ধর্মীয় দৃষ্টিতে চলমান ফিতনা "মূর্তি ও ভাস্কর্য" এর মধ্যে পার্থক্য।

চলমান ইস্যু ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে পার্থক্য।
মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ।
এদেশের আলেমরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত হিতাকাঙ্খী। কেননা আমরা আলেমরা চাই না যে, ‘যিনি আমাদেরকে এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন, তার কবরে এ ভাস্কর্যকে উসিলা করে আজাব হোক।’
কিছু অজ্ঞলোক আছে তারা বলছে, ‘হুজুরেরা কেন ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে! এটাতো মূর্তি না। এটাতো ভাস্কর্য। ভাস্কর্য ও মূর্তি তো এক না। মূর্তি তো তাকে বলে যার পূজা মানুষ করে। আমাদের এটার পূজা তো কেউ করবে না। আমরা শুধু এটা স্মৃতি ধরে রাখার জন্য দাঁড় করিয়ে রাখব। আমরা এটার কোন পূজা করবো না। মূর্তি তো বলা হয় হিন্দুরা যেটার পূজা করে। যেটাকে বানানোই হয় প্রতিমা হিসেবে।’
তারা এমন একটি ব্যাখ্যা দিয়ে ভাস্কর্য ও মূর্তি কে আলাদা করতে চায়। তারা এসব বলে এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য তৈরী করতে চায়। এর পাশাপাশি উলামায়ে কেরামের বক্তব্যকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে এবং তাদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতের আন্দোলন বলে চালিয়ে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এবং উলামায়ে কেরামকে দেশবিরোধী বলে দাঁড় করাতে চায়।
"ভাস্কর্য ও মূর্তির মাঝে কোন পার্থক্য নাই। এ দুটি এক ও অভিন্ন। ‘যেকোনোভাবে কোন মানুষের আকৃতিকে কোন কিছুর মাধ্যমে যদি এমনভাবে দাঁড় করানো হয়, যেটার ছায়া পরে। সেটাকে ইসলামে মূর্তি বলে।’ চাই মানুষ এর পূজা করুক আর নাই করুক। সেটা মানুষ স্মৃতি ধরে রাখার জন্য বানাক কিংবা পূজা করার জন্য।
আমরা উলামায়ে কেরামগণ এই ভাস্কর্য বা মূর্তির বিরোধিতা করছি কোন বিদ্বেষের কারণে নয়। কিংবা কারো পক্ষ নিয়ে নয়।
আল্লাহর শপথ করে বলছি! আমরা এই কারণে এ ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি এটি তৈরি করেন, তাহলে তার শ্রদ্ধেয় পিতা,
বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে এর জন্য আল্লাহ আজাব দিবেন। যিনি আমাদের এই দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন তার কবরকে আজাবে ফেলতে চাই না। আমরা শুধু তাঁর কবরকে আজাব থেকে বাঁচাতে চাচ্ছি। মূর্তি থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে চাচ্ছি। এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।
আপনাদের যদি একথা বিশ্বাস না হয়, তাহলে আপনারা আমাদের কোনো হক্কানি ওলামায়ে কেরামের ভাস্কর্য বানিয়ে দেখেন। আপনারা আল্লামা থানভী, আল্লামা মাদানী, হাফেজ্জী হুজুর, আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী কিংবা অন্য কোন বুযুর্গের ভাস্কর্য বানিয়ে দেখেন। এই ভাস্কর্য ভাঙার জন্য সর্বপ্রথম উলামায়ে দেওবন্দকে আপনারা মাঠে দেখতে পাবেন। আমরাই এ ভাস্কর্যকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দেব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করুন, তিনি আপনার পিতা বলে কিংবা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা বলে তার ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছি না। আমাদের কোন মুরুব্বি কিংবা আকাবিরের ভাস্কর্য হলেও আমরা সেটার বিরোধিতা করবো। এমন কি আরো কঠোরভাবে বিরোধিতা করবো।
