ইসলামের দৃষ্টিতে "করোনা" ভাইরাসের বিধান ও করণীয়ঃ-
*************************************
মানবজাতির জন্য আল্লাহর নির্ধারিত ফয়সালা হচ্ছে এই যে গুনাহ ও পাপাচারিতা ব্যতিত তাদের নিকট বিপদ আসে না। এবং বিপদ এসে গেলে তওবা ব্যতিত তা দূর হয়না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ,,,
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়, হয়তো তারা বিরত হবে’ (সূরা : আর রূম, আয়াত : ৪১)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ وَمَاۤ اَصَابَكُمۡ مِّنۡ مُّصِيۡبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتۡ اَيۡدِيۡكُمۡ وَيَعۡفُوۡا عَنۡ كَثِيۡرٍؕ﴾...
তোমাদের ওপর যে মসিবতই এসেছে তা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে এসেছে। বহু সংখ্যক অপরাধকে তো আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন। সূরা শূরা, আয়াত ৩০।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿وَمَاۤ اَنۡتُمۡ بِمُعۡجِزِيۡنَ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَلَا فِىۡ السَّمَآءِ وَمَا لَكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مِنۡ وَّلِىٍّ وَّلَا نَصِيۡرٍ﴾,,,
তোমরা না পৃথিবীতে সক্ষমকারী, না আকাশে এবং আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করার মতো কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী তোমাদের নেই। সূরা আনকাবুত, আয়াত ২২।
অর্থাৎ তোমরা পালিয়ে এমন কোন জায়গায় চলে যেতে পারো না যেখানে গিয়ে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারো। তোমরা ভূগর্ভের তলদেশে কোথাও নেমে যাও অথবা আকাশের কোন উচ্চ মার্গে পৌঁছে যাও না কেন সব জায়গা থেকেই তোমাদেরকে ধরে আনা হবে এবং নিজেদের রবের সামনে হাজির করা হবে।
মহামারী রোগের একটি জরিপঃ-
২২ তম বিসিএস এর ঐতিহাসিক জরিপ থেকে জানা যায়।১৭২০-১৮২০ এই শতাব্দীতে প্লেগ নামক একটি রোগের উদ্ভব হয়, যাতে মানুষ মারা গেছে ২০ কোটি,
১৮২০-১৯২০ এই শতাব্দীতে কলেরা রোগের উদ্ভব হয়, এতে মারা যায় প্রায় ৪ কোটি।
১৯২১-২০২০ এই শতাব্দীতে স্পেনিষ ফ্লু নামক একটি রোগ উদ্ভব হয়, এতে মারা গেছে প্রায় ৫ কোটি।
২০২০ এ 'করুণা' নামক এই ভাইরাস এর উদ্ভব হয়েছে এই শতাব্দীর কথা আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ,,,
‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়, হয়তো তারা বিরত হবে’ (সূরা : আর রূম, আয়াত : ৪১)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿ وَمَاۤ اَصَابَكُمۡ مِّنۡ مُّصِيۡبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتۡ اَيۡدِيۡكُمۡ وَيَعۡفُوۡا عَنۡ كَثِيۡرٍؕ﴾...
তোমাদের ওপর যে মসিবতই এসেছে তা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে এসেছে। বহু সংখ্যক অপরাধকে তো আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন। সূরা শূরা, আয়াত ৩০।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿وَمَاۤ اَنۡتُمۡ بِمُعۡجِزِيۡنَ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَلَا فِىۡ السَّمَآءِ وَمَا لَكُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مِنۡ وَّلِىٍّ وَّلَا نَصِيۡرٍ﴾,,,
তোমরা না পৃথিবীতে সক্ষমকারী, না আকাশে এবং আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করার মতো কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী তোমাদের নেই। সূরা আনকাবুত, আয়াত ২২।
অর্থাৎ তোমরা পালিয়ে এমন কোন জায়গায় চলে যেতে পারো না যেখানে গিয়ে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারো। তোমরা ভূগর্ভের তলদেশে কোথাও নেমে যাও অথবা আকাশের কোন উচ্চ মার্গে পৌঁছে যাও না কেন সব জায়গা থেকেই তোমাদেরকে ধরে আনা হবে এবং নিজেদের রবের সামনে হাজির করা হবে।
মহামারী রোগের একটি জরিপঃ-
২২ তম বিসিএস এর ঐতিহাসিক জরিপ থেকে জানা যায়।১৭২০-১৮২০ এই শতাব্দীতে প্লেগ নামক একটি রোগের উদ্ভব হয়, যাতে মানুষ মারা গেছে ২০ কোটি,
১৮২০-১৯২০ এই শতাব্দীতে কলেরা রোগের উদ্ভব হয়, এতে মারা যায় প্রায় ৪ কোটি।
১৯২১-২০২০ এই শতাব্দীতে স্পেনিষ ফ্লু নামক একটি রোগ উদ্ভব হয়, এতে মারা গেছে প্রায় ৫ কোটি।
২০২০ এ 'করুণা' নামক এই ভাইরাস এর উদ্ভব হয়েছে এই শতাব্দীর কথা আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে মরণব্যাধি করোনা ভাইরাসের উদ্ভব হয়। বর্তমানে এ শহর ছাড়াও ১০৫ টির বেশি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। যার কোনো প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত না হওয়ায় বিশ্বনবির নসিহত মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার জনের প্রাণ কেড়েছে এ ভাইরাস। বিভিন্ন দেশে লক্ষাধিক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে অর্ধ লক্ষাধিক।
এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বড় দেশ চীন। শুধু চীনের মূল ভূখণ্ডেই আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজার এর ও অধিক এবং মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার এর ও অধিক।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ইতালিতে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে ইতালি। নতুন করে একদিনেই আরও ১৩৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় চার'শ জনের কাছাকাছি।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ হাজার জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে শতাধিক।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও এ ভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত হাজারের ও অধিক জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ২ শতাধিক জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা ভাইরাসটা কী?
