অপব্যয়িতা ও কৃপণতা-সফল জীবনের অন্তরায়ঃ-
**************************************
আপনি কি জানতে চান?
মিতব্যয়ীতা, অপব্যয়িতা, ও কৃপণতা কাকে বলে?
একজন মানুষের প্রকৃত সফলতা কিসে?
এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
কৃপণতা থেকে মুক্তির উপায় কী?
কিসে একজন মানুষের স্বস্তি?
কৃপণতার উদাহরণ!
তাহলে আসুন, একটু সময় নিয়ে পড়ুন!
ইসলাম মানুষের ধর্ম। পৃথিবীর সভ্য ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। নীতি নৈতিকতা ও মধ্যপন্থার ধর্ম। ইসলাম মানুষকে শিক্ষা দেয় শুদ্ধ জীবন গড়ার। সফলতার শহরে ঘুরে বেড়াতে উৎসাহিত করে। মানুষকে ভালোবেসে সৎপথে চলতে এবং সুন্দর জীবন চালাতে প্রণোদিত করে। ছোট মনের মানুষ নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত। মহানবী (সা:) বলেছেন, কৃপন বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। অনেকে বোঝে না যে কৃপন কাকে বলে।
মিতব্যয়িতা ও মিতব্যয় উভয়ই বিশেষ্য। মিতব্যয়িতা অর্থ, প্রয়োজন মতো অথবা হিসাব করে ব্যয় করা। আবার পরিমিত ব্যয় কিংবা আয় বুঝে ব্যয় করার স্বভাবও মিতব্যয়িতা। মিতব্যয়িতার বিপরীত শব্দ অমিতব্যয়িতা। একজন ব্যক্তি অপব্যয়ের মাধ্যমে যখন অর্থ ব্যয় করে, তখন তাকে অমিতব্যয়ী বলা হয়।
﴿ اِنَّ الۡمُبَذِّرِيۡنَ كَانُوۡۤا اِخۡوٰنَ الشَّيٰطِيۡنِؕ وَكَانَ الشَّيۡطٰنُ لِرَبِّهٖ كَفُوۡرًا﴾,,,
বাজে খরচ করো না। যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই আর শয়তান তার রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ।
সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ২৭।
অপর দিকে অতিমিতব্যয়িতা কৃপণতা বা কার্পণ্যের সমার্থক। কৃপণ ব্যক্তি সব সময় প্রয়োজন মতো অর্থ ব্যয় থেকে নিজেকে দূরে রাখে।
মিতব্যয়িতা একটি গুণ। মিতব্যয়ী ব্যক্তিকে সবাই পছন্দ করে। তিনি দেশ ও সমাজের জন্য ভালো ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত। জীবনে চলার পথে মিতব্যয়ী ব্যক্তিকে খুব কমই অর্থসঙ্কটের মুখাপেক্ষী হতে হয়। তার ব্যক্তি ও সংসার জীবন সচরাচর সুখময় হয়ে থাকে।
অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে মানুষের মধ্যে তিন ধরনের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এর একটি হলো মিতব্যয়িতা এবং অপর দু’টি অপব্যয়িতা ও কৃপণতা। ইসলাম ধর্মে অপব্যয় ও কৃপণতাকে নিরুৎসাহিত করে মিতব্যয়কে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলাম ধর্ম মতে, মিতব্যয়িতা একটি উত্তম কাজ এবং মিতব্যয়ী ব্যক্তিদের বলা হয় ‘মধ্যমপন্থী’। ইসলামের শিক্ষা হলো, কৃপণতা ও অপব্যয় নিন্দনীয় কাজ।
