আগুন থেকে নিজে বাঁচুন পরিবারকে বাঁচানঃ-
আসুন আমরা নিজেকে এবং পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে কিভাবে বাঁচাবো তা জেনে নিই।
বর্তমান সমাজে এ রকম অনেককেই দেখা যায়, সে নিজে দীনের জন্য জীবন দিয়ে দিচ্ছে, ইসলামী রাজনীতিতে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বড় নেতা হচ্ছে। অথচ তার ঘরে দীনের জন্য কোন মেহনত করছেনা। তার ভাই বোনদের দীনের দাওয়াত দিতে লজ্জা পেলেও রাজনীতির মাঠে আগুন ঝড়া বক্তব্যে মাঠ কাঁপাতে বেজায় তৎপর।
একবার চিন্তা করুন ফেসবুকেও সারাদিন অমুক তমুক কতজনকে জান্নাতের পথ দেখাচ্ছেন। অথচ নিজের পরিবারের প্রতি কোন খেয়াল নেই। এটা আপনার উপর দায়িত্ব, আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ যে, নিজে বেঁচে পরিবারকেও বাঁচাবেন। হাঁ যদি এ দায়িত্ব পালনে আপনি সক্ষম হন, তবে আপনি কামিয়াব।
আর যদি নিজে বেঁচে থেকেই সীমাবদ্ধ থাকেন, তবে আপনার কোনকালেই মুক্তি নেই।
আমি বড় বড় অনেক মাদ্রাসার মুহতামিমদের ছেলেদের দেখেছি যারা দীনের ধারে কাছেও যেতে চায়না। লেবাসটা কেবল ঠিক রাখে, কেননা যেহেতু উনার পিতা মোহতামিম। এ ক্ষেত্রে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এটাই বুঝে আসে যে, ঐ সকল বড় আলেমরা পরিবারের প্রতি দীনের যতেষ্ট ভূমিকা রাখেনা।
আপনি দীনের কাজে বিভিন্ন এলাকা সফর করছেন, কিংবা বিভিন্ন এলাকাকে দীনের ঘাটি বানাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু একবার ও কি নিজেকে প্রশ্ন করেছেন, আপনার গ্রাম সমাজ আত্মীয় পরিবার পরিজন এদের কাছে দীনের সম্যক জ্ঞান কে পৌছাবে? আপনি দীনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেন ভালো কথা। তবে আপনার পরিবারের প্রতি নজর দিন সর্বপ্রথম।
যে নিজের দেহকে দোযখ থেকে বাঁচাতে পারেনা, সে কিভাবে রাষ্টকে এ আগুন থেকে বাঁচাবে? আবার যে নিজের পরিবারের কাছে দীনের ভূমিকা রাখতে পারেনা, সে কিভাবে রাষ্ট্রে দীনের ভূমিকা পালন করবে? হাদীসে পরিবারের প্রতি দীনের মেহনতের ব্যপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ ফরমানঃ-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সে অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ। আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে যা আদেশ করেন তারা তা অমান্য করেনা এবং যা করতে আদেশ করা হয় তারা তাই করে। (সূরা তাহরীম, আয়াত- ৬)।
উল্লেখিত আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, জাহান্নামের আগুন থেকে নিজে বাঁচুন এবং পরিবার-পরিজনকে বাঁচান। অতঃপর জাহান্নামের আগুনের কঠোরতার কথা বলা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে যে কেউ জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হলে সে কোন বল প্রয়োগ বা প্রভাব খাটাতে পারবেনা কিংবা কোন প্রকার তোষামোদ করে এই সমস্ত ফেরেশতার কবল থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবেনা। যে ফেরেশতা জাহান্নামের উপর প্রভাব বিস্তার করবে তার নাম যাবানিয়া। উল্লেখিত আয়াতে “আহলিকুম” শব্দটি দ্বারা পরিবার-পরিজন তো বটেই অধিকন্তু দাস- দাসী ও বোঝানো হয়েছে।
উক্ত আয়াতে কারিমা অবতীর্ণ হবার পর হযরত ওমর (রাঃ) নবী করিম (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করার বিষয় বুঝলাম, কিন্তু পরিবার- পরিজনকে জাহান্নাম থেকে কি ভাবে রক্ষা করববো? হুজুর (সাঃ) তখন বললেন এর পন্থা হল আল্লাহ পাক তোমাদেরকে যে সমস্ত কাজ থেকে বিরত হতে বলেছেন, সেগুলো থেকে তাদেরকেও বিরত থাকতে বলবে। আর যে সমস্ত কাজ করতে আদেশ করেছেন সেগুলো করতেও পরিবার- পরিজনকে আদেশ কর। তাহলেই জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে যাবে। (কুরতুবী)। রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেনঃ
তোমরা তোমাদের পরিবারবর্গের নিকট যাও। তাদের মধ্যে বসবাস কর, তাদের (দ্বীনি) জ্ঞান শিক্ষা দাও এবং সেই অনুযায়ী আমল করার জন্যে তাদের আদেশ কর। [সাহীহ্ বুখারী ]