করোনা ভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরণের ভাইরাস।
করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি।
কীভাবে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস?
মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
তবে ঠিক কীভাবে এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেরনি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সম্ভবত কোনও প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোনও মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে। এর আগে সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকার নজির রয়েছে। আর মার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল উট থেকে।
করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে উহান শহরে সামুদ্রিক একটি খাবারের কথা বলা হচ্ছে। শহরটির একটি বাজারে গিয়েছিল এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো। কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে। তবে উহানের ওই বাজারে মুরগি, বাঁদুড়, খরগোশ এবং সাপ বিক্রি হতো।
এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে আবার অনেক তথ্যই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘চীনারা ইঁদুর, শুকর, বাদুড়, কুকুর, বিড়াল জাতীয় বন্যপ্রাণী খাওয়ার কারণে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
এর চিকিৎসা কী?
ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই এর কোনও টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি এমন কোনও চিকিৎসাও নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে মানুষকে নিয়মিত হাত ভালোভাবে ধোয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছে তারা। এশিয়ার বহু অংশের মানুষ সার্জিক্যাল মুখোশ পরা শুরু করেছে। আপাতত প্রতিকার হিসেবে এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। ডাক্তারদের পরামর্শ, বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা ও ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা।
করোনা ভাইরাসের লক্ষ্মণ কী?
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তখনই কোনও কোনও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
করোনা ভাইরাস ছড়ানোর কারণ যাই হোক কোরান-হাদিসে অপরিচিত মহামারী ছড়িয়ে পড়ার যে কারণ উল্লেখ রয়েছে তাহলো- ‘অশ্লীলতার ভয়াবহ সয়লাব। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
,,,وَلَا تَقۡرَبُوۡا الزِّنٰٓى اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةًؕ وَّسَآءَ سَبِيۡلاً
,,,وَلَا تَقۡرَبُوۡا الزِّنٰٓى اِنَّهٗ كَانَ فَاحِشَةًؕ وَّسَآءَ سَبِيۡلاً
যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ। সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-৩২।
মহামারী ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে নবিজী অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়াকে উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ " يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِينَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ تُدْرِكُوهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا . وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِينَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ . وَلَمْ يَمْنَعُوا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللَّهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِي أَيْدِيهِمْ . وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ وَيَتَخَيَّرُوا مِمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلاَّ جَعَلَ اللَّهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ " .
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও।
যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।
যখন কোন জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত।
এবং যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। যদি ভু-পৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না।
যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়।
যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযীলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। [৩৩৫১]
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪০১৯।
আক্রান্ত এলাকার মানুষের জন্য বিধানঃ-
ভাইরাস আক্রান্ত এলাকা থেকে যেমন কেউ পালিয়ে অন্যত্র যাবে না তেমনি বাহিরের অঞ্চল থেকেও ভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় যাওয়া ঠিক নয়। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন।
এ সবই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ। এ নির্দেশ পালনে কারণ না খুঁজে প্রথম তার নির্দেশ পালন করাই মুসলমানের অন্যতম কাজ।’
ইসলাম সব বিষয়ই মধ্যপন্থা শিক্ষা দেয়। মহামারির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা তাই যা প্রিয়নবি ঘোষণা করেছেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ নির্দেশের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ওলামায়ে কেরাম। তারা বলেছেন-
>> ‘যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকার লোকজন পলায়ন করে অন্যত্র চলে যায় তবে যে সব লোক মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সেবা-শুশ্রূষা কে করবেন?