বাংলাদেশে নিজ দৃষ্টিকোন থেকেই মানুষ একে অপরকে কৃপন আখ্যা দেয়। অনেক সময় লোভী ও অপব্যয়কারী ব্যক্তিরা মিতব্যয়ী বা হিসেবী মানুষকে কৃপন বলে দোষারোপ করে। অভাবী বা ঋণগ্রস্ত মানুষকেও বাইরের লোকেরা কৃপন আখ্যা দেয়। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ বা দরিদ্র কিন্তুু আল্লাহর দেয়া ভাগ্যকে মেনে নিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে চলেন, যাদের চালচলন বা চেহারা দেখে বোঝা যায় না যে তারা অভাবী দরিদ্র, তাদেরও মানুষ কৃপন বলে ফেলে। এ জন্য কৃপন কারা তা জানা প্রয়োজন।
শরীয়াতের আলোকে যেখানে ব্যয় করা জরুরী অথবা মানবিক কারণে যেখানে ব্যয় করা জরুরী, সেখানে ব্যয় করতে সংকীর্ণতা করাকে বলা হয় বুখল বা কর্পণ্য। প্রথম স্থানে ব্যয় না করা গুনাহ আর শেষোক্ত স্থানে ব্যয় না করা গুনাহ নয় তবে খেলাফে আওলা বা অনুত্তম।
এই কৃপণতা এত খারাপ জিনিস যে, এর কারণে অনেক ফরয ওয়াজিব পর্যন্ত আদায় হয় না। যেমন- যাকাত দেয়া, কুরবানী করা, অভাবীকে সাহায্য করা, গরীব আত্মীয়-স্বজনের উপকার করা ইত্যাদি। এগুলো হল দ্বীনী ক্ষতি। আর কৃপণকে সকলে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে এটা হল পার্থিব একটা বড় ক্ষতি।
ইসলাম শিক্ষা দেয় মিতব্যয়িতা; পছন্দ করে না অপব্যয় ও কৃপণতা। আল্লাহ মানব জাতিকে দান ও বিসর্জন করতে উৎসাহিত করেছেন। অফুরন্ত সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছেন। আবার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে নিজে এবং পরিবারকে পথে নামাতে ও নিষেধ করেছেন। মধ্যপন্থা ও মিতব্যয়িতা বজায় রাখতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে-
وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا,,,
এবং তুমি তোমার হাত কাঁধে আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিত ও করো না। তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিস্ব হবে। বনী ঈসরাইল-২৯।
এই আয়াতে ব্যয় করার আদব শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আর তা হল, মানুষ এমন কৃপণও হবে না যে, নিজের ও পরিবারবর্গের প্রয়োজনেও ব্যয় করবে না। আর এমন মুক্তহস্তও হবে না যে, নিজ শক্তি ও সামর্থ্যের দিকে লক্ষ্য না করে বেহিসাব ব্যয় করে অপব্যয় ও নিঃস্বতার শিকার হবে। কৃপণতার ফলে মানুষ তিরস্কৃত ও নিন্দিত গণ্য হবে এবং অপব্যয়ের ফলে অবসাদগ্রস্ত ও অনুতপ্ত হবে। محسور বলা হয় এমন পশুকে যে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। অপব্যয়কারীও পরিশেষে হাত শূন্য করে বসে যায়।
'বদ্ধমুষ্টি হয়ো না' বা 'নিজ হাতকে গর্দানের সাথে বেঁধে রেখো না' অর্থঃ ব্যয়কুণ্ঠ কৃপণ হয়ো না। আর 'একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না' অর্থাৎ, তিরস্কার হল কৃপণতার এবং অনুতাপ হল অপব্যয়ের কুফল।
হাদীস শরীফে এভাবেই এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا، وَيَقُولُ الآخَرُ اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا ".
