গোপন গোনাহ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।

Page- www.Facebook.com/hmsaiful4h

নিজেকে গোপন পাপমুক্ত  রাখতে প্রয়োজন আল্লাহর অনুগ্রহঃ-
****************************************************

ঈমান ও আনুগত্যে ভরপুর জীবন যেমন মুমিনের কাছ থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার প্রত্যাশা, তেমনি তার কাছ থেকে পাপমুক্ত এবং নিষ্কলুষ জীবনেরও প্রত্যাশা করে থাকেন মহান প্রভু। মুমিনের জীবন হবে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের পাপমুক্ত। আল্লাহ তায়ালা বলেন
 رَبَّنَاۤ اِنَّكَ تَعۡلَمُ مَا نُخۡفِىۡ وَمَا نُعۡلِنُ‌ؕ وَمَا يَخۡفٰى عَلَى اللّٰهِ مِنۡ شَىۡءٍ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَلَا فِىۡ السَّمَآءِ
হে পরওয়ারদিগার! তুমি জানো যা কিছু আমরা লুকাই এবং যা কিছু প্রকাশ করি।”আর যথার্থই আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন নেই, না পৃথিবীতে না আকাশে- সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ৩৮


বহু মানুষ এমন রয়েছে, যারা অন্যদের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত নামাজ পড়ে, দ্বিনদার, ধার্মিক, আলেম কিংবা আল্লাহ ওয়ালা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। প্রকাশ্যে তাকে পাপ কাজ করতে দেখা যায় না। কিন্তু গোপনে গোপনে তিনি নানা ধরনের গোনাহের কাজে লিপ্ত। অনেকে তো প্রকাশ্যে ভালো মানুষ হলেও গোপনে কবিরা গোনাহ করে। এটি একদিকে মুনাফেকি, অন্যদিকে ধীরে ধীরে তার আমল ও ইবাদত নষ্ট করে দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَذَرُوۡا ظَاهِرَ الۡاِثۡمِ وَبَاطِنَهٗ‌ؕ اِنَّ الَّذِيۡنَ يَكۡسِبُوۡنَ الۡاِثۡمَ سَيُجۡزَوۡنَ بِمَا كَانُوۡا يَقۡتَرِفُوۡنَ
তোমরা প্রকাশ্য গোনাহসমূহ থেকে বাঁচো এবং গোপন গোনাহসমূহ থেকেও। যারা গোনাহে লিপ্ত হয়, তাদেরকে নিজেদের সব কৃতকর্মের প্রতিফল ভোগ করতেই হবে।
সূরা আন আম, আয়াত ১২০।
গোপন পাপ কথার দ্বারাও হতে পারে, চিন্তা বা নিয়তের দ্বারাও হতে পারে, আবার কর্মের দ্বারাও হতে পারে। যেমন
ক. গোপনে গাইরুল্লাহর নাম নিয়ে পশু জবাই করা—কথার গোপন পাপ। 
খ. রিয়া বা অন্যকে দেখানোর জন্য ইবাদত করা—নিয়ত বা চিন্তার গোপন পাপ।
গ. আর অপ্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন জিনা—কর্মগত গোপন পাপ। নিজেকে ভুল-ত্রুটি ও পাপের ঊর্ধ্বে মনে করা আল্লাহ অপছন্দ করেন। যদিও তার বাস্তব জীবনে সে পাপ পরিহার করে চলে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
 قُلۡ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ الۡفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ
হে রাসুল আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা ।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩৩)।
প্রকাশ্য গোনাহের চেয়ে গোপনে করা গোনাহ বেশি ভয়াবহ। কেননা যখন কেউ গোপনে গোনাহ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় বিদায় নিয়ে নেয়। ক্রমাগত সে ধ্বংস ও অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অবস্থা কখনো এত ভয়ানক হয় যে তার ঈমান পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায় এবং ঈমানহীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বর্তমান সময়ে গোপন গোনাহের সরঞ্জাম অনেক বেশি, আর উপকরণগুলোও সহজলভ্য। তাই সমাজের মানুষ দিন দিন গোপন গোনাহে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া দ্বিনদার শ্রেণির মানুষ থেকে শুরু করে আলেমরাও বাদ পড়ছেন না। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন -
اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ یُزَکُّوۡنَ اَنۡفُسَہُمۡ ؕ بَلِ اللّٰہُ یُزَکِّیۡ مَنۡ یَّشَآءُ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ فَتِیۡلًا ﴿۴۹
আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে পবিত্রতা দান করেন। আর তাদের উপর সূতা পরিমাণও যুলুম করা হবে না। সূরা নিসা আয়াত ৪৯
আয়াতের ভাষ্য হচ্ছে, নিজেকে কেউ যেন দোষ-ত্রুটির উর্ধ্বে মনে না করে। মূলত: আত্মপ্রশংসা এবং নিজেকে ক্রটিমুক্ত মনে করা বৈধ নয়।
ইয়াহুদীরা নিজেদেরকে পবিত্র বলে বর্ণনা করত। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে তাদের অপবিত্রতা বর্ণনা করেন যে তাদের ব্যাপারে বিস্মিত হওয়াই উচিত। এতে প্রতীয়মান হয় যে, কারো পক্ষে নিজের কিংবা অন্য কারো পবিত্রতা বর্ণনা করা জায়েয নয়। এই নিষিদ্ধতার কয়েকটি কারণ রয়েছে-
(১) অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মপ্রশংসার কারণ হয়ে থাকে অহমিকা বা আত্মগৰ্ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ مُعَاوِيَةَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏ "‏ إِيَّاكُمْ وَالتَّمَادُحَ فَإِنَّهُ الذَّبْحُ ‏"‏ ‏.‏
হযরত মুআবিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : তোমরা পরস্পরের সামনাসামনি প্রশংসা করো না, কেননা তাll হত্যার সমতুল্য। [ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭৪৩
হাদিসের মান: হাসান হাদিস।
কাতাদা (রঃ)বলেন, এখানে ইয়াহুদীদেরকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। তারা নিজেদের প্রশংসায় কোন প্রকার কসুর করত না। তারা নিজেদেরকে আল্লাহর সন্তান-সন্তুতি ও তার প্রিয়পাত্র বলে দাবী করত। [তাবারী]
(২) শেষ পরিণতি সম্পর্কে শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাই অবগত যে, তা পবিত্রতা কিংবা পরহেযগারীর মধ্যেই হবে কিনা। কাজেই নিজে নিজেকে পবিত্র বলে আখ্যায়িত করা তাকওয়ার পরিপন্থি।
عَنِ الْمُغِيرَةِ، قَالَ قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ لَوْ رَأَيْتُ رَجُلاً مَعَ امْرَأَتِي لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفَحٍ‏.‏ فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏"‏ تَعْجَبُونَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ، وَاللَّهِ لأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ، وَاللَّهُ أَغْيَرُ مِنِّي، وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللَّهِ حَرَّمَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَلاَ أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْعُذْرُ مِنَ اللَّهِ، وَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ بَعَثَ الْمُبَشِّرِينَ وَالْمُنْذِرِينَ وَلاَ أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ الْمِدْحَةُ مِنَ اللَّهِ وَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ وَعَدَ اللَّهُ الْجَنَّةَ ‏"‏‏.‏ وَقَالَ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ ‏"‏ لاَ شَخْصَ أَغْيَرُ مِنَ اللَّهِ ‏"‏‏.‏
হযরত মুগীরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, সা’দ ইব্‌নু ‘উবাদাহ (রাঃ) বললেন, আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোন পুরুষকে যদি দেখি, তাকে সরাসরি তরবারি দিয়ে হত্যা করব। এ কথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি সাদের আত্মমর্যাদাবোধ দেখে বিস্মিত হচ্ছ? 