>> সম্পদশালী ব্যক্তিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গরিব অসহায় ব্যক্তিরাতো পালাতে সক্ষম হবে না।
>> যদি কেউ মনে করে যে, তাকে এ ভাইরাস বা রোগে এখনও আক্রমণ করেনি, তাই সে পালিয়ে যাবে। আর যদি ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েই যায়, তবে সে যে এলাকায় যাবে সে এলাকার মানুষও তার মাধ্যমে সংক্রমিত হবে।
>> আবার অন্য এলাকা থেকে যদি কোনো সুস্থ মানুষ আক্রান্ত এলাকায় আসে তবে সেও এ ভাইরাস বা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।
হাদিস শরীফে এসেছে-
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) সিরিয়ার দিকে রওনা করেছিলেন। শেষে তিনি যখন সারগ এলাকায় গেলেন, তখন তাঁর সঙ্গে সৈন্য বাহিনীর প্রধানগণ তথা আবূ ‘উবাইদাহ ইবনু জাররাহ ও তাঁর সঙ্গীগণ সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা তাঁকে জানালেন যে, সিরিয়া এলাকায় প্লেগের বিস্তার ঘটেছে। হযরত ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন হযরত ‘উমার (রাঃ) বলললেন, আমার নিকট প্রবীণ মুহাজিরদের ডেকে আন। তখন তিনি তাঁদের ডেকে আনলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁদের সিরিয়ার প্লেগের বিস্তার ঘটার কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। তখন তাঁদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হল। কেউ বললেনঃ আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বের হয়েছেন; কাজেই তা থেকে প্রত্যাবর্তন করা আমরা পছন্দ করি না। আবার কেউ কেউ বললেনঃ বাকী লোক আপনার সঙ্গে রয়েছেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণ। কাজেই আমরা সঠিক মনে করি না যে, আপনি তাদের এই প্লেগের মধ্যে ঠেলে দিবেন।
‘উমার (রাঃ) বললেনঃ তোমরা আমার নিকট থেকে চলে যাও। এরপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট আনসারদের ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম। তিনি তাদের কাছে পরামর্শ চাইলে তাঁরাও মুহাজিরদের পথ অবলম্বন করলেন এবং তাঁদের মতই মতপার্থক্য করলেন।
‘উমার (রাঃ) বললেনঃ তোমরা উঠে যাও। এরপর আমাকে বললেনঃ এখানে যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ কুরাইশী আছেন, যাঁরা মাক্কাহ জয়ের বছর হিজরাত করেছিলেন, তাদের ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম, তখন তারা পরস্পরে মতভেদ করলেন না। তাঁরা বললেনঃ আপনার লোকজনকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা এবং তাঁদের প্লেগের মধ্যে ঠেলে না দেয়াই আমরা ভাল মনে করি।
তখন ‘উমার (রাঃ) লোকজনের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, আমি ভোরে সাওয়ারীর পিঠে আরোহণ করব (ফিরার জন্য)। অতএব তোমরাও সকালে সওয়ারীর পিঠে আরোহণ করবে। আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ) বললেনঃ আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর থেকে পালানোর জন্য ফিরে যাচ্ছেন?
‘উমার (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ ‘উবাইদাহ! যদি তুমি ব্যতীত অন্য কেউ কথাটি বলত! তাহলে একটা কথা ছিল! হাঁ, আমরা আল্লাহর, এক তাকদীর থেকে আল্লাহর আরেকটি তাকদীরের দিকে ফিরে যাচ্ছি। তুমি বলত, তোমার কিছু উটকে যদি তুমি এমন কোন উপত্যকায় নিয়ে যাও যেখানে আছে দু’টি মাঠ। তন্মধ্যে একটি হল সবুজ শ্যামল, আর অন্যটি হল শুষ্ক ও ধূসর। এবার বল ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ মাঠে চরাও তাহলে তা আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ীই চরিয়েছ। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তাহলে তাও আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ীই চরিয়েছ।
বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) আসলেন। তিনি এতক্ষণ যাবৎ তাঁর কোন প্রয়োজনের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন,
قَالَ إِنَّ عِنْدِي فِي هٰذَا عِلْمًا سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ إِذَا سَمِعْتُمْ بِه„ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدَمُوا عَلَيْهِ وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْه“ قَالَ فَحَمِدَ اللهَ عُمَرُ ثُمَّ انْصَرَفَ.
এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যখন কোন এলাকায় (প্লেগের) বিস্তারের কথা শোন, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোন এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তারপর প্রত্যাবর্তন করলেন। [৫৭৩০, ৬৯৭৩; মুসলিম ৩৯/৩২, হাঃ ২২১৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৫)। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৭২৯।
সুতরাং কোনো অঞ্চলে মহামারী দেখা দিলে সেখান থেকে পালিয়ে না যেয়ে ওই অঞ্চলেই ধৈর্যধারণ করে বসবাস করা। যারা সে অঞ্চল থেকে না পালিয়ে ধৈর্যধারণ করে অবস্থান করবে, যদি তারা সেখানে মারাও যায়, এটি হবে তার জন্য শহিদি মৃত্যু। কারণ হাদিসে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-
‘আমার উম্মত কেবলই যুদ্ধ ও মহামারীতে ধ্বংস হবে।’
তাই যে এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়বে সেখানে অবস্থান করে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে শহিদ বলে আখ্যায়িত হবে। আর মহামারী এলাকা থেকে যে পালিয়ে আসবে তাকে জেহাদ থেকে পলায়নকারীর মতোই গণ্য করা হবে।
যুদ্ধের ময়দান থেকে নিজেদের সঙ্গীসাথীদের সহযোগিতা না করে পলায়ন করাকে হাদিসে যেমন কবিরা গোনাহ আখ্যা দেয়া হয়েছে তেমনি কুরআনে জেহাদ থেকে পলায়নকারীকে আল্লাহর ক্রোধে নিপতিত হওয়ার ধমকি শোনানো হয়েছে। তাই মহামারী আক্রান্ত এলাকা থেকে পলায়ন করা জেহাদ থেকে পলায়ন করার মতই।
মহামারী দেখা দিলে কী করণীয়ঃ-
যখন কোনো জনপদে অপরিচিত মহামারী দেখা দেয় তখন মানুষের জন্য ইসলামের দিক-নিদের্শনা হলো-
‘সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাকদীরের উপর খুশী থাকা।
কোরান তিলাওয়াত করা, সাওয়াবের আশা নিয়ে ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহর কাছে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য চাওয়া।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে এসব অবস্থায় সান্ত্বনা দিতেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, ‘মহামারি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দুনিয়াবাসীর জন্য একটি শাস্তি। তবে তা মুসলমানদের জন্য আল্লাহর রহমত।’ (বুখারি)।
যারা আল্লাহ তাআলার উপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখে, সেসব লোকের পায়ে যদি কোনো কাটাও ফুটে, তবে তারা আল্লাহর কাছে এর বিনিময় পাবে। সুতরাং যারা মাহামারীর ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য এটি মহামারি নয়। এদের জন্য এটি আল্লাহর রহমত। এর মাধ্যমে তাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
সব সময় এ দোয়াটি পড়া-
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْسَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
অর্থঃ- ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’
তিরমিজিতে এসেছে, আরও একটি দোয়া পড়তে বলেছেন বিশ্বনবি-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ
وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণঃ- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’
অর্থঃ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)।
সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এবং সন্ধ্যায় তিনবার এই দোয়া পড়বে, আল্লাহ তায়ালার দয়ায় সে সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত থাকবে। দোয়াটি হলে-
عن عثمان بن عفان رضي الله عنه قال, قال رسول الله صلى
الله عليه وسلم: " ما من عبد يقول في صباح كل يوم ومساء كل ليلة
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي
السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيم
ثلاث مرات، لم يضره شيء
উচ্চারণঃ- বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামাই, ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।
অর্থঃ- আল্লাহ তায়ালার নামে আমার সকাল-সন্ধ্যা শুরু হলো। যার নামের বরকতে পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরের কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শোনেন এবং সব জানেন।’
শুধু করোনা ভাইরাস নয়, নিয়মিত এই দোয়ার আমলের মাধ্যমে সব ধরনের বিপদ থেকে আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে হেফাজত করবেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানসহ সব মানুষেরই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসের ওপর আমল করাই শ্রেয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনা ভাইরাসসহ যাবতীয় মহামারীতে ইসলামের দিক-নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment