শাওয়ালের ছয় রোজার গবেষণালব্ধ সময় গুরুত্ব ও ফজীলত:-
********************************************************
হাফেজ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধির এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম রোজাকে বান্দার জন্য নির্ধারণ করেছেন। রোজা মানুষের গুনাহ মাফির মাধ্যমে নিষ্কলুষ ও নির্ভেজাল করে। রোজার মাধ্যমে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যক্তি যাতে শুধু মাহে রমাদানের ফরয রোজা রেখে থেমে না যান, বরং তিনি কীভাবে সহজেই পূর্ণ বছরটা মহান আল্লাহ্ তায়ালার প্রিয় বান্দা ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে থাকতে পারেন এবং কী করে চিরস্থায়ী জান্নাতের বাসিন্দা হতে পারেন এবং পরকালে তিনি কীভাবে সফলকাম থাকতে পারেন রাসূলুল্লাহ সাঃ উম্মতের সামনে এই পথ সুস্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন। শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন সারা বছর রোজার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুযোগ এনে দেয়।
নিচে কিভাবে একসাথে তিনটি সুন্নতের উপর আমল হয় তার একটা সুন্দর সিদ্ধান্ত সবিস্তারে দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত পড়ার অনুরোধ।
শাওয়াল শব্দের বিশ্লেষণঃ-
পবিত্র রমাদানের পরবর্তী মাস এবং চন্দ্র মাসের দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস। শাওয়াল শব্দটি ‘শাওলুন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে- বের হওয়া। যেহেতু এ মাসে আরববাসী আনন্দ- উল্লাসের জন্য ভ্রমণে বের হয় এজন্য শাওয়ালকে শাওয়াল বলা হয়। (গিয়াসুল্লুগাত-২৮৭)।
শাওয়ালের রোজার উপকারিতাঃ-
এ রোজা ফরজ নামাজের পর সুন্নাতে মুআক্কাদার মতো। যা ফরজ নামাজের উপকারিতা ও তার অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণ করে। অনুরূপভাবে শাওয়াল মাসের ৬ রোজা রমযানের ফরজ রোজার অসম্পূর্ণতা সম্পূর্ণ করে এবং তাতে কোনো ত্রুটি ঘটে থাকলে তা দূর করে থাকে। সে অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটি কথা রোজাদার জানতে পারুক আর নাই পারুক।
তাছাড়া রমযানের ফরজ রোজা পালনের পরপর পুনরায় রোজা রাখার মানেই হলো রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। যেহেতু মহান আল্লাহ্ কোনো বান্দার নেক আমল কবুল করেন, তখন তার পরেই তাকে আরও নেক আমল করার তাওফিক দান করে থাকেন। যেমন উলামাগণ বলে থাকেন, ‘নেক কাজের ছাওয়াব হলো, তার পরে পুনরায় নেক কাজ করা। (আহকামিস সিয়াম)।
শাওয়াল মাসের ফজীলত ও আমলঃ-
শাওয়াল মাসে অনেক আমল রয়েছে এসব আমলের ফজীলতও অনেক বেশী। এ মাসের গুরত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে শাওয়ালের ‘ছয় রোজা’। রমজানের ফরয রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর এ রোজাকে শাওয়ালের ছয় রোজা বলে। এই রোজার অনেক ফজীলত রয়েছে যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল আকরাম সাঃ নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে ক্বেরামগণকে ও রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন।
এই রোজার ফজীলত সম্পর্কে হযরত মুসলিম কারশী রাঃ হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাঃকে জিজ্ঞেস করলাম সারা বছর রোজা রাখা সম্পর্কে; রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন তোমার উপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক রয়েছে। অতঃএব তুমি রমাদান মাস ও এর পরবর্তী মাস তাতে রোজা রাখবে এবং প্রত্যেক বুধবার, বৃহস্পতি বার রোজা রাখবে। আর যখনই এরূপ করলে যেন সারা বছর রোজা রাখলে। (আবু দাউদ, তিরমিযি: হাদীস নং-৭৪৮)।
এই হাদিসে বলা হয়েছে যে, রমযানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে।
আবু আয়্যুব আনসারী (র.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃ হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبي أَيوبِ، أَنَّ رسولَ اللَّهِ ﷺ قَالَ: مَنْ صَامَ رَمَضانَ ثُمَّ أَتَبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كانَ كصِيَامِ الدَّهْرِ رواهُ مُسْلِمٌ.,,
