জিকির করার ফজীলত ও না করার পরিণতি। [দ্বিতীয় অংশ ]

আল্লাহর জিকিরের ফজীলত ও গাফিল ব্যাক্তির পরিণতিঃ-
*****************************************
মুমিন বান্দা যেন মুখে-হাতে, কথা ও কাজে আল্লাহর জিকির করে। মসজিদে বসে তাসবিহ হাতে শুধু ‘আল্লাহ আল্লাহ’ করার নামই জিকির নয়। বরং দুনিয়ার প্রতিটি কাজ শুরুর আগে সুন্নাত পদ্ধতিতে আল্লাহর স্মরণ করাই হচ্ছে জিকির।
মহান আল্লাহর জিকির বা স্মরণ- তারই নির্দেশ। 
মানুষ সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতে পারবে। জিকিরের প্রতি মনোযোগী করতে আল্লাহ তাআলা জিকিরের পদ্ধতি উল্লেখ করে ঘোষণা দেন-
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺬْﻛُﺮُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻗِﻴَﺎﻣًﺎ ﻭَﻗُﻌُﻮﺩًﺍ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺟُﻨُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻳَﺘَﻔَﻜَّﺮُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺖَ ﻫَﺬَﺍ ﺑَﺎﻃِﻠًﺎ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻓَﻘِﻨَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ,,
‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব (মানুষসহ সমগ্র সৃষ্টি) নিরর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান আয়াত ১৯১)।
কারণ, এ জিকিরে যেমন নেয়ামত লাভ হয় তেমনি দুনিয়া ও আখিরাতের সব অনিষ্টতা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। 
আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন,
وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيراً وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا,,
এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। সূরা আহজাব: ৩৫।

জিকিরের ফজীলতঃ-
জিকিরের ফজিলত সম্পর্কে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে না তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ বুখারী ৬০৪৪।
জিকিরে মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয় আর জিকির বিমূখতায় আল্লাহর সাথে বান্দার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আল্লাহর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া মানব জীবনের বড় ব্যার্থতা। জিকির হচ্ছে সফলতার সোপান। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ,,
‘আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সূরা আনফাল ৪৫)।
মানসিক প্রশান্তির জন্যও জিকির এক মহৌষধ। জিকির ছেড়ে দিয়ে দুনিয়ার জীবনে ভাল থাকা যায় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ,,
‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।’ (সূরা রাআদ ২৮)।
সামুরা বিন জুনদব থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَحَبُّ الْكَلَامِ إِلَى اللَّهِ أَرْبَعٌ : سُبْحَانَ اللَّهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ . لَا يَضُرُّكَ بِأَيِّهِنَّ بَدَأْتَ,, ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ 3985
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কথা চারটি: সুবহানাল্লাহ, আলহাম্দু লিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর, যে কোন একটি দ্বারাই আরম্ভব করা যেতে পারে। (মুসলিম:৩৯৮৫)।
হাদীস শরীফে নবীজী এরশাদ করেছেন,
عَنْ أَبُو الدَّرْدَاءِ : أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِخَيْرِ أَعمَالِكُمْ ، وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ ، وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ ، وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ إِعْطَاءِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ ، وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ ، وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ؟ قَالُوا بَلَى، قَالَ ذِكْرُ اللَّهِ تَعَالَى,, ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ 3299: )
আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম ? তারা বলল :হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বললেনঃ- জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)। (তিরমিজি:৩২৯৯)
সাহাবিদের উদ্দেশ্যে রসুল (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন উত্তম আমলের কথা বলে দিব না? যা তোমাদের প্রভুর নিকট অত্যন্ত পবিত্র, যা সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন, এবং স্বর্ণ-রৌপ্য ব্যয় করা অপেক্ষা উত্তম আর জিহাদের ময়দানে শত্রুর মোকাবিলায় যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদের ঘাড়ে আঘাত করা আর তারা তোমাদের ঘাড়ে আঘাত করার চেয়েও উত্তম?
