মালাকুল মাউত এর পরিচয়, আকৃতি ও কার্যাবলীঃ-
**********************************************
ফেরেশতারা এমন নুরানি মাখলুক, যারা বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন এবং তারা কখনো আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেন না, বরং সর্বদা আল্লাহর নির্দেশ পালনে রত থাকেন। বস্তুত ফেরেশতারা নূর বা জ্যোতি থেকে সৃষ্ট। তাদের নিজস্ব জগতে তাদের আকার আকৃতি আছে কিন্তু বান্দার কাছে তাদের প্রকাশ্য কোনো আকার আকৃতি নেই। তবে তারা বিভিন্ন আকার ধারণ করতে পারেন।
তারা পুরুষও নন, মহিলাও নন। তাঁরা আল্লাহর নির্দেশ পরিপন্থী কোন কাজ করতে পারেন না। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁদের দ্বারা বহু কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।
যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী- রাসূলগণের নিকট অহি (প্রত্যাদেশ) পৌঁছানোর দায়িত্বে হযরত জিবরাঈল আলায়হিস্ সালাম, বৃষ্টি-বাদলের দায়িত্বে হযরত মিকাঈল আলায়হিস্ সালাম, ক্বিয়ামত কায়েমের লক্ষ্যে সিঙ্গায় ফুৎকারের কাজে হযরত ইসরাফিল আলায়হিস্ সালাম এবং জীবের জান কবজের কাজে নিয়োজিত হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম নিয়োজিত আছেন।
মালাকুল মাউত আযরাঈল (আ.)’র পরিচয়ঃ-
মালাকুল মাউত একজন ফিরিশতা। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে রুহ কব্জ করার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
﴿ قُلۡ يَتَوَفّٰٮكُمۡ مَّلَكُ الۡمَوۡتِ الَّذِىۡ وُكِّلَ بِكُمۡ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمۡ تُرۡجَعُوۡنَ﴾
হে রাসুল আপনি এদেরকে বলে দিন, “মৃত্যুর যে ফেরেশতাকে তোমাদের ওপর নিযুক্ত করা হয়েছে সে তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবজায় নিয়ে নেবে এবং তারপর তোমাদেরকে তোমাদের রবের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে। -সুরা সাজদা : ১১
সেই ফিরিশতার নাম হযরত আযরাইল আলাইহিস সালাম। পৃথিবীর পূর্ব সীমান্ত থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত তিনি এক পদক্ষেপেই অতিক্রম করতে পারেন। গোটা পৃথিবী হযরত আযরাইল আ. এর কাছে সেই ছোট পেয়ালা বা তশতরির মতো; যার মাঝে বিভিন্ন রকমের দানা রাখা আছে। তিনি যখন যে দানা ইচ্ছে সেখান থেকে উঠিয়ে নিতে সক্ষম।
কারো কারো অভিমত হলো, গোটা পৃথিবী আযরাইলের চোখের সামনে রয়েছে। যে কোনো রুহ বা আত্মাকে ডাকামাত্র তার সামনে এসে হাজির হয়ে যায়। মূল- আল্লামা ইদরিস কান্ধলভি রহ.।
হযরত আযরাঈলকে রূহ কবজের জন্য নিযুক্ত করার কারণঃ-
আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বপ্রথম জমিন থেকে কিছু খামিরা আল্লাহর কাছে আনার জন্য হযরত জিবরাঈলকে (আ.) প্রেরণ করলেন। হযরত জিব্রাঈল(আ.) পৃথিবীতে এসে যেই মাত্র খামিরা নিতে যান, অমনিই পৃথিবী আল্লাহর দোহাই দিয়ে বসলো। তাই হযরত জিবরাইল (আ.) খামিরা না নিয়ে ফিরে যান।
অতঃপর হযরত মিকাইলকে (আ.) পাঠালেন। খামিরা তার থেকেও আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলো। তাই হযরত মিকাঈল আলায়হিস্ সালামও তা ছেড়ে দিলেন।
অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালামকে পাঠালেন। খামিরা মালাকুল মাউত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাইল। কিন্তু হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম দোহাই না শুনে খামিরা নিয়ে আল্লাহর দরবারে পৌঁছলেন। আল্লাহ আযরাঈলকে জিজ্ঞেস করলেন, জমিন কি খামিরা নেয়ার সময় তোমার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমার দোহাই দেয়নি?
হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহ্ বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তাকে দয়া করলে না কেন? যেমন দয়া করেছে তোমার দু’বন্ধু জিব্রাঈল ও মিকাঈল?’’ হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম তখন উত্তরে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তোমার আদেশ পালন করাতো আমার উপর ফরজ ছিল, তার প্রতি কিভাবে দয়া করব?’’
তখন আল্লাহ্ বলেন, যাও, তোমাকেই মালাকুল মাউত হিসেবে নির্ধারিত করলাম এবং তাদের রূহ কবজ করার অধিকার দিলাম।’’
তা শুনে হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম কেঁদে ফেললেন। আল্লাহ্ কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে, উত্তরে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ্ তুমি তো এখান থেকে আম্বিয়া, রাসূল ও সুফীগণকে সৃষ্টি করবে। আর তুমি তাঁদের কাছে মৃত্যুর চেয়ে অন্য বস্তু এত অপ্রিয় করনি। যখন তারা আমাকে চিনে ফেলবেন। আর তখন আমাকে গালি দেবে।
তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমি মৃত্যুর পূর্বে নানা অসুখ এবং দুর্ঘটনা জনিত কারণ সৃষ্টি করে দেবো। তখন তারা তোমাকে দায়ী না করে ওই অসুখ ও দুর্ঘটনাকে দায়ী করবে।’’
ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, তাই আল্লাহ্ মৃত্যুর পূর্বে নানা রোগ শোক ও দুর্ঘটনা সৃষ্টি করেছেন।’’[আত্তাযকিরাহ্ পৃষ্ঠা-৭৯]।
মালাকুল মাওতের আকৃতি ও দায়িত্বঃ-
উমাইয়া খলিফা হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় বন্ধুদের প্রতি হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালামের কাজ সম্পর্কে অসিয়ত নামায় নিম্নরূপ বর্ণনা উপস্থাপন করেন-
১. আমার কাছে এইমর্মে হাদীস পৌঁছেছে যে, (আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ ও সর্বকৌশলী) মালাকুল মাউত তথা হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম’র মাথা হলো আকাশে, তাঁর দু’পা ঠেকেছে জমিনে। সমগ্র পৃথিবী আযরাঈলের কাছে এত ছোট যেন কোন লোক একটি বাসন নিয়ে খানা খাচ্ছে।
২. আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম প্রতিটি লোকের প্রতিটি গৃহের প্রতি ছয়শত বার দৃষ্টিপাত করে।
৩. হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম দুনিয়ার মধ্যখানে দাঁড়ানো আছেন। তিনি এক নজরে দুনিয়ার জল, স্থল, পাহাড়, পর্বত সবকিছু একসাথে দেখেন।
৪. হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম-এর অনেক সাহায্যকারী ফিরিশতা আছেন, যাঁদের সংখ্যা আল্লাহ্ তা‘আলা ভালো জানেন। তাঁদের এক একজনের এমন হজমশক্তি আছে, যদি তাঁদের হুকুম করা হয় যে, আসমান-জমিন এক লোকমায় খেয়ে ফেলো, তাহলে একাই এক লোকমায় আসমান-জমিন হজম করে ফেলতে পারবে।
৫. অন্যান্য ফিরিশতা হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালামকে এমনভাবে ভয় পায়- যেমন ভয় পায় তোমাদের কেউ বনের হিংস্র পশু দেখে।
৬. হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম যদি আরশ বহনকারী কোন ফিরিশতার কাছাকাছি যান, তাহলে তাঁরা তাঁর ভয়ে লবনের মত গলে চুলের মত সূক্ষ্ম হয়ে যাবে।
৭. হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম বনী আদমের রূহ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, নখ, চুল, রগ থেকে বের করে নিয়ে আসবে। রূহ এক গ্রন্থি থেকে অন্য গ্রন্থিতে পৌঁছলে মৃত্যুযাত্রীর কাছে তা একহাজার তলোয়ারের আঘাতের চেয়েও কঠিন মনে হবে। মৃত্যুযাত্রীর একটি চুলের ব্যথা যদি আসমান জমিনে রাখা হয়, তাহলে আসমান-জমিন গলে যাবে। রূহ যখন কন্ঠদেশে পৌঁছে, তখন হযরত আযরাঈল আলায়হিস সালাম রূহকে ধরে ফেলে।