দেখুন, বর্তমান সময়ে মানুষ যেমন ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি বানায় এর চেয়েও সুন্দর ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি বানাতে পারত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সময়ের মানুষজন। প্রায় প্রত্যেক ঘরে মূর্তি ছিল। তারা মূর্তি বানাতে ছিল বেশ দক্ষ। যদি ভাস্কর্য বানালে কোন সমস্যা না থাকতো, যদি ভাস্কর্য মূর্তির মাঝে পার্থক্য থাকতো, তাহলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো বলতেন যে, তোমরা কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সঙ্গে আমার একটি ভাস্কর্য বানিয়ে রেখে দাও যেটা কেয়ামত পর্যন্ত মানুষ দেখে দেখে মন জুড়াতে পারে। আমার স্মৃতি যেন অব্যাহত থাকে। অটুট থাকে যেন আমার স্মৃতিচিহ্ন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটা করেননি। কেন করেননি? যদি এর মধ্যে কোন সমস্যা না থাকতো তাহলে কেন তিনি নিজের ভাস্কর্য বানালেন না? 
অথচ বর্তমান সময়ের ভাস্কর্য শিল্পীদের চেয়ে তাদের মান ছিল কয়েক হাজার গুণ বেশি। এরপরও কেন হয়নি আমার বিশ্ব নবীর ভাস্কর্য? না হওয়ার কারণ হলো, আমার নবীর আগমন হয়েছিল পৃথিবীতে মূর্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। কাবা ঘরের পাশে যে সব মূর্তি ছিল সেগুলোকে তিনি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, সত্য এসেছে মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। আমি এসেছি সত্য নিয়ে, মিথ্যার আভা আমি পৃথিবীতে থাকতে দেব না। সুতরাং বিশ্ব নবীর আগমন হয়েছিল ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি প্রতিস্থাপনের জন্য নয় নিশ্চিহ্ন করার জন্য। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এ আন্দোলনকে কোন রাজনৈতিক ইস্যু মনে করবেন না। আপনাদের দলের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো কোন আন্দোলন মনে করবেন না। এটি সম্পূর্ণ ধর্মীয় একটি আন্দোলন। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক শুধু ইসলামের ও ইমানের।
এই দেশ মুসলমানের দেশ। লাখো আউলিয়ার দেশ। শাহ জালালের দেশ। শাহপরানের দেশ। শামসুল হক ফরিদপুরীর দেশ। শাহ মাখদুমের দেশ। এদেশ মূর্তির দেশ হতে পারেনা। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এটা কখনো মেনে নেবে না।
আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, উলামায়ে কেরামের বক্তব্যকে বিকৃত করে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান তারা সাবধান হয়ে যান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন মহান নেতা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি। তার নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণেই আমাদের ছেলেমেয়েরা স্বাধীন দেশে বাস করতে পারছে। আমরা স্বাধীন দেশে নিশ্বাস নিতে পারছি। আমরা তার কোনো অবদানকে কোনভাবেই ছোট করিনি, করবোও না। যারা আমাদের বক্তব্যকে বিকৃত করছে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করছে। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব করছে।
সবশেষে আমরা উলামায়ে কেরামগণ মন উজাড় করে বলে দিতে চাই, যদি দেশের জন্য প্রয়োজন হয় নিজের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিব। যদি প্রয়োজন হয় যুদ্ধ জিহাদ করব। এমনকি ওলামায়ে কেরাম সেই জিহাদের প্রথম কাতারে থাকবেন। কিন্তু দেশপ্রেমের কথা বলে আমরা মূর্তির পক্ষপাতিত্ব করতে পারবো না।
মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয়।
মাওলানা জিয়াউল হাসান। 