হযরত আবু হুরায়রা র. থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালবেলা দু'জন ফেরেশতা নাযিল হয়। তাদের একজন বলতে থাকে, আল্লাহ! আপনি খরচকারীকে বাকী থাকার মত সম্পদ দান করুন, অপর জন বলে, আল্লাহ্! আপনি কৃপনকে নিঃশেষ করে দিন৷”
(বুখারী; ১৪৪২; মুসলিম; ১০১০)।
এছাড়া মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনুল কারীমের এ আযাবের বর্ণনা দিয়ে বলেন-
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ,,,
অর্থাৎ যারা স্বর্ণ–রোপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যায় করে না আল্লাহর পথে ,তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন (কিয়ামতের দিন) জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট,পার্শ্ব ও পৃষ্টদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে ) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে জমা করে রাখার স্বাদ গ্রহণ কর। (সুরা তওবাহঃ ৩৪-৩৫)।
কৃপণতা মহান প্রতিপালকের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত ও অপছন্দনীয় কাজ। তদ্রুপ মানুষের অন্তরেও কৃপণ ব্যক্তির ঠায় নেই। কৃপণতা সবখানে প্রত্যাখ্যাত ও বঞ্চিত এবং কলঙ্কিত। মানবতার পথে অন্তরায় তৈরি করে। মানবতা বিবর্জিত কর্ম হলো কৃপণতা। সত্য সমাজ গঠনে বড় বাধা তৈরি করে মানুষের এ রোগ। কৃপণতার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কিছু দুঃখী মানুষের জীবন। মানবতা বিবর্জিত এ ধ্বংসত্মক সাপ; ব্যক্তি জীবনে সুফল বইয়ে আনতে অক্ষম। আল্লাহ বলেন,
وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَى (8) وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى (9) فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى (10) وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّى (11)
আর কার্পণ্য কেউ করলে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে, তার জন্যে আমি সুগম করে দেব কঠোর পথ। এবং তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না যখন সে ধ্বংস হবে। সূরা লাইল ৮-১১।
অর্থবান হওয়া আল্লাহর বিশেষ করুণা ও দান। কখনো অর্থ মানুষকে পরীক্ষার বাহুডুরে আবদ্ধ করার জন্য দেওয়া হয়। সম্পদের অধিকারী মানুষ তার আশপাশের পড়শী, আত্মীয়- কুটুম, অনাহারী, অবহেলিত দুঃখী মানুষের হাতে তার সম্পদের অংশ পৌঁছাবে। দুঃখীকে ভালোবেসে সাহায্য করবে। গরীব অসহায়কে উপেক্ষিত করে অর্থ সঞ্চয় ও কৃপণতা করা বড়ই জঘন্য ও কলঙ্কিত বিষয়।
﴿ وَاٰتِ ذَا الۡقُرۡبٰى حَقَّهٗ وَالۡمِسۡكِيۡنَ وَابۡنَ السَّبِيۡلِ وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيۡرًا﴾,,,
আত্মীয়কে তার অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও তাদের অধিকার দাও। সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত- ২৬।
অনাহারী মানুষের ব্যথিত হৃদয়ের তাপে গলে যাবে অর্থকুড়ির বৈভব। কেঁপে ওঠবে খোদার আরশ। জেগে ওঠবে জাগ্রত বিবেক। অসহায়ের মন মিনার ছুঁয়ে আছে খোদার আরশ । ইসলামের নবি মানব সভ্যতার সেরা শিক্ষক মুহাম্মদ সা. তাদের হৃদয় জুড়ে বেঁচে আছে। পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন-