ঈমানদারের রূহ কব্জ করার পর সাদা রেশমী রুমালে তা রাখা হয়। যার সুগন্ধি অত্যন্ত চমৎকার ও ব্যাপকতর।
পক্ষান্তরে কাফিরদের রূহ কবজের পর তা কালো খসখসে মোটা পশমী কাপড়ে রাখা হয়, মনে হয় যেন রৌদ্রে শুকিয়ে ঠনঠনে করে রাখা হয়েছে। ঐ রূহ থেকে মৃত জন্তুর (অসহ্যকর) দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। [ইমাম নববী (রাহ.) রচিত তায্কিরাহ্: পৃষ্ঠা ২৬]।
এখানে প্রথমে ছোট মৃত্যু বা ঘুমের কথা, পরে বড় মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
اللَّهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا ۖ فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ,,,
আল্লাহ্ই জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু আসেনি তাদের প্রাণও হরণ করেন নিদ্রার সময়। তারপর তিনি যার জন্য মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন, এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তা করে।
তাফসীরে توفى এর শাব্দিক অর্থ লওয়া ও করায়ত্ত করা। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, প্রাণীদের প্রাণ সর্বাবস্থায় ও সর্বক্ষণই আল্লাহ্ তা’আলার আয়ত্ত্বাধীন। তিনি যখন ইচ্ছা তা হরণ করতে বা ফিরিয়ে দিতে পারেন।
আল্লাহ তা’আলার এ কুদরত প্রত্যেক প্রাণীই প্রত্যেকদিন দেখে ও অনুভব করে। নিদ্রার সময় তার প্রাণ আল্লাহ তা’আলার করায়ত্তে চলে যায় এবং ফিরিয়ে দেয়ার পর জাগ্রত হয়। অবশেষে এমন এক সময় আসবে, যখন তা সম্পূর্ণ করায়ত্ত হয়ে যাবে এবং ফিরে পাওয়া যাবে না।
প্রাণ হরণ করা অর্থ তার সম্পর্ক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। কখনও বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবদিক দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়, এরই নাম মৃত্যু।
আবার কখনও শুধু বাহিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়। আভ্যন্তরীণভাবে যোগাযোগ ঠিক থাকে। এর ফলে কেবল বাহ্যিকভাবে জীবনের লক্ষণ, চেতনা ও ইচ্ছাভিত্তিক নড়াচড়ার শক্তি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং আভ্যন্তরীণ দিক দিয়ে দেহের সাথে প্ৰাণের সম্পর্ক বাকী থাকে। ফলে সে শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করে ও জীবিত থাকে।
আলোচ্য আয়াতে توفى শব্দটি উপরোক্ত উভয় প্রকার প্রাণ হরণের অর্থকেই অন্তর্ভুক্ত করে। এখানে প্রথমে বড় মৃত্যুর কথা পরে ছাোট মৃত্যু বা ঘুমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের অন্যত্রও দু’ধরনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُم بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُم بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَىٰ أَجَلٌ مُّسَمًّى, ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ,,,
“তিনিই রাতে তোমাদের মৃত্যু ঘটান এবং দিনে তোমরা যা কর তা তিনি জানেন। তারপর দিনে তোমাদেরকে তিনি আবার জীবিত করেন যাতে নির্ধারিত সময় পূর্ণ হয়। তারপর তাঁর দিকেই তোমাদের ফিরে যাওয়া। তারপর তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন।” [সূরা আল-আন’আম: ৬০]।
মোটকথা: এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মানুষকে এ অনুভূতি দিতে চাচ্ছেন যে, জীবন ও মৃত্যু কিভাবে তাঁর অসীম ক্ষমতার করায়ত্ব। শয়নে, জাগরণে, ঘরে অবস্থানের সময় কিংবা কোথাও চলাফেরা করার সময় মানব দেহের আভ্যন্তরীণ কোন ক্ৰটি অথবা বাইরের অজানা কোন বিপদ অকস্মাৎ এমন মোড় নিতে পারে যা তার মৃত্যু ঘটাতে পারে। যে মানুষ আল্লাহর হাতে এতটা অসহায় সে যদি সেই আল্লাহ সম্পর্কে এতটা অমনোযোগী ও বিদ্রোহী হয় তাহলে সে কত অজ্ঞ আর কত অকৃতজ্ঞ?