যেমন হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّهُ كَانَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلاَّ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ وَيُنَصِّرَانِهِ وَيُمَجِّسَانِهِ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক সন্তান ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নি উপাসক রূপে গড়ে তোলে’।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ যখন তার কোন বান্দাকে লোকদের উপর কর্তৃত্ব দান করেন, কিয়ামতের দিন তিনি তার সেই বান্দার কাছ থেকে তার অধীনস্থ লোকদের সম্পর্কে অবশ্যই হিসাব গ্রহণ করবেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন সে তার অধীনস্থ লোকদের উপর আল্লাহ্র দ্বীন বাস্তবায়ন করেছে, কিনা? এমনকি প্রত্যেককে তার নিজস্ব পরিবার পরিজন সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রশ্ন করা হবে। [ মুসনাদে আহমেদ ]।
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كُلُّ نَفْسٍ مِنْ بَنِيْ آدَمَ سَيِّدٌ، فَالرَّجُلُ سَيِّدُ أَهْلِهِ، وَالْمَرْأَةُ سَيِّدَةُ بَيْتِهَا–
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আদম সন্তান প্রত্যেকেই কর্তা। সুতরাং পুরুষ তার পরিবারের কর্তা এবং নারী তার ঘরের কর্তী’।
হাদীস শরীফে নবীজী এরশাদ করেছেন,
أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالأَمِيْرُ الَّذِىْ عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْهُمْ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ بَعْلِهَا وَوَلَدِهِ وَهِىَ مَسْئُوْلَةٌ عَنْهُمْ، وَالْعَبْدُ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُوْلٌ عَنْهُ أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُوْلٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ-
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
‘সাবধান তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। সুতরাং শাসক জনগণের দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে পরিবারের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসার এবং সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। এমনকি দাস-দাসীও তার মালিকের সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। সেইদিন তাকেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।
অতএব মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল,আর তোমাদের প্রত্যেককেই ক্বিয়ামতের দিন এই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’।[2]
উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, সন্তানকে আদর্শ সন্তান রূপে গড়ে তোলার দায়িত্ব পিতা-মাতার। পিতা-মাতার কারণে সন্তান আদর্শবান হয় এবং তাদের কারণেই সন্তান দুশ্চরিত্রের অধিকারী হয়। তেমনি পিতা-মাতার কারণে সন্তান বিভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করে থাকে।
অপরদিকে সন্তানকে আদর্শবান রূপে গড়ে তুলতে পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হল তাদের জন্য সৎ সঙ্গী খুঁজে বের করা। যেমন বলা হয়ে থাকে, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
তবে পরিবার বলতে কেবল নিজের পরিবারকে বুঝায়না, বরং অধীনস্থ সবাই পরিবারের আওতাভূক্ত। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
عَنْ أَبِىْ مُوْسَى رضى الله عنه عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيْرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيْرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيْحًا خَبِيْثَةً-
আবু মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘উত্তম সঙ্গী ও মন্দ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, মিশক আম্বর ও হাপর ওয়ালার ন্যায়। মিশক আম্বর ওয়ালা হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে কিছু ক্রয় করতে পারবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি সুগন্ধি লাভ করবে। আর হাপর ওয়ালা তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দিবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি দুর্গন্ধ পাবে’।
