জিলহজ্বের প্রথম দশকের বিশেষ আমলঃ-
--------------------------------------------------------
আল্লাহ তা‘আলা দয়ালু। তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে ভালোবাসেন। তিনি চান বান্দারা ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এই উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের জন্য বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আমরা পরীক্ষার দিনগুলোতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই সবচেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য।
তবে কেন আখেরাতের জন্য এসব পরীক্ষার দিনগুলোতেও সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করব না? এ দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী ও কল্যাণ বয়ে আনে। এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ মাসের এই প্রথম দশদিন। এ দিনগুলো এমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি তিনি সবিশেষ উদ্বুদ্ধ করেছেন।
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। চারটি পবিত্র ও সম্মানিত মাসের মধ্যে জিলহজ অন্যতম। মহান আল্লাহ বলেন,
ﺇِﻥَّ ﻋِﺪَّﺓَ ﺍﻟﺸُّﻬُﻮﺭِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﺛْﻨَﺎ ﻋَﺸَﺮَ ﺷَﻬْﺮًﺍ ﻓِﻲ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺃَﺭْﺑَﻌَﺔٌ ﺣُﺮُﻡٌ,,,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি। আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত।"
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)।
আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিস শরিফে এসেছে, ওই মাসগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।
মর্যাদা বোঝাতে মহান আল্লাহ এ দিনগুলোর কসম খেয়েছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿وَالۡفَجۡرِۙ. وَلَيَالٍ عَشۡرٍۙ﴾
‘শপথ প্রভাতের। শপথ দশ রাতের।’ (সুরা ফাজর, আয়াত-১-২)।
এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, তা হলো জিলহজের প্রথম ১০ রাত। (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৫)।
এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন। তাই উম্মাতে মুহাম্মাদের জন্য কিছু করণীয় রয়েছে।
১. প্রথম দশকে ইবাদত করা:-
জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত সম্ভব হলে দিনে নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা।
যথা: নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহমীদ, তাহলীল-তাকবীর, তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।
ফযীলত:- নবিজী এরশাদ করেছেন,
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻋﻦﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ: ﻣﺎ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻓﻲ ﺃﻳﺎﻡ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ . ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻭﻻ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ؟ ﻗﺎﻝ ﻭﻻ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﺇﻻ ﺭﺟﻞ ﺧﺮﺝ ﻳﺨﺎﻃﺮ ﺑﻨﻔﺴﻪ ﻭﻣﺎﻟﻪ ﻓﻠﻢ ﻳﺮﺟﻊ ﺑﺸﻲﺀ...ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺑﺎﻟﺴﻨﺪ ﺍﻟﻤﺘﺼﻞ ﻓﻲ ﺻﺤﻴﺤﻪ ( ﺭﻗﻢ :926
