শীতকাল হচ্ছে মূমিনদের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল।

শীতকালের ফজীলত ও আমাদের জন্য ৫টি করণীয়ঃ-
**********************************************
হেমন্তকাল পেরিয়ে শুরু হয়েছে শীতকাল। শীতের আবরনে আচ্ছাদিত হচ্ছে প্রকৃতি। আল্লাহ তাআলা মানুষের কল্যাণেই প্রকৃতির এ পরিবর্তণ ঘটিয়ে থাকেন। যাতে রয়েছে আল্লাহ তাআলার কুদরতের নির্দশন। আল্লাহ তাআলা বান্দার উপকারেই দুনিয়ার সব উপকরণ সৃষ্টি করেছেন। চন্দ্র-সূর্য, আলো-বাতাস এমনকি রাত, দিন, ঋতু এবং কালের সৃষ্টিও বান্দার কল্যাণে করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يُقَلِّبُ اللَّهُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِأُولِي الْأَبْصَارِ,,
অর্থাৎ - ‘আল্লাহ দিন ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। এতে অর্ন্তদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিগণের জন্যে চিন্তার উপকরণ রয়েছে।’সুরা নূর আয়াত ৪৪।
অনেকের কাছে শীতকাল প্রিয় ঋতু। শীতকালে পৃথিবীতে আল্লাহর বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। শীতকালে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপায় জমিনে জন্মে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি। আর এ সব কিছুই আল্লাহ তাআলার অশেষ দান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
فلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ إِلَىٰ طَعَامِهِ, أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاءَ صَبًّا, ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا, فَأَنْبَتْنَا فِيهَا حَبًّا, وَعِنَبًا وَقَضْبًا, وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا, وَحَدَائِقَ غُلْبًا, وَفَاكِهَةً وَأَبًّا, مَتَاعًا لَكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ,,,
মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি। পরে আমি ভূমি প্রকৃষ্টরূপে বিদীর্ণ করি এবং আমি তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাক-সবজি, জাইতুন, খেজুর, বহু বৃক্ষবিশিষ্ট বাগান, ফল ও গবাদির খাদ্য। এটা তোমাদের ও তোমাদের জীবজন্তুর ভোগের জন্য।’ (সুরা আবাসা আয়াত ২৪-৩২)।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য আল্লাহ তায়ালার এক অশেষ দান। শীতকাল প্রকৃতির বিশেষ নিয়ামত। 
হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) এর অন্তিমকালে বেশী বেশী কান্না করছিলেন। মৃত্যুর সময় তাঁকে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে কাঁদছি না; বরং (রোজার কারণে) গ্রীষ্মের দুপুরের তৃষ্ণা, শীতের রাতের নফল নামাজ এবং ইলমের আসরগুলোতে হাজির হয়ে আলেমদের সোহবত হারানোর জন্য আমি কাঁদছি।’ 
হাদীস শরীফে নবীজী এরশাদ করেছেন, 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ قَالَتِ النَّارُ رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا فَأْذَنْ لِي أَتَنَفَّسْ ‏.‏ فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ فَمَا وَجَدْتُمْ مِنْ بَرْدٍ أَوْ زَمْهَرِيرٍ فَمِنْ نَفَسِ جَهَنَّمَ وَمَا وَجَدْتُمْ مِنْ حَرٍّ أَوْ حَرُورٍ فَمِنْ نَفَسِ جَهَنَّمَ ‏"‏ ‏.
হযরত আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ  (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নাম অভিযোগ করে আল্লাহর কাছে বলল, হে আমার প্রভু! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। সুতরাং আমাকে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের অনুমতি দিন। তাই আল্লাহ তা’আলা তাকে দুবার শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুমতি দান করলেন। একবার শীত মৌসুমে আরেকবার গ্রীষ্ম মৌসুমে। তোমরা শীতকালে যে ঠান্ডা অনুভব করে থাকো তা জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণ। আবার যে গরমে বা প্রচন্ড উত্তাপ অনুভব করে থাকো তাও জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১২৯০।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘নবী করিম (সা.) বলেছেন: যদি কোনো তীব্র ঠান্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই), আজকের দিনটি কতই না শীতল! হে আল্লাহ! জাহান্নামের জামহারি থেকে আমাকে মুক্তি দিন।” তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার এক বান্দা আমার কাছে তোমার জামহারি থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে আশ্রয় দিলাম।’
সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, জামহারি কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘জামহারি এমন একটি ঘর যাতে অবিশ্বাসী, অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে এবং এর ভেতরে তীব্র ঠান্ডার কারণে তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে।’ আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইল ৩০৬।
হাদীস শরীফে আরও বর্ণিত হয়েছে, 
عن أبي سعيد رضي الله عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال الشِّتَاءُ رَبِيعُ الْمُؤْمِنِ.,,
বু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মোমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ)।
হাদীস শরীফে এভাবেই এসেছে, 
عن عمر رضي الله عنه قال "الشتاء غنيمة العابدين,,
অর্থাৎ- হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘শীতকাল হলো ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ।"
শীত তো এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা ভোগ করে। শীতকাল নফল রোজা রাখার জন্য সুবর্ণকাল। কাজা রোজা বাকি থাকলে তা আদায় করার জন্যও শীতের দিন অতি উপযোগী। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন,
وعن ابن مسعود رضي الله عنه قال: "مرحبا بالشتاء تنزل فيه البركة ويطول فيه الليل للقيام ويقصر فيه النهار للصيام".
হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগতম! শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’ এজন্যই শীতকালে আমাদের কিছু করণীয় আছে। এই করণীয় সমূূহ আমাাাদের বাস্তব জীবনে আমল করার জন্য তৌফিক দান করুন। 