আমাদের এলাকায় এক আল্লাহ ওয়ালা ব্যক্তি ছিল। সে মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াহ দিতে খুব পছন্দ করতো। দিনের বেলা ব্যবসা, আর সন্ধ্যার পর থেকে এলাকার মাসজিদে তালিম দিতো। অধিকাংশ সময় তাকে বিভিন্ন মানুষকে নসিহত করতে দেখা যেতো। সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। তার তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। তারাও বাবাকে খুব ভালোবাসে। কারণ সে তাদের কোনো আবদার অপূর্ণ রাখে না। যখন যা চায় দেয়। ছেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে, টাকা চাই!- সাথে সাথে দিয়ে দিয়েছে। বংশের একমাত্র ছেলে। মেয়েদেরকেও যথেষ্ট আদর করতেন তিনি। যখন যে পোশাক-অলংকার চেয়েছে, দিতে কৃপণতা করেননি। ছোট থেকেই খুব আদর স্নেহ করেন তিনি।
ফলে দেখা গেল তার সন্তানেরা যখন বড় হলো, তখন সব কিছু পাল্টে গেল! যে মানুষটা সর্বদা দ্বীনের পথে মানুষকে আহ্বান করে, তার ঘরে দ্বীনের ছিটে ফোটা নেই! সে যখন এশার পর মাসজিদে দাঁড়িয়ে নসিহত করে, সে সময়ে তার স্ত্রী-মেয়েদেরকে দেখা যায় মাসজিদের পাশ দিয়েই বেপর্দাভাবে হেটে যাচ্ছে। ছেলেটা রাত করে বাড়ি ফেরে। শোনা যাচ্ছে সে নেশাও করে। কিন্তু বাপ বেচারা কিছুই বলতে পারেন না।
একদিন এক সাথি মুরুব্বি তাকে বললেন, ‘ভাই সাহেব! আপনার মেয়েগুলো এখন তরুণী। ওদের ওপর তো পর্দা করা ফরজ হয়েছে। ছেলেটার ব্যাপারেও একটু খেয়াল করবেন। ওকে তো..” উনি হেসে হেসে উত্তর দিলেন, ‘আরে ভাই! আজকালকার যুগে একটু আধটু তো সাজবেই। আরো সময় যাক, বয়স হলে এমনিতেই বুঝে যাবে। ইসলামে জোর জবরদস্তি নেই।
আপনি কি জানেন ভাই সাহেব, ”রাসুল ﷺ বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন:
১) মদ্যপায়ী ;
২) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং
৩) দাইয়ুস।”(নাসাঈ, বুখারী)।
দাইয়ুস হলো ঐ ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারে অশ্লীলতা ও পাপাচারের প্রশ্রয় দেয়, যার ভেতরে অশ্লীলতার প্রতি ঘৃণা নেই এবং স্ত্রী-সন্তানদেরকে ইসলামি বিধান, বিশেষত পর্দা মেনে চলতে বাধ্য করে না। তিনি দাইয়ুস বলে গণ্য।
দীনের কাজ করুন সর্বত্র। তবে পরিবার পরিজন, পাড়া মহল্লা ও প্রতেবেশির প্রতি দীনের ভূমিকা রাখুন অধিকাংশে। পরিবারের বড়দেরকে দাওয়াত দিন ছোট ভাই বোন, ভাগ্নে ভাগ্নি, ভাতিজা ভাতিজী এদেরক আদেশ দিতে থাকুন। যদি তারা না মানে তবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর আপনি দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। আর যদি তাদেরকে দীনের দাওয়াত না দেন তবে তাদের সাথে আপনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ছোটদের সাথে কোমল আচরণ করে দীনকে বুঝান। দেখবেন ওরা সহজেই বুঝে ফেলবে। নিজের প্রিয়জনেরা আগুনের পথে চলবে, এটা কেমনে মানা যায়? সর্বাত্বক চেষ্টা করতে হবে প্রিয়জনদেরকে জাহান্নাম থেকে ফেরাতে।
পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষার উপায়ঃ-
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় ইসলাম গ্রহণের সাথে ঈমান ও নেক আমল। ফরয পালন, পাপ বর্জন, তাক্বওয়া অর্জন ও দুআ। মহান আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন সে দুআঃ
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ,,
অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে দোযখ-যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।” (বাক্বারাহঃ ২০১)।
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ ۖ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا- إِنَّهَا سَاءَتْ مُسْتَقَرًّا وَمُقَامًا,,
অর্থাৎ, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি নিবৃত্ত কর; জাহান্নামের শাস্তি তো নিশ্চিতভাবে ধ্বংসাত্মক; নিশ্চয় তা আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে অতীব নিকৃষ্ট!