“যারা মাহে রমজানের ফরজ রোজা রাখবে, অতঃপর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে তারা সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব অর্জন করবে। (মুসলিম শরীফ :১ম.খ- ৩৬৯ পৃ:)।
এই সওয়াব এভাবে যে, মহান রাব্বুল আলামিন মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল-কুরআন কারীমের সূরায়ে আন-আমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন,
مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَن جَاء بِالسَّيِّئَةِ فَلاَ يُجْزَى إِلاَّ مِثْلَهَا وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ,,,
যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং যে, একটি মন্দ কাজ করবে, সে তার সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। সূরা আন আম, আয়াত-১৬০।
সে হিসেবে রমযানের ত্রিশ রোজায় তিনশত রোজার সওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজায় ষাট রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায়, আর ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬ টি রোজায় সারা রছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার আরও ফায়দা হচ্ছে- অবহেলার কারণে অথবা গুনাহর কারণে রমযানের রোজার উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে সেটা পুষিয়ে নেয়া। কেয়ামতের দিন ফরয আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে।
যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عن تميم الداريّ -رضي الله عنه-، أنّ النبيّ -عليه الصلاة والسلام- قال: (أوَّلُ ما يحاسَبُ بهِ العبدُ يومَ القيامةِ صلاتُهُ فإن أكملَها كُتِبَت لَه نافلةً فإن لم يَكن أكمَلَها قالَ اللَّهُ سبحانَهُ لملائكتِهِ انظُروا هل تجِدونَ لعبدي مِن تطَوُّعٍ فأكمِلوا بِها ما ضَيَّعَ مِن فريضتِهِ ثمَّ تؤخَذُ الأعمالُ علَى حَسْبِ ذلِكَ)
কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামায দেখ; সেকি নামায পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি নামাযে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামায লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন: দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলেন: নফল নামায দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে। (সুনানে আবু দাউদ)
একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, প্রিয় নবী (সাঃ) আরও ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তায়ালা শাওয়াল মাসের ৬ দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি ওই ৬ দিন রোজা রাখবে আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক সৃষ্টি জীবের সংখ্যা হিসাবে তার আমলনামায় নেকি লিখে দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ দূর করে নেবেন এবং পরকালে তার দরজা বুলন্দ করে দেবেন।
হযরত সুফিয়ান ছাওরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মক্কায় তিন বছর ছিলাম। মক্কাবাসীর মধ্য থেকে জনৈক ব্যক্তি প্রত্যহ যোহরের সময় মসজিদে হারামে এসে বায়তুল্লাহ তওয়াফ করে, নামাজ পড়ে আমাকে সালাম দিয়ে চলে যায়। ফলে তার ও আমার মাঝে হৃদ্যতা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হলো। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে ডাকল এবং বলল, আমি মারা গেলে তুমি আমাকে নিজ হাতে গোসল দেবে, নামাজ পড়বে এবং দাফন দেবে। ওই রাতে তুমি আমাকে কবরে একাকী রেখে চলে আসবে না। তুমি আমার কবরের কাছে রাত যাপন করবে এবং মুনকার নকিরের সওয়ালের সময় আমাকে সহায়তা করবে।
সুতরাং আমি তাকে নিশ্চয়তা দিই। আমি তার আদেশ মোতাবেক তার কবরের কাছে রাত যাপন করি। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। হঠাৎ ঘোষকের ঘোষণা শুনলাম, হে সুফিয়ান! তোমার রক্ষণাবেক্ষণ ও তালকিনের প্রয়োজন নেই। আমি বললাম, কিসের জন্য? তিনি বললেন, রমজানের রোজা এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ৬টি রোজার কারণে। আমি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। অজু করে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। অতঃপর আমি আবার একই স্বপ্ন দেখলাম। সুতরাং আমি উপলব্ধি করলাম যে, এটা আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে, শয়তানের পক্ষ থেকে নয়।