আল্লাহ্‌র শপথ! আমি তার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। আর আল্লাহ্ আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। আল্লাহ্ আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হবার কারণে প্রকাশ্য ও গোপনীয় (যাবতীয়) অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন। অক্ষমতা প্রকাশকে আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক পছন্দ করেন এমন কেউই নেই। আর এজন্য তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতাদেরকে পাঠিয়েছেন। আত্মপ্রশংসা আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক কারো কাছে প্রিয় নয়। তাই তিনি জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন। 
[মুসলিম পর্ব ১৯/হাঃ ১৪৯৯, আহমাদ ১৮১৯২১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৮৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১১)।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৪১৬
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।
এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহা তার মাতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? তখন যেহেতু আমার নাম ছিল بَرَّة (বাররাহ বা পাপমুক্ত), কাজেই আমি তাই বললাম। তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে পাপমুক্ত বলে বর্ণনা করো না। কারণ,
একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই জানেন, তোমাদের মধ্যে কে পবিত্র। অতঃপর বাররাহ নামটি পাল্টিয়ে তিনি যয়নব রেখে দিলেন। [বুখারীঃ ৫৮৩৯, মুসলিমঃ ২১৪১]।
নিষিদ্ধতার আরেক কারণ হল, মানুষ জানে না তার কৃত আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে কিনা। কেননা, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَىٰ رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ
‘আর যারা তাদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা দেয় এমতাবস্থায় যে, তাদের অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত এজন্যে যে তারা তাদের রব এর কাছে প্রত্যাবর্তন করবে’। [সূরা আল-মু'মিনূনঃ ৬০]
যখন এ আয়াত নাযিল হল, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম তারা কি ঐ সম্প্রদায় যারা মদ খায় এবং চুরি করে? তিনি বললেন, না, হে সিদ্দিকের মেয়ে! তারা হল ঐ সমস্ত ব্যক্তি যারা সালাত-সাওম আদায় করে এবং ভয় করে এ আশায় যে তাদের থেকে ইবাদত কবুল করা হবে না। [তিরমিযীঃ ৩১৭৫, ইবন মাজাহঃ ৪১৯৮, মুসনাদে আহমাদঃ ৬/১৫৯]।
সুতরাং, ইয়াহুদীরা নিজ মুখেই নিজেদের বড়াই ও প্রশংসা করত। যেমন তারা বলত, আমরা আল্লাহর পুত্র এবং তাঁর প্রিয়পাত্র ইত্যাদি। আল্লাহ বললেন, কাউকে প্রশংসাভাজন ও পবিত্র করণের কাজও আল্লাহর এবং কে পবিত্র তা তিনিই জানেন।
পাপমুক্ত হতে প্রয়োজন আল্লাহর অনুগ্রহ। মানব প্রকৃতিতে পাপের প্রবণতা রয়েছে। সমাজ ও পারিপার্শ্বিকতাও মানুষকে পাপে উৎসাহিত করে। তাই আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ ছাড়া কেউ পাপের পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হতে পারবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইউসুফ (আ.)-এর ভাষ্যে মানুষের অক্ষমতা ও তাঁর অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে-
وَمَاۤ اُبَرِّئُ نَفۡسِىۡ‌ۚ اِنَّ النَّفۡسَ لَاَمَّارَةٌۢ بِالسُّوۡٓءِ اِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّىۡ ؕاِنَّ رَبِّىۡ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ‏‏‏
‘আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয়ই মানুষের মন মন্দ কাজপ্রবণ, কিন্তু সে নয় যার প্রতি তার প্রতিপালক দয়া করেন। নিশ্চয়ই আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৫৩)।
আল্লামা ইবনে জাওজি (রহ.) বলেন, ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি সে, যে মানুষের সামনে ভালো আমল করে, কিন্তু যে মহান সত্তা তার শাহ রগ থেকেও অধিক নিকটবর্তী, তার সামনে বদ আমল করে।’ বলা হয়, ‘গোপন গোনাহ ও অবাধ্যতার কারণে মানুষের খারাপ মৃত্যু (অপমৃত্যু) হয়।’