সাহাবাগণ (রা.) বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, ‘তা হলো আল্লাহ তায়ালার জিকির।’ ইবনে মাজাহ ৩৭৯০।
নিজেকে এমনভাবে জিকিরে অভ্যস্ত করা উচিত যাতে মৃত্যুর সময় জবানে জিকির জারি থাকে। কারণ জিকির হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেন,
وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ,,
আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। সূরা আনকাবুত: ৪৫।
একবার হযরত মুআজ বিন জাবাল রসুল (সা.) কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসুল (সা.) সর্বোত্তম আমল কোনটি? রসুল (সা.) বললেন অধিকহারে জিকির কর ‘মৃর্ত্যুর সময় যেন তোমার জিহ্বা আল্লাহর জিকিরে সিক্ত থাকে।’ মুজামুল কাবীর ১৮১।
হাদিসে পাকেও জিকিরের পর যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি লাভে এবং কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণের কথা উল্লেখ করেছেন বিশ্বনবি।
সুনানে বায়হাকিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই জিকির ও জিকিরের প্রাপ্তি সম্পর্কিত একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। আর তাহলো-একদিন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক আরব বেদুইন এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে কোনো একটি ভালো কাজ শিক্ষা দিন-প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তার হাত ধরলেন। তাকে এ শব্দগুলো শেখালেন- سُبْحَانَ الله : সুবহানাল্লাহ- اَلْحَمْدُ للهِ : আলহামদুলিল্লাহ- لَا اِلَهَ اِلَّا الله লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- اَللهُ اَكْبَر আল্লাহু আকবার।
লোকটির হাত ধরে প্রিয় নবি বললেন, এ শব্দগুলো বেশি বেশি পড়বে। লোকটি এ কথা শুনে চলে গেলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর লোকটি আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে ফিরে আসে। লোকটি কি যেন চিন্তা করছে। লোকটি ফিরে এসে প্রিয়নবির সামনে বসে বললেন- ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ আপনি যে বাক্যগুলো আমাকে শেখালেন, এ বাক্যগুলোতে আল্লাহর জন্য আর আমার জন্য কী রয়েছে? এগুলো পড়লে আমি কী পাবো?
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন,
এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন তুমি যখন বলবে, ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ তখন প্রতিটি শব্দের উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি সত্য বলেছ।
তখন জিকিরকারী আল্লাহর কাছে নিজের (কাঙিক্ষত) চাহিদাগুলো (ধারাবাহিকভাবে) এভাবে তুলে ধরবে-
>> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ) আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
>> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِىْ) ‘আল্লাহুম্মার জুক্বনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিজিক দান করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমাকে ইতিমধ্যে রিজিক দান করেছি।’
>> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْحَمْنِىْ) আল্লাহুম্মার হামনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে অনুগ্রহ করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, ইতিমধ্যে তোমার প্রতি রহম করেছি।
জিকিরের পরে বান্দা এভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অচিরেই তা দান করবেন বলেই আরব বেদুইনকে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি।
আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে জিকির। জিকিরের মাধ্যমেই মানুষের অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে মুক্তি পায়। আল্লাহর দরবারে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। হাদীস শরীফে এভাবেই এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ নামাযের পরে কয়েকটি কালেমা এমন আছে যেগুলো পাঠকারী ব্যর্থ হয় না। সে কালেমাগুলো হচ্ছে, প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ ও ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার।’
(মুসলিম ১৩৭৭)।
রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল হামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমতুল্য হয়। (মুসলিম ১৩৮০)।
عَنِ عَلِيٌّ، أَنَّ فَاطِمَةَ، اشْتَكَتْ مَا تَلْقَى مِنَ الرَّحَى فِي يَدِهَا وَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم سَبْىٌ فَانْطَلَقَتْ فَلَمْ تَجِدْهُ وَلَقِيَتْ عَائِشَةَ فَأَخْبَرَتْهَا فَلَمَّا جَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَخْبَرَتْهُ عَائِشَةُ بِمَجِيءِ فَاطِمَةَ إِلَيْهَا فَجَاءَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَيْنَا وَقَدْ أَخَذْنَا مَضَاجِعَنَا فَذَهَبْنَا نَقُومُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ عَلَى مَكَانِكُمَا ‏"‏ ‏.‏ فَقَعَدَ بَيْنَنَا حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَ قَدَمِهِ عَلَى صَدْرِي ثُمَّ قَالَ ‏"‏ أَلاَ أُعَلِّمُكُمَا خَيْرًا مِمَّا سَأَلْتُمَا إِذَا أَخَذْتُمَا مَضَاجِعَكُمَا أَنْ تُكَبِّرَا اللَّهَ أَرْبَعًا وَثَلاَثِينَ وَتُسَبِّحَاهُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ وَتَحْمَدَاهُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمَا مِنْ خَادِمٍ ‏"‏.‏
হযরত ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ফাতিমাহ্‌ (রাঃ) চাক্কি ঘুরাতে গিয়ে তাঁর হাতে ব্যাথা অনুভব করলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বন্দি এসেছিল। তাই তিনি বন্দি হতে একজন খাদিমের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পেলেন না। তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর সাথে দেখা করে তাঁকে ব্যাপারটি অবহিত করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলে তখন ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর নিকট ফাতিমাহ্‌ (রাঃ)-এর তাঁর নিকট আগমনের বিষয়টি অবহিত করলেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। এমন সময় আমরা আমাদের শয্যাগ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর আমরা উঠতে লাগলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমরা তোমাদের যথাস্থানে থাকো। অতঃপর তিনি আমাদের দু’জনের মাঝে বসলেন। এমনকি আমি তাঁর পা মুবারকের শীতলতা আমার সীনার মধ্যে অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয় শিখিয়ে দিব না, যা তোমরা প্রার্থনা করছিলে তার চেয়ে উত্তম? যে সময় তোমরা তোমাদের শয্যাগ্রহণ করবে তখন ৩৪ বার ‘আল্ল-হু আকবার’, ৩৩ বার ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ এবং ৩৩ বার ‘আল হাম্‌দু লিল্লা-হ’ পড়ে নিবে। এটি তোমাদের জন্য খাদিমের চেয়ে উত্তম।” (ই.ফা. ৬৬৬৭, ই.সে. ৬৭২০)। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৮০৮।
রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।’ বলবে, সে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব লাভ করবে। আর তার নামে লেখা হবে ১০০ টি সাওয়াব এবং তার আমল থেকে ১০০ টি গুনাহ মুছে ফেলা হবে। আর সে সেদিন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত শয়তানের ধোকা থেকে মুক্ত থাকবে এবং কিয়ামতের দিন কেউ তার চেয়ে ভালো আমল আনতে পারবে না, একমাত্র সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে তার থেকে বেশি নেক আমল করেছে।’ বুখারী ৬০৪০।

গাফিল ব্যাক্তির পরিণতিঃ-
আর জিকির বা আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিরা সব সময় জিকিরে মশগুল থাকেন। কারণ আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি যখনই জিকির থেকে গাফেল বা বেখেয়ালি হয় তখনই শয়তান তাঁর কাঁধে চড়ে বসে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন-
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَٰنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ,,
وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ,,
‘যে ব্যক্তি পরম দয়াময় আল্লাহর স্মরণে উদাসীন হয়; তিনি তাঁর জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করেন; অতঃপর সে হয় তাঁর সহচর। শয়তানরাই মানুষকে সৎ পথ থেকে বিরত রাখে। আর মানুষ মনে করে তারা সঠিক পথে আছে।
সুরা যুখরুফ, আয়াত ৩৬ ও ৩৭।
শয়তানের ধোকা থেকে বাচার রক্ষামন্ত্র হল এই জিকির। জিকির ছেড়ে দিলে বান্দা আল্লাহর জিম্মাদারী থেকে বেরিয়ে যায়।
শয়তানের এ আক্রমণ থেকে মুমিন মুসলমানের বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনের অনেক জায়গায় নসিহত পেশ করেছেন। শয়তানের অবিরাম গোমরাহীর প্রচেষ্টার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۚ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ,,
‘আর যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন এবং সব জানেন।" সুরা আরাফ আয়াত ২০০।
সাওয়াবের কাজ করা সহজ। কিন্তু গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা বড়ই কঠিন। আপনি চাইলেই দুই রাকাত নফল নামাজ এখনই পড়তে পারবেন। কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবেন। ইবাদাত বন্দেগী করেত পারবেন। কিন্তু চাইলেই গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন না।
শয়তান মানুষের পেছনে সব সময় লেগেই থাকে। সে ছলেবলে কলে-কৌশলে মানুষকে গোনাহের দিকে ধাবিত করে। নফস গোনাহের দিকে ধাবিত হয়ে পড়ে। সময়-অসময়ে গোনাহের কাজে মন ঝুকে পড়ে আদম সন্তানের। এই গোনাহ থেকে কিভাবে বেঁচে থাকবো আমরা।
এ বিষয়ে এক ‘বুযুর্গরা বলেন, যখন তোমার মন কোন গোনাহের দিকে ধাবিত হয়, তখন পবিত্র কোরআনের এই আয়াত সম্পর্কে মনকে বোঝাও। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قُلْ أَذَٰلِكَ خَيْرٌ أَمْ جَنَّةُ الْخُلْدِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۚ كَانَتْ لَهُمْ جَزَاءً وَمَصِيرًا,,
আপনি বলুন! তা (তুমি যা করতে চাচ্ছো) উত্তম নাকি চিরস্থায়ী জান্নাত-মুমিনদের জন্য যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে? সেটা হবে তাদের প্রতিদান ও প্রত্যাবর্তন স্থান। (সুরা ফুরকান,আয়াত ১৫)।
উপরোল্লিখিত আয়াত স্মরণে আসলে তখন আর গোনাহের দিকে মন সায় দিবে না। কারণ, একজন মুমিনের কাছে জান্নাতের চেয়ে প্রিয় ও অধিক কাঙ্খিত বস্তু আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং আয়াতটি গোনাহ থেকে বাঁচার বড় একটি মাধ্যম।
জিকিরের কারণে ইহকাল ও পরকালে জীবিকা বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে গাফেল ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্চিত ও অপদস্ত হয়। আল্লাহ তাআলা নূহ আ. এর কথা বিবৃত করে বলেন :—
ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﺍ ﺭَﺑَّﻜُﻢْ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻏَﻔَّﺎﺭًﺍ, ﻳُﺮْﺳِﻞِ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﺪْﺭَﺍﺭًﺍ,, ﻭَﻳُﻤْﺪِﺩْﻛُﻢْ ﺑِﺄَﻣْﻮَﺍﻝٍ ﻭَﺑَﻨِﻴﻦَ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞْ ﻟَﻜُﻢْ ﺟَﻨَّﺎﺕٍ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞْ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻧْﻬَﺎﺭًﺍ,,
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। [সূরা নূহ, আয়াত ১০-১২]
পক্ষান্তরে, আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন,
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى,,
‘যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ করা হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।’ (সূরা ত্বহা ১২৪)।
সর্বোপরি জিকির থেকে গাফেল ব্যক্তিদেরকে জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে হুশিয়ার করে দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ,,
আর তোমাদের রব বলেছেন, 'তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার 'ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।' (সুরা গাফের আয়াত ৬০)।
উল্লেখ্য, করোনার এ প্রাদুর্ভাবের সময় আল্লাহর কাছে জিকির- আজকারের পর রোনাজারি সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধি করোনাসহ যাবতীয় রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার সে আবেদনেও সাড়া দেবেন, যা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি জিকির করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার প্রতিটি কাজেই জিকিরের যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।









Comments