অনুবাদঃ-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের নেক আমল আল্লাহর নিকট যত বেশী প্রিয় আর কোন দিনের আমল তাঁর নিকট তত প্রিয় নয়। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, জিহাদ কি এই দশকের আমল থেকে উত্তম নয়? তিনি বললেন, না আল্লাহর পথে জিহাদও এই দশকের আমলের তুলনায় উত্তম নয়; তবে ঐ ব্যক্তির (জিহাদ এর চেয়ে উত্তম) যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বেরিয়ে গেল এবং শেষে কিছুই ফিরে এলোনা (সম্পদও শেষ হল সেও শহীদ হয়ে গেল)। (বুখারী শরীফ, দুই ঈদ অধ্যায়, আইয়ামে তাশরীক পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা)।
নবিজী আরো এরশাদ করেছেন,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻋﻦﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻣﺎ ﻣﻦ ﺃﻳﺎﻡ ﺃﺣﺐ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﻳﺘﻌﺒﺪ ﻟﻪ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﻦ ﻋﺸﺮﺫﻱ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻳﻌﺪﻝ ﺻﻴﺎﻡ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﻣﻨﻬﺎ ﺑﺼﻴﺎﻡ ﺳﻨﺔ ﻭﻗﻴﺎﻡ ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻨﻬﺎ ﺑﻘﻴﺎﻡ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ.. ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﺑﺎﻟﺴﻨﺪ ﺍﻟﻤﺘﺼﻞ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ ( ﺭﻗﻢ : 758 )
অনুবাদঃ-
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় বেশী প্রিয়, প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় । (তিরমিজী শরীফ, সিয়াম অধ্যায়,দশ দিনের আমল পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড,১৫৮ পৃষ্ঠা)
২. চুল-নখ না কাটা:-
সকলের জন্য জিলহজ্বের চাঁদ উঠা থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা মুস্তাহাব। নবিজী এরশাদ করেছেন,
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﺎﺹ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ” ﺃﻣﺮﺕ ﺑﻴﻮﻡ ﺍﻷﺿﺤﻰ ﻋﻴﺪﺍ ﺟﻌﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ ﻟﻬﺬﻩ ﺍﻷ ﻣﺔ ” ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺃﺭﺃﻳﺖ ﺇﻥ ﻟﻢ ﺃﺟﺪ ﺇﻻ ﻣﻨﻴﺤﺔ ﺍﻟﻤﻨﻴﺤﺔ ﺷﺎﺓ ﺍﻟﻠﺒﻦ ﻭﻧﺤﻮﻫﺎ ﺗﻌﻄﻰ ﻟﻠﻔﻘﻴﺮ ﻟﻴﺤﻠﺐ ﻭﻳﺸﺮﺏ ﻟﺒﻨﻬﺎ ﺛﻢ ﻳﺮﺩﻫﺎ ﺃﻧﺜﻰ ﺃﻓﺄﺿﺤﻲ ﺑﻬﺎ ؟ ﻗﺎﻝ ” ﻻ ” ﻭﻟﻜﻦ ﺗﺄﺧﺬ ﻣﻦ ﺷﻌﺮﻙ ﻭﺃﻇﻔﺎﺭﻙ ﻭﺗﻘﺺ ﺷﺎﺭﺑﻚ ﻭﺗﺤﻠﻖ ﻋﺎﻧﺘﻚ ﻓﺘﻠﻚ ﺗﻤﺎﻡ ﺃﺿﺤﻴﺘﻚ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻭﺟﻞ..ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﺑﺎﻟﺴﻨﺪ ﺍﻟﻤﺘﺼﻞ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ ( ﺭﻗﻢ : 2789
অনুবাদঃ-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার প্রতি ঈদুল আযহার (১০ই যিলহজ্ব) দিন ঈদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যে ঈদ আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতের জন্য (ঈদ হিসেবে) নির্ধারণ করেছেন। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করে, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, (যদি আমার কুরবানীর পশু কিনার সামর্থ না থাকে) কিন্তু আমার কাছে এমন উট বা বকরী থাকে-যার দুধ পান করা বা মাল বহন করার জন্য তা প্রতিপালন করি। আমি কি তা কুরবানী করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না।
বরং তুমি তোমার মাথার চুল, নখ, গোঁফ কেটে ফেল এবং নাভির নীচের চুল পরিষ্কার কর। এ-ই আল্লাহর নিকট তোমার কুরবানী (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৭৪৯,২য় খন্ড ৩৮৫ পৃষ্ঠা; সুনানে নাসাঈ হাদীস নং-৪৩৭৭, ২ খ. ১৭৯ পৃ.; ত্বহাবী শরীফ, ২ খ. ৩০৫ পৃ.; ইলাউস সুনান, ১২ খ. ২৬৮ পৃ. )।
হাদীস শরীফে এভাবেই এসেছে,
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا رَأَيْتُمْ هِلاَلَ ذِي الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ " .
হযরত উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় নাবীজী (সা) এরশাদ করেছেন যখন তোমরা যিলহাজ্জ মাসের (নতুন চাঁদ দেখতে পাও) আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল না ছাটে ও নখ না কাটে।
(ই.ফা. ৪৯৫৭, ই.সে. ৪৯৬৩)।
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৫০১৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
৩.আরাফাতের দিন সহ রোজা রাখাঃ-
প্রথম নয় দিন বিশেষ করে আরাফার দিন অর্থাৎ নয় জিলহজ্বে নফল রোযা রাখা। (তবে আরাফায় উপস্থিত হাজি সাহেবদের জন্য নয়)।
ফযীলতঃ-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺻﻴﺎﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺮﻓﺔ ﺇﻧﻲ ﺃﺣﺘﺴﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﻳﻜﻔﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻗﺒﻠﻪ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺑﻌﺪﻩ ﻗﺎﻝ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ.. ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﺑﺎﻟﺴﻨﺪ ﺍﻟﻤﺘﺼﻞ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ ( ﺭﻗﻢ : 749 )
অনুবাদঃ-
হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে, আল্লাহ তাআলা তার [রোযাদারের] বিগত এক বৎসরের ও সামনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দিবেন। (তিরমিজী শরীফ, সাওম অধ্যায়, আরাফার দিনে রোযার ফযীলত পরিচ্ছেদ, ১ম খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা, সুনানে ইবনে মাজাহ, ১২৪ পৃষ্ঠা)
৪. তাকবীরে তাশরীক বলা:-
আশরায়ে যিলহজ্বের নয় তারিখ ফজর থেকে পরবর্তী পাঁচদিন অর্থাৎ নয়, দশ, এগারো, বার ও তের তারিখকে হাদিসের পরিভাষায় ‘আইয়ামে তাশরীক’ বলে। নবিজী এরশাদ করেছেন,
عن ابن عباس رضي الله عنهما: أَنَّهُ كَانَ يُكَبِّرُ مِنْ صَلاَةِ الْفَجْرِ يَوْمَ عَرَفَةَ إِلَى آخِرِ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ، ل اَ يُكَبِّرُ فِي الْمَغْرِبِ: اللَّهُ أَكْبَرُكَبِيرًا اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، اللَّهُ أَكْبَرُ وَأَجَلُّ، اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ,,,
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ আরাফার দিন তথা ৯ ই জিলহজ্বের ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন পর্যন্ত তথা ১৩ ই জিলহজ্ব [আসর নামায] পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন।
{সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৬০৭১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৬৮১}।
জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে, আর মহিলাদের জন্য নীরবে।
তাকবীর হল-
الله اكبر الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله الله اكبر الله اكبر ولله الحمد,,,
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”।
(ফাতওয়া শামী-তৃতীয় খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা, সালাত অধ্যায়, ঈদ পরিচ্ছেদ, ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা)।
তাকবিরে তাশরীকের গোড়ার কথাঃ-
সহিহ বোখারি শরিফের অন্যতম ভাষ্যকার ইমাম বদরুদ্দিন আল-আইনি রহ. এ সম্পর্কে বলেন, ‘সাইয়্যেদুনা হজরত ইবরাহিম আ. আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে স্বীয়পুত্র হজরত ইসমাইল আ. কে যখন জবেহ করতে পূর্ণ প্রস্তুত হলেন, তখন হজরত জিবরাইল আ. আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে হাবিলের কোরবানি করা দুম্বাটি নিয়ে রওনা হলেন।
তার সন্দেহ হচ্ছিল, হয়তো তিনি জমিনে পৌঁছানোর আগেই হজরত ইবরাহিম আ. জবেহের কাজ সম্পন্ন করে ফেলবেন। তাই তিনি আকাশ থেকেই উচ্চ স্বরে আওয়াজ দিয়ে বললেন,
الله اكبر الله اكبر الله اكبر
‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’।
হজরত ইবরাহিম আ. তার কণ্ঠ শুনে আকাশপানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলেন, হজরত জিবরাইল আ.- হযরত ইব্রাহিম এর ছেলে ইসমাইলের পরিবর্তে বেহেশত থেকে একটি
দুম্বা নিয়ে আসছেন।
ফলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন,
لا اله الا الله الله اكبر ,,,
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার।’
বাবার মুখে আল্লাহর একত্ববাদ ও বড়ত্বের বাণী শ্রবণে করে ছেলে ইসমাইল আ. ও আল্লাহর জালাল ও হামদ পেশ করে বললেন,
الله اكبر ولله الحمد,,,
‘আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল্ হামদ।’
কখন তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবেঃ-
আরাফার দিন, ৯ যিলহজ ফজর থেকে ১৩ যিলহজ আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর একবার তাকবিরে তাশরিক তথা—
الله اكبر الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله الله اكبر الله اكبر ولله الحمد,,,
‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ বলা ওয়াজিব।
কারা পড়বেন?:-
এটা ফরয নামাযের পর প্রত্যেক বালেগ পুরুষ, নারী, মুকিম, মুসাফির, গ্রামবাসী, শহরবাসী, জামায়াতের সঙ্গে নামায পড়ুক বা একাকি পড়ুক— প্রত্যেককেই একবার করে পাঠ করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী, বাহরুর রায়িক)।
কতবার পড়বেন?