সুতরাং আমি চলে গেলাম এবং বলতে লাগলাম, হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে রমজানের রোজা এবং শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখার তৌফিক দান করুন।
অতএব, শাওয়ালের ৬টি রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত উপলব্ধি করে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এ পুণ্যময় নেক আমলে নিজেকে মশগুল রাখা। মহান আল্লাহ্ সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।
হাদিসের ছুম্মা এর ব্যাখ্যাঃ-
অনেকেই প্রশ্ন করেন, যদি শাওয়াল মাসে সময় পাওয়া না যায়, তাহলে ভাঙতি রোজা পূর্ণ না করে আগে শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখার অনুমতি ইসলামে আছে কি-না। শুরুতে বর্ণিত হাদিসটিতে ‘ছুম্মা’ শব্দের প্রয়োগই এ প্রশ্নের জবাব বলে মন্তব্য করেন শায়খ আল মুনাজ্জিদ। ছুম্মা অর্থ অত:পর। অর্থাৎ কেউ রমযানের রোজা পূর্ণ করল, অত:পর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর ধরেই রোজা করল। এখানে ধারাবাহিকতার কথাই বলা হয়েছে। কাজেই হযরত রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর সুন্নত অনুযায়ী রমজান মাসে কারো রোজা ভাঙতি হলে শাওয়াল মাসে সেই ভাঙতি রোজা আগে পূর্ণ করতে হবে। যদি ভাঙতি রোজা পূর্ণ করতে শাওয়াল মাস পুরোটাই লেগে যায় (বিশেষ করে অসুস্থতা, সফর বা মহিলাদের বিশেষ কোনো শারীরিক অবস্থায়), তাহলে তিনি জিলকদ মাসে ওই ছয়টি রোজা রাখলেও শাওয়ালের ছয়টি রোজার অনুরূপ সওয়াব পাবেন।
রমজানের কোনো ফরয রোজা ভাঙতি হলে প্রথমে সেই ফরয রোজাই রাখতে হবে। পরে শাওয়ালের ছয়টি রোজা আদায় করতে হবে। রোজা কাযা করার যথাযর্থ ও অনুমোদিত ওযর যার রয়েছে, তাকে অবশ্যই কাযা রোজা করতে হবে আগে। কেননা রমযানের রোজা হলো ইসলামের একটি স্তম্ভ। আর শাওয়ালের ছয়টি রোজা হলো মুস্তাহাব। যে এই মুস্তাহাব পালন করল না, সে তিরস্কৃত হবে না। কেননা এটা ফরজ ইবাদত নয়।
সারা বছর রোজার সওয়াবঃ-
عن ثوبان عن الرسول -عليه الصلاة والسلام-: (جعل اللهُ الحسنةَ بعشر أمثالِها، الشهرُ بعشرةِ أشهرٍ، وصيامُ ستةِ أيامٍ بعد الشهرِ تمامُ السَّنةِ),,,
সাওবান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা দশ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দু’মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।
অপর রেওয়ায়েতে আছে, যে ব্যক্তি রমযানের রোজা শেষ করে ছয়দিন রোজা রাখবে সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। আহমদ: ৫/২৮০, দারেমি : ১৭৫৫।
রোজা রাখার সময় ও গবেষণালব্ধ পদ্ধতিঃ-
এই রোজা রাখার উত্তম সময় হলো ঈদের পরের ৬ দিন। কারণ তাতেই রয়েছে নেক আমলের প্রতি ধাবিত হওয়ার প্রমাণ।
শাওয়ালের রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখায় ফজিলতপূর্ণ। তবে লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা চলে। এবং শাওয়াল মাস চলে গেলে তা কাযা করা জরুরি নয়। যেহেতু তা সুন্নত এবং তার যথাসময় পার হয়ে গেছে। তা কোনো ওযরের ফলে হোক আর বিনা ওযরে হোক।
মুমিনরা ইবাদতের ক্ষেত্রে অনেক স্মার্ট হয়। কারন যখনই মুমিনের সামনে কোন আমলের সুযোগ আসে- স্মার্ট উপায়ে সে, সেটা করার চেষ্টা করে। এইতো পবিত্র শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর পালন করার পর পরই আমাদের সামনে তিনটি সুন্নাত পদ্ধতিতে রোজা রাখার সুযোগ এসেছে।
ক. শাওয়াল মাসের ছয় রোজাঃ-
ইবাদতের জগতে সলাতের পড়েই সিয়ামের গুরুত্ব। সকল ইবাদতের জন্য সওয়াব নির্দিষ্ট। একমাত্র সিয়ামের সওয়াব আল্লাহ সুবাহানুতায়ালা নিজে দিবেন। রমাদানের সিয়াম শেষ হবার সাথে সাথেই আমাদের সামনে শাওয়াল মাসের ৬টি সিয়ামের মাধ্যমে সারা বছর সিয়াম পালনের সুযোগ এসেছে। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
যারা পবিত্র রমাদানের যথাযথ কদর করেননি তাদের উচিত এখনই আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা-ইস্তেগফার করে আল্লাহ তায়ালার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়া। এই রোজাগুলো কখন রাখবেন?