ভাস্কর্য স্থাপনকে মূর্তি স্থাপনের স’ঙ্গে তুলনা করে এটাকে শিরক সংস্কৃতি বা বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে আখ্যা দেওয়াকে মামার বাড়ির আবদার বলে মনে করে বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান। তিনি বলেন, ‘মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয়।’

বাঙালি সংস্কৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতি নয়, এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিতে যেসব জিনিস শিরক বা আল্লাহর স’ঙ্গে অংশীবাদিতার মিশ্রণ ছাড়াই পালিত হয়ে আসছে, সেটিকে হঠাৎ করে শিরক সংস্কৃতি বলা নোং’রা রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়।

বুখারি শরিফের শুরুতেই রয়েছে—বিখ্যাত হাদিস, “ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়্যাত”। মূর্তি বা ভাস্কর্য মানেই শিরকের উপকরণ নয়। হযরত আয়শা (রা.)-এর ঘরে ঘোড়ার ছোট মূর্তি রাখা ছিল।
(সূত্র: বুখারি শরিফ-কিতাবুল আদাব)।

কই, রসূল (সা.) তাকে তো নি’ষেধ করেননি। এই ছোট পুতুল বা মূর্তি পূজার জন্য ছিল না; বরং খেলার জন্য ছিল। তাই রসূল (সা.) নিষেধ করেননি। একইভাবে যেসব ভাস্কর্য সৌন্দর্য্য চর্চা ও রুচিশীলতার পরিচয় বা ঐতিহাসিক কোনও ঘটনার স্মৃতিফলক হিসেবে স্থাপিত হয়, তা ইসলামি শিক্ষানুযায়ী নিষিদ্ধ নয়।’
মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, 
ভাস্কর্য, প্রতিমা, পূজা, মূর্তি—এক জিনিস নয়। পবিত্র কোরআনের সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতে ভাস্কর্য নির্মাণের উল্লেখ করে বলা হয়েছে
“উহারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্যসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত ডেগ নির্মাণ করিতো। আমি বলিয়াছিলাম, হে দাউদ-পরিবার, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তোমরা কাজ করিতে থাক। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ”।
প্রতিমা পূজার ব্যাপরে পবিত্র কুরআনের সূরা ইব্রাহীমের ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—
“স্মরণ কর, ইব্রাহিম বলিয়াছিলেন, হে আমার প্রতিপালক, এই নগরীকে নিরাপদ করিও এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে প্রতিমা পূজা হইতে দূরে রাখিও।”
সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতের তামাসিলা (ভাস্কর্য) এবং সূরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতের আসনাম (প্রতিমা পূজা) এই দুটি শব্দের অর্থকে বিকৃত করে যারা একই অর্থে মূর্তিকে ভাস্কর্য বানাতে চাচ্ছেন, অনুগ্রহ করে কোরআনের শব্দের অর্থকে ভুল ব্যাখ্যা করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করবেন না। কারণ এ দেশের মানুষ আপনাদের ‘৭১ সালেও চিনতে ভুল করেনি, এখনও করবে না। ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার, একাত্তরের মহান মুক্তিযু’দ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ,
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের নামে স্থাপিত স্মৃতি ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে যখন বাংলাদেশের মুসলমানরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, তখন তারা কেউই সেখানে ইবাদতের নিয়তে বা প্রার্থনার নিয়তে যান না। সেখানে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শহীদদের ত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় মাত্র।’
মূতি বা ভাস্কর্য মাত্রই শিরকের উপকরণ নয়। যেটি যে উদ্দেশ্যে বানানো হয়, সেটিকে সেভাবে বিবেচনা করতে হবে। হযরত মা আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) রাসুল (সা.) এর প্রিয় স্ত্রী ছিলেন। তার কয়েকটি পুতুল ছিল বলে হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি তার বান্ধবীদের সঙ্গে এসব পুতুল নিয়ে খেলা করতেন। কই, মহানবী (সা.) তো তাকে শিরক বলে এসব পুতুল নিয়ে খেলতে বারণ করেননি। আবার এসব পুতুল শিরকের উপরণ এমন কথাও কখনও বলেননি। রাসুল (সা.)-এর বাসগৃহে পুতুলের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে, পুতুল বা ভাস্কর্য মাত্রই শিরকের উপকরণ নয়।
কট্টর ওয়াহাবিপন্থী হুজুররাও এটি জানেন, প্রাণীর ভাস্কর্য মানেই শিরক নয়। সৌদি আরবের জেদ্দার মূল কেন্দ্রে “দি ফিস্ট” নামে একটি ভাস্কর্য আছে, এটি একটি মুষ্টিবদ্ধ হাতের ভাস্কর্য।
আরও আছে ঘোড়ার ও মাছের ভাস্কর্য; একইভাবে মুসলিম অধ্যুষিত সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও মিশরে রয়েছে ঘোড়া ও অন্যান্য জীবের ভাস্কর্য।
সুতরাং বলা যায়, ভাস্কর্য জীবের হোক বা জীব দেহের কোনও অংশের হোক, তা যদি শিরক বা পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত না হয়, তবে এতে দোষের কিছু নেই।’
চরমোনাই পীর মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এবং হেফাজতের নেতা মামুনুল হককে উদ্দেশ্য করে মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ‘আমরা বলবো, আপনাদের দেশবিরোধী এই সব আন্দোলন বাস্তবায়নের জন্য জনগণের মেনডেট নিয়ে সংসদে গিয়ে বিল উত্থাপন করে তা পাশ করুন।’