প্রথম করণীয়ঃ-
আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি একমাত্র মহান আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামত। আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ ছাড়া মানুষের বা কোনো প্রাণীর এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষ আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করা সত্ত্বে¡ও এ নিয়ামতের উপযুক্ত শুকর আদায় করে না। আর আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের অর্থ হচ্ছে তাঁর আদেশাবলি যথাযথভাবে মেনে চলা। অথচ বেশির ভাগ মানুষই আল্লাহর শুকরগুজার না করে প্রতিনিয়ত আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত। আল্লাহ মানুষকে যে নিয়ামত দান করেছেন তা সীমাহীন। এমন অনেক নিয়ামতও আছে যেগুলোর খবর মানুষ জানেই না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন- 
 وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَتَ الله لَا تُحۡصُوۡہَا ؕ,,
‘যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতগুলো গণনা করতে থাকো তাহলে সেগুলো পুরোপুরি গণনা করতেও পারবে না।’ সূরা ইবরাহিম-৩৪।
অর্থাৎ আল্লাহর নিয়ামত এত অধিক যে, সবাই মিলে গণনা করতে চাইলে গুণে শেষ করা যাবে না। মানুষের নিজের অস্তিত্বই স্বয়ং একটি ক্ষুদ্র জগত। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, হস্ত, পদ, দেহের প্রতিটি গ্রন্থি এবং শিরা-উপশিরায় আল্লাহর অন্তহীন নিয়ামত নিহিত রয়েছে। [ফাতহুল কাদির]
এ থেকে অনুমান করা যায় যে, আল্লাহর সম্পূর্ণ দান ও নিয়ামতের সংক্ষিপ্ত বা বিস্তারিত কোনোভাবেই আমরা গণনা করে শেষ করতে পারব না। এই অসংখ্য নিয়ামতের বিনিময়ে অসংখ্য ইবাদত ও শোকর জরুরি হওয়াই ছিল ইনসাফের দাবি।

দ্বিতীয় করণীয়ঃ-
ক্বাজা রোজা আদায় করা, ও বেশী বেশী নফল রোজা রাখা, 
ঈমানদারের জন্য শীতকাল বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। হাদিস শরিফে এসেছে, শীতকাল মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল।
عن عامر بن مسعود قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: (الصَّوْمُ فِي الشِّتَاءِ الْغَنِيمَةُ الْبَارِدَةُ,,
আমের ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৫)।
শীতকালে দিন থাকে খুবই ছোট। তাই শীতকালে রোজা রাখলে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয় না। সুতরাং শীতকালের দ্বিতীয় করণীয় হলো, কারো যদি কাজা রোজা বাকি থাকে, তাহলে শীতকালে সেগুলো আদায় করে নেওয়া। তা ছাড়া বেশি বেশি নফল রোজা রাখারও এটি সুবর্ণ সময়। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, 
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ مَنْ صَامَ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بَعَّدَ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا ‏"‏‏.‏
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমন্ডলকে দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৮৪০।

তৃতীয় করণীয়ঃ-
শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে বছর ঘুরে আসে শীত-শৈত্যপ্রবাহ। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। হাড়-কাঁপানো শীতে নাকাল দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। শীতার্তসহ বিপন্ন সব মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ। মহান আল্লাহ বলেন, 
 وَ یُطۡعِمُوۡنَ الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّہٖ مِسۡکِیۡنًا وَّ یَتِیۡمًا وَّ اَسِیۡرًا,,
‘তারা আল্লাহর প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্য দান করে।’ (সুরা দাহার, আয়াত ০৮)।
চারপাশে দেখা যায়, লাখো মানুষ একটু উষ্ণতার জন্য জবুথবু হয়ে খড়কুটা জ্বালিয়ে একটু তাপ পেতে চায়। মানবিক ও ইসলামিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে ওই সব মানুষের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়ানো উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَيُّمَا مُؤْمِنٍ أَطْعَمَ مُؤْمِنًا عَلَى جُوعٍ أَطْعَمَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ ثِمَارِ الْجَنَّةِ وَأَيُّمَا مُؤْمِنٍ سَقَى مُؤْمِنًا عَلَى ظَمَإٍ سَقَاهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الرَّحِيقِ الْمَخْتُومِ وَأَيُّمَا مُؤْمِنٍ كَسَا مُؤْمِنًا عَلَى عُرْىٍ كَسَاهُ اللَّهُ مِنْ خُضْرِ الْجَنَّةِ ‏"‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا عَنْ عَطِيَّةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ مَوْقُوفٌ وَهُوَ أَصَحُّ عِنْدَنَا وَأَشْبَهُ,
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঈমানদার ব্যক্তি কোন ক্ষুধার্ত ঈমানদার ব্যক্তিকে খাদ্য দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মু’মিন ব্যক্তি কোন তৃষ্ণার্ত মু’মিন ব্যক্তিকে পানি পান করাবে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে সীলমোহর করা খাঁটি “রাহীক মাখতূম” পান করাবেন। যে মু’মিন ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীন মু’মিন ব্যক্তিকে পোশাক দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরাবেন। আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৪৪৯।