সে জন্যই রাসূল (সাঃ) ঘুমাবার আগে এবং ঘুম থেকে উঠে যে দো’আ করতেন তাতে রূহ ফেরত পাওয়ায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। হাদীসে এসেছে, তিনি ঘুমাবার সময় বলতেন,
اللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَ أَخْيَا,,,
“হে আল্লাহ! আপনার নামেই আমি মারা যাই এবং জীবিত হই।”
আর যখন ঘুম থেকে জাগতেন তখন বলতেন,
الْحَمْدُللّٰهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ,,,
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে আমাদের মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করেছেন। আর তাঁর কাছেই আমরা উত্থিত হবো।” [বুখারী: ৬৩১২]।
এখানে সেরা সৃষ্টি হিসাবে ‘মানুষ’কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্য সকল সৃষ্টি শামিল রয়েছে। ‘মালাকুল মউত’ আযরাঈল একক ফেরেশতা হ’লেও তার সাহায্যকারীদের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,
فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمْ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ-
‘তাদের অবস্থা কেমন হবে যখন ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করবে তাদের মুখ ও ফিটের ওপর আঘাত করতে করতে নিয়ে যাবে।’ (মুহাম্মাদ ৪৭/২৭)।
আল্লাহ ফেরেশতাদের অসীম ক্ষমতা দান করেছেন, যা মানুষের ক্ষমতার সঙ্গে তুলনীয় নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لَّا يَعۡصُوۡنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُوۡنَ مَا يُؤۡمَرُوۡنَ﴾,,
তারা আল্লাহর কখনো অবাধ্যতা করেন না এবং সর্বদা তাঁর হুকুম পালনে প্রস্ত্তত থাকেন (তাহরীম ৬৬/৬)।
মালাকুল মউত অন্যান্য প্রাণীর জান কবয করেন না বলে যে বর্ণনা রয়েছে তা মওযূ বা জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৬৯৩)।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا مِنْ بَيْتٍ إِلا وَمَلَكُ الْمَوْتِ يَقِفُ عَلَى بَابِهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ، فَإِذَا وَجَدَ الإِنْسَانَ قَدْ نَفِدَ أَكْلُهُ، وَانْقَطَعَ أَجَلُهُ، أَلْقَى عَلَيْهِ غَمَّ الْمَوْتِ فَغَشِيَتْهُ كُرُبَاتُهُ، وَغَمَرَتْهُ سَكَرَاتُهُ، فَمِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ النَّاشِرَةُ شَعَرَهَا، وَالضَّارِبَةُ وَجْهَهَا، وَالْبَاكِيَةُ لِشَجْوِهَا، وَالصَّارِخَةُ بِوَيْلِهَا.
