন্নাহ দেখুন- ১/৩৮৩)।
আল্লাহর কাছে প্রতিটি ইবাদতই মূল্যবান। যে কোনো সময় যে কোনোভাবে চাইলেই আমরা তাঁর ইবাদত করতে পারি। কিন্তু এসব ছেড়ে দিয়ে বছরের নির্দিষ্ট কোনো দিন কিংবা রাতকে ‘বিশেষ’ করার কোনো অর্থ নেই। নামাজ রোযার ধার ধারে না, এমন ব্যক্তি যদি ওই একটি রাত ইবাদতে ডুবে থেকে পরদিন আবার ভুলে যায় আল্লাহর হুকুমকে, তবে এটি কি তামাশা নয়?
ধরুন আপনার অধীনস্ত কোনো কর্মচারী যে ইচ্ছে করেই মাসের ২৯ দিন অনুপস্থিত থেকে মাত্র একদিন এসে খুব খাতির দেখাতে চায় আপনার সাথে, আপনি কি করবেন? তাকে আশ্রয় দেবেন নিজের অফিসে, তার প্রয়োজন পূরণের পদক্ষেপ নেবেন?
আসুন, এসব রসম ও রেওয়াজ ছেড়ে দিয়ে প্রতিদিনের মূল ইবাদত ও কিছু আমলকে নিয়মিতভাবে পালন করি। আল্লাহ বান্দার ওই আমলকেই বেশি ভালবাসেন, যা অল্প হলেও নিয়মিত হয়।
শুধু ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার কেনাকাটার বিষয়ে ‘নকল থেকে আসল’ চেনার সতর্কতা নয়, চিরস্থায়ী আখেরাতের জন্য আমলের বিষয়েও চাই এর চেয়ে বেশি আগ্রহ ও সচেতনতা, চাই সঠিকভাবে আমল করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং দ্বীনের ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানার্জনের প্রতি একান্ত সদিচ্ছা।
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত নেক হায়াত বৃদ্ধি করে দিন। আমিন।
বিস্তারিত লিংক-

Comments