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ,,,
‘আর তোমরা খাবে ও পান করবে, কিন্তু অপচয় করবে না; নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ সূরা আরাফ, আয়াত ৩১।
গরীব অসহায়কে ভালোবাসার মিছিলে শামিল করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার মধ্যে রয়েছে প্রভুর নৈকট্যতা। মালিকের শ্রেষ্ঠ গোলাম হওয়ার স্বাক্ষরতা। নিজের জন্য রেখে মানুষকে দুহাতে দান করতে পারলে জীবন হবে উজ্জল আলোকবিভায় আকীর্ণ। আল্লাহ বলেন,
﴿ فَاتَّقُوۡا اللّٰهَ مَا اسۡتَطَعۡتُمۡ وَاسۡمَعُوۡا وَاَطِيۡعُوۡا وَاَنۡفِقُوۡا خَيۡرًا لِّاَنۡفُسِكُمۡؕ وَمَنۡ يُّوۡقَ شُحَّ نَفۡسِهٖ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ﴾,,,
তাই যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করে চলো। শোন, আনুগত্য করো এবং নিজেদের সম্পদ ব্যয় করো। এটা তোমাদের জন্যই ভালো। যে মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকলো সেই সফলতা লাভ করবে। সূরা তাগাবুন, আয়াত- ১৬।
জগতের সেরা সফল শিক্ষক মুহাম্মদ সা. গেয়েছেন মানবতার গান। শুনিয়েছেন সাম্যের বাণী। স্বাক্ষর রেখেছেন কাজকর্মে। নিজের অতিরিক্ত খাবার, আসবাবপত্র অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন সকলের মাঝে। থেকেছেন নিজে অভোক্ত, না খেয়ে দিবস-রজনী কাটিয়েছেন। তিনি সভ্য জাতির আদর্শ। আমাদের পথিকৃৎ। তিনি মানুষকে বলে গেছেন কৃপণতা থেকে বিরত থাকতে। নবিজী এরশাদ করেছেন
وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اتَّقُوا الظُّلْمَ ؛ فَإنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ القِيَامَةِ . وَاتَّقُوا الشُّحَّ ؛ فَإِنَّ الشُّحَّ أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ . حَمَلَهُمْ عَلَى أنْ سَفَكُوا دِمَاءهُمْ، وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ». رواه مسلم,,,
হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা, অত্যাচার কিয়ামতের দিনের অন্ধকার। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাকো । কেননা, কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।(এই কৃপণতাই) তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, ফলে তারা নিজদের রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুস্মূহকে হালাল করে নিয়েছিল।” রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ২০৮।
কৃপণতা ডেকে আনে সমাজ জাতিতে ধ্বংস। ঘটায় রক্তপাত। কারণ অধিকার বঞ্চিত মানুষ এক সময় জেগে ওঠে। দাবি করে অধিকার রক্ষার ও প্রাপ্য আদায়ের। সুশংখল জীবনে তৈরি করে প্রাণহানির পথ; পূর্ববর্তী ইতিহাস তার স্বাক্ষী। আজও পূর্ববর্তী ইতিহাস কাতর কণ্ঠে আওয়াজ তুলে- কৃপণতা তাদের জীবন বিপন্ন করেছে। ধ্বংস করেছে জীবন জগত সংসার।
মধ্যম পন্থা বা মিতব্যয়িতা আর কৃপণতা এক নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اۨلَّذِيۡنَ يَبۡخَلُوۡنَ وَيَاۡمُرُوۡنَ النَّاسَ بِالۡبُخۡلِ وَيَكۡتُمُوۡنَ مَاۤ اٰتٰٮهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖؕ وَاَعۡتَدۡنَا لِلۡكٰفِرِيۡنَ عَذَابًا مُّهِيۡنًاۚ﴾...