রোজা রাখার দিন যেমন ৬ই জুন (১৩ শাওয়াল) থেকে ১১জুন (১৮ শাওয়াল) পর্যন্ত মোট ৬ দিন, এগুলো শাওয়ালের ৬ রোজা।
খ. আইয়্যামে বীজ এর সিয়ামঃ-
আইয়্যামে বীজের রোজা সম্পর্কে নবিজী এরশাদ করেছেন,
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يُفْطِرُ أَيَّامَ الْبِيضِ فِي حَضَرٍ وَلَا سَفَرٍ»,,,
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়ীতে অবস্থানকালীন অবস্থায় এবং সফরকালীন অবস্থায়, কখনোই আইয়্যামে বীদের সিয়াম ছাড়তেন না।”
[সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৩৪৫]।
নবিজী আরো এরশাদ করেছেন,
عن أَبي قَتَادَ ، أَنَّ رسولَ اللَّهِ ﷺ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الإثنين فقالَ:ذلكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ، وَيَوْمٌ بُعِثْتُ، أَوْ أُنزِلَ عليَّ فِيهِ رواه مسلمٌ.
হযরত ক্বাতাদাহ ইবনে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে প্রত্যেক মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম রাখার জন্য আদেশ করতেন।” মুসলিম- ১২৫৫। [আবু দাউদঃ ২৪৪৯, নাসায়ীঃ ২৪৩২]। এবার আসুন, এই রোজাগুলো কখন রাখবেন?
রোজা রাখার দিন যেমন- এই মাসের ৬জুন (১৩ শাওয়াল) থেকে ৮জুন (১৫ শাওয়াল) পর্যন্ত মোট ৩ দিন, আইয়্যামে বীজের রোজা। (আরবী মাসের মধ্য বেজোড় রোজা)।
গ. আর প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারের সিয়ামঃ-
সপ্তাহিক রোজা সম্পর্কে নবিজী এরশাদ করেছেন,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ»
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বদা সোমবার এবং বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করতেন। [সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৩৬৩]।
নবিজী আরো এরশাদ করেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ " .
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহ তা’আলার দরবারে আমল পেশ করা হয়। সুতরাং, আমার আমলসমূহ যেন সিয়াম পালনরত অবস্থায় পেশ করা হোক এটাই আমার পছন্দনীয়। [জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৭৪৭]।
এবার আসুন, এই আইয়্যামে বীজের রোজাগুলো কখন রাখবেন? রোজা রাখার দিন যেমন- এই মাসের ৮জুন (১৫ শাওয়াল) ও ১১জুন (১৮ শাওয়াল) মোট ২দিন, সোম ও বৃহস্পতিবারের (সাপ্তাহিক) রোজা।
এইভাবে একের ভিতর তিন সুন্নাত !!! মিস যেন না হয় ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন।
*উল্লেখ্য, নফল দিয়ে কাযা বা কাযা দিয়ে নফল আদায় হবেনা।
উপসংহারঃ-
যেহেতু রাসূলের হাদীস দ্বারা এই ছয় রোজার অনেক ফজীলত পাওয়া গেল এবং রাসূল সাঃ নিজেও শাওয়ালের এ ছয় রোজা রাখতেন এবং উম্মতকে রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, সেজন্য এ রোজা রাখা আমাদের জন্য উচিত।
সুতরাং আসুন, আমরা এই মহান ফজীলত ও বরকতময় শাওয়ার মাসে ছয়টি নফল রোজা পালনের নেক আমলটি নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করি। আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখার মাধ্যমে সারা বছর রোজা পালনের সওয়াব হাসিলের দ্বারা ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
Comments
Post a Comment