(ফুরক্বানঃ ৬৫-৬৬)।
এ ছাড়া জাহান্নাম থেকে বাঁচার বহু উপায় হাদীসে বলা হয়েছে,
এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দুরে রাখবে। নবী (সাঃ) বললেন, “তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দেবে এবং রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে।” (বুখারী ও মুসলিম)।
জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দোআঃ- আরবি দোআ সাতবারঃ-
اللَّهُمَّ أَجِرْنِى مِنَ النَّارِ.,,
বাংলা উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার।
বাংলা অর্থঃ- হে আল্লাহ আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।
ফজিলতঃ- হজরত মুসলিম ইবনে হারেস তামিমি রা. বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কানে কানে বললেন, মাগরিবের নামাজের যখন সালাম ফেরাবে তখন কারো সঙ্গে কথা বলার পূর্বে এই দোয়াটি সাত বার পড়বে। যদি তুমি তা পড় আর ওই রাতেই তুমি মারা যাও তাহলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা লিখে দেয়া হবে।
আর ফজরের নামাজের পরও যদি এ দোয়াটি একই নিয়মে সাতবার পড়ে থাক আর ওই দিনেই তুমি মারা যাও তাহলে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির ফায়সালা লিখে দেয়া হবে। [আবু দাউদ-৫০৮১ নাসায়ির সুনানে কুবরা-৯৯৩৯ সহি ইবনে হিব্বান-২০২২]।
আনাস (রাঃ) বলেনঃ, “আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে : “হে আল্লাহ্! ঐ ব্যাক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে‘হে আল্লাহ্ ঐ ব্যাক্তিকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দাও ।” (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ- হাদীস সহীহ)।
জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার দোয়া
« ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻭَﺃَﻋُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ».
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযু বিকা মিনান্নার)।
অর্থাৎ “হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই”।(সহীহ-আবু দাউদ)।
অসুস্থ অবস্থায় নিম্নের দোয়া পড়া।
আবূ সাঈদ খুদরী রা. এবং আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তাঁরা উভয়েই রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রতি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে
[لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أكْبَرُ]
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়)। তখন আল্লাহ তার সত্যায়ন করে বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমি সবচেয়ে বড়।’
আর যখন সে বলে,
[لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ]
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই)। তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, আমি একক, আমার কোন অংশী নেই।’
আর যখন সে বলে,
[لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ]
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, সার্বভৌম ক্ষমতা তাঁরই এবং তাঁরই যাবতীয় প্রশংসা), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, সার্বভৌম ক্ষমতা আমারই এবং আমারই যাবতীয় প্রশংসা।’
আর যখন সে বলে,
[لاَ إله إِلاَّ اللهُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ باللهِ]
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফেরার এবং সৎকাজ করার বা নড়া-চড়ার শক্তি নেই)। তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমার প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার বা নড়া-চড়ার শক্তি নেই।’
নবী সা. বলতেন, ‘যে ব্যক্তি তার অসুস্থ অবস্থায় এটি পড়ে মারা যাবে, জাহান্নামের আগুন তাকে খাবে না।’ (অর্থাৎ সে কখনো জাহান্নামে যাবে না।) (সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] ৩৪৩০, দোয়া অধ্যায়)।
তাই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সর্বত্র দীনের মেহনত করে জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুক। আমীন
আরও বিস্তারিত জানতে নিচে ক্লিক করুন-
Comments
Post a Comment