******************************************
দুনিয়া হলো মরুভূমির বালিকণর ন্যায়, দূর থেকে মনে হয় পানি। দৌড়ে গেলে দেখা যায় বালি আর বালি। সহজ সরল মানবজাতিকে ধোঁকা দিতেই দুনিয়া অভ্যস্ত। অথচ রহমাতুল্লিল আলামিনের উসিলায় আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়াকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ইবলিস- শয়তানের প্ররোচনায় কিছু কিছু মানব সৃষ্টির মোহে পড়ে দুনিয়াকে স্থায়ীভাবে আঁকড়ে ধরে নিজের এক খালিক স্রষ্টাকে ভুলে যায়।
"দুনিয়ার মোহে পড়ে করিওনা ভুল,
দুনিয়াটা মায়া ভরা রঙ্গের পুতুল"।
আজ মুসলমান কেন নির্যাতিত হচ্ছে এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ভবিষ্যদ্বাণী- মুসলমানের রক্তে ভাসছে পুরো পৃথিবী। মুসলমানের মৃতদেহ নিয়ে উল্লাস করছে বিধর্মীরা। শিশু থেকে আবাল বৃদ্ধ বণিতা সবাই নির্মম নির্যাতনের শিকার। নারীদের আর্ত চিৎকারে কেঁপে ওঠছে আকাশ-বাতাস। ফিলিস্তিন, কাশ্মির, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাকসহ সর্বত্রই করুণ কান্না।
রাসুল সা. চৌদ্দশত বছর আগে বিধর্মীদের দ্বারা মুসলমানদের নির্যাতিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ঘোষণা করে গেছেন। আজ তার ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সুনানে আবু দাউদের একটি হাদীসে বর্ণিত আছে,
عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يُوشِكُ الأُمَمُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمْ كَمَا تَدَاعَى الأَكَلَةُ إِلَى قَصْعَتِهَا " . فَقَالَ قَائِلٌ وَمِنْ قِلَّةٍ نَحْنُ يَوْمَئِذٍ قَالَ " بَلْ أَنْتُمْ يَوْمَئِذٍ كَثِيرٌ وَلَكِنَّكُمْ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ وَلَيَنْزِعَنَّ اللَّهُ مِنْ صُدُورِ عَدُوِّكُمُ الْمَهَابَةَ مِنْكُمْ وَلَيَقْذِفَنَّ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمُ الْوَهَنَ " . فَقَالَ قَائِلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الْوَهَنُ قَالَ " حُبُّ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَةُ الْمَوْتِ ",,,
হযরত সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি আশংকা করতেছি খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্রিত হবে। এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ, সেদিন আমাদের মুসলমানদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বললেন না। তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর হতে তোমাদের পক্ষ হতে আতঙ্ক (মাহাবত) দূর করে দিবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে ভীরুতা (ওয়াহান) ভরে দিবেন। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ‘আল-ওয়াহ্ন’ কি? তিনি বললেন দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২৯৭।
উল্লেখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. মুসলমানদের নির্যাতিত ও লাঞ্চিত হওয়ার দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেন। এ দু’টি কারণ বর্তমান যুগের অধিকাংশ সমাজের মাঝে পাওয়া যায়। একটি হলো "মাহাবত"
(তোমাদের ব্যাপারে বিধর্মীদের অন্তরে আতংক), আরেকটি হলো "ওয়াহান" (দুনিয়ার মহব্বত, মৃত্যুর ভয়)।
তারা দুনিয়ার মহব্বতে এমন পাগল যে, দুনিয়ার ধনসম্পদ ও সম্মান-মর্যাদা অর্জনে সদা ব্যস্ত থাকায় আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনের প্রতি চরম উদাসীন। আর মৃত্যুর ভয়ে এমন ভীত যে জালিম কাফির মুশরিকদের জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিহাদ করার সাহস পায় না। ফলে মুসলমানদের আল্লাহু আকবর ধ্বনির সেই আতংক অমুসলিমদের মাঝে আর নেই।
ঈমানদারগণ ঈমান গ্রহণের পর দুনিয়ার মোহে পড়ে সৎ আমল করতে অবহেলা না করলে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে খিলাফত দান, ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং বিধর্মীদের অত্যাচার থেকে নিরাপত্তা দানের ওয়াদা করেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡكُمۡ وَعَمِلُوۡا الصّٰلِحٰتِ لَيَسۡتَخۡلِفَنَّهُمۡ فِىۡ الۡاَرۡضِ كَمَا اسۡتَخۡلَفَ الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ, وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمۡ دِيۡنَهُمُ الَّذِىۡ ارۡتَضٰى لَهُمۡ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ خَوۡفِهِمۡ اَمۡنًاؕ يَعۡبُدُوۡنَنِىۡ لَا يُشۡرِكُوۡنَ بِىۡ شَيۡـًٔاؕ وَمَنۡ كَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ﴾,,,
‘তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের ওয়াদা দিয়েছেন, তাদের অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য। (সুরা নুর : আয়াত ৫৫)।
আর মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে জিহাদ করা ব্যতিত কাফির বেঈমানদের অত্যাচার থেকে অসহায় মাজলুম মুসলমানদের রক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। হায় আফসোস! নির্যাতিত এই মুসলমানদের রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা তো অনেক দূরের কথা তাদের আশ্রয় দিতেও বর্তমানে মুসলিমরা রাজি নয়। কোন মুসলমান রাষ্ট্র নির্যাতিতদের সাহায্যের জন্য তেমন জোরালোভাবে এগিয়ে আসছে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,,,
﴿ وَمَا لَكُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَالۡمُسۡتَضۡعَفِيۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالۡوِلۡدَانِ الَّذِيۡنَ يَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡيَةِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَاۚ وَاجۡعَل لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡكَ وَلِيًّا ۙۚ وَّاجۡعَل لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡكَ نَصِيۡرًاؕ﴾,,,
আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (সুরা নিসা: আয়াত ৭৫)।
বর্তমানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও মুসলিম শাসক কর্তৃক তারা হচ্ছে নির্যাতিত। তাদের জান-মাল, ইযযত-আবরূ এমনকি জীবনের অমূল্য সম্পদ ঈমান-আকীদার হেফাযতের নিরাপত্তাটুকুও তারা পাচ্ছে না। তাদের মুসলিম শাসকরা ক্ষমতার মোহে নিজেদের গৌরবময় অতীত ও সোনালী ইতিহাসকে সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হয়ে সম্রাজ্যবাদীদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। তারা ইয়াহুদী-খৃষ্ট যৌথ চক্রের ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ হয়ে পাশ্চাত্য ভাবধারণায় কুফরী মতবাদের দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করছে। অথচ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এ মর্মে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন-
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ...
যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা জালিম। [সূরা মায়িদা; আয়াত ৪৫]
অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ,,,
যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার করে না, তারা কাফির। [সূরা মায়িদা; আয়াত : ৪৪]
কিন্তু মহান আল্লাহ তা‘আলার এ সতর্কবাণী দ্বারা মুসলিম শাসকবৃন্দ নিজেদের মাঝে কোন প্রকার পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। তারা পূর্ববর্তী মানব রচিত আইন দ্বারা দেশ পরিচালনা করে চলেছে। ফলে অশান্তি-বিশৃংখলা, হানাহানি-মারামারি আরো কত কী! এরূপ অশান্ত পরিবেশ ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির ফলে মুসলমানরা ক্রমশ নিরাশ হয়ে পড়ছে। নৈরাশ্যের কালো ছায়া তাদেরকে আবদ্ধ করে ফেলছে। অনেকে তো একেবারে হাল ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে পড়েছে। এমনি মুহূর্তে নিমোক্ত এ আয়াত আশার সঞ্চার করেছে। ইরশাদ হচ্ছে-
فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً وَأَمَّا مَا يَنْفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ,,,
(উভয় প্রকারে) যা ফেনা, তা তো বাইরে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় আর যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়।
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের নৈরাশ্য বিদূরীত করে আত্মবলে বলীয়ান হয়ে তাদের হৃত গৌরব ও হারানো ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধারের জন্য ইসলামের মশাল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তারা যদি অগ্রসর হয়, তাহলে সকল কুফরী শক্তি বিতাড়িত হতে বাধ্য। কেননা কুফরী ও বাতিল শক্তি হচ্ছে রঙ্গিন চাকচিক্যময় ফানুসের মত, যা অচিরেই ছিদ্রকৃত বেলুনের ন্যায় চুপসে যেতে বাধ্য। আলোর অবর্তমানে অন্ধকারের প্রাধান্য থাকে বটে, কিন্তু রঙ্গিন আভা বিস্তার করে পূর্বাকাশে যখন সূর্য উঁকি দেয় , তখন অন্ধকার বিলুপ্ত হতে বাধ্য হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ﴾...