আর আল্লাহ তায়ালা এমন লোকদেরকেও পছন্দ করেন না, যারা কৃপণতা করে, অন্যদেরকেও কৃপণতা করার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন সেগুলো গোপন করে। এই ধরনের অনুগ্রহ অস্বীকারকারী লোকদের জন্য আমি লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি। সূরা নিসা, আয়াত ৩৭।
মানুষ যদি এমনভাবে থাকে যাতে মনে হয় আল্লাহ তার ওপর কোন অনুগ্রহ করেননি, তাহলে এটাই হয় আল্লাহর অনুগ্রহকে গোপন করা। যেমন কাউকে আল্লাহ অর্থ-সম্পদ দান করেছেন কিন্তু সে নিজের সামর্থ্যের তুলনায় অনেক নিম্নমানের জীবন যাপন করে। নিজের ও নিজের পরিবারবর্গের জন্য ব্যয় করে না। মানুষকে আর্থিক সাহায্য করে না। সৎকাজে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে অংশ গ্রহণ করে না। বাইরের কোন লোক তাকে দেখে মনে করে, এই বেচারা বড়ই গরীব। এটা আসলে আল্লাহর প্রতি মারাত্মক পর্যায়ে অকৃতজ্ঞতা। হাদীস শরীফে এভাবেই এসেছে,
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ: «السَّخَاءُ شَجَرَةٌ فِي الْجَنَّةِ فَمَنْ كَانَ سَخِيًّا أَخَذَ بِغُصْنٍ مِنْهَا فَلَمْ يَتْرُكْهُ الْغُصْنُ حَتّى يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ. وَالشُّحُّ شَجَرَةٌ فِي النَّارِ فَمَنْ كَانَ شَحِيحًا أَخَذَ بِغُصْنٍ مِنْهَا فَلَمْ يَتْرُكْهُ الْغُصْنُ حَتّى يُدْخِلَهُ النَّارَ» . رَوَاهُمَا الْبَيْهَقِيُّ فِي شُعَبِ الْإِيْمَانِ
হযরত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। জান্নাতে ‘সাখাওয়াত’ (দানশীলতা নামে) একটি বৃক্ষ আছে। (দুনিয়াতে) যে ব্যক্তি দানশীল হবে, সে (আখিরাতে) এ বৃক্ষের ডাল আঁকড়ে ধরবে। আর সে ডাল তাকে জান্নাতে প্রবেশ না করানো পর্যন্ত ছাড়বে না।
পক্ষান্তরে জাহান্নামেও ‘বুখালাত’ (কৃপণতা নামে) একটি গাছ আছে। যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) কৃপণ হবে, সে (আখিরাতে) সে গাছের ডাল আঁকড়ে ধরবে। এ ডাল তাকে জাহান্নামে না পৌঁছানো পর্যন্ত ছেড়ে দেবে না। (এ দু‘টি বর্ণনা ইমাম বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমানে উদ্ধৃত করেছেন)।
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৮৮৬।
উদাহরণস্বরূপ একজন লকের ১ লক্ষ্য টাকা সে ২৫০০ টাকা জাকাত দিল না আল্ললাহ , এমন রোগ অসুখ দিল তার ঐ বিপদ /রোগের কারনে ২০/৩০০০ হাজার টাকা নেমে গেল শুধু যাকাত না দেয়ার কারনে সে বুজল না, তার এই বিপদ/ রোগের কারন ছিল যাকাত না দেয়া। আর ও একটি কারনে এমন টাকা নষ্ট হয়ে যায় সেটা অবৈধ উপায়ে অর্জন/ আয় হলে।
হাদীসে বলা হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেন, “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে নেয়ামত দান করেন তখন তিনি সেই নেয়ামতের চিহ্ন বান্দার ওপর প্রকাশিত হওয়া পছন্দ করেন।”
অর্থাৎ তার খাওয়া-দাওয়া, বসবাস করা, লেবাস- পোশাক, গৃহ, আসবাবপত্র, দান-খয়রাত ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের প্রকাশ হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آَتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ,,
অর্থঃ আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যাদেরকে সম্পদশালী করেছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করে, তাদের ধারণা করা উচিৎ নয় যে , সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যান বয়ে আনবে, বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর হবে। অচিরেই কিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান জমীনের পরম সত্ত্বধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন। (সুরা আলে ইমরানঃ১৮০)
ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে এমন অনেক সচ্ছল ব্যক্তি দেখা যায় মিতব্যয়িতার কারণে অনেকে যাদের কৃপণ হিসেবে আখ্যা দেয়ার প্রয়াস পান।
দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের ত্রিশোর্ধ্ব বয়স নয়, এমন একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির নাম অ্যাডাম খো। তাকে ব্যবসায়িক কাজে প্রায়ই বিমানযোগে বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করতে হয়। তার মতো ব্যক্তির আর্থিক অবস্থান, সঙ্গতি ও সামাজিক মর্যাদাকে বিবেচনায় নেয়া হলে এরূপ ব্যক্তির বিমানের বিজনেস ক্লাশে ভ্রমণ করার কথা; কিন্তু তিনি বিমানে ভ্রমণকালে সব সময় ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী হিসেবে যাতায়াত করেন। এত ধনী হওয়া সত্ত্বেও ইকোনমি ক্লাসে যাত্রার কারণে তাকে যখন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, প্রতিবারই তার উত্তর ‘ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণের কারণেই আমি এখনো এ বয়সে সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট ধনীদের অন্যতম। 'অ্যাডাম খো প্রায়ই তার বন্ধুমহলে আলাপচারিতায় বলেন ‘বিলাসিতার কোনো শেষ নেই। বিলাসিতা কখনো একজন ব্যক্তির তৃপ্তি শেষ করতে পারে না। যেমন আপনি একটি দামি ব্র্যান্ডের শার্ট কিনলেন, কেনা ও পরা অবধি আপনার আনন্দ। এরপর কিন্তু আপনার অপর একটি ব্র্যান্ডের দামি শার্ট পছন্দ হবে, আপনি সেটিও কিনলেন এবং পরলেন, তারপর আরেকটা তারপর আরেকটা এটা আসলে কখনো নিঃশেষিত হয় না এমন একটি প্রবণতা।’
সুখ সব সময় তৃপ্তির মধ্যে নিহিত। বিলাসিতার আসলে কোনো শেষ নেই। কোনো বিলাসিতাই অতৃপ্ত ব্যক্তির তৃপ্তি শেষ করতে পারে না।
অপর দিকে, একজন মিতব্যয়ী ব্যক্তি অল্পতেই তুষ্ট। আর এ তুষ্টির মধ্যেই তার জীবনের অন্তর্নিহিত সুখের গূঢ় রহস্য। অ্যাডাম খো তৃপ্তি বা সুখকে যে আঙ্গিকে দেখেন, তা বিবেচনায় নেয়া হলে তার আর্থিক সঙ্গতি সত্ত্বেও বিমানের ইকোনমি ক্লাসের ভ্রমণকে কৃপণতারূপে আখ্যা দেয়ার যুক্তি নেই।
ঢাকায় বসবাসরত চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের এক ব্যক্তি কলকাতার উপকণ্ঠে তার দূরসম্পর্কীয় এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে দীর্ঘ আলাপচারিতার পর গৃহস্বামী তাকে কলকাতায় কয় দিন থাকবেন এ কথা জিজ্ঞেস করে বলেন,
‘আজ ঘরে তোমার কাকী মা নেই, তাই তোমাকে চা দিতে পারলাম না। আরেক দিন এসে চা খেয়ে যেও।’ ঢাকা থেকে আগত ব্যক্তি পরদিনই দেশে ফিরবেন। এ কথা জানালে ষাটোর্ধ্ব সেই গৃহকর্তা বললেন, তোমার কাকী মা চিনি যে কোথায় রেখে গেছে তাতো আমি জানি না। তা না হলে আমি নিজেই তোমাকে চা বানিয়ে খাওয়াতে পারতাম।