فَيَقُولُ مَلَكُ الْمَوْتِ عَلَيْهِ السَّلامُ: وَيْلُكُمْ مِمَّ الْفَزَعُ؟ وَفِيمَ الْجَزَعُ؟ وَاللَّهِ مَا أَذْهَبْتُ لِوَاحِدٍ مِنْكُمْ رِزْقًا، وَلا قَرَّبْتُ لَهُ أَجَلا، وَلا أَتَيْتُهُ حَتَّى أُمِرْتُ، وَلا قَبَضْتُ رُوحَهُ حَتَّى اسْتَأْمَرْتُ، وَإِنَّ لِي فِيكُمْ عَوْدَةً ثُمَّ عَوْدَةً، حَتَّى لا أُبْقِيَ مِنْكُمْ أَحَدًا.,,
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মালাকুল মাউত সম্পর্কে বর্ণনা করেন- প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ‘‘এমন কোন ঘর নেই, যে ঘরের দরজায় মালাকুল মাউত দিনে পাঁচবার না দাঁড়ায়। যখন সে দেখে যে, কোন মানুষের রিযিক শেষ হয়ে গিয়েছে এবং নির্ধারিত সময় ফুরিয়ে এসেছে, তখন তার উপর মৃত্যুর যন্ত্রণা বর্তিয়ে দেয়। তখন মৃত ব্যক্তিকে তার মৃত্যু যন্ত্রণা ও বেদনা ঢেকে ফেলে। ঘরের স্ত্রী তখন চুল ছিড়ে, কপাল চাপড়ায়, শোকে কান্নাকাটি করে এবং চিৎকার করে বিলাপ করে।
তখন মালাকুল মাউত বলতে থাকে- তোমাদের সর্বনাশ হোক- কেন এত ভয়-ভীতি, কেন এত আহাজারি! আমিতো কারো রিযিক কেড়ে নিইনি, কারো মৃত্যুকালও এগিয়ে আনিনি, আল্লাহর আদেশ ছাড়াও আসিনি এবং নির্দেশ ছাড়া তার রূহ কব্জ করিনি। আমি তোমাদের সবার কাছে বারবার ফিরে আসবো। এমনকি তোমাদের একজনকেও ছাড়বো না।’’
[হাদীসে মাশহুর এবং অর্থগত মারফু, (আরবাঈন)]
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা বলেন-
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَوَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْ يَرَوْنَ مَكَانَهُ وَيَسْمَعُونَ كَلامَهُ لَذَهِلُوا عَنْ مَيِّتِهِمْ، وَلَبَكَوْا عَلَى نُفُوسِهِمْ، حَتَّى إِذَا حُمِلَ الْمَيِّتِ عَلَى نَعْشِهِ رَفْرَفَتْ رُوحُهُ فَوْقَ النَّعْشِ وَهُوَ يُنَادِي بِأَعْلَى صَوْتٍ: يَا أَهْلِي وَيَا وَلَدِي، لا تَلْعَبَنَّ بِكُمُ الدُّنْيَا كَمَا لَعِبَتْ بِي وَلا تَغُرَّنَّكُمْ كَمَا غَرَّتْنِي، جَمَعْتُ الْمَالَ مِنْ حِلِّهِ وَمِنْ غَيْرِ حِلِّهِ ثُمَّ خَلَّفْتُهُ لِغَيْرِي، فَالْمَهْنَأَةُ لَهُ وَالتَّبِعَةُ عَلَيَّ فَاحْذَرُوا مِثْلَ مَا حَلَّ بِي,,,
যার হাতে মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রাণ, আল্লাহর শপথ যদি ঘরের লোকেরা যদি মালাকুল মাউতের বাস্তব আকৃতি দেখতো, অথবা তার কথা শুনতো, তাহলে তারা মৃত ব্যক্তির কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের ব্যাপারে বেশি কান্নাকাটি করতো।’’
[আবু মুতি মাকহুল ইবনে ফজর নসফি তাঁর ‘লু লুইয়াত’ গ্রন্থে এ হাদীস খানা সংকলন করেছেন]
পরকালীন স্থায়ী শান্তি লাভের মানসে সকলকে মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য ভাল কাজ কারা একান্ত অপরিহার্য।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বেশী বেশী আমল করার জন্য তৌফিক দান করুন।
Comments
Post a Comment