অর্থাৎ- আর আমি সংকল্প করেছিলাম, যাদেরকে পৃথিবীতে লাঞ্ছিত করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবো, তাদেরকে নেতৃত্ব দান করবো, তাদেরকেই উত্তরাধিকারী করবো, সূরা ক্বাসাস, আয়াত- ৫।
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দুনিয়ায় নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব দান করবেন। ও তাদেরকে পৃথিবীর উত্তরাধিকার দান করবেন এবং তারা হবে রাষ্ট্র পরিচালক ও শাসনকর্তা।
সত্যের বিজয় সুনিশ্চিতঃ-
ভারতবর্ষে ইংরেজরা তাদের প্রায় ২০০ বছরের শাসনামলে মুসলমানদের উপর কম নির্যাতন করেনি। হাজার হাজার আলেমকে ফাসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। কুরআনের লক্ষ লক্ষ কপি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও আল্লাহ হককে ঠিকই বাকি রেখেছেন। আর বাতিলকে সমূলে উৎপাটিত করেছেন। পূর্বযুগের নমরূদ, ফিরআউন, কারূন, হামানরা আজ সকলেই ঘৃণিত ও অভিশপ্ত। নিকট অতীতের মীর জাফর, রায়দুর্লভ আর ঘসেটি বেগমরাও ধিকৃত হয়েছে একইভাবে। কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদেরকে তারা ধ্বংস করতে পারেনি। ইসলামের ধারা নিজস্ব গতিতে সম্মুখপানে অগ্রসর হয়েছে।
সমগ্র বিশ্বের মুসলমান বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলমানরা আজ যে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তা বর্ণনাতীত। আজ এ দেশের মুসলমান ঈমান-আমলের ইসলাহ করে পাকা ঈমানদার ও আমলদার হলেই মহান আল্লাহর নুসরত ও মদদ নেমে আসবে এদেশে। দেশের মানুষ শান্তি ও সুখের প্রাচুর্য নিয়ে কালাতি।
মুসলামনদের হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ার উপায়ঃ
হকের বিজয়ী হওয়া এবং বাতিলের নিমূল হওয়ার জন্য শর্ত হল, হকপন্থী মুমিনদের কামিল মুমিন হতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বাতিলের উপর বিজয়ী হওয়ার জন্য যে শর্তসমূহ আরোপ করেছেন, সে অনুযায়ী নিজেদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন যে,
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ...
(হে মুমিনগণ!) তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না। তোমরা প্রকৃত মুমিন হলে তোমরাই বিজয়ী হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১৩৯)।
সারকথাঃ-
এ প্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত আমাদের সামনে আশার দিগন্ত উম্মোচন করে দিয়েছে। অভয় দিয়ে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করছে,
﴿ وَاعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِيۡعًا وَّلَا تَفَرَّقُوۡا وَاذۡكُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَيۡكُمۡ اِذۡ كُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوۡبِكُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِهٖۤ اِخۡوَانًاۚ﴾,,,
অর্থাৎ- তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু৮৩ মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৩।
আল্লাহ্র রজ্জু বলতে তাঁর দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনকে রজ্জুর সাথে তুলনা করার কারণ হচ্ছে এই যে, এটি এমন একটি সম্পর্ক, যা একদিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদারদের সম্পর্ক জুড়ে দেয় এবং অন্যদিকে সমস্ত ঈমানদারদেরকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে এক জামায়াত বদ্ধ করে। এই রজ্জুকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার মানে হচ্ছে, মুসলমানরা “দ্বীন”-কেই আসল গুরুত্বের অধিকারী মনে করবে, তার ব্যাপারেই আগ্রহ পোষণ করবে, তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে এবং তারই খেদমত করার জন্য পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করবে।
কারণ বাতিলের এ উত্থান সাময়িক, পানির উপর ভাসমান খড়কুটার মত হকের প্রবল স্রোত যখন প্রবাহিত হবে, তখন সকল বাতিলকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাতিলের কোন অস্তিত্ব তখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে নিজেদের ঈমান-আমলের দুর্বলতার কারণে আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকাম পালনে শিথিলতা প্রদর্শনের দরুণ সাময়িক পরীক্ষার সম্মুখীন অবশ্যই হতে হবে। এই পরীক্ষা পূর্বের উম্মতদের উপরও এসেছিল। তাই নিরাশ না হয়ে নিজেদের ঈমান-আমল মজবুতির কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি ইসলামের পরিচিত সমগ্র বিশ্বের দরবারে পেশ করার জন্য সময় বের করে ময়দানে নামতে হবে। এছাড়া দ্বীনী শিক্ষার ব্যপক প্রচার-প্রসার করতে হবে। এর জন্য প্রতিটি গ্রামে-মহল্লায় আদর্শ নূরানী মক্তব প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এটাই হবে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সর্বোত্ত প্রস্তুতি মূলত পদক্ষেপ। এছাড়াও দ্বীন বুলন্দীর সময়োচিত জিহাদী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে। এভাবে দ্বীন কায়েমের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। ইনশাআল্লাহ হকের পক্ষে এ সামান্য মেহনতের বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা বাতিলকে নিস্তনাবুদ করে দিবেন, হককে করবেন চিরউন্নত।
Comments
Post a Comment