ঢাকার ব্যক্তিটি যখন বললেন, তিনি ডায়াবেটিসের রোগী, চিনি ছাড়া চা খান, তখন কলকাতার ভদ্রলোক বললেন, ঘরে চা পাতাও নেই। আর দোকান থেকে চা পাতা আনতে গেলে যে সময় লাগবে সে সময় পর্যন্ত তো তুমি থাকবে না। আর তাই পরের বার কলকাতায় এলে চা না খেয়ে কিন্তু যেতে পারবে না।’
আমাদের ঢাকার ভদ্রলোক রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে, অভিমানে মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে থাকলেন প্রায় দু’ঘণ্টা সময় ব্যয় করে এক শ’ রুপির কাছাকাছি অর্থ ব্যয় করে কাকার সঙ্গে দেখা করতে আসা। আবার এখান থেকে ফিরতেও সমপরিমাণ রুপি ও সময় ব্যয় হবে। তাই কাকা তোমাকে নমস্কার।
আর কখনো আমাকে যেন এরূপ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। ঢাকার ভদ্রলোক কলকাতায় বসবাসরত তার কাকার কাছ থেকে চা পানের নামে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন এটি কৃপণতার জ্বলন্ত উদাহরণ। একটি দেশ ও সমাজে এরূপ কৃপণ ব্যক্তির যত বেশি আধিক্য পরিলক্ষিত হবে, সে দেশ ও সমাজ তত বেশি আন্তরিকতাবিহীন মনে করা যায়।
বিগত শতকের ৫০ দশকের আগে সৌদি আরব ধনী দেশ ছিল না। সে সময় সৌদি আরব থেকে সেখানকার দরিদ্র জনমানুষ জীবিকার তাগিদে অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন মুসলিম দেশে পাড়ি দিত। আমাদের এ দেশ তখন প্রথমত ব্রিটিশ এবং অতঃপর পাকিস্তানের শাসনাধীন ছিল। এ দেশের সাধারণ জনমানুষ বিশেষত গ্রামাঞ্চলের মানুষ সুদূর অতীত থেকে ধর্মপরায়ণ। সৌদি নাগরিকেরা নবীজীর দেশের মানুষ হওয়ায় এবং মুসলমানদের পুণ্যভূমি মক্কা ও মদিনার ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠায় এ দেশের মানুষজন নিজেদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পরম স্নেহমমতায় তাদের আপ্যায়িত করতেন এবং বিদায়কালে তাদের হাতে কিছু অর্থ গুঁজে দিয়ে তাদের যাতায়াত ও জীবনযাপন এবং পুণ্যভূমির মসজিদের জন্য ব্যয়ের অভিলাষ ব্যক্ত করতেন। এ দেশের জনমানুষের ধর্মবিশ্বাসের কারণে প্রদত্ত অর্থের বেশির ভাগই যে তারা তাদের জীবনযাপনের পেছনে ব্যয় করতেন, এ কথাটি সে সময় আমাদের গ্রামের সাধারণ জনমানুষের উপলব্ধিতে না এলেও সময়ের পরিক্রমায় তা এখন এ দেশের মানুষ বুঝতে শিখেছে। অবশ্য, এখন আর তেলের বদৌলতে আর্থিক অবস্থার চরম উন্নতির কারণে তাদের আর আগের মতো উপলক্ষ নিয়ে আমাদের দেশে আসার আবশ্যকতা দেখা দেয় না। বরং আমাদের দেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে হতদরিদ্র মানুষজন ভাগ্যোন্নয়নের আশায় সে দেশে পাড়ি জমায়। সে দেশের মানুষের জীবনযাপন বর্তমানে বিলাসিতায় পরিপূর্ণ। তারা নিত্য আহারের পর যা উচ্ছিষ্ট থাকে তা দিয়ে পৃথিবীর লাখো দুর্ভিক্ষ পীড়িতের দু’বেলা অন্নের সংস্থান সম্ভব; কিন্তু তাদের অনেকেই আজ এই বোধশক্তিবিহীন। সহজলভ্য অর্থের আতিশয্যে তারা মিতব্যয়িতা ও অমিতব্যয়িতার ফারাক বুঝতে অক্ষম।
মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য অর্থ অপরিহার্য। মানুষ ভবিষ্যতে সুখে ও নির্বিঘ্নে জীবনযাপনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সঞ্চয় করে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, বৈধ ও হালাল পন্থায় যারা অর্থ উপার্জন করে আল্লাহ তায়ালার কাছে তাদের ইবাদত কবুল হয়। কুরআন ও হাদিসে অপব্যয় ও কার্পণ্য পরিহার করে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য মুমিনদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