চতুর্থ করণীয়ঃ-
ক্বিয়ামুল্লাইল ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। শীতকালে রাত অনেক লম্বা হয়। কেউ চাইলে পূর্ণরূপে ঘুমিয়ে আবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তে সক্ষম হতে পারে। মহান আল্লাহ ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে বলেন, 
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ,,
তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের রবকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত ১৬)।
নেককার পুণ্যাত্মা ব্যক্তিরা শীতের রাতগুলোয় সালাত ও জিকিরে রত হন। শীতকাল আগমন করলে উবাঈদ বিন উমাঈর (রা.) বলতেন, ‘হে কোরআনের ধারক! তোমাদের রাতগুলো তিলাওয়াতের জন্য প্রলম্বিত করা হয়েছে, অতএব তা পড়তে থাকো। আর রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনগুলো সংক্ষেপিত করা হয়েছে, তাই বেশি বেশি রোজা রাখো।’ কোরআনের ভাষায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
کَانُوۡا قَلِیۡلًا مِّنَ الَّیۡلِ مَا یَہۡجَعُوۡنَ, وَ بِالۡاَسۡحَارِ ہُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ,,
‘রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটায়, আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮)। 
একটি হাদীসে (নবী করীম (সাঃ) ) বলেছেন, ‘‘লোকদেরকে খাদ্য দান কর, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ, সালাম প্রচার কর এবং রাতে উঠে নামায পড়; যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে তোমরা নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে।’’
(মুসনাদ আহমাদ ৫/৪৫১)।
ক্বিয়ামুল্লাইলের ফজীলত সম্পর্কে নবিজী এরশাদ করেছেন, 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ ‏"‏‏.‏
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহামহিম আল্লাহ্‌ তা’আলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেনঃ কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে। আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১১৪৫।

পঞ্চম করণীয়ঃ-
অজু ও গোসলের ব্যাপারে সচেতন হওয়া। শীতকালে মানুষের শরীর শুষ্ক থাকে। তাই যথাযথভাবে ধৌত না করলে অজু-গোসল ঠিকমতো আদায় হয় না। আর অজু-গোসল ঠিকমতো আদায় না হলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। তাই এ বিষয়ে বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে; এমনকি শীতের মৌসুমে গরম পানি দিয়ে অজু করলেও সওয়াবে কমতি হবে না।
হজরত ওমর (রা.) তাঁর ছেলের উদ্দেশে বলেন, ‘শীতের দিনে ভালোভাবে অজু করা বড় গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।’
অজুর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন,
عن أبي هريرة -رضي الله عنه- أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم قال: (أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قالوا بلى يا رسول الله قال إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ)
আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যার কারণে আল্লাহ পাপ মোচন করবেন এবং জান্নাতে তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? সাহাবারা বললেন, জি হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! মহানবী (সা.) বললেন, ওই কাজগুলো হলো—মন না চাইলেও ভালোভাবে অজু করা, বেশি পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫১)।
শীতকালে সঠিকভাবে অজু করা, অজুর অঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা; প্রতিটি অঙ্গের যতটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো দরকার ততটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল। 
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে সংকটকালীন দান, গ্রীষ্ম কালীন রোজা ও শীতের অজু।’ (আদ দোয়া লিত তাবরানি: ১৪১৪)।
তীব্র শীতে কষ্ট হলে গরম পানি দিয়ে অজু করাতে কোনো বাধা নেই। অজুর পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মুছে ফেলাতেও সমস্যা নেই। শীতের তীব্রতা যদি কারও সহ্যের বাইরে চলে যায়, পানি গরম করে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে এবং ঠান্ডা পানি ব্যবহারে শারীরিকভাবে ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তাহলে তিনি অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে পারেন। (বায়হাকি, খণ্ড: ১, হাদিস: ২২৬)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার জন্য তৌফিক দান করুন।

Comments