যেসব আমল পাপমুক্ত থাকতে সহায়কঃ-
ভালো কাজের চর্চা মানুষকে মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখে। তাই ইসলাম ধর্মে মানুষকে বেশি বেশি নেক আমল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব পুণ্যের কাজই পাপ থেকে বিরত থাকার শক্তি জোগায়। তবে বিশেষজ্ঞ আলেমরা বিশেষ কিছু আমলের কথা বলেন—যা মানুষকে পাপ থেকে বেঁচে থাকতে বেশি সহায়তা করে। তার কয়েকটি হলো-
আল্লাহকে ভয় করা,
নামাজ আদায় করা,
দৃষ্টি সংযত রাখা,
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা,
বাহ্যিক পবিত্রতা রক্ষা করা,
মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা জাগ্রত করা,
পরকালকে স্মরণ করা,
পাপমুক্ত জীবনের প্রার্থনা করা।

১. আল্লাহকে ভয় করাঃ-
আল্লাহর ভয় বা তাকওয়ার অর্থ নিজের ভেতর এই বিশ্বাস জাগ্রত করা যে আমি যা করছি তার সব কিছু আল্লাহ দেখছেন এবং কোনো কিছুই তার দৃষ্টির আড়ালে নয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং মুসলিম (আল্লাহর অনুগত) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)

২. নামাজ আদায় করাঃ-
নামাজ মুমিন বান্দাকে পাপ থেকে বিরত রাখে। যথাযথভাবে নামাজ আদায় করলে ব্যক্তির মন থেকে পাপ ইচ্ছা দূর হয়। আল্লাহ বলেন, ‘নামাজ কায়েম কর। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ১৪৫

৩. দৃষ্টি সংযত রাখাঃ-)
অসৎ ও অসংযত দৃষ্টি মানুষের কুপ্রবৃত্তি জাগিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনেও মুমিন নর-নারীকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের বলুন! তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)

৪. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ-
ক্ষমা প্রার্থনা আল্লাহর প্রিয় আমল। কোনো বান্দা যখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হন। ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন এবং জীবনের সংকীর্ণতা দূর করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৮১৯)

৫. বাহ্যিক পবিত্রতা রক্ষা করাঃ-
বাহ্যিক পবিত্রতা মানুষকে আত্মিক পবিত্রতা অর্জনে সহায়ক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীকে পছন্দ করেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)
বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় মানুষের বাহ্যিক পবিত্রতার সঙ্গে আত্মিক পবিত্রতার সম্পর্ক রয়েছে। ফলে উভয়টির ব্যাপারে ‘ভালোবাসেন’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।

৬. মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা জাগ্রত করাঃ-
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে পাপের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘কাউকে যদি তার মন্দ কাজকে সুশোভিত করে দেখানো হয় এবং সে তাকে ভালো মনে করে, সে কি তার সমান যে ভালো কাজ করে?’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৮)

৭. পরকালকে স্মরণ করাঃ-
পরকালের স্মরণ মানুষকে পাপ থেকে বিরত রাখে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পরকালের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে অসৎ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদের বলা হবে, তোমরা যা করতে কেবল তারই প্রতিদান তোমাদের দেওয়া হচ্ছে।’ (সুরা নামল, আয়াত : ৯০)

৮. পাপমুক্ত জীবনের প্রার্থনা করাঃ-
সব নবী ও রাসুল (আ.) ছিলেন পাপ-পঙ্কিলতার ঊর্ধ্বে। তার পরও রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার পাপগুলোর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আমাকে গুনাহ এমনভাবে পরিষ্কার করে দেন, যেমন সাদা কাপড় ধুলে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপগুলো থেকে ধুয়ে (পবিত্র করুন) দিন। পবিত্র করুন বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৪)।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গোনাহ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।            


Comments