অপরাপর প্রধান ধর্মমতেও মিতব্যয়িতাকে প্রাধান্য দিয়ে অমিতব্যয়িতা ও কার্পণ্যকে বর্জনের কথা বলা হয়েছে। আর তাই ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে অর্থ ও সম্পদের অপচয় না করে প্রত্যেক মানুষের মিতব্যয়ী হওয়া কর্তব্য।
অন্যান্য দিবসের মতো সমগ্র বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে মিতব্যয়িতা দিবসও পালিত হয় প্রতি বছর। এ দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণে মিতব্যয়ী হওয়ার বিষয়ে আত্মসচেতনতা সৃষ্টি করা।
১৯২৪ সালে ইতালির মিলানে বিশ্বের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের প্রথম বিশ্ব কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দিবসটি পালন শুরু হয়। সেই থেকে বিভিন্ন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিবসটি পালন করে আসছে। আমাদের দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতর প্রতি বছর এ দিবসটি আড়ম্বরের সাথে পালন করে থাকে।
অপচয় পরিহারপূর্বক মিতব্যয় হওয়ার অর্থ, কৃপণতা নয়। ইসলাম ধর্মে মিতব্যয়কে গুরুত্ব দিয়ে উৎসাহিত করা হলেও কৃপণতাকে তিরস্কার করা হয়েছে।
মিতব্যয়িতা একজন মানুষকে সফলতা এনে দেয়। রাসূল সা: তার সাহাবিদের মিতব্যয়িতার অভ্যাস তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ বিষয়ে রাসূল সা: এরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি মিতব্যয়িতা অবলম্বন করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ধনী বানিয়ে দেবেন, আর যে ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করবে, আল্লাহ তাকে গরিব বানিয়ে দেবেন।’
অমিতব্যয়িতার স্বভাব একবার গড়ে উঠলে তা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। অমিতব্যয়িতা পাপের কাজ ও মিতব্যয়ের পরিপন্থী। মিতব্যয়িতা মানুষকে অন্যায় পথে যাওয়া থেকে বিরত করে। অপর দিকে অমিতব্যয়িতা মানুষকে অন্যায় পথে চলতে ও অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনে উৎসাহ জোগায়। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় প্রয়োজন, সে পরিমাণ ব্যয় করে অবশিষ্টাংশ সঞ্চয় করাই মিতব্যয়িতা। অনেকে এটা কৃপণতার সাথে তুলনা করে থাকেন। অথচ কৃপণতা হলো প্রয়োজনের সময়েও খরচ না করা। অপর দিকে মিতব্যয়িতা হলো প্রয়োজন যতটুকু, ততটুকু ব্যয় করা।
কৃপণতা থেকে মুক্তির উপায়ঃ-
১. প্রথমে অন্তরটাকে সম্পদের আবর্জনামুক্ত করে তুলতে হবে। পার্থিব ভালবাসার সকল ক্লেদাক্ততা ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। সম্পদের প্রতি মোহ না থাকলে কার্পণ্য থাকবে না। সর্বপরি দুনিয়ার মহব্বত ও মালের মহব্বত অন্তর থেকে বের করতে হবে।
২. নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোন জিনিস নিজের মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে হলেও অন্য কাউকে দিয়ে দিবে। কৃপণতা দূর না হওয়া পর্যন্ত এরূপ করতে থাকা।
সংকীর্ণতা ও কৃপণতার ধুম্রজাল ছিড়ে আমাদের জীবন ঘুড়ি উড়োক মিতব্যয়িতার গগনে। সবকালে কৃপণতার অবসান হোক আমাদের জীবন শহর থেকে।
Comments
Post a Comment