তবে পূর্ণ তাকবিরে তাশরিক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফিকহবিদরাও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেননি। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটাকে বিদআত বলাও উচিত নয়।
(আলআওসাত, হাদীস: ২১৯৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫)
এই তাকবির তিনবার বলা সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কীভাবে তাশরিকের দিনগুলোতে তাকবির বলতেন, তা হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে একাধিকবার তাকবিরের কথা উল্লেখ নেই। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৯৮, ৫৬৯৯; আলআওসাত, হাদীস: ২১৯৮, ২২০০)
তাকবির সম্পর্কে আরো কিছু মাসআলা:-
ক. ইমাম তাকবির বলতে ভুলে গেলে ও মুক্তাদির তাকবির বলা ওয়াজিব। (ফাতওয়ায়ে শামী ১ম খণ্ড ৭৭৭ পৃষ্ঠা)
খ. পুরুষেরা তাকবির উচ্চ-মধ্যম স্বরে আর নারীরা অনুচ্চস্বরে বলবে। পুরুষ উচ্চস্বরে না পড়ে আস্তে আস্তে পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে না।
গ. মাসবুক তার নামায আদায় করে তাকবির বলবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ১ম খণ্ড-৭৮৬পৃষ্ঠা )
ঘ. যদি মুসল্লি ফরয নামাযের পর তাকবির বলতে ভুলে যায় এবং কিছু কাজ করে ফেলে যার দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যায় (যেমন মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, অথবা ভুলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা), তবে তার উপর থেকে তাকবির বলা রহিত হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া শামী ১ম খণ্ড, ৭৮৬ পৃষ্ঠা)
ঙ. আইয়ামে তাশরীকের পাঁচ দিনের মধ্যে কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে তা যদি এ পাঁচ দিনের মধ্যেই আদায় করা হয় তাহলে এ কাযা নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলতে হবে। কিন্তু পূর্বের কোনো কাযা নামায আইয়ামে তাশরীকে আদায় করলে তাকবীরে তাশরীক বলবে না।
-আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১১-৫১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯
৫.স্বচ্ছল ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা:-
১০, ১১ অথবা ১২ ই জিলহজ্বের যে কোন দিন, কোন ব্যক্তির মালিকানায় নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ,অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পুরুষ-মহিলা সকলের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য। (ফাতাওয়া শামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭ ফাতাওয়া আলমগীরী-৫/২৯২, সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬)
ফযীলত:-
ﻋﻦ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﺃﺭﻗﻢ ﻗﺎﻝ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎﻫﺬﻩ ﺍﻷﺿﺎﺣﻲ ؟ ﻗﺎﻝ ﺳﻨﺔ ﺃﺑﻴﻜﻢ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﻤﺎ ﻟﻨﺎ ﻓﻴﻬﺎ ؟ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﺣﺴﻨﺔ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻓﺎﻟﺼﻮﻑ ؟ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ، ﻗﺎﻝ ﺑﻜﻞ ﺷﻌﺮﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻮﻑ ﺣﺴﻨﺔ..ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﺑﺎﻟﺴﻨﺪ ﺍﻟﻤﺘﺼﻞ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ ( ﺭﻗﻢ : 3127 )
অনুবাদঃ-
যায়েদ বিন আরকাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা (রা.) পুনরায় বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-কুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা (রা.) আবারো প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? (এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়), তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন-ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬)।
কঠোর হুশিয়ারীঃ-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺳﻌﺔ ﻭﻟﻢ ﻳﻀﺢ ﻓﻼ ﻳﻘﺮﺑﻦ ﻣﺼﻼﻧﺎ.. ﺃﺧﺮﺝ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ﺑﺎﻟﺴﻨﺪ ﺍﻟﻤﺘﺼﻞ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ ( ﺭﻗﻢ : 3123 )
অনুবাদঃ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সক্ষমতা থাকা সত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৬)।
৬.হজ ও ওমরাহ সম্পাদন করাঃ-
হজ ও ওমরাহ এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
العُمْرَةُ إلى العُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِما بيْنَهُمَا، والحَجُّ المَبْرُورُ ليسَ له جَزَاءٌ إلَّا الجَنَّةُ,
‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ আর কবুল হজের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’
(বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; মুসলিম, হাদিস : ৩৩৫৫)।
Playtech - New Zealand's #1 supplier of gaming equipment
ReplyDeletePlaytech, an innovator kadangpintar of software herzamanindir and services for online gaming and deccasino iGaming products, have partnered www.jtmhub.com with 바카라 사이트 supplier Casino.