হুংকার দিয়ে মূর্তি সরানোর চেষ্টা দাওয়াতের কোনো পদ্ধতি নয়ঃ-
ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন,
সাউন্ডগ্রেনেডের মতো হুংকার দিয়ে মূর্ত সরানোর চেষ্টা দাওয়াতের কোনো পদ্ধতি নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী রহ.-এর খলীফা শাইখুল হাদীস ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন ভালোবাসায় ও আন্তরিকতা দিয়ে। মানুষের হৃদয় গড়ার চেষ্টা করেছেন। হেকমত ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে তিনি আল্লাহভোলা মানুষকে দ্বীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, 
ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে, যে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে যে, নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত। 
সৎকর্ম ও অসৎকর্ম কখনো সমান নয়। জবাব নম্রভাবে দাও, দেখবে তোমার শত্রুও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে পরিণত হয়েছে।
আজ বড় আফসোস, মানুষের হৃদয় গড়বার আগেই বায়তুল মোকাররম থেকে হুংকারে মূর্ত কীভাবে সরানো সম্ভব। হুংকার তো দাওয়াতের কোনো পদ্ধতি নয়। নবীজী দীর্ঘ তের বছর মানুষকে বুঝিয়েছেন মক্কায়। দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। কখনো মূর্তি ভাঙার হুংকার দেননি। কোমলভাবে বুঝিয়েছেন। মক্কা বিজয়ের পর সেই মানুষেরাই নিজেরা মূর্তি ভেঙেছেন।
বৈরি পরিবেশে দ্বীনের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে হেকমত অবলম্বন করতে হবে। মানুষের হৃদয় গড়ার কাজ করতে হবে। মানুষের হৃদয় যদি মূর্তিবিরোধী হয়, দুর্নীতি বিরোধী হয়, ধর্ষণবিরোধী হয় তাহলে সমাজে মূর্তি, ধর্ষণ, দুর্নীতির কোনোটাই থাকবে না।
আমরা যদি মানুষের কলবের মেহনতে সফল হতে পারি তাহলে অন্যসব ক্ষেত্রেও সফলতা লাভ করতে পারবো। "আজকে কোনো মূর্তি ভেঙে দিলে নতুন আরও বেশি মূর্তি তৈরি হয়ে যাবে। অতীতে আমরা দেখেছি এমনটা হয়েছে। বাবরি মসজিদের সময়ও এমন নজির আছে।
আসুন, আমরা মানুষের মন থেকে মূর্তিপ্রেম দূর করি। মানুষ যদি এই মূর্তি বানানো যে ঠিক নয়, মূর্তির অসারতা তাদের হৃদয়ে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হই তাহলে নিজেরাই এই মূর্তি ভাঙতে চেষ্টা করবে। কখনো মূর্তি নির্মাণের চেষ্টা করবে না। হুংকার নয় ভালোবাসা দিয়েই, দ্বীনের প্রকৃত দাওয়াতের মাধ্যমে সমস্যা নিরসন সম্